করোনা শনাক্তকরণে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার শুরুর দিনেই কলকাতায় মিলল বিস্ফোরক তথ্য। মাত্র ৫০ জনের পরীক্ষা রিপোর্টে যে ১০ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ল তাদের মধ্যে সাতজনই সম্পূর্ণ উপসর্গহীন। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার প্রথম শিবিরেই শনাক্ত হওয়া এই দশজনের মধ্যে নয়জনই দক্ষিণ কলকাতার জনবহুল চেতলা সিআইটি মার্কেটের দোকানদার। ওই এলাকায় বহুতল থেকে বস্তি, ঘন জনবসতিতে এই সংক্রমিত দোকানদাররা করোনা সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন পুরসভার হেলথ অফিসাররা।
রিপোর্ট হাতে আসার পর, ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর স্বয়ং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমেরই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে। কারণ, এই দোকানদাররা নিজেরা যেমন জানতেন না তাঁদের থেকে চেতলায় বাজারে আসা বহু ক্রেতা ও অন্য ব্যবসায়ীদের শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। এমনকী বেশ কয়েকজনের পরিবারও জানেন না, যে তাঁদের গৃহকর্তা করোনা পজিটিভ। রিপোর্ট হাতে পেতেই চেতলার এই বাজার থেকেই যে ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় করোনা প্রবলভাবে সংক্রমিত হয়েছে তা স্বীকার করেন পুরসভার হেলথ অফিসাররা। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট নিয়ে ৫০ জনের মধ্যে ১০ জনের শরীরে কোভিড পাওয়া মাত্র সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করান ফিরহাদ। শুক্রবার ফের ওই অহীন্দ্র মঞ্চেই বাজার এলাকার আরও অনেক মানুষের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হবে।
পুরসভা সূত্রে খবর, আট জনকে বালটিকুরির সেফ হোমে এবং একজনকে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যজনকে হোম আইসোলেশনে পাঠিয়েছেন পুরমন্ত্রী। র্যানডাম অ্যান্টিজেন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে, শহরে বাজার থেকেই কলকাতায় করোনা দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। বস্তুত এই কারণেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দে্যাপাধ্যায় এদিন পুরসভায় করোনা নিয়ে বৈঠক করে জানিয়েছেন, শহরের বাজারগুলিতে বিশেষভাবে পরীক্ষা ও নজরদারির ব্যবস্থা আরও নিবিড়ভাবে চালু হচ্ছে।
আধ ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিটেই সন্দেহভাজন রোগীর শরীরে করোনার উপস্থিতি জানিয়ে দিতে এদিন কলকাতা ও জেলায় চালুু হল অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এতদিন ধরে যে পদ্ধতিতে রোগীর লালারস না নাক থেকে রস সংগ্রহ করে পরীক্ষা হচ্ছিল সেই আরটিপিসিআর মাধ্যমে রিপোর্ট পেতে প্রায় দু’দিন লাগছিল। কিন্তু এই অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে আগের মতই গলার লালারস বা নাকের রস সংগ্রহ করলেও সর্বাধিক ৪০ মিনিটে করোনা আক্রান্ত কি না তার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। অন্য রোগে অসুস্থ রোগী হাসপাতালে এলে এই টেস্ট করেই ফল হাতে পেলেই তাঁর চিকিৎসা শুরু করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ভবানীপুর বিধানসভার চেতলা অহীন্দ্র মঞ্চে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা করেন স্বয়ং পুরমন্ত্রী ও পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়,“শহরে ১৬টি বরোতেই প্রতিদিন এই অ্যান্টিজেন টেস্ট চলবে। দৈনিক আটশো থেকে হাজার মানুষের পরীক্ষা করা হবে।”
শহরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পাশাপাশি কলকাতায় যেমন পুরসভার উদ্যোগে নয়টি অ্যাম্বুল্যান্স (মোবাইল ল্যাব) ঘুরে ঘুরে লালারস সংগ্রহ করছে এবং আরটিপিসিআর পদ্ধতিতেই রিপোর্ট দিচ্ছে সেই পরিষেবাও চলবে। এদিন চেতলায় অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে প্রতি ব্যাচে এক সঙ্গে ১০ জনের টেস্ট করা সম্ভব হয়েছে মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই। তবে এই পদ্ধতিতে যাঁদের নেগেটিভ আসছে কিন্তু শরীরে ‘স্বাদ বা গন্ধ পাচ্ছেন না’ এমন উপসর্গ আছে তাদের ফের আরটিপিসিআর-এ মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। প্রতিটি জেলার মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালেও এই অ্যান্টিজেন কিট পাঠানো হয়েছে। সেখানেও এখন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে এই পরীক্ষা হবে।