বাতাসে বারুদের গন্ধহীন কালীপুজো (Kali Puja 2020)। কান ঝালাপালা করা শব্দ নেই। রাতের আকাশে ফানুস-হাউইয়ের ঘোরাঘুরি নেই। এমনকী তুবড়ি বা রংমশালের আলোয় আলোকিত হওয়াও নেই। এমন কালীপুজো শেষ কবে শহরবাসী দেখেছে তা সত্তরোর্ধ্ব প্রৌঢ়ও স্মরণে আনতে পারলেন না। ফল? বাজি পোড়ানোয় গত কয়েক বছরে দূষণের মাত্রা যে জায়গায় গিয়েছিল এবার তার অর্ধেকও নয়। রাজ্য পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য বছর কালীপুজোর দিন বাতাসে যে পরিমাণ দূষণের মাত্রা ছড়ায় সেই তুলনায় এবার বেশ কম। করোনার আতঙ্কে মানুষ এবার বাজি না ফাটিয়ে আলো জ্বালিয়েই দীপাবলি (Diwali) উদযাপন করেছেন। আদালতের নির্দেশিকা বা পুলিশের চোখরাঙানির বদলে মানুষের সচেতনতাই এবার আর বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত হতে দিল না।
রাতের দিকে শহরের আনাচে কানাচে শব্দবাজির আওয়াজ কানে এলেও অন্যবারের তুলনায় তা ছিল সামান্য। দূষণের মাত্রা অবশ্য এদিনও হাওড়ার ঘুসুড়ি, রবীন্দ্রভারতীর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাছে ছিল একটু বেশি। কিন্তু বাকি জায়গাগুলোতে অন্য বারের কালীপুজোর বিচারে বেশ কম। কলকাতায় পুলিশি নজরদারিতে বাজি কম ফাটলেও বিভিন্ন জেলা থেকে শব্দবাজি ফাটানোর খবর মিলেছে।
বাতাসে দূষণের (Pollution) মাত্রা মাপার জন্য শহরের একাধিক জায়গায় যন্ত্র বসানো হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে। সেখানেই উঠেছে দূষণের মাত্রা। এবছর কালীপুজোর দিন দূষণের মাত্রা উঠেছে বালিগঞ্জে ১১৪, যেখানে গত বছর ছিল ২০৫, ফোর্ট উইলিয়ামে ১১৮, গত বছর যেখানে ছিল ১৩৯, যাদবপুরে ১০৯, গত বছর ছিল ১৯০, রবীন্দ্রভারতীতে ২২২, গতবার সেখানে অবশ্য একটু কম ছিল ১৮৭, তার আগের বার অবশ্য ছিল ৩২০, রবীন্দ্র সরোবর ৯৬ গতবার ১৪৭, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ১০৭, তা অবশ্য গতবার ৯৮ ছিল। তাছাড়া বেহালা, ডানলপ, মিন্টো পার্ক, মৌলালিতে গত দু’বছর আগে দূষণের মাত্রা ছিল ৩০০ থেকে ৪০০-র কাছাকাছি। সেই তুলনায় এবারের মাত্রা সন্তোষজনক বলেই মনে করছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকরা।
তবে তাঁদের কথায়, পুরোপুরি পরিস্থিতি বোঝা যাবে আজ। কারণ অধিক রাতে যে কিছু এলাকায় বাজি ফাটলো তার রিপোর্ট আজ পাওয়া যাবে। নিয়ম অনুযায়ী দূষণের মাত্রা ০-৫০ রেঞ্জে যদি থাকে তবে তা ভাল। ৫১-১০০ হল সন্তোষজনক, ১০১-২০০ মাঝামাঝি, ২০১ থেকে ৩০০ খারাপ, ৩০১ থেকে ৪০০ খুব খারাপ, ৪০১-৫০০ অত্যন্ত খারাপ। এবার বেশিরভাগ জায়গাতেই অবশ্য মাত্রা ১০০ থেকে ১৫০র মধ্যে ছিল। অর্থাৎ ভালর দিকেই বলা চলে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ডা. কল্যাণ রুদ্র অবশ্য জানিয়েছেন, স্রেফ আতসবাজি কম পোড়ানোর জন্য বাতাসে দূষণের মাত্রা কমেছে এমনটা ঠিক নয়। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিগত বছরগুলোতে এমন নানা পদক্ষেপ করেছে। তাতেই দূষণের মাত্রা কমেছে। সারা বছর লেদার কমপ্লেক্সে চামড়া পোড়ানো হত। তা বন্ধ করা গিয়েছে। শহরে পুরনো গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে প্রচুর চওড়া পাতার গাছ লাগানো হয়েছে। সার্বিকভাবে এগুলোই দূষণের মাত্রা কমিয়েছে।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তর কথায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় শহরে এবছর আশি শতাংশ কম বাজি ফেটেছে। তাঁর বক্তব্য, কলকাতার (Kolkata) বাতাসে দীপাবলির সময় ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম-১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম-২.৫) মাত্রা বাড়ার জন্য শব্দবাজি দায়ী নয়। বরং যে সমস্ত বাজিতে আলো বেশি হয় তা থেকেই ধোঁয়া বেরোয় বেশি। এবার সমস্ত ধরনের বাজি ফাটাতে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়াতেই বাতাসে ক্ষতিকর ভাসমান কণা ঠেকানো গিয়েছে। ছটপুজোতেও এই কড়াকড়ি জারি রাখতে হবে।