দীর্ঘ পাঁচ শতাব্দীর লড়াইয়ের পর অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের ভূমি পূজন অনুষ্ঠিত হলো ৫ ই আগস্ট, ২০২০ খ্রীঃ। এই ভূমি পূজনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন তীর্থস্থানের পবিত্র মৃত্তিকা, পবিত্র জল ব্যবহার করা হয়েছে। মতুয়া তীর্থক্ষেত্র শ্রীধাম ওড়াকান্দি এবং শ্রীধাম ঠাকুরনগর থেকেও পবিত্র মাটি ও জল যায় এবং তা পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মিডিয়ার একটি শ্রেণী এবং তথাকথিত শহুরে শিক্ষিত একদল অপপ্রচার চালাতে থাকে যে এই মাটি ও জল নাকি ব্যবহার করা হয় নি। এতে মতুয়া সমাজকে অপমান করা হয়েছে বলেও গুজব ছড়ানো হয়।
এই গুজব ও অপপ্রচার চালানো অত্যন্ত হিসাব করে করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) এখন একটা গেরুয়া ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষ জাতীয়তাবাদের ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। যে রাজ্য দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের বাম অপশাসনের জন্য রামের নাম ভুলতে বসেছিল, আজ অলিতে গলিতে রামের পুজো, বন্দনা হচ্ছে। রামধুনে মেতেছে আজ বাঙ্গালী। ফেসবুকে কোটি কোটি ‘জয় শ্রী রাম’ টাইপ হয়েছে এক দিনে। ‘রাম বাঙ্গালী নয়, উত্তর ভারতীয়’ এই প্রোপাগান্ডা ধোপে টিকলো না। তারপর চলেছে একের পর এক মিথ্যা প্রচার, মানুষকে ভুল বোঝানো হলেও মানুষ আজ নিজের ঐতিহ্য, পরম্পরাকে আবার আপন করে নিয়েছে। আর এখানেই ভয় পাচ্ছে বিরোধী শিবির।
এই রাজ্যে একটা সময় গাছের পাতাও পার্টির অঙ্গুলি হেলনে বেড়ে উঠতো। হিন্দু ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না, এত দিনের এই মিথ আজ ভেঙ্গে পড়ছে। গ্রাম বাংলা থেকে শহুরে শিক্ষিত বাঙ্গালী তার আদি কুলদেবতা রঘুবীরের উপাসনায় আত্ম নিবেদন করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি দেখা গিয়েছে সর্বত্র। অথচ এই ঐক্য ভাঙ্গার খেলাই তো চলছে বছরের পর বছর। এই ঐক্য নষ্ট করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির ঘৃণিত চক্রান্তের শিকার হয়ে পশ্চিমবঙ্গ আজ পিছনের সারিতে।
অনেকেই প্রশ্ন করবেন যে এই পবিত্র মাটি ও জল ব্যবহার না হওয়ার গুজবে হিন্দু ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি করে? এই দেশে রাজনীতি হয় সঙ্কীর্ণ জাতপাতের উপর ভিত্তি করে অথচ যারা এই রাজনীতির পুরোধা, যাদের লাভ হয় এই সমীকরণে তারা সবাই দলিতদের বিরুদ্ধে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের অন্যায় অবিচারের গল্প শোনায়। এই দেশে হিন্দুর ঐক্য ভাঙ্গতে দলিত মুসলিম ঐক্য বা নৈকট্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। জনসংখ্যার হিসাবে ১৭% মুসলমান এবং ১৩% দলিত একদিকে হলে মোট ৩০% হয় যা খুব ভালো একটা সংখ্যা যা দিয়ে দরাদরির জঘন্য রাজনীতি করাই যায়।
দলিতরা বিভিন্ন কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে। বর্ণহিন্দুদের উপর এদের ক্ষোভকে উসকে দেয় দলিত মুসলিম ঐক্যের সমর্থনকারীরা। তারা অস্পৃশ্যতাকে আজও তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চায় এবং দলিতদের একটা বিকল্প রাস্তা দেখাতে চায়। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক লাভের জন্য তাদের মুসলিমদের মত একটা রেজিমেন্টেড ফোর্সের ছত্রছায়ায় আনতে চায়। তার জন্য এরা যে কোন ঘটনায় দলিত ছোঁয়া আনে যাতে বর্ণহিন্দুদের প্রতি ঘৃণা ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতার পর থেকে অসংখ্য ঘটনা ও রটনার মারফত একটা ভোট ব্যাঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে যারা এদের কথা অনুযায়ী কাজ করে। এক শ্রেণীর মিডিয়া এই ষড়যন্ত্রে সামিল।
কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হিন্দু স্বার্থ বিরোধী শিবির, সমাজে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টায় অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তিয়াত্তর বছরের ইতিহাসে দলিতদের কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি কারণ তারা হিন্দু ধর্মের বাইরে নয়। দলিত সমাজ আসলে হিন্দু সমাজের মূল ভিত তা এই সব বিভাজনকারীরা জানে। তাই শরীর থেকে পা কেটে বাদ দিয়ে সমাজকে পঙ্গু করার অপচেষ্টা ক্রমাগত করে চলছে। কোন স্তরেই দলিতদের কোন উন্নতি মুসলিম দলিত ঐক্য বজায় রেখে হয় নি, না মুসলিম সমাজের না দলিত সমাজের। এই প্রসঙ্গে ২৪/১২/১৯৩২ শে বাবাসাহেব একটি চিঠিতে লেখেন,
“When Hindus and Muslims fight among themselves, the Untouchables tend to incline towards Muslims. They feel, they would be benifitted if they develope friendship with Muslims. But Untouchables should keep in mind that it is not all that true as it appears and so they should be very careful. What I expereinced at the time of Sarada Act about the Muslim policy, can not called satisfactory. I got first severe jolt when I found that almost all the Muslims got ready to oppose the essential Act like Sarda Act along with the obsolete and puranic, fundamentalists and revivalist orthodox Hindus. And at the time of Round Table Conference, I got second experience now that their attitude can be how narrow and retrograde, like that of sanatani orthodox Hindus.”
এত বছর পরও বাবাসাহেবের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। দলিত সমাজ ব্যবহৃত হয়েছে। ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির আঙিনায় সে শুধুই বোড়ে। প্রকৃত উন্নতি তাদের কেউ করে নি কারণ বিরোধী পক্ষ বৃহত্তর হিন্দু সমাজের উন্নতি চায় নি, তারা মুসলিম সমাজেরও উন্নতি চায় নি। তারা শুধু মাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চেয়েছে। কাজেই মতুয়াদের পরিচয় তারা হিন্দু, তারা দলিত নয়, শুধু মাত্র ভোট রাজনীতির বোড়ে নয় তারা। তাদের ব্যবহার করে সমগ্র দেশের পরিস্থিতি বৈষম্যমূলক করে তুলছে যাতে দেশের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটে। দেশ আজ অতিমারি পরিস্থিতিতে আছে, লড়াই করছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। আজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সব থেকে জরুরি। রাম মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ আসবে। সেটাও কম বড় বিপ্লব নয়। কাজেই এখন সব ধরনের চক্রান্ত বিফল করে ঐক্যবদ্ধ থাকাই রাজনৈতিক কারণে সব থেকে প্রয়োজনীয়। নাহলে কখন যে যোগেন মণ্ডলের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে তার ঠিক নেই।
দেবযানী হালদার (Devyani Haldar)