মৃত্যুর কাছে পরাজিত হলেন অপরাজিত অপু। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রবিবার সেই মৃত্যুর কাছেই হার মানলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রের একটা যুগ যেন শেষ হয়ে গেল। অন্তিম যাত্রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটে চিরবিদায় জানানো হচ্ছে বাঙালির ফেলুদাকে।
করোনাই যেন অনুঘটকের মত অভিনেতাকে এগিয়ে নিয়ে গেল না-ফেরার দেশে। অভিনেতাকে যখন ৬ অক্টোবার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল চিকিৎসার জন্য তখন তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন ঠিকই কিন্তু পরবর্তীকালে করোনামুক্ত হয়ে যান অভিনেতা। কিন্তু চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, রবিবার মাল্টিঅর্গান ফেলিওর, ব্রেনডেথ হয়ে মৃত্যু হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। শনিবার বিকেলের পর থেকেই চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান বর্ষীয়ান অভিনেতা। রবিবার হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, মৃত্যু হয়েছে সৌমিত্রের। ৪০ দিন ধরে বেলভিউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই করোনামুক্ত শরীর একটু-একটু করে হারাতে বসেছিল রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা। ফলে তাঁকে দীর্ঘদিন লাইফ সাপোর্টে রাখতেও হয়েছিল। শেষমেষ রবিবার ১২ টা ১৫মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। বর্ষীয়ান অভিনেতা এর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সেখান থেকে অভিনেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গল্ফ গ্রীনের বাড়িতে। সেখান থেকে টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান স্টুডিও সেখান থেকে রবীন্দ্রসদন। সেখান থেকে পদযাত্রা করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাজ্যের তরফে গান স্যালুটে অন্তিম বিদায় জানানো হচ্ছে বর্ষিয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। উপস্থিত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলাকুশলী শিল্পীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সৌমিত্র কন্যা। রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পদযাত্রার ছেয়ে গিয়েছিল অগণিত ভক্তদের ঢল। মোমবাতি হাতে নিয়ে প্রাণের অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানায় অনুরাগীরা। আলোর উৎসব এর মাঝেই যেন মুহূর্তের মধ্যে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। রক্তমাংসের আপু হয়তো আজ বাঙালির কাছে মৃত। কিন্তু তিনি বাঙালির মনের মণিকোঠায় আজীবন থাকবেন অমর।
2020-11-15