মামুলি সর্দির সঙ্গী কোষেই হয়ত করোনাবধের (Coronavirus) ব্রহ্মাস্ত্র মজুত। সাধারণ সর্দি-কাশির সময় শরীরে তৈরি হওয়া টি সেলই কালান্তক কোভিডকে রুখে দিয়ে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে করোনা মোকাবিলার নতুন দিশা। গবেষকদের একাংশের দৃঢ় বিশ্বাস, ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এই জ্ঞানকে কাজে লাগালে লাভ বই ক্ষতি হবে না। তাঁদের দাবি, স্পাইক প্রোটিন ছাড়াও নোভেল করোনার যে অংশটি টি সেলের সঙ্গে বিক্রিয়া করছে, তাকে চিহ্নিত করে ভ্যাকসিনের উপাদানে মেলাতে পারলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আখেরে বাড়বে।
নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর। এই চার দেশের ৮৮ জন নন-কোভিড মানুষকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে। যাচাই হয়েছে SARS-CoV-2’র ৪৭৪টি পেপটাইডের (প্রোটিনের অংশ) সঙ্গে ওঁদের টি সেলের প্রতিক্রিয়া। তাতেই মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কী রকম? দেখা গেছে, বেশিরভাগই ‘ক্রস রিঅ্যাক্টিভ।’ অর্থাৎ নোভেল করোনার মতো কোনও ভাইরাস শরীরে হামলা চালালে টি সেল তাকে চিনতে পেরে যুদ্ধ শুরু করছে। ঢাল হয়ে ওঠা এই রক্তকোষের উৎস খুঁজতে গিয়েই গবেষণা অন্য দিকে মোড় নেয়। জানা যায়, এই মেমোরি টি সেল আসলে সাধারণ সর্দি-কাশির সময়েই শরীরে তৈরি হচ্ছে। আরও জানা গিয়েছে, সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী জীবাণুদের একাংশ আসলে SARS-CoV-2’র হরেক ‘তুতো ভাই’ ছাড়া আর কিছু নয়।
৪ আগস্ট বিশ্ববন্দিত সায়েন্স জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসকমহল আশান্বিত। চারটি ইনস্টিটিউট জোট বেঁধে গবেষণা চালিয়েছে। আমেরিকার লাজোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজি, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা স্কুল অফ মেডিসিন এবং অস্ট্রেলিয়ার মারডক ইউনিভার্সিটি। গবেষণায় যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হল, সর্দি-কাশিতে নিয়মিত যাঁরা ভোগেন, তাঁদের SARS-CoV-2, অর্থাৎ এখনকার এই নোভেল করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। হলেও উপসর্গ থাকবে না, থাকলেও মৃদু। ৪০-৬০ শতাংশ মানুষ, যাঁরা কখনওই এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হননি, তাঁদের শরীরে তৈরি হওয়া টি-লিম্ফোসাইট করোনাকে আটকাচ্ছে।
গবেষণাপত্রটি উদ্ধৃত করে ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, SARS-CoV-2 ছাড়াও করোনার আরও চারটি স্ট্রেন রয়েছে। এরা সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী। এদের তৈরি করা টি সেলই ঢাল হয়ে উঠছে কোভিডের সামনে। সোজা কথায় SARS-CoV-2’র অন্যান্য জ্ঞাতিগুষ্টির আক্রমণ সামলানোর অভিজ্ঞতাই এক্ষেত্রে শরীরের অস্ত্র হয়ে উঠছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, জীবাণু হামলা হলে রক্তে মজুত শ্বেত রক্তকণিকার অন্যতম উপাদান লিম্ফোসাইট সক্রিয় হয়ে ওঠে। লিম্ফোসাইট দু’ধরনের – টি (থাইমাস) লিম্ফোসাইট ও বি (বোন ম্যারো) লিম্ফোসাইট। যা সবার রক্তেই থাকে। প্রতিটি শ্রেণির দু’টি ধরন। একটি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। যাকে বলে ‘ইফেক্টর সেল’। আর যারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত থাকে, তারা ‘মেমোরি সেল’। ভ্যাকসিন তৈরি হয় বি লিম্ফোসাইটের মেমোরি সেল তৈরি করার জন্য।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, বি ইফেক্টর প্লাজমা সেল তৈরির মাধ্যমে অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে। আর টি ইফেক্টর কাজ করে দু’ভাবে। একটি অংশ বি লিম্ফোসাইটকে উদ্দীপ্ত করে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে। বাকিরা ভাইরাস আক্রান্ত কোষগুলিকে মেরে ফেলে।