ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হলিউডি নায়কের চুম্বন, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন ‘আমি একজন ভারতীয় মহিলা।’ বলিউডের সেরা নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম নিম্মি (Nimmi) (নবাব বানু) প্রয়াত হয়েছেন। বুধবার মুম্বইয়ের (Mumbai) একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী নিম্মি (Nimmi)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী নিম্মি (Nimmi) ওরফে নবাব বানু। শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার কারণে বুধবার মুম্বইয়ের (Mumbai) শহরতলি জুহুর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল অভিনেত্রী নিম্মিকে। বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একাই থাকেন অশীতিপর নিম্মি। এবার তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
নবাব বানুর জন্ম ১৯৩৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। অবিভক্ত ভারতের আগরায়। তাঁর মা ওয়াহিদা (Wahida) ছিলেন গায়িকা। হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ও করেছিলেন। পরিচালক-প্রযোজক মেহবুব খান ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ওয়াহিদা (Wahida)। তাঁর স্বামী আবদুল হাকিম ছিলেন সেনাবাহিনীর ঠিকাদার। মেয়ের জন্মের পরে ওয়াহিদার সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্কের অবনতি হয়। একসময় স্ত্রী ওয়াহিদা এবং মেয়ে নবাবকে আগরায় ছেড়ে মেরঠে নতুন সংসার শুরু করেন আবদুল হাকিম। একাই নবাবকে বড় করছিলেন তাঁর মা। হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় তাঁর যুদ্ধ। নবাবের যখন এগারো বছর বয়স, মারা যান ওয়াহিদা।
পরবর্তীকালে নবাবের পাশে দাঁড়ান মেহবুব খান। তখন তাঁর ছবি ‘আন্দাজ’-এর শুটিং চলছিল। সেটে তিনি ডাকেন নবাবকে। কারণ তিনি শুনেছিলেন মায়ের মতো ওয়াহিদার মেয়েরও অভিনয়ের ঝোঁক আছে। স্টুডিয়োর সেটে পঞ্চদশী নবাবকে তখন দেখেন রাজ কপূর। তিনি তখন তাঁর ছবি ‘বরসাত’-এর জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী খুঁজছিলেন। নবাবের মুখ ভাল লেগে যায় রাজ কপূরের। তিনি নবাবকে সুযোগ দেন সেই ছবিতে। প্রেম নাথের বিপরীতে এক পাহাড়ি মেষপালিকার চরিত্রে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি নিম্মিকে। রাজ কপূরের সঙ্গে ‘বাঁবরা’, দেব আনন্দের বিপরীতে ‘সাজা’, ‘আঁধিয়াঁ’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। সবথেকে জনপ্রিয় ছিল দিলীপ কুমার-নিম্মি জুটি। তাঁদের জুটির ‘দিদার’ এবং ‘দাগ’ সুপারহিট ছবি ছিল পঞ্চাশের দশকে। ১৯৫২ সালে মুক্তি পায় মেহবুব খানের বড় বাজেটের ছবি ‘আন’। দিলীপ কুমার, প্রেম নাথের পাশাপাশি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন নিম্মি।
বিদেশেও সমাদৃত হয় ‘আন’। মুক্তি পেয়েছিল এর ইংরেজি সংস্করণও। ছবি প্রদর্শন উপলক্ষে লন্ডনে গিয়েছিলেন নিম্মি। সেখানকার একটি ঘটনা স্মরণীয় হয়ে আছে। প্রথম আলাপের পরে নিম্মির হাতে সৌজন্য-চুম্বন করতে গিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেতা এরল ফ্লিন। দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়েছিলেন নিম্মি। বলেছিলেন, তিনি একজন ভারতীয় মহিলা। নিম্মির দু’টি উল্লেখযোগ্য ছবি ‘বসন্ত বাহার’ এবং ‘ভাই ভাই’ মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘আলিফ লায়লা’, ‘কুন্দন’, ‘চার প্যায়সে’, ‘রাজধানী’, ‘অঙ্গুলিমাল’, ‘মেরে মেহবুব’, ‘ডাল মে কালা’ এবং ‘আকাশদীপ’।