পাকিস্তান আন্দোলন ও কম্যুনিস্ট পার্টির ভূমিকা

১৯৩৭ সালের প্রভিন্সিয়াল ইলেকশনে জিন্নাহ্ বহু তোড়জোড় করে ‘কংগ্রেসকে শিক্ষা’ দিতে নেমেও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। নব্বই শতাংশ মুসলমানের রাজ্য উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস, সীমান্ত গান্ধী আবদুর গফফার খানের দাক্ষিণ্যে। মুসলিম প্রধান সিন্ধে মুসলিম লীগ কোন আসন জেতেনি, পাঞ্জাবে মাত্র একটি আসন। বাঙ্গালা অবশ্য জিন্নাহকে ভরসা দিয়েছিল। এখানে ২৪০ টি আসনের মধ্যে লীগ জেতে ৩৯ টি আসন, যা পরবর্তী সময়ে লীগকে ক্ষমতায় আসতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। সারা দেশে মোট ৪৮৫ টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে লীগের প্রাপ্তি মাত্র ১০৮ টি আসন। জিন্নাহর কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে সারা দেশে মুসলমানদের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে মুসলিম লীগকে প্রতিষ্ঠিত করা। ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনে মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রস্তাব নিয়ে আসে। কিন্তু যখন কংগ্রেস এবং মুসলমান প্রধান বিভিন্ন সংগঠন, যেমন ইউনিয়নিস্ট পার্টি, খুদা-ই-খিদমতগার, খাকসার তেহরিক এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করে, মুসলিম লীগ তাদের পাশে পেয়ে যায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘প্রগতিশীল’ বলে পরিচিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে এবং দেশবিভাগ পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি তাদের এই মনোভাবে অটল ছিল।

কম্যুনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি গঙ্গাধর অধিকারী মুসলিমদের ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ‘-এর অধিকার মর্মে একটি প্রস্তাব আনেন। ‘অধিকারী থিসিস’ অনুযায়ী, “Every section of the Indian people, which has a contiguous territory as its homeland, common historical tradition, common language, culture, psychological makeup and common economic life would be recognized as a distinct nationality with the right to exist as an autonomous state within the free Indian union or federation and will have to right to secede from it, if it may so desire. Thus free India of tomorrow would be a federation or union of autonomous states of the various nationalities such as the Pathans, Hindustanis, Rajastanis, Gujaratis, Bengalis, Punjabis etc.” প্রকৃতপক্ষে কম্যুনিস্ট পার্টি ভারতকে ১৮ টি ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব আনে।

অধিকারী থিসিসের ওপর ভিত্তি করেই পি. সি. যোশী পাকিস্তান আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করেন। পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ইয়াসের লতিফ হামদানি লিখেছেন, “The second hole is that Communist Party of India – that most secular and non-communal institution in South Asian polity- wholeheartedly supported the Muslim League and the Pakistan movement during the 1940s.

PC Joshi, one of the tallest leaders of the Communist Party of India wrote explaining the communist position:

‘We were the first to see and admit a change in its character when the League accepted complete independence as its aim and began to rally the Muslim masses behind its banner. We held a series of discussions within our party and came to the conclusion in 1941-1942 that it had become an anti-imperialist organization expressing the freedom urge of the Muslim people that its demand for Pakistan was a demand for self determination….'”

অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টি পুরোপুরিভাবে মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেছিল। পি.সি.যোশী লিখেছেন, “মুসলিম লীগের পিছনে সমস্ত মুসলিম জনতার সমর্থন রয়েছে এবং মুসলিম লীগ সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী করছে। মুসলিম লীগ একটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রতিষ্ঠান এবং পাকিস্তানের দাবী মুসলিম জনগণের স্বাধীনতার দাবী“।

শুধু তাই নয়, ইয়াসের লতিফ হামদানি লিখেছেন, “The Communist Party of India not only supported the Muslim League but gave its own people like Sajjad Zaheer, Abdullah Malik and Daniyal Latifi to the League. Daniyal Latifi, who was trained in law by Jinnah himself, authored the Punjab Muslim League’s manifesto for the 1945-1946 election, which was one of the progressive manifestos in the history of this region.” (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া শুধু মুসলিম লীগকে সমর্থনই করেনি, তাদের লোক সাজ্জাদ জাহির, আবদুল্লাহ্ মালিক এবং দানিয়াল লতিফিকে মুসলিম লীগের হয়ে কাজ করতে বলেছিল। দানিয়াল লতিফি মুসলিম লীগের পাঞ্জাব প্রদেশের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন । জিন্নাহ্ তাঁকে ১৯৪৫-৪৬ এর নির্বাচনের জন্য লীগের ম্যানিফেস্টো রচনার ভার দেন। দানিয়েল লতিফি ১৯৪৫-৪৬ এর নির্বাচনের সময় পঞ্জাব মুসলিম লীগের যে ম্যানিফেস্টো তৈরী করে দেন, যা ঐ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রগতিশীল ম্যানিফেস্টো বলে পরিচিত)।

এই ম্যানিফেস্টো মুসলিম মধ্যবিত্তদের স্বার্থ রক্ষার উপর জোর দেয়। পাশাপাশি এই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয় যে লীগের সরকার মুসলিমদের ব্রিটিশ, হিন্দু ও শিখদের বঞ্চনা ও অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে। লতিফি লীগের পাকিস্তান প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন যে ইসলামিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মীয় বহুত্ববাদ, ঐক্য রক্ষা করা সম্ভব হবে, যা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে সম্ভব নয়

লতিফি কম্যুনিস্ট পার্টির সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র, কৃষক, মধ্যবিত্ত মুসলিমদের মধ্যে লীগকে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হন। লাহোরে ১৯৪৫-এর ২৯ ও ৩০ শে সেপ্টেম্বর দানিয়াল লতিফি ও চৌধুরী রহমতুল্লাহর চেষ্টায় ১.৫ লাখ কৃষকের উপস্থিতিতে কৃষকসভা অনুষ্ঠিত হয়। লতিফি তার ম্যানিফেস্টোর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিত ও প্রগতিশীল অংশকে লীগের ছায়াতলে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। ফলে পাঞ্জাব জুড়ে লীগ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

নির্বাচনের প্রাক্কালে কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপত্র “পিপলস ওয়ার”-এ এন. কে. কৃষ্ণ মুসলিম লীগের দাবির সমর্থনে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যেখানে তিনি লেখেন যে মুসলিমরা ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে পড়া একটি জাতি। তারা হিন্দু ভাইদের দ্বারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার। লীগের পাকিস্তান আন্দোলন একটি স্বাধীনতা আন্দোলন বলেও তিনি দাবি করেন।

১৯৪৬-এর নির্বাচনে পাঞ্জাবে লীগ ৭৩ টি আসনে এবং সারা ভারতে ৪২৫ টি আসনে জয়লাভ করে। মুসলিম ভোটের ৮৯.৫%-ই যায় লীগের পক্ষে। এর ফলে মুসলিম লীগ ভারতের মুসলিমদের মধ্যে একমেবাদ্বিতীয়ম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৪৬-এর নির্বাচন দ্বিজাতিতত্ত্বকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়, যার ফলে ভারতভাগ প্রশস্ত হয়।

আবুল মনসুর আহমদ তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ১৯৪৪ সালের ৫ ই মে ইসলামিয়া কলেজের (বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ) এক সম্মিলনীতে কমিউনিস্ট পার্টির বঙ্কিম মুখার্জী, পি. সি. যোশী পাকিস্তানের দাবীকে ‘ন্যাশনাল মাইনরিটির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ বলে মেনে নেন। (‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’: আবুল মনসুর আহমদ, পৃষ্ঠা: ১৮৭)

কমিউনিস্টদের পাকিস্তান সমর্থনের সবচেয়ে নির্লজ্জ চেহারা ধরা পড়ে গিয়েছিল ১৯৪৬-এর ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ এবং তার পরবর্তী সময়ে। ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য সুরাবর্দী ময়দানে যে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন, সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন নিখিল ভারত শিডিউল কাস্ট ফেডারেশনের নেতা যোগেন মন্ডল এবং কমিউনিস্ট পার্টির জ্যোতি বসু। জ্যোতি বসু পুলিশ প্রহরায় পিছনে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছিলেন সুরাবর্দীর গুন্ডাবাহিনী চৌরঙ্গীর হিন্দুদের দোকানপাট লুঠ করে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার পর জ্যোতি বসু পুলিশ প্রহরায় বউবাজারের পার্টি অফিসে দ্রুত ফিরে যান। (অবশ্য সুরাবর্দীর প্রতি জ্যোতি বসুর আনুগত্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশের সৈয়দপুর রেলকর্মী কেন্দ্র থেকে জ্যোতি বসু প্রাদেশিক আইনসভার মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা ছিল কংগ্রেসের হুমায়ুন কবীরের, কিন্তু মুসলিম লীগের গুন্ডারা সুরাবর্দীর নির্দেশে হুমায়ুন কবীরকে পনেরো দিনের জন্য অপহরণ করে আটকে রাখে।)

সুনন্দ সান্যাল আর সৌম্য বসু তাঁদের ‘The Sickle and The Crescent’ গ্রন্থে কমিউনিস্ট পার্টি এবং মুসলিম লীগের সহযোগিতার বিবরণ দিয়েছেন। ১৩ ই আগস্ট কমিউনিস্ট নেতা অমর মুখার্জী ও মংরু টাটোয়া বালির একটি জুটমিলের গেটে আয়োজিত সভায় শ্রমিক এবং বালির হপ্তাবাজারের দোকানদারদের হুমকি দিয়ে ১৬ ই আগস্টের ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’-এ যোগ দিতে বাধ্য করেন। মহম্মদ ইসমাইল, ট্রাম কোম্পানির কমিউনিস্ট নেতা, তার ইউনিয়নের সভ্যদের বলেন, যে করেই হোক ১৬ই আগস্টের হরতাল সফল করতে হবে। এদিকে কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘স্বাধীনতা’-তে ষোলোই আগস্ট হিন্দুদের কাছে আবেদন করা হয়, “মুসলিম লীগ নেতারা যাই বলুন, মুসলিমেরা কতটা ব্রিটিশবিরোধী আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। অতএব এই দিন যদি কোন বিপথগামী মুসলিম ঝোঁকের বশে কিছু একটা করে বসে, তবে তাকে আপনারা ভাইয়ের একটা ভুল বলেই মেনে নেবেন।”

ঝোঁকের বশে‘ এইরকমই একটি ভুল করে ফেলেছিলেন কমিউনিস্ট নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ ফারুকী। বন্দর এলাকায় মুসলিম বস্তির মধ্যে লিচুবাগানে তিনশো হতভাগ্য ওড়িয়াকে পনের মিনিটের মধ্যে খুন করা হয়। সাধারণ মধ্যবিত্ত মুসলমান গৃহস্থ এই হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছিল এবং এখানে অগ্রণী ভূমিকা নেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ ফারুকী। অবশ্য সিপিআই ‘ভাইয়ের এই ভুল‘-কে ক্ষমা করে এবং ফারুকী পরে সিপিআইএর টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন।

নোয়াখালির হিন্দুহত্যা, ব্যাপকহারে নারীধর্ষণ এবং বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণের সম্পর্কেও কমিউনিস্ট পার্টির কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায় না।

গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এবং নোয়াখালির গণহত্যার পরেও কমরেড অশোক মিত্র, যিনি জ্যোতি বসুর জমানায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী ছিলেন, বলতে পেরেছেন তাঁদের পুরোপুরি সমর্থন ছিল পাকিস্তানের প্রতি। কমরেড আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “আমরা অবশ্য মনস্থির করেছিলাম, যে কংগ্রেস দল আমাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলো, যে দল অথচ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের নেতৃত্ব দেবে, তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ মোহমুক্ত হওয়াই ভালো। আমরা পাকিস্তানের বিশ্বস্ত নাগরিক হবো, সব সম্প্রদায়ের মানুষজন মিলেমিশে নতুন দেশ গঠন করব।”

অশোক মিত্র এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পাকিস্তানেই থেকে গিয়েছিলেন এবং ১৯৪৮-এর ফেব্রুয়ারী মাসে চাঁদ-তারা শোভিত পাকিস্তানের পতাকা হাতে গর্বিত পদক্ষেপে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে কলকাতায় কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন, কিন্তু হয়তো ওপারের ধর্মীয় ঔদার্য দেখার ফলে কয়েকমাস পর পাকাপাকিভাবে ভারতে এসে সাম্যবাদের প্রচার করা মনস্থির করেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে যে দানিয়াল লতিফি প্রায় একার হাতে পাঞ্জাবে লীগের জয়ের পথ খুলে দিলেন, লীগের পাকিস্তান প্রস্তাব সমর্থন করলেন, সেই তিনিই ভারতভাগের পর ভারতেই থেকে গেলেন। ২০০০ সালে দিল্লিতে নিজের বাসভবনে ৮৩ বছর বয়সে লতিফি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাজ্জাদ জাহিরকে ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানে পাঠানো হয়। সেখানে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে বন্দী করা হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন

তথ্যসূত্র:- ১) ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ দশক: দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়, পত্রলেখা।

২) শ্যামাপ্রসাদ, বঙ্গবিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গ: ডক্টর দীনেশচন্দ্র সিংহ, তুহিনা প্রকাশনী।

৩) ভারতকেশরী যুগপুরুষ শ্যামাপ্রসাদ: তথাগত রায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

৪) বামপন্থা ভয়ঙ্করী, বাংলায় ও বিদেশে: তথাগত রায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

৫) আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর: আবুল মনসুর আহমদ।

৬) আপিলা চাপিলা: অশোক মিত্র, আনন্দ পাবলিশার্স।

৭) https://www.cpp.net.pk/2014/11/05/why-communist-party-of-india-supported-creation-of-pakistan/

৮) National Archives, Policy Towards Communist Party of India. File No:- HOME_POLITICAL_1_1943_NA_F_7_23_43

পিনাকী পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.