তৃণমূলের কে কে বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তা নিয়ে শাসক দলের মধ্যে অনেক দিন ধরেই সন্দেহের বাতাবরণ। এমনকী খোদ দিদি সম্প্রতি কোর কমিটির এক বৈঠকে, দলের একাধিক নেতার নাম করে বলেছিলেন, ‘কী, আপনাদের কাছে ফোন আসছে তো?’
ভোটের মাঝে সেই সন্দেহ আরও উস্কে দিতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার শ্রীরামপুর লোকসভার চণ্ডীতলায় জনসভা করেন তিনি। ওই মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেন, “দিদি, ২৩ তারিখের পর আপনার অনেক বিধায়কই আপনার সঙ্গে আর থাকবেন না। ছেড়ে চলে আসবেন। অন্তত চল্লিশ জন বিধায়ক আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন!” এখানেই থামেননি মোদী। সুর চড়িয়ে বলেন, “দিদি, তুমহারা বাঁচনা মুশকিল হ্যায়!”
তা ছাড়া চণ্ডীতলার সভা থেকে এ দিন নতুন স্লোগানও তোলেন মোদী,- “চুপ চাপ কমল পে ছাপ/বুথ বুথ মে টিএমসি সাফ।” ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ দেওয়ার এই স্লোগানই নেত্রী তুলেছিলেন বিশ বছর আগে, তৃণমূলের জন্মলগ্নে।
এ বার লোকসভার ভোট প্রচারের গোড়া থেকেই নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা বলছেন, এই নির্বাচনের পরেই বাংলার সরকার পড়ে যাবে! তৃণমূল আবার তার পাল্টা হিসাবে বলছে, ওদের মাথা খারাপ হয়েছে, লোকসভার ভোটে বাংলার সরকার পড়বে কেন!
দেখতে গেলে তার জবাব রয়েছে এ দিন মোদীর কথায়। প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন, লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখে তৃণমূল থেকে এত বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দেবেন, যে মমতার সরকারই ভঙ্গুর হয়ে পড়বে।
মোদীর এই মন্তব্যের জবাব তৃণমূল এখনও সরকারি ভাবে দেয়নি। হয়তো যা বলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলবেন। তার আগে দলের এক নেতা বলেন, চ্যালেঞ্জ করছি চল্লিশ জনের নাম জানান মোদী।
পর্যবেক্ষকদের মতে, শুধু তৃণমূলের মধ্যে নয়, গোটা বাংলার ভোটারদের মধ্যে মোদী এই বার্তা কৌশলে চারিয়ে দিতে চাইছেন যে দলকে শায়েস্তা করতে এখন তৃণমূলের অনেকেই তলে তলে বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সুতরাং নেতারা যদি যোগাযোগ রাখতে পারেন, তা হলে কর্মী সমর্থকরা ইতস্তত করছেন কেন!
অনেকের মতে, এ কারণেই এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো-র প্রসঙ্গও বক্তৃতায় এনেছেন মোদী। কারণ, রাজনৈতিক মহলে ধারনা হল, দিদি-র ভাইপোর আচরণ ও ব্যবহারের কারণেই তৃণমূলের অনেক নেতা, মন্ত্রী অসন্তুষ্ট। তাঁর সম্পর্কে মোদী সমালোচনা করলে বা আক্রমণাত্নক হলে তৃণমূলের অনেকেই খুশি হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ২০০৯ সালের ভোটের পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিজেপি। সে বার বামপন্থী বহু মানুষ রাজ্যে বাম সরকারের উপর বিরক্ত হয়ে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোটকে ভোট দিয়েছিলেন। সিপিএমের সেই নেগেটিভ ভোটে বহু আসনে জিতেছিল তৃণমূল। এ বার তৃণমূলের নেগেটিভ ভোটেই বাক্স ভরাতে চাইছে বিজেপি।