দার্জিলিং: ২০১৭ সালে রাজ্য পুলিসের গুলি চালানোতে ১১ টি তরতাজা প্রাণ অকালে ঝরে পড়ে পাহাড়ে যা, গোর্খাদের মমতা সরকারের উপর রোষ কে আরও বাড়িয়ে দেয়। এদিকে, পাহাড়ে হাওয়া তৃণমূল বিরোধী তা ক্রমেই বোধগম্য। আবার, বিজেপির রাজু বিসতা যিনি মনিপুরের গোর্খা হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল প্রার্থীর থেকেও বেশী গোর্খা সমর্থন পাচ্ছেন। তাই বলা যায় যে, বিজেপি সম্ভাব্যভাবে দার্জিলিং আসনটিতে নিজেদের ক্ষমতা বজায় রাখবে।
কোচবিহার : মানুষ পাচার এই এলাকার এক বড় সমস্যা এবং বলা বাহুল্য তৃণমূল তা রুখতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই মানুষের ক্ষোভ বিজেপিকে জয়যুক্ত করবে ।
রায়গঞ্জ : এই ক্ষেত্রের ভোটাররা চিরকাল দিল্লীর আসনে আসীন পার্টির প্রতিনিধিকে জিতিয়ে এসেছেন এবং বিরোধী পক্ষের কাউকে জেতান নি তাই এবারও এই আসনটি সম্ভাব্যভাবে বিজেপির দখলে আসা উচিত।
বালুরঘাট : এই কেন্দ্রের ভোটাররা তাদের নির্বাচিত সাংসদকে বিরোধী আসনে বসে থাকতে দেখতে দেখতে বিরক্ত তাই তারাও এবার বিকাশের সাফল্যের ছোঁয়া পেতে আগ্রহী। বর্তমান সাংসদ ও তৃণমূল প্রার্থী নাট্যকর্মীর কাছে এবারের লড়াইটা বড় শক্ত। বালুরঘাট বাসীরা যেন আগে থেকেই বুঝে গিয়েছে দিল্লী তে এনডিএ ক্ষমতায় আসতে চলেছে তাই তারা চাইছে বালুরঘাট কেন্দ্রে পদ্মফুল ফুটিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক নীতির লাভ পেতে ।
আসানসোল : হিন্দীভাষীদের আধিক্য থাকা এই কেন্দ্র ২০১৪ তে বিজেপি কে জিতিয়ে ছিল যদিও ১৫% মুসলিম ভোট তৃণমূল পেয়েছিল । সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা যদিও এবারও বিজেপিকেই ভোট দেবে। এদিকে প্রাক্তন অভিনেত্রী মুনমুনসেন কে প্রার্থী করায় তৃণমূলেও অসন্তোষ রয়েছে তাই এই আসনটিও বিজেপি ধরে রাখবে।
বর্ধমান-দূর্গাপুর : বিজেপির প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া তাঁর স্কুল জীবনের ছাত্রাবস্থা দুর্গাপুরেই কাটিয়েছেন, তাই একটা অ্যাডভানটেজ বিজেপি থেকেই যাচ্ছে।
হুগলি, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর,বাঁকুড়া , বিষ্ণুপুর ও ব্যারাকপুর :
এই সকল কেন্দ্রে ব্যাপকভাবে তৃণমূলের বিপক্ষে ভেতরে ভেতরে হাওয়া চলছে এবং এর বিশাল লাভ বিজেপি পেতে চলেছে ।
জনগণ পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজের ভোট নিজে না দিতে পারায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং তৃণমূলকে বিদায় জানাতে ব্যাপকভাবে আগ্রহী তাই বিজেপির অসীম সম্ভাবনা এই কেন্দ্র গুলিতে রয়েছে ।
ঘাটাল : বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাঁর প্রতিপক্ষ অভিনেতা তৃণমূল প্রার্থীর থেকে অনেক বেশী। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিস সুপার ছিলেন দীর্ঘ ৬ বছর তাই তার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এ ব্যাপারে অনেক বেশী। তাই সরাসরি বিজেপির সুবিধা এই কেন্দ্রেও অনেক বেশী।
পুরুলিয়া : চিরাচরিত গেরুয়া দুর্গ বলে পরিচিত পুরুলিয়া রাজ্যে গেরুয়া উত্থানে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং এখান থেকে বিজেপির জয়লাভ সুনিশ্চিত।
যদিও অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভাবে প্রার্থীদেরকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে এই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে তবুও বলতেই হয় যে এটা শুধুমাত্র সম্ভাব্য ফলের অনুমানমাত্র এবং বাংলায় তথা পুরো দেশের নির্বাচনের ফলের ভবিষ্যতবাণী কখনই একেবারে পুংখ্যানুপুংখভাবে করা সম্ভবপর নয় ।
হাওড়া : বিজেপি বাংলায় যেভাবে অগ্রগামী ও প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে তাই অভাবনীয়ভাবে তারা বিপক্ষকে ধূলিসাৎ করতে বদ্ধপরিকর। একদা বাংলার শেফিল্ড বলে পরিচিত শিল্পসমৃদ্ধ হাওড়া আজ বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের শিকার এবং জেহাদীদের কারখানাতে পরিণত। এক সাম্প্রতিকতম নির্বাচনী সমীক্ষা অনুযায়ী ৩৪% লোক বিজেপিকে ও ৩২% লোক তৃণমূলকে ভোট দিতে ইচ্ছুক। তাই লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি এবং বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা আছে।
কলকাতা উত্তর : এখানেও ক্ষমতাসীন সাংসদের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের চাপা ক্ষোভ রয়েছে এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখানে তৃণমূলকে যথেষ্ট চাপে রেখেছে এবং প্রচুর পরিমানে হিন্দু অবাঙালি ও বাঙালি ভোট বিজেপির প্রতীকের তলায় আসার সম্ভাবনা থাকায় এই কেন্দ্রেও বিজেপির জয়লাভের বাড়তি সম্ভাবনা রয়েছে।
দমদম : লড়াইটা খুব হাড্ডাহাড্ডি এখানকার কেন্দ্রে। বর্তমান সাংসদ সাংগঠনিক ভাবে চেষ্টা করলেও তিনি স্থানীয় নেতাদের সাথে তেমন নিবিড়ভাবে যুক্ত নন এবং দমদমের বিজেপি প্রার্থী এই অঞ্চলে সাড়া ফেলতে ব্যাপকভাবে সক্ষম এবং তাঁর ব্যাক্তিত্ব বিরোধী বামকর্মীদেরও প্রভাবিত করতে সক্ষম এবং ভোটবাক্সে বামকর্মীদের ভোট বিজেপির দিকে গেলে (যার সম্ভাবনা প্রচন্ডভাবে বিদ্যমান)দমদমে আবার পদ্মফুল ফোটা অসম্ভব নয়।
কাঁথি ,তমলুক : তৃণমূলের অন্যতম দুই শক্তঘাটি বলে পরিচিত। এই কেন্দ্র বরাবরই দাপুটে অধিকারী পরিবারের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা গেলেও এই অঞ্চলে হালে আইন ব্যবস্থার অবনতি, শিশু পাচার ও স্হানীয় লোকেদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনিহা, ব্যবসায়ী ও পর্যটন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের হয়রানি, নিচু তলার কর্মীদের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি তৃণমূলের ভোটকে ব্যাপকভাবে কম করতে পারে এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশাতে বিজেপির ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের সুফল এই দুই কেন্দ্রে বিজেপির জয় পাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়েছে। যদিও লড়াই শক্ত তবুও শেষ পর্যন্ত ভোটবাক্সে মানুষের মতদানের প্রতিফলনের ফলে আসন্ন অপ্রত্যাশিত ফলের জন্য বিজেপি খুবই আশাবাদী ।
কলকাতা দক্ষিণ : এই কেন্দ্রটি বরাবর তৃণমূলের শক্তঘাটি বলে পরিচিত কারণ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এখান থেকে সাংসদ হিসাবে অনেকবার জয়লাভ করেছেন এবং বর্তমানে তিনি এই সংসদীয় কেন্দ্রের ভবানীপুর বিধানসভার বিধায়ক। কিন্তু এবারে মুখ্যমন্ত্রীর এক অত্যন্ত আস্থাভাজন বিগত সাংসদ ভোটে নামেন নি এবং যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে কেন্দ্রের লোকজন তার সংসদীয় যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন । অন্যদিকে, বিজেপির প্রার্থীর পারিবারিক ঐতিহ্য ও যশ তাকে অনেকটাই সাহায্য করছে। বিগত দিনগুলির বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের উপর নজর রাখলে এবং বহু হিন্দিভাষী ভোটার ও হিন্দুভোটের একত্রীকরণ দেখলে এটা বলা যায় যে, এই শক্তঘাটিতেও অঘটন ঘটাতে বিজেপি সক্ষম হবে।
কৃষ্ণনগর : গেরুয়া শিবিরের জয়গাথা রচনা হচ্ছে বাংলার এই তাঁতশিল্প ও মৃৎশিল্প কেন্দ্রে। পূর্বতন সাংসদ তাপস পাল ঐ কেন্দ্রের জন্য কিছুই করে উঠতে পারেন নি এবং এই অঞ্চল ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে তাই জনগন এবার পুরোনো ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে উন্নয়নের পথে হাঁটতে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা কে বাড়িয়ে তুলছেন।