ফি বছর বর্ষায় বিদ্যুৎ-দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় বহু মানুষের। রাস্তাঘাটে হাঁটুজলের নীচে পরে থাকা বিদ্যুৎপরিবাহী তার, বৈদ্যুতিক খুঁটির মৃত্যুফাঁদ তো আছেই। বাড়ির ভিতরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর নজির কম নয়। আসুন জেনে নিই বর্ষায় বাড়িতে বিদ্যুৎঘটিত দুর্ঘটনা এড়াতে কী কী সাবধানতা মেনে চলবেন।
সবার প্রথম বাড়ির ‘আর্থিং’ ঠিক আছে কিনা, তা পরীক্ষা করানো উচিত। না হলে গোটা বাড়িই বিদ্যুৎপরিবাহী হয়ে যেতে পারে। বাড়ির ভেতরের ও বাইরের মূল বৈদ্যুতিক সংযোগের তারগুলো প্রতি বর্ষার আগে পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ উচ্চ বিদ্যুৎপরিবাহী তারগুলোতে কোথাও ‘লিক’ থাকলে তা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। পাশপাশি নষ্ট হতে পারে টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, কম্পিউটার-সহ একাধিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম।
বাড়ির সুইচবোর্ডগুলো পরীক্ষা করুন। ভেজা হাতে সুইচ চালু কিংবা বন্ধ করা যাবে না, বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার সম্ভাবনা তাতে প্রবল।
আর খারাপ কোনও সুইচ থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে। বিশেষত রান্নাঘর আর শৌচাগারের সুইচগুলোতেই এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
ঘরের কোথাও ঝুলন্ত তার থাকলে সেগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে।
বাড়ির যেকোনো মরচে পড়া পাইপ বদলে ফেলতে হবে। পরিবর্তে মরচে পড়ে না এমন উপাদানের পাইপ ব্যবহার করতে হবে।
বিদ্যুৎ চমকানোর সময় ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো বন্ধ রাখতে হবে। বিশেষত ইন্টারনেট রাউটার।
অনেকেই রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করেন না। ফলে এসি অনেকক্ষণ ধরে চালাতে হয়। ফলে সেটি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। নিম্নমানের এসি কিনলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তারের, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকে না। ফলে সেখানেও কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়, যা অনেক সময় অগ্নিকাণ্ডের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘটে বিদ্যুৎ বিপদ। তাই সঠিক এসি নির্বাচন করা উচিত।
বর্ষাকালই হল সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়, যখন ঘরে-বাইরে বিদ্যুৎ-বিপদ অনেকাংশে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চার্জ হওয়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাই উচিত। বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বজ্রপাতের সময় হাই ভোল্টেজ এড়াতে বাড়িতে সার্কিট ব্রেকার বা ‘এমসিপি’ ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় এসির ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত। এছাড়া বাড়ির ছাড়ে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
এবার আসা যাক বাড়ির বাইরের বিপদের বিষয়ে। বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের খুঁটি, পড়ে থাকা তার, রাস্তার পিলার-বক্স, ল্যাম্পপোস্ট থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। একান্তই জলে হেঁটে ফিরতে হলে জুতো খোলা চলবে না। বর্ষার অন্যতম ঘাতক দু’টি জিনিস। এক, রাস্তায় পড়ে থাকা ছেঁড়া তার। আর দুই, জলমগ্ন রাস্তা। নীচে কোথায় কী পড়ে আছে, তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল। খুবই সাবধানে চলাফেরা করা উচিত। বিশেষ করে বিকেল গড়িয়ে অন্ধকার নামলে জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে যতটা সম্ভব কম চলাফেরা করুন।