বেঙ্গল ইমাম এসোসিয়েশন। নাম শুনেছেন? এই সমিতি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা যা জানিয়েছে সেটাই একটু তুলে ধরছি আপনাদের সামনে। গত ৭ ই আগস্ট ২০২০ তে তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
এই সমিতির এক এবং একমাত্র বক্তব্য ছিল বিজেপি, সংঘ এবং ধর্ম(হিন্দু মুসলিম) নিয়ে।
তাদের মতে সংঘ এবং বিজেপি অবস্থান হল ইসলাম ও মুসলিম বিরোধীতা। বিজেপির প্রধান উদ্দেশ্য তারা ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে যা আগামী দিনে আনতে চলেছে রাজনৈতিক, সামাজিক , অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় অধঃপতন।
তাদের প্রশ্ন ছিল, একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী শপথ নেবার পরে তিনি কিভাবে সংবিধান এবং আইন ভেঙে বিশেষ ধর্মের মন্দির উদ্বোধন করতে পারেন।
ঠিক এখানেই প্রশ্ন আসে একজন মানুষ প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি তার ধর্মের প্রতি আগ্রহ দেখাতে পারবেন না? একজন প্রধানমন্ত্রী ঠিক কোন আইন বা সংবিধান ভঙ্গ করে এই কাজটি করছেন তা উল্লেখ করতে পেরেছে এই সমিতি? যদি এই প্রশ্নের সদুত্তর থাকে, তাহলে শুধুমাত্র উত্তর নয়। আশা করব উনারা ন্যায়ের আশ্রয় নিতেই পারেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। কারন তাদের মতেই প্রধানমন্ত্রী আইন এবং সংবিধান ভেঙেছেন। এবার আরো একটি প্রশ্ন আসছে, যে মন্দির ন্যায় সঙ্গত ভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে দীর্ঘ্য আইনি লড়াই এর পরে সেখানে একজনের যাবার ঘটনা তে ঠিক কোন আইন ভঙ্গ করা হল?
এরপর যে গুরুতর অভিযোগটি তোলা হল ,সেটি হল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিয়ে। করোনা এবং লক ডাউন পর্বেই নিজামুদ্দিনের জমায়েত করা অনেককেই নাকি জোর করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তাহলে প্রথমেই একটি একটি ছোট্ট ওঠে ,তাদের গোর করে পাঠানো হয়েছে মানে ঐ ব্যক্তিরা সংক্রামিত ছিলেন না অথবা সন্ধেহজনক ছিলেন না।সেটাই যদি সত্যি হয় তাহলে ঐ ব্যক্তিরা (যাদের জোর করে পাঠানো হয়েছিল) প্লাজমা দিচ্ছে বলে এত প্রচার কেন ছিল? প্লাজমা তো যে কেউ দিতে পারবে।তাহলে তাদের নিয়ে প্রচার কেন? কারন একটাই ,তারা সত্যিই সংক্রামিত ছিলেন এবং সুস্থ হয়ে ফিরে তারা প্লাজমা দান করেছেন বলেই এত প্রচার। সেক্ষেত্রে জোর করার মতো গুরুতর অভিযোগটা কি মান্যতা পাচ্ছে?
পরবর্তী অভিযোগ আসে রামমন্দিরের পুরোহিত এর আক্রান্ত হবার।একটা ছোট্ট প্রশ্ন, ভূমিপূজার ভিডিও প্রথম থেকে শেষ অব্দি দেখানো হয়, সেখানে নিজামুদ্দিন এর মতো জমায়েত ঘটনা ঘটেছে? অথবা যে আক্রান্ত হবার কথা বলা হচ্ছে সেটার সঠিক তথ্য আছে? আক্রান্ত এবং সন্ধেহ করার মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই প্রমান প্রতি ক্ষেত্রেই নেই যেহেতু অভিযোগ বার বার মনগড়া।
এরপর অভিযোগ আসছে হিন্দুদের ব্ল্যাকমেল করে মুসলিমদের হেনস্থা করা হচ্ছে, কেস দেওয়া হচ্ছে এবং বিজেপি ও সঃঘের নিজস্ব ধর্মীয় আইডিওলজি হিন্দুদের মধ্যে প্রসারিত করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে এই বিজ্ঞপ্তি যাদের তরফ থেকে তারা বাংলার। এক্ষেত্রে বাংলার দিকে তাকিয়ে এই অভিযোগ করছেন তো? লক ডাউনে ঈদ এবং রাম মন্দিরের ভূমিপূজার দিন দুটিতে বাংলার প্রসাশন এর ভূমিকা আমরা সবাই দেখেছি।২০১১ থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির ব্যাখা তারা আজ অব্দি দিতে পেরেছেন বা পারবেন? এতদিন যে অভিযোগ তারা করছিলেন এবং এখনো করছেন তার একটাও অভিযোগের প্রমান দিতে পেরেছেন? বাংলাতে যে এক তরফা তোষন এবং শোষন হয় তার ব্যাখা আছে? বাংলাতে রাজনৈতিক খুনের যত ঘটনা ঘটেছে সেই লিস্ট তারা প্রকাশ্যে দিতে পারবেন কারন সহ? তারা প্রকাশ করতে পারবেন বাংলার প্রতিটা ধর্ষনের ঘটনার পিছনে থাকা অভিযুক্তের নাম? এরপরেও আমরা দেখেছি মহরম এবং দুর্গাপুজো নিয়ে সরকারের ভূমিকা।
অভিযোগ উঠেছে ভারতের কোটি কোটি হিন্দু এবং হিন্দুদের বিভিন্ন দেব দেবী নিয়ে গড়ে তোলা মন্দির নিয়ে সমস্যা নেই মুসলিমদের। অথচ মন্দির গড়তে বহু মুসলিম এর কোতল করা হয়েছে এবং মান ইজ্জত লুঠ করা হয়েছে। প্রশ্ন আসে ঠিক কোন কোন মন্দির গড়তে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে তার হিসেব আছে ওনাদের কাছে? সমগ্র ভারত ছেড়ে দিন, শুধুমাত্র বাংলাতে একের পর এক পুজো সংক্রান্ত বিবাদে হিন্দুরা এক তরফা আক্রান্ত হয়েছে প্রসাশনের নির্বিকার ভূমিকার কারনে। শুধুমাত্র সরস্বতী পুজো করার জন্য কি ঘটেছে আমরা জানি। বাংলাতে কেন কাদের জন্য, বিসর্জন পিছিয়ে দিতে হয়েছে তাও আমরা জানি। অথচ অভিযোগ উঠেছে হিন্দুদের বিরুদ্ধে। কেন কাদের জন্য দুর্গাপুজোর মাইক বন্ধ রাখতে হয়েছে তার সদুত্তর আছে?
তাদের উল্লিখিত বয়ান ” হাদীসের বয়ান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ইসলামের শত্রুদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তাদের দলভূক্ত হয় সে মুসলমান থাকবে না।
এখানেই ভেবে দেখুন তাদের অবস্থান কতটা স্পষ্ট। তাদের লেখার প্রথমেই আছে সংবিধান এবং আইনের কথা। অথচ শেষটা ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে। অর্থাত দরকারে সংবিধান এবং দরকারে ধর্ম। যখন যেটা তাদের পক্ষে তখন সেটাই তারা আঁকড়ে ধরেন। এখানে গণতান্ত্রিক দেশে থাকলেও ভোট বা মতাদর্শের দিক থেকে তারা ভেদাভেদ স্পষ্ট করছেন এবং বলে দিচ্ছে কে শত্রু কে মিত্র। তাই বলব মুসলিম ভাইরা আপনারা ভেবে দেখুন, গনতান্ত্রিক দেশে স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষমতা চাইছেন নাকি ধর্মীয় শিকলে বাঁধা থাকতে চাইছেন?