বড়দিনের পরেই দার্জিলিং ও কালিম্পং দুই জেলার পার্বত্য এলাকা ও সমতলের কয়েকটি অংশ জুড়ে ফের রাজনৈতিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। টানা তিন বছরের বেশি পাহাড় ছাড়া হওয়ার পর এলাকায় ফিরে নিজ অবস্থান শক্তিশালী করতে মরিয়া গোর্খা নেতা বিমল গুরুং। আর বিপরীতে বিনয় তামাং শিবিরও আন্দোলনে মরিয়া।

গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ছবিটা স্পষ্ট, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ( গোজমুমো) সংগঠনের গুরুং ও তামাং শিবিরের দ্বন্দ্ব বাড়বেই। এখন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ নিয়েছেন পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ গুরুং। তিনি দার্জিলিং ঢুকেই দুসপ্তাহের মধ্যে সদ্য বিজেপি ঘনিষ্ঠ বিনয় তামাং গোষ্ঠীকে পাহাড় ছাড়া করার হুমকি দেন। এই প্রেক্ষিতে শনিবার গুরুং বিরোধী পরিবর্তন যাত্রা করবেন বিনয় তামাং। সোনাদা থেকে দার্জিলিং তাঁর পদযাত্রা ঘিরে যে কোনও সময় পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হতে পারে এমনই আশঙ্কা।

সূত্রের খবর, যখন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সংঘাতে গিয়েছিলেন বিমল গুরুং। তখন তার আজ্ঞাবহ আগ্রাসী জিএলপি (গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল) বাহিনি ছিল রক্ষাকবচ। তাদের সাহায্যে বারবার পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের হাত এড়িয়ে নেপাল ও সিকিম হয়ে যাতায়াত করতেন গুরুং। সেই জিএলপি দিয়েই তামাং শিবিরকে কোণঠাসা করতে চান গুরুং।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই বিশেষ বাহিনি সংক্ষেপে জিএলপি নামেই পরিচিত৷ সূত্রের খবর, এই বাহিনির সদস্য সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার। অভিযোগ, জিএলপি গঠন প্রক্রিয়া রাজ্য প্রশাসন সবই জানত, কিন্তু মোর্চা প্রধান বিমল গুরুংকে চটাতে চায়নি তৃণমূল কংগ্রেস৷ ফলে নিশ্চিন্তে শক্তি বাড়িয়েছিলেন মোর্চা প্রধান৷ গোয়েন্দা রিপোর্টে আগেই উঠে এসেছে, জিএলপি ক্যাডারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে নাগা জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন(ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড) খাপলাং গোষ্ঠী৷

সূত্রের খবর, জিএলপি ক্যাডারদের মধ্যে যারা অত্যন্ত ‘ফিট’ এমন কয়েকশো জনকে নিয়েই নিরাপত্তার কোর টিম তৈরি করেন বিমল গুরুং৷ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃত্বদের বিশেষ সুরক্ষা দেয় আগ্রাসী জিএলপি ক্যাডাররা৷

আন্তঃরাজ্য সীমানা পার করে সিকিমেও বিশেষ ক্যাম্প রয়েছে গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের৷ প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও দার্জিলিংয়ের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা যেমন, মানেভঞ্জন, টংলু-টুমলিং সহ সান্দাকফু পার্বত্য এলাকা ও সিঙ্গলিলা অরণ্যাঞ্চলে মোর্চার প্রভাব প্রবল৷ এইসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জিএলপি সদস্য৷

২০০৯ সাল থেকেই গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলকে শক্তিশালী করতে নেমে পড়েছিলেন বিমল গুরং৷ দার্জিলিংকে ঘিরে তখন নতুন করে গোর্খাল্যান্ড বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দানা পেকেছিল৷ বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে পূর্বতন ডিজিএইচসি (দার্জিলিং-গোর্খা হিল কাউন্সিল) তুলে দেয়৷ তৈরি করা হয় গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(জিটিএ)৷ দার্জিলিং পার্বত্যাঞ্চলের সবথেকে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন বিমল গুরুং৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সশস্ত্র পথে নিয়ে যেতে নিজস্ব রক্ষী বাহিনি জিএলপি তৈরির প্রচেষ্টায় আরও জোর দেন তিনি৷

কেমন ছিল সেই প্রক্রিয়া? সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টের অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সরাসরি জিএলপি ক্যাডারদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ সমর শিক্ষা গোর্খাদের সহজাত৷ ফলে জিএলপি দ্রুত শক্তিশালী বাহিনিতে পরিণত হয়৷ গোর্খাল্যান্ড গঠনের আবেগে পাহাড়ি যুব সমাজের বড় অংশ জড়িয়ে পড়ে গুরুংয়ের খাস বাহিনিতে৷ সূত্রের খবর জিএলপি মহিলা ক্যাডার বাহিনিও বিশেষ শক্তিশালী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.