কোচবিহারের শীতলকুচিত বুধবার আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। হাতে চোটও পেয়েছেন। সেই সঙ্গে গাড়িও ভেঙেছে। তবে এটা নতুন কিছু নয়। দিলীপের হিসেবমতো, ‘‘এক ডজন হয়ে গেল।’’ বুধবারের হামলা নিয়ে বৃহস্পতিবার দিলীপ বলেছেন, ‘‘আমার মার খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। অনেক বার আমার উপর হামলা হয়েছে। কিন্তু এ বার আমাদের কর্মীদেরও মেরেছে। অনেক গাড়ি ভেঙেছে। কারণ, ওরা জানে ঠিকঠাক ভোট হলে তৃণমূল আর জোড়াফুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এ সব করেও বিজেপি-কে আটকানো যাবে না।’’
রাজ্য রাজনীতিতে দিলীপের গাড়িতে হামলা নতুন নয়। রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে দলই তাঁকে একটি গাড়ি দেয়। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল ওই গাড়িতে চড়েছেন। সাদা স্করপিও। নম্বর ছিল ‘ডব্লু বি ২০ বি এ ই ৮৯৯৬’। প্রথম থেকেই দিলীপের সারথি গুরুপ্রসাদ বারিক। রাজ্য বিজেপি-র সবাই যাঁকে ‘গুরাদা’ নামে চেনে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওটার উপরে এত বার হামলা হয়েছে যে, শেষ দিকে গাড়িটার আর কিছু ছিল না। একেকটা কাচ যে কতবার বদলাতে হয়েছে, গুণে বলা যাবে না। তা ছাড়া ছুটেছেও প্রচুর। লোকসভা ভোটের পরে ওটা বদলে এখনকার গাড়িটা নিয়েছে পার্টি।’’
কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গে দিলীপ এখন যে স্করপিও চড়েন, সেটি কেনা হয় ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর। দিলীপ তখন সাংসদ। তবে পুরনো গাড়িটি খুবই ‘পয়া’ দিলীপের কাছে। ওটাই তাঁকে বিধায়ক করেছে। সাংসদ করেছে। তাই সিরিজ বদলালেও নতুন গাড়ির নম্বর একই— ‘ডব্লু বি ২০ বি ই ৮৯৯৬’। ওই গাড়ি এর আগে আক্রান্ত হয়েছে একবার। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে জেপি নড্ডার কনভয়ে হামলার দিন ইট পড়েছিল দিলীপের গাড়িতেও। তবে বিশেষ ক্ষতি হয়নি। এতবার গাড়ি ভাঙচুর হওয়ায় বিমা কোম্পানি কি সব বার ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছে? প্রশ্ন শুনে রাজ্য বিজেপি-র কোষাধ্যক্ষ সওয়র ধনধনিয়ার বক্তব্য, ‘‘আমরা খুব একটা ক্লেম করিনি। প্রতিবারই দলের কোনও না কোনও শুভাকাঙ্খী দিলীপ’দার গাড়ি নিজে থেকে সারিয়ে দিয়েছেন।’’
দক্ষিণবঙ্গে সর্বত্র ওই গাড়ি নিয়ে গেলেও উত্তরবঙ্গে দিলীপের সফরে বিজেপি আলাদা গাড়ি নেয়। সেটা কখনও ভাড়ায়, কখনও দলের কোনও নেতার। ট্রেনে (এখন হেলিকপ্টারে) গিয়ে ওই গাড়িতেই ঘোরেন। শীতলকুচিতে তেমনই একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। দিলীপ দাবি করেছেন, বুধবার তাঁর গাড়িতে দু’টো বোমাও ছোড়া হয়েছে। যেটা প্রাণঘাতী হতে পারত বলেও মনে করছেন তিনি।
দিলীপের উপর এমন অনেক হামলার সাক্ষী তাঁর আপ্ত সহায়ক দেব সাহা। দার্জিলিঙে হামলায় মার খেয়েছিলেন দেবও। সেটা ছিল ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর। সে বার দিলীপের সভায় ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। সেই পুরনো কথা মনে করে দেব বলেন, ‘‘প্রথমে দাদার মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। তার পরে থানায় যাওয়ার সময়ও দিলীপ’দাকে ধাক্কা মারা হয়। আমি আর দার্জিলিঙের নেতা রাকেশ পোখরেলকে খুব মারধর করা হয়েছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে গিয়েছিলাম।’’ ওই একটিই নয়, এমন অনেক ঘটনার কথাও নিশ্চয়ই বুধবার মনে পড়েছে দেবের। তার কোনওটা মুর্শিদাবাদের কান্দিতে। কোনওটা উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায়।
বারবার আক্রমণ নিয়ে দিলীপ নিজে অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নন। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেকে নিয়ে অত ভাবি না। আমার কর্মীদের উপর আরও বেশি আক্রমণ হয়েছে। অনেকের প্রাণ গিয়েছে। রাজ্য সভাপতি হিসেবে আমার সবচেয়ে কষ্ট হয়েছে তরুণ সহকর্মীদের মৃতদেহে বারবার মালা দিতে গিয়ে। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময়। তবে যত আক্রমণ হয়েছে, বিজেপি তত এগিয়েছে। শীতলকুচির ঘটনা কতটা এগিয়ে দিল সেটা ২ মে দেখা যাবে।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার কোচবিহারের শীতলকুচি পঞ্চায়েত সমিতির মাঠে সভা ছিল দিলীপের। সভা সেরে ফেরার সময় হামলা হয়। ওই আক্রমণের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন দিলীপ। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের শাসকদল। তবে ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ তৎপর হয়ে ওই ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। চোট নিয়েই বৃহস্পতিবার কোচবিহারের সিতাইয়ে সভা করেন দিলীপ। সেখানেও তিনি বলেন, ‘‘ওরা ভয় পেয়েছে। তাই হামলা করছে।’’