কেন্দ্র সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি সংক্রান্ত একটি ওয়েবিনারের আজ আয়োজন করে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, কলকাতা। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক দিন কয়েক আগে এই শিক্ষা নীতিটি ঘোষণা করে। এই নীতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহ-অধ্যক্ষ স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ বলেন, এই শিক্ষানীতি স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্ন পূরণ করবে।স্বামীজি স্বপ্ন দেখতেন প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার মেলবন্ধন। নতুন শিক্ষানীতিটি সেই ভাবনারই প্রতিফলন। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করে স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ বলেন, নতুন শিক্ষানীতিটি শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, পুনর্সমন্বয়সাধন, সমৃদ্ধকরণের সঙ্গে তাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে।
আইআইটি খড়গপুরের নির্দেশক অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারি এই ওয়েবিনারে বলেন, কৃষকদের মূল চাহিদাগুলির বিষয়ে ভাবনা চিন্তার সময় এসেছে। তিনি বলেন, কৃষকরা আমাদের খাদ্যের যোগানের ব্যবস্থা করেন। তাই তাদের কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে ওয়াকিবহাল করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে তাঁদের প্রয়োজন মাথায় রেখে চাষবাসের প্রয়োগযোগ্য উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও এখন উন্নতমানের গবেষণা হচ্ছে এই ক্ষেত্রে। তাই ২০২০-র জাতীয় শিক্ষানীতি ভবিষ্যতের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করবে।
আইআইএম জোকার প্রাক্তন ডিন, অধ্যাপক (ডঃ) অম্বুজ মহাপাত্র বলেন, ভবিষ্যতে শিক্ষাকে কর্মসংস্থান কেন্দ্রিক করে তোলার প্রয়াসে এই শিক্ষানীতি যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। একজন ছাত্র বা ছাত্রী তার পছন্দের মতো বিষয় নিয়েও পড়াশোনা করতে পারবে এই শিক্ষা নীতি অনুযায়ী। ২০২০-র জাতীয় ছাত্রছাত্রীদের সেই সুযোগ করে দেওয়ার পথ অবশ্যই প্রশস্ত করেছে।
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক (ডঃ) বিপ্লব লোহচৌধুরী বলেন, এই শিক্ষানীতি শিক্ষকদের প্রকৃত যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম, রবীন্দ্রনাথের ভাবনা অনুসরণ করে শিক্ষকদের মর্যাদাকে গুরুত্ব সহকারে সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এই প্রথম, হস্তশিল্পী, কৃষক, তন্তুবায়-সহ চিরাচরিত বিভিন্ন পেশার মানুষকে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা এখন থেকে প্রস্তাবিত ক্লাস্টার স্কুলে ক্লাস নিতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ চিত্তরঞ্জন মন্ডল বলেন, নতুন শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং উচ্চ-প্রাথমিক স্তরে বিভাজন করা হয়েছে যুক্তিসংগতভাবে। এরফলে, যথাযথভাবে শিক্ষাদান সম্ভব হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার এই নতুন শিক্ষানীতির আওতায় পরিচালনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। জ্ঞান সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লাস্টার গঠনের বিষয়টির উপযোগিতা সম্পর্কে তিনি বিশদে ব্যাখ্যা করেন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডঃ মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, নতুন শিক্ষানীতিটি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ মনে করতেন গরিব ছাত্রছাত্রীরা যদি শিক্ষার কাছে পৌঁছাতে না পারে তাহলে শিক্ষাকে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে কোন পাঠক্রমে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হওয়া বা সেই পাঠক্রম থেকে বেরিয়ে আসার সংস্থান থাকায় তিনি তার প্রশংসা করেন।
এই ওয়েবিনারে বিদ্যালয়, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা, চিকিৎসক এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।