বিয়ে প্রায় সারা, পিঁড়িতে তখনও বসে বর-কনে। ওদিকে কবজি ডুবিয়ে খাওয়ায় ব্যস্ত বরযাত্রী থেকে শুরু করে অতিথিরা। আচমকা কয়েকজন সিভিক পুলিশকে সঙ্গী করে একদল স্বাস্থ্যকর্মী বিয়ের আসরে হাজির হতেই তাল কাটল। জানা গেল, বর বাবাজি নিজেই করোনায় আক্রান্ত। আগের রাতেই মিলেছে তাঁর ‘পজিটিভ’ (Covid-19 Positive) রিপোর্ট। কিন্তু উপসর্গহীন হওয়ায় জ্বরও আসেনি বা হাঁচি-কাশি আসেনি জামাইয়ের। স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখে বৃত্তান্ত শুনে নিমেষেই বিয়েবাড়ি ফাঁকা। কেউ খাবার অর্ধেক ফেলে রেখেই বিয়েবাড়ি ছাড়লেন, আবার কেউ এক-দু’কথায় বিদায় নিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
বিয়ের অনুষ্ঠান তো তখন কার্যত মাথায় উঠেছে। কিন্তু নববধূকে নিয়ে তড়িঘড়ি যে ‘সংক্রমিত’ বর গ্রামে ফিরবেন, তারও যে উপায় নেই! কারণ, ফুল দিয়ে সাজানো যে গাড়িতে চড়ে পাত্র বিয়ে করতে এসেছিল, তাঁর সংক্রমণের খবর শুনে চালকও ততক্ষণে গাড়ি নিয়ে উধাও। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের (Jhargram) জামবনি ব্লকের হিজলি গ্রামের বিয়েবাড়িতে তখন টানাপোড়েন তুঙ্গে। ভাগ্যিস পাড়ার একজন বাইক নিয়ে এগিয়ে এলেন। সেই বাইকে চড়েই নববধূকে নিয়ে শেষপর্যন্ত করোনা ‘পজিটিভ’ বর ফিরলেন শালপাতরায় নিজের বাড়িতে।Advertisement
শ্বশুর বাড়িতে নববধূর প্রথম পদার্পণের আচার-অনুষ্ঠান নমো নমো করে সারা হতেই বরকে নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা রওনা হলেন ‘সেফ হোমে’। নববধূ একরাশ উদ্বেগ নিয়ে আপাতত শ্বশুর বাড়িতেই। তখনই তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও, সেই রিপোর্ট এদিন রাত পর্যন্ত মেলেনি। এমন ঘটনার জন্য দু’পক্ষের কেউই তৈরি ছিলেন না। কাজেই আচমকা এই অঘটনে কার্যত যেন সকলেরই মুখে কুলুপ। জানা গিয়েছে, শালপাতরা গ্রামের বাসিন্দা ওই পাত্র দিন দশেক আগে ফিরেছেন গুজরাত থেকে। সেদিনই পরীক্ষার জন্য তাঁর লালরস সংগ্রহ করা হয়। বুধবার রাতে তাঁর পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালান স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু মোবাইলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে পাড়ায় গিয়ে তাঁরা জানতে পারে, ওই যুবক বিয়ে করতে গিয়েছেন। আর তারপরই হিজলি গ্রামের কনের বাড়িতে সটান বিয়ের আসরেই হাজির হন ওই স্বাস্থ্য কর্মীরা।