সত্তরের দশকে দেওয়ালভরা স্লোগান ছিল, ‘চীনের মাওসেতুং আমাদের চেয়ারম্যান’, ‘পার্লামেন্ট হচ্ছে শুয়ােরের খোঁয়াড়’, ‘সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা নিপাত যাক’ ইত্যাদি। চীনের দাদাগিরি, নৃশংস দমননীতি ও বিস্তারবাদী পরিকল্পনার জন্যই সমগ্র বিশ্বে সে আজ এক দুষ্ট ক্ষতে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া ছাড়া চীনের বন্ধু আর কেউ নেই। ভৌগােলিক দৃষ্টিতে দেখলে বিশালাকার চীনের স্থান কানাডা ও রাশিয়ার পরেই। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে চীনের ভূয়সী প্রশংসা শুনতে পাবেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অবস্থা অত্যন্ত করুণ। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পার্টির অন্তর্কলহ ও সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরােধ লেগেই রয়েছে। বেজিং ও সাংহাই ছাড়া অন্য শহরগুলিতে কিন্তু বুলেট ট্রেন, হাই-টেক রাস্তা, স্কাই -স্ত্রে পার বিল্ডিং নেই।
সীমান্তবর্তী তাইওয়ান, তিববত, পূর্বতুর্কিস্থানের সিনজিয়াং,ইনার মঙ্গোলিয়া, হংকং, মাঞ্চুরিয়া, ম্যাকাউ, গুয়াংসি, নিংসিয়া প্রভৃতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলি চীন গায়ের জোরে কবজা করে রেখেছে। এদের সম্মিলিত আয়তন ৪০ লক্ষ বর্গকিমি যা চীনের মােট আয়তন ৯৭ লক্ষ বর্গকিমির ৪৫ শতাংশেরও বেশি। চতুর্দিকে ১৪টি দেশের সঙ্গে যুক্ত চীনের সীমানা হচ্ছে ২২,১১৭ কিমি দীর্ঘ। আমেরিকান মিলিটারির রিপাের্ট অনুযায়ী, পৃথিবীতে সর্বাধিক সীমান্ত বিবাদগ্রস্ত চীনকে ২৩টি দেশের সঙ্গে সীমানা নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মধ্যবর্তী সাগর যাকে দক্ষিণ চীন সাগর বলা হয়, তা চীনের প্রভুত্বের মধ্যে পড়ে। ইন্দোনেশিয়া ছাড়া অন্য দেশগুলি যেমন, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম– সবাই এই সমুদ্রের মালিকানা পেতে চায়। তাই এই সাগরাঞ্চল যুদ্ধের ময়দান হয়ে উঠেছে।
১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট সরকার গড়ার পর থেকেই বিস্তারবাদী চীনের জমি-জিহাদ শুরু হয়ে যায়। বাঙ্গালি হিন্দুরা সিপিএমের ‘ভেস্ট করে জমি দখলদারির শিকার হননি এমন লােক খুব কমই আছেন। চীনের মানচিত্রে স্পষ্ট দেখা যায়, এক সময়ের ৯টি স্বাধীনদেশ আগ্রাসী ড্রাগনের করালগ্রাসে পড়ে তাদের সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে। এছাড়াও বহু দেশ আছে যাদের জমি আজও চীন জবরদখল করে রেখেছে। সংক্ষেপে বলা যায় কীভাবে অতীতে চীন ওইসব এলাকা দখল করেছিল।
দক্ষিণ বা ইনার মােঙ্গলিয়া : মধ্যযুগে চীনের উপর মােঙ্গলিয়ার শাসন জারি ছিল। মােঙ্গলিয়ার মােট আয়তন ১১.৮৩ লক্ষ বর্গকিমি ও জনসংখ্যা প্রায় ২.৫ কোটি। চীনের উত্তর সীমান্তে মােঙ্গলীয়দের নৃশংস আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মিং রাজবংশ ১৩৬৮-১৬৪৪ পর্যন্ত চীনে দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করায়। সময়ের অন্তরালে চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খানের রাজত্বের পর মােঙ্গালিয়া দুর্বল হয়। এক সময় মােঙ্গালীয়রাই চীনাদের কাছে সাহায্য নিত। চীন দক্ষিণ মােঙ্গালিয়ার অনেকাংশ দখল করে ‘হান চীনাদের বসতি স্থাপন করে স্থানীয় মােঙ্গালীয়দের তাড়িয়ে দেয় যেমনটি করেছে তিব্বতে বা অন্য প্রদেশগুলিতে। চীনে ১৯১১ সালে কুইং রাজবংশের পতনে উত্তর মোঙ্গলিয়ার বিপ্লবীরা স্বাধীনতা ঘােষণা করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান চীনকে আক্রমণ করলে মােঙ্গালিয়া বিধ্বস্ত হয়। সােভিয়েত রাশিয়া জাপানকে পরাজিত করলে স্তালিনের নির্দেশে চিয়াং কাইসেক আউটার মােঙ্গলিয়াকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে। কিন্তু মাওসেতুঙ্গের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট চীন চিয়াং কাইসেককে তাইওয়ানে তাড়িয়ে দিলে উত্তর মােঙ্গলিয়া আবার স্বাধীনতা হারায়। এখন চীনের অধীনতা অস্বীকার করে অধিকৃত ইনার (দক্ষিণ) ও আউটার (উত্তর) মােঙ্গলিয়ার দুই অংশ সম্মিলিত হয়ে এক স্বাধীন মােঙ্গলিয়া দেশ হতে চাইছে।
গুয়াংসি : ভিয়েতনাম সংলগ্ন চীনের দক্ষিণে অবস্থিত এই দেশটির আয়তন ২.৩৭ লক্ষ বর্গকিমি। জনসংখ্যা ৪৮ মিলিয়ন। রাজধানী ন্যানিং। চীনের ফিং রাজবংশ এই প্রদেশকে ১৭২৬ সালেই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়েছিল। ফিং রাজবংশের অবলুপ্তিতে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত বিপ্লবের আগুন জ্বলতে থাকা গুয়াংসির বিপ্লবীরা ১৯১১ সালে স্বাধীনতা ঘােষণা করে। কিন্তু ১৯২৯ সালে দেং জিয়াও পিং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি দাঙ্গার মাধ্যমে দখল করে নেয় এই দেশটিকে। গত কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত বিদ্রোহীদের সহজেই দমন করে চীন গুয়াংসিকে স্বশাসিত প্রদেশের অধিকার দিয়ে এখনও কবজা করে রেখেছে। এখানকার মূল অধিবাসীরা ছিল ঝুয়াং কিন্তু হান চীনারা তাদের তাড়িয়ে এখন সংখ্যালঘু বানিয়ে দিয়েছে।
সিনজিয়াং : চীনের উত্তর পশ্চিমে মরুভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত এই প্রদেশের আয়তন ১৬.৬ লক্ষ বর্গকিমি। এখানকার উইঘুর মুসলমানদের জনসংখ্যা মাত্র ২.২ কোটি। আসলে এটা পূর্ব তুর্কিস্থানের একটা অংশ ছিল। তুর্কী ও মােঙ্গলিয়ার বর্ণসংকর হচ্ছে ইউঘুর মুসলমান। চীনের অধিবাসী না হওয়ার কারণে তারা চীনের আধিপত্য অস্বীকার করেছে। অশান্তির মূলাধার এখানেই। ইন্দো-ইরানি সভ্যতার সঙ্গে এদের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মধ্যযুগে চীন ও ভারত মধ্যএশিয়ার আরব দেশগুলিতে বাণিজ্য করতাে সিন জিয়াং-এর সিল্ক-রুট দিয়েই। মানবাধিকার উল্লঙ্ঘনের কারণে বর্তমানে আমেরিকাও চীনের উপর আর্থিক প্রতিবন্ধ লাগিয়ে সংসদে বিল পাশ করিয়েছে।
তিব্বত : বিস্তারবাদী চীন ১৯৫১ সালে তিব্বতকে গ্রাস করে। অন্যথায় তিব্বত আজ পৃথিবীতে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হতাে। পৃথিবীতে ২৯০২৯ ফুটের সর্বোচ্চ পর্বত। এভারেস্ট এখানেই আছে। ভারত ও চীনের মধ্যে বাফার স্টেট হতাে তিব্বত এবং চীনের সঙ্গে ভারতের কোনাে সীমান্তবিবাদও থাকতাে না। দূরদৃষ্টিহীন নেহরু এটা বুঝতে পারেননি। চীন ২.৫ মিলিয়ন বর্গকিমি। আয়তনের এই বিশাল তিব্বতকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। উত্তর দিকে নেপাল ও ভারতের লাদাখ সংলগ্ন অংশের নাম জিদং। রাজধানী লাসা এখানেই আছে। হিমালয় সংলগ্ন কুইনাইন প্রদেশ চীনের দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত। হান ও হুই চীনাদের এখানে এনে জোর করে বসানাে হচ্ছে। বলপূর্বক ১৪ থেকে ৪০-এর তিব্বতীয় যুবতীদের বন্ধ্যা করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাসিত ১৪তম বৌদ্ধধর্মগুরু দলাই লামা আজ হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ‘স্বাধীন তিব্বত’সরকার গঠন করে সারাবিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন স্বাধীনতা আদায় করার জন্য। আমেরিকার কংগ্রেস প্রতিনিধি স্কট পেরি-সহ ৩২ জন সাংসদ সম্প্রতি তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য সংসদে বিল পাশ করিয়েছেন।
মাঞ্চুরিয়া : উত্তরপূর্ব চীন মােঙ্গলিয়ার মধ্যে অবস্থিত ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সম্রাট হিরােহিতাের জাপানি উপনিবেশ। এই দেশটির আয়তন ১২ লক্ষ বর্গকিমি। জনসংখ্যা ৪৩ মিলিয়ন। সংখ্যাগরিষ্ঠ হানচীনাদের মান্ডারিন ছাড়াও জাপানি, মাথু ও মােঙ্গালীয় ভাষার চলন আছে। প্রধান ধর্ম শিন্টো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হলে ১৯৪৫ সালে সােভিয়েত রাশিয়া জাপানের কাছ থকে মাঞ্চুরিয়াকে ছিনিয়ে নিয়ে কমিউনিস্ট চীনের হাতে সঁপে দেয়। সেই মাঞ্চুরিয়া আজ স্বাধীনতা চাইছে । চীনের অধিকার অস্বীকার করে।
হংকং : আয়তনে এই দ্বীপ ১,১০৪ বর্গকিমি। জনসংখ্যা মাত্র ৭৫ লক্ষ। এখানেও হান সম্প্রদায়ের চীনারা থাকতাে। ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। ১৯৪৮ সালে টনি ব্লেয়ার ‘এক দেশ দুই শাসন প্রণালী’র দ্বারা আন্দোলন প্রশমিত করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে চীনের দখলে পুরােপুরি চলে। এলেও প্রতিরক্ষা এবং স্বায়ত্তশাসনের ভার আগামী ৫০ বছরের জন্য ‘সেন্ট্রাল পিপল সরকারের হাতেই আছে। হংকংয়ের নিজস্ব বিধানসভা, আইন ও সীমানা আছে। ২০১৭ – তে নির্বাচিত মহিলা মুখ্য কার্যনির্বাহীর নাম কেরি লাম। এখানে ২০১৪ সালে ৭৯ দিনের ‘ছাতা আন্দোলনে ক্যান্টোনিজরা চীনের প্রভুত্ব অস্বীকার করে। পুতুল-সরকার আন্দোলনকারীদের উপর জঘন্য অত্যাচার চালায়। একনায়কতন্ত্রী কমিউনিস্ট চীন থেকে মুক্তির কামনায় সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জে মাথুরা আবেদন করেছেন।
তাইওয়ান : চীনের কবজা করা ৩৬ হাজার বর্গকিমি ও ২ কোটি ৩৭ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ তাইওয়ানের যা চীনের সমুদ্রসীমা থেকে ১০০ কিমি দূরের একটা দ্বীপ। রাজধানী তাইপেই। রাষ্ট্রপতি, মুদ্রা, সীমানা এবং আইনব্যবস্থা নিজেদের হলেও আজও এই দেশ “পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার অধীনে। ১৯৪৯ সালে মাওসেতুং ক্ষমতা দখল করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা তাইওয়ানের উপর নিজের প্রভুত্ব জারি করে। চিয়ং কাইসেক এই দ্বীপেই পালিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালে আমেরিকার বিখ্যাত যুদ্ধজাহাজ ‘সেভেন্থ ফ্লিট’ দক্ষিণ চীনসাগরের পাহারাদারি শুরু করে।
প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার তাইওয়ানের সঙ্গে রক্ষাসন্ধিতে স্বাক্ষর করেন। সেই জন্য প্রেসিডেন্টকে তাইওয়ানের রক্ষাকর্তা’বলা হয়। সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জে চীনের আগে তাইওয়ানের সদস্যতা ছিল। কিন্তু সেই সদস্যতাকে খারিজ করে চীনকে ১৯৭১ সালে দেওয়া হয় এবং তাইওয়ানকেই চীনের অভিন্ন অংশ বলে মান্যতা দেওয়া হয়। ভারত ও আমেরিকা এখন তাইওয়ানকে নতুন। স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে মান্যতা দিচ্ছে।
ম্যাকাউ : ১১৫ বর্গকিমি আয়তন ও সাত লক্ষ জনসংখ্যার ছােট্ট এক দেশ যা চীনের ‘ম্যাকাও স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অঞ্চল’ বলেও পরিচিত। ব্রিটিশরা যেমন হংকংকে উপনিবেশ বানিয়েছিল পাের্তুগিজরাও বিগত ৪০০ বছর ধরে ম্যাকউকে কবজা করেছিল। হংকং-এর মতাে একই পদ্ধতিতে, ‘এক দেশ দুই শাসন ব্যবস্থার’নীতি প্রয়ােগে ১৯৯৯ সালে চীনের দখলে চলে আসে ম্যাকাউ। শর্ত ছিল, প্রথম। ৫০ বছর স্বশাসন, কিন্তু তারপর কমিউনিস্ট চীনের লৌহকঠিন শাসন। কিন্তু হংকং-এর মতােই এখানকার জনগণ কমিউনিজমের জায়গায় ডেমােক্রেসি চায়। চীনের লাস ভেগাস এবং এশিয়ায় ইউরােপের শেষ উপনিবেশ ম্যাকাউ কুখ্যাতি অর্জন করেছে। তার বেআইনি ক্যাসিনাে, গণিকাবৃত্তি, জুয়া ও মদের কারণে। দারিদ্র্য ও বেকারিত্ব চরম। ন্যূনতম বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার নেই। আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ও নির্ভরশীল বলেই বিদ্রোহ এতদিন দানা বাঁধেনি। চীনা সরকার অকথ্য অত্যাচারের দ্বারা সমস্ত ডেমােক্র্যাটিকও ক্যাপিটালিস্টিক মতাদর্শকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কতদিন দমননীতি চালাতে পারবে সেটা ভবিষ্যতই বলবে।
নিংসিয়া : চীনের উত্তরপশ্চিমে দক্ষিণ মােঙ্গলিয়া সংলগ্ন এই দেশ ৬৬,৪০০ বর্গকিমির ঊষর মরভূমি। ৬৮ লক্ষ জনসংখ্যা। ভারতীয় ছাত্ররা এখানে ডাক্তারি পড়তে আসে। এখানে ৬২ শতাংশ হান ও ৩৮ শতাংশ হুই সম্প্রদায়ের মুসলমান। চীনাদের বাস। এই প্রদেশ কখনই চীনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে ছিল না। প্রতিবেশী মােঙ্গলিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় চীনা সৈন্যরা এখানে বিশ্রাম করতাে মাত্র। ১৯৫৪ সালে চীন এই দেশকে পুরােপুরি কবজা করলে জনগণ অধীনতা অস্বীকার করে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। কঠোর দমনপীড়নের সাহায্যে বিদ্রোহ দমন করে। ১৯৫৮ সালে কমিউনিস্ট সরকার এই অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করে।
নেপাল : এখন চীন নেপালের জমিও অধিকার করতে চাইছে। তিব্বতে সড়ক যােজনার অছিলায় চীন নেপালের লিপুলেক, কালাপানি ও লিল্গুনদুয়ারে ৩৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে রেখেছে।
ভারত : আকসাই চীন ও কারাকোরাম উপত্যকায় ৪১,১৮০ বর্গকিমি দখল করে রেখেছে চীন ১৯৬২ সালের যুদ্ধে। মােদীর কথায়, এখন আর বিস্তারবাদের যুগ নেই,
এখন বিকাশের যুগ। চীনের ভিতরের খবর দুর্ভেদ্য লৌহপর্দা ভেদ করে আসা প্রায়। অসম্ভব। তবুও জানা গেছে, মানবাধিকার উল্ল ঘন ও বেকারত্ব, পার্টির মধ্যে দলাদলিতে চীনের সাত টুকরাে হবার সম্ভবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। শুধু অপেক্ষা করছে বহির্বিশ্বের সমর্থনের। আর্থিক সংকটের চপেটাঘাতে চীনও কুপােকাত। করােনা মহামারীর কারণে ৩০০ বহুজাতিক সংস্থা এবং তাদের আনুষঙ্গিক সহযােগী ৫৫০টি কোম্পানি চীন ছেড়ে ভারতে আসতে চাইছে। সরকারি দমননীতির কথা সারাবিশ্ব জানে। বিখ্যাত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এস গুরুমূর্তির কথায় ২৫০ বছর আগেও চীন ও ভারতের সম্মিলিত জিডিপি সারাবিশ্বে ৭৫ শতাংশ ছিল তার মধ্যে ভারতের একারই ছিল ৩৪ শতাংশ। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস গােয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে মিথ্যার মােড়কে পরিবেশন করছে। কিন্তু সােশ্যাল মিডিয়ার কারণে জনগণ এখন আসল সত্যের সন্ধান পেয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বেই। তাই চীনে টুইটার, ইউটিউব, গুল নিষিদ্ধ। শি জিনপিং এখন আর আগের মতাে মানুষের আন্দোলনকে রােধ করতে পারছেন না। চীন অপরাজেয় নয় এটা ভারত বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে। ১৯৬৭ সালে চীনের বড়াে পরাজয় হয় ভারতীয় সৈন্যের হাতে। কিন্তু চীনা জনগণকে তা জানতে দেওয়া হয়নি। গত ১৬ জুন লাদাখে ভারতের ২০ জন জওয়ান বীরগতিপ্রাপ্ত হয়েছে জানা গেছে, কিন্তু চীন সরকারি ভাবে নিজেদের হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে। এএনআই-এর মতে ভারতীয় জওয়ানদের প্রত্যাঘাতে ৪৫ জন চীনা সৈন্য মারা গেছে।
পরিশেষে বলা যায়, চীনের বলকানাইজেসন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তিন যুযুধান উপদল—জিয়াং জেমিনের নেতৃত্বে সাংঘাই, হুজিন-তাও-এর বেজিং ও প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং-এর নিজস্ব ঝেজিয়াং উপদলই নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে শেষ হবে। দেশে ডেমেক্র্যোসি আসবে এবং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলি পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত হয়ে স্বাধীনতার আস্বাদন পাবে।
ডাঃ আর এন দাস