শাপে বর! ডেঙ্গুর কৃপায় করোনা থেকে মুক্ত কলকাতার প্রৌঢ়

 একে রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর! একে কোভিড। তার উপর ডেঙ্গু। কেস সামারিতে স্পষ্ট লেখা সেই কথাই। ‘কোভিড পজিটিভ নিউমোনাইটিস উইথ ডেঙ্গু’।

একই অঙ্গে বাসা বেঁধেছে দুই মারণ রোগ! পরিবার তো বটেই চিকিৎসকরাও দিশেহারা। কোন রোগের চিকিৎসা আগে হবে? কোভিডে অনেক সময় থ্রম্বোসিস হয়। লোহিত রক্তকণিকার উপর হামলা চালিয়ে সার্স-কোভ-২ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করে যে অনুচক্রিকাগুলি জমাট বেঁধে রক্তনালিতে ক্লট তৈরি করে। এটাই কোভিডের (COVID-19) সবচেয়ে বড় সমস্যা। যা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে বারবার। ক্লট যেখানে যায়, সেখানেই হয় বিপত্তি। ফুসফুসে চলে গেলে পালমোনারি এম্বোলিজম, হার্টে গেলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। এই সমস্যা আটকাতে কোভিড রোগীকে অনেক সময় অ্যান্টিকোয়াগুলেটরি ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর ডেঙ্গু হওয়ায় এক্ষেত্রে তার উপায় ছিল না। কিন্তু সমস্যাও যে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে! ৫২ বছরের দিলীপ কর্মকারের ক্ষেত্রে তেমনই হয়েছে। যাকে বলে শাপে বর!

‘কো-মর্বিডিটি’ থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গুর কেরামতিতেই কোভিডকে সহজে জয় করেছেন কলকাতার প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের বাসিন্দা। অন্তত এমনটাই মনে করছেন টালিগঞ্জের এমআর বাঙ্গুর (MR Bangur) হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসকরা। এখানেই ১ আগস্ট ভরতি হন দিলীপবাবু। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রেখেই চিকিৎসা চলছিল। বেড নম্বর এইচডিইউ ১। দিলীপবাবুর রক্তচাপের সমস্যা আছে। নিয়মিত ইউরিক অ্যাসিডের ওষুধও খান। কিন্তু ভরতির সময় রক্তচাপ অনেক কমে গিয়েছিল। ৯০ বাই ৪০। ছিল শ্বাসকষ্টও। তবে কো-মর্বিডিটিকে সঙ্গী করেও দিব্যি দুই রোগকেই টেক্কা দিলেন দিলীপবাবু। শনিবার সুস্থ হয়ে ছুটি পেয়েছেন।

এবার প্রশ্ন হল সত্যিই কি কোভিড রোগীর ডেঙ্গু হওয়াটা শাপে বর?
বাঙ্গুরের এক চিকিৎসক জানালেন, রোজ নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এই ভাইরাসঘটিত রোগের ব্যাপারে। তবে, যেহেতু ডেঙ্গু ও কোভিডের কিছু উপসর্গ একে অপরের পরিপূরক, তাই সুবিধা হওয়াটা আশ্চর্যের নয়। দিলীপবাবুকে শুধু স্যালাইন আর সামান্য জ্বরের কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তাতেই কাজ হয়েছে। তবে, এই নিয়ে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ক্লটের সম্ভাবনা কমে। তাই কোভিডের ক্ষেত্রে তা সুবিধা করে দিতেই পারে। তবে এতটা সরলীকরণ না করাই ভাল। অনেক গবেষণার দরকার। হয়তো দিলীপবাবুর শরীরে সার্স-কোভ-২-র ভাইরাল লোড কম ছিল। তাই প্রদাহ কম হয়েছে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ, ডেঙ্গুর (Dengue) তুলনায় কোভিড দেহে বেশি দিন স্থায়ী হয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.