পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় মাসুদ আজহার-সহ ১৯ জনকে দায়ী করে চার্জশিট দাখিল করল এনআইএ

পুলওয়ামা আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় চার্জশিট দাখিল করল জাতীয় তদন্তকারী এজেন্সি (এনআইএ)। ঘটনার ১৮ মাস পর মঙ্গলবার জম্মুর আদালতে  ৫০০০ পাতার চার্জশিট পেশ করছে এনআইএ। সেখানে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে পাকিস্তানে বসে পুলওয়ামা হামলার ছক কষা হয়েছিল। চার্জশিটে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার-সহ ১৯ জনের নাম আছে। যারা পাকিস্তানের নির্দেশে গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় জড়িত ছিল।

জম্মুর এনআইএ আদালতে দাখিল করা ১৩,৫০০ পাতার চার্জশিটে জইশ প্রধানের ভাই আবদুল রউফ আসগার ও আম্মার আলভি, ভাইপো উমর ফারুকের নাম আছে। ফারুক হচ্ছে ইব্রাহিম আথারের ছেলে। যে ইব্রাহিম ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণে অভিযুক্ত। পুলওয়ামা হামলার রূপায়ণের জন্য ভারতে ছিল ফারুক। সেই বছরের মার্চেই অবশ্য তাকে গুলির লড়াইয়ে খতম করে নিরাপত্তা বাহিনী।

আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চার্জশিটে এমন সব প্রমাণ আছে, তা থেকে পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের ভূমিকা জলের মতো স্পষ্ট। তা খণ্ডন করার কোনও অবকাশই মিলবে না। হামলার ঘটনায় জইশ নেতৃত্ব ও ধৃত অভিযুক্তের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে জঙ্গিদের কথোপকথন, ফোনের বিস্তারিত তথ্য। সূত্রের খবর, ওই চার্জশিটে জঙ্গিদের কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও পেশ করা হয়েছে। সেই চ্যাটে আরডিএস্ক এবং অন্যান্য বিস্ফোরকের ছবিও চালাচালি হয়েছে। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর জইশ কমান্ডার উমর ফারুক ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত হয়। সেই ফারুকের মোবাইল থেকেই এসব চ্যাট মিলেছে।  

ওই হামলার প্রশংসা করে মাসুদ আজহার একটি ভিডিও এবং অডিও প্রকাশ করে। চার্জশিটে সেগুলোও দাখিল করা হয়েছে। পুলওয়ামায় হামলার পরেই জইশের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে একটি মেসেজ ছড়ানো হয়। লেখা হয়, ‘১০০ ভারতীয় হিন্দু সৈন্য মারা পড়েছে।’ চার্জশিটে সেই মেসেজও রয়েছে।

২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রীও এই মাসুদ আজহারই। আজহার ছাড়াও চার্জশিটে নাম রয়েছে আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমেদ দার। সেই বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে কনভয়ে ঢুকে পড়েছিল। আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে কেন আদিল আহমেদ দারকে ব্যবহার করা হয়েছিল, তাও এনআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারতের অভ্যন্তরেই সন্ত্রাসবাদের শাখা-প্রশাখা বিস্তারের ফলস্বরূপ সিআরপিএফের কনভয়ে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি ধাক্কা মেরেছে, তা দেখানোর জন্যই স্থানীয় বাসিন্দা আদিলকে আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তাছাড়াও নাম রয়েছে উমর ফারুক, যে বোমা রেখেছিল গাড়িতে। এ বছর মার্চে এনকাউন্টারে খতম হয় সে। চার্জশিটে নাম রয়েছে শাকির বশির মাগরের। সেদিন গাড়ি সেই চালাচ্ছিল। হামলাস্থলের ৫০০ মিটার আগে গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে নেমে পড়ে। ওই জায়গায় তার আসবাবের দোকান রয়েছে। জওয়ানদের গতিবিধির খবর সেই দিত উমর ফারুককে। তাছাড়াও পাক জঙ্গিদের গাড়ি সরবরাহ করার জন্য মহম্মদ ইকবাল রাথের, মোবাইল দেওয়ার জন্য বিলাল আহমেদ কুচে, জইশ জঙ্গি তারিক আহমেদ শাহ, মেয়ে ইনশা জানের নামও রয়েছে চার্জশিটে

চার্জশিটে থাকা ১৯ জনের নামের তালিকা –

১) মাসুদ আজহার আলভি, ৫২ বছর, পাকিস্তানি নাগরিক।

২) রউফ সাগর আলভি, ৪৭ বছর, পাকিস্তানি নাগরিক।

৩) আম্মার আলভি, ৪৬ বছর, পাকিস্তানি নাগরিক।

৪) শাকির বশির, ২৪ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা।

৫) ইনশা জান, ২২ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা।

৬) পীর তারিক আহমেদ শাহ, ৫৩ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা।

৭) ওয়াইজ-উল-ইসলাম, ২০ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাসিন্দা।

৮) মহম্মদ আব্বাস রাথের, ৩১ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা।

৯) বিলাল আহমেদ কুছেরি, ২৮ বছর, বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার লালহারের হাজিবলের বাসিন্দা।

১০) মহম্মদ ইকবাল রাথের, ২৫ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের বদগামের ছারে-ই-শরিফের বাসিন্দা।

১১) মহম্মদ ইসমাইস, ২৫ বছর, পাকিস্তানি নাগরিক।

১২) সমীর আহমেদ দার, ২২ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা।

১৩) আশাক আহমেদ নেঙ্গরু, ৩৩ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার রাজপুরার বাসিন্দা।

১৪) আদিল আহমেদ দার, ২১ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা। (খতম)

১৫) মুহম্মদ উমর ফারুক, ২৪ বছর, পাকিস্তানের নাগরিক। (খতম)

১৬) মহম্মদ কামরান আলি, ২৫ বছর, পাকিস্তানের নাগরিক। (খতম)

১৭) সাজ্জাদ আহমেদ, ১৯ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগের বিজবেহেরার বাসিন্দা। (খতম)

১৮) মুদাসির আহমেদ খান, ২৪ বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপুরার বাসিন্দা। (খতম)

১৯) কারি ইয়াসির, পাকিস্তানের নাগরিক। (খতম)

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিরা জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার অবন্তিপোড়া এলাকায় সিআরপিএফের কনভয়কে লক্ষ্য করে একটি আত্মঘাতী হামলা চালায়। এতে সিআরপিএফের ৪০ জন সেনা শহিদ হন। ঘটনায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকটি এতই শক্তিশালী ছিল যে, তার শব্দ ১০-১২ কিলোমিটার দুরেও শোনা গিয়েছিল৷ কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর ২৫০০ এরও বেশি কর্মী ৭৮ টি গাড়ির কনভয়টিতে যাচ্ছিলেন। তাদের বেশিরভাগ ছুটি কাটিয়ে ডিউটিতে ফিরে আসছিলেন। ঠিক তখনই আত্মঘাতী জঙ্গি তার বিস্ফোরক ভরতি গাড়িটি সেনা কনভয়ে আঘাত করে৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.