ভারতীয় সেনা ও চিরায়ত বামপন্থী বিদ্বেষঃ

বিশিষ্ট বামপন্থী লেখিকা অরুন্ধতী রায় ২০০২ সালের ১৮ ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার সান্টা ফে তে ‘Come September’ শীর্ষক একটি বক্তব্যে বলেছেন…. “In India, not hundreds, but millions of us would be ashamed and offended if we were in anyway implicated with the present Indian Government’s fascist policies which, apart from the perpetration of state terrorism in the valley of Kashmir……
অর্থাৎ, স্বৈরাচারী ভারত সরকার কর্ত্তৃক কাশ্মীরে সংঘটিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের কারনে তার মত লক্ষ লক্ষ মানুষ লজ্জিত। কাশ্মীর উপত্যকায় প্রতিনিয়ত মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে ঘটে চলা নারকীয় হত্যালীলা নিয়ে কোনো শব্দ ব্যয় না করে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের মাতৃভূমিকে স্বৈরাচারী বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ পরিচালনাকারী বলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা বামপন্থীরাই বলতে পারবেন। Freedom of expression এর দোহাই দিয়ে যদিও বা অরুন্ধতী রায়ের বক্তব্য কে উপেক্ষা করা যায় কিন্তু বিষ্ময়ে হতবাক হতে হয় যখন দেখা যায় এই দেশদ্রোহী বক্তব্য কে বিকৃত মতাদর্শের কিছু মানুষ এদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে যুবা মননে কদর্যতার ছাপ ফেলতে উদ্যত হয়। হ্যাঁ, প্রতিটি জাতীয়তাবাদী চিন্তনে সিক্ত সংগ্রামী হৃদয় ভীষণভাবে অবাক হবে যখন জানবে যে এই বক্তব্যটিই বাম শাসিত কেরালা রাজ্যের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এ ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের উদ্দেশ্যে। ছাত্র যুব মননে দেশ বিরোধিতার বীজ বপন করার এই উদগ্র নগ্ন প্রচেষ্টা কেন? কেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের নামে পরোক্ষভাবে বারংবার সেনাবাহিনী কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার এই অপচেষ্টা? কেনই বা দেশ ও সেনাবাহিনী বিরোধী বক্তব্য বারংবার বাম শাসিত কেরালা থেকেই উঠে আসে?? স্মরণে রাখতে হবে ১৯৬২ এর ভারত-চীন যুদ্ধের পর কেরালার বামপন্থী নেতা নাম্বুদিরিপাদের সেই কুখ্যাত উক্তি…… “the Chinese had entered territory that they thought was theirs and hence there was no question of aggression”. কেরালার আর এক বামপন্থী নেতা ও জে জোসেফের নেতৃত্বে ঘোষণা করা হয়, এই যুদ্ধে আহত ভারতীয় সেনাদের রক্তদান পার্টি বিরোধী কার্যকলাপ বলে পরিগণিত হবে। ভি এস অচ্যুতানন্দ রক্তদানের পক্ষে সওয়াল করলে, তাকে পার্টি বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে অভিযুক্ত করে পার্টির সেন্ট্রাল কমিটি থেকে অপসারিত করা হয়। একই ঐতিহ্য বজায় রেখে, মাত্র কিছুদিন আগে, ২০১৭ সালে সিপিআইএমের কেরালা রাজ্য সম্পাদক কোদিয়ারি বালাকৃষ্ণনের মাতৃভূমি রক্ষাকারী সেনাবাহিনীর সম্বন্ধে উক্তি…. ভারতীয় সেনার কাজ মহিলাদের অপহরণ করে ধর্ষণ করা! মাতৃভূমি বিরোধী ও দেশের সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙ্গার চক্রান্তে সামিল এই অপরিসীম বিকৃতির শেষ কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে নবযৌবনের স্বভাবজাত বৈপ্লবিক মনন কে দেশ বিরোধিতার বিষ বাষ্প দিয়ে আদ্র করে তোলার এই অপচেষ্টা কেন ও কিসের স্বার্থে? বিকারগস্ত যারা ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আগুন নিয়ে খেলছেন, ভুলে যাবেন না মূলদেশে অগ্নি সংযোগ করলে, ক্রমে সেই অগ্নি উর্দ্ধদেশে উঠতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তা সমগ্র বসুন্ধরা কে গ্রাস করে। অদ্যাবধি যদি নিজ সত্তার সম্পূর্ণ বিসর্জন না দিয়ে থাকেন, যদি পূর্ণ রূপে ইন্দ্রিয়ানুগতার বশীভূত না হউন, তবে অনুরোধ রইলো সত্তার অনন্ত শক্তির অপব্যয়ে ব্যস্ত না হয়ে চিন্তার উপর প্রয়োগ করে সমাজ মঙ্গলে সুস্থ মনীষার বিকাশ ঘটান।

ডঃ তরুণ মজুমদার (Dr. Tarun Majumder)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.