ফের আগুন লেগেছে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে। তিন দিন ধরে জ্বলছে পাহাড়া। বিগত বছর দিনেক ধরে ঠিক এই সময়েই শুশুনিয়া পাহাড় আগুনের কবলে পড়ার খবর, ছবি সামনে আসে। বহু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন প্রত্যেক বছর। কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছু হচ্ছে না। আবারও লেগেছে ভয়ংকর আগুন।
ইতিমধ্যেই আগুনে বেশ কয়েক হেক্টর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়েছে বলে খবর মিলেছে। আগুনে ঝলসে শুশুনিয়ার বেশ কিছু বন্যপ্রাণী এবং পাখির মৃত্যুরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের একাংশই জঙ্গলে আগুন লাগিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে বন দফতর। গত এপ্রিলেও শুশুনিয়া পাহাড়ের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে আগুন লেগেছিল। অর্থাৎ এক বছরও হয়নি, আবারও ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
প্রসঙ্গত জঙ্গলে আগুন লাগানোর না আবেদন জানিয়ে প্রচার শুরু করেছিল পুরুলিয়া বন বিভাগও। নেট থেকে মাইক সবরকম প্রচার চালানো হয় কিন্তু কে কার কথা শোনে? পাহাড়ের জঙ্গলে লাগছে আগুন। পুড়ছে গাছপালা, বন্যপ্রাণ। আগুনের কবলে পুরুলিয়া বনবিভাগের বলরামপুর, আড়শা, কোটশিলা, ঝালদা, অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি রেঞ্জের অযোধ্যা পাহাড় থেকে মাঠা, কংসাবতী-দক্ষিণ বন বিভাগের বন্দোয়ানের লোটো ঝরনা, নান্না। কংসাবতী-উত্তর বনবিভাগের রঘুনাথপুর রেঞ্জের গড় পঞ্চকোট, বরন্তি, দণ্ডহিত থেকে জয়চণ্ডী পাহাড়। আগুন নেভানো যাচ্ছে না কারণ অস্ত্র নেই। কাঁচা গাছের ডালপালা দিয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ঢাল তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্দারের হাল বনকর্মীদের।
পুরুলিয়ার বাসিন্দা সাইক্লিস্ট অক্ষয় ভগত জানিয়েছেন , ‘আগুনের করাল গ্রাসে আমাদের পুরুলিয়ার প্রাণভোমরা অযোধ্যা। এ কোন দাবানল নয়, দাবানলের সময় আসেনি। মনুষ্য সৃষ্ট কিছু অসাধু স্বার্থান্বেষী মানুষের লালশার শিকার আমাদের অযোধ্যা। এভাবেই পাহাড়ের ঔষধি, ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী , পশু পাখি ,কীটপতঙ্গ, উদ্ভিদরাজি তথা ইকোসিস্টেম ধ্বংসের সাথে আমাদের সমূহ বিপদ এগিয়ে আসছে’। সঞ্জয় কুমার মাহাতো জানিয়েছেন , ”সভ্যতা’র মশাল জ্বলছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় জুড়ে। গতকাল সন্ধ্যেবেলা, খয়রাবেড়ার দিকে৷ অর্থলোলুপ কিছু মানুষের জন্য পুড়ে ছারখার হতে হল অযোধ্যার গাছ পালা, সরিসৃপ, পাখি, বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারকে। এরপর হয়তো এই মৃত গাছের কাঠই আমার আপনার বাড়িতে আসবাব হয়ে শোভা পাবে।’
কল্যাণ কুমার কুণ্ডুর তীর প্রশাসনের দিকে। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার বাড়ির ঠিক পিছনে হিল ভিউ গ্রাউন্ড। দূরে দক্ষিণ পশ্চিমে অযোধ্যা পাহার শ্রেণী স্পষ্ট দেখা যায়। ছোটবেলাতেও দেখেছি পাহাড় জ্বলছে। আজও দেখি তাই। মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক মদত না থাকলে বছরের পর বছর এই সময় এই বহ্নিলীলা সংঘটিত হয় না। প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের জেলার প্রতি কোন আবেগ নেই, মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড বন্ধক রাখা। আর পুরুলিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথা যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল। জেলার মানুষ এগিয়ে আসুন। আপনাদের সুপ্ত বিবেককে জাগ্রত করুন। এছাড়া ভরসা পাচ্ছি না।’