ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হোক ‘সমাজবাদ’ (Socialist) এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ (Secular) শব্দদুটি। এই দুটি শব্দ ভারতের ঐতিহ্যের পরিপন্থী এবং বামপন্থী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। এবার এই মর্মে একটি আবেদন জমা পড়ল দেশের শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) । বলরাম সিং ও করুণেশ কুমার শুক্লা নামের দুই আইনজীবী এবং প্রবেশ কুমার নামের জনৈক ব্যক্তি যৌথভাবে আবেদনটি করেছেন। তাঁদের দাবি, সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ওই দুটি শব্দ ফেলে দিতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে ২০১৬ সালে একইভাবে সংবিধান থেকে এই শব্দদুটি ফেলে দেওয়ার দাবিতে এলাহাবাদ হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। কিন্তু এলাহাবাদ হাই কোর্ট সেই মামলা গ্রহণ করেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনী হিসেবে ২(এ) ধারা অনুযায়ী প্রস্তাবনায় এই শব্দদুটি যোগ করা হয়েছিল। তাঁর আগে থেকেই অবশ্য ভারত সব ধর্মের মানুষকে সমানাধিকার দেওয়ার চল ছিল। সংবিধানে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতা এই দেশের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মামলাকারীদের দাবি, সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দদুটি যোগ করাটা আসলে সংবিধানেরই অনুচ্ছেদ ১৯(১)(এ) এবং অনুচ্ছেদ ২৫-এর পরিপন্থী। উল্লেখ্য, ১৯(১)(এ) ধারায় ভারতবাসীর বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। ২৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা।
আবেদনকারীদের দাবি, সংবিধানে (Constitution of India) এই শব্দদুটি কার্ল মার্কসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েই যোগ করা হয়েছে। কিন্তু ভারতের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, ভারতবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে মার্কসের মতবাদ বা কমিউনিস্ট ভাবধারা মেলে না। এই শব্দদুটি ভারতের ঐতিহাসিক এবং সামাজিক ভাবধারার পরিপন্থী। উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো দেশের কোনও রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশনের জন্যও ওই দলের সংবিধানে ‘সমাজবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দদুটি থাকা বাধ্যতামূলক। সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীরা এই নিয়মটিও প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, দেশের সংবিধানের মতোই রাজনৈতিক দলগুলির সংবিধানেও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এবং ‘সমাজবাদ’ অপ্রয়োজনীয়।