দ্বিতীয় বর্ষের এক দলিত ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় বোলপুর আদালত সোমবার ওই মেয়েটির বাড়িতে কাজ করা রাজমিস্ত্রি সেখ হাফিজুলকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার রায় দিয়েছে। অভিযোগ ছিল – ব্ল্যাকমেইল করে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে, 9 ই ডিসেম্বর, 2017, বোলপুরের নিকটবর্তী রজতপুরে নিজের বাড়িতে শরীরে আগুন দেয় ওই কিশোরী। 12 ডিসেম্বর, 2017, বোলপুর (Bolpur) থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং 18 ই কলকাতা মেডিকেল কলেজে মারা যায় মেয়েটি ।
এই ঘটনায় তীব্র রাজনৈতিক চাপান-উতর শুরু হয়ে যায় ।জাতীয় মহিলা কমিশন ঘটনার তদন্ত করার জন্য সদস্য সুষমা সাহু কে সে সময় পাঠান । পুরো ঘটনায় সাহু পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন । তার অভিযোগ ছিল প্রমাণ লোপাট করে পুলিশ অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। বীরভূম জেলা পুলিশ সুসমা সাহুর বিরুদ্ধে নথী ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলো ।
বোলপুর আদালতের সরকারী আইনজীবী তপন দাস বলেন, ‘বোলপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগ অনুসারে ওই মেয়েটি যখন বাড়ির বাথরুমে স্নান করছিল তখন একজন রাজমিস্ত্রি-শেখ শেখ হাফিজুল- তার মোবাইল নিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলেন। পরে ক্লিপগুলি দেখিয়ে তিনি তার যৌন নির্যাতন করেছিলেন এবং ভিডিও প্রচারের হুমকি দিয়েছেন। হাফিজুলকে আইপিসি 306/376/120 বি ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আজ তাকে শুধুমাত্র ৩০৬ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে । অন্যান্য ধারাগুলি আদালতে প্রমাণিত হয়নি। আজ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কল্লোল কুমার দাস তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।’
মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা এই রায় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’ মেয়েটির পক্ষে আইনজীবী দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘তার মৃত্যু -ঘোষণায় মেয়েটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে তাকে বারবার হাফিজুল ধর্ষণ করেছিলেন। প্রথম থেকেই পুলিশ প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। একজন আইনজীবী হিসাবে আমার ধারণা, পুলিশের অবহেলার কারণে মেয়েটি ন্যায়বিচার পেল না। আমরা উচ্চ আদালতের দরজায় কড়া নাড়ার কথা ভাবছি।’
সেই সময় এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি আন্দোলন সংগঠিত করেছিল এবং বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার সফরের সময় এনসিডব্লিউ সদস্য সুসমা সাহু অভিযোগ করেছিলেন যে পুলিশ যথাযথভাবে প্রমাণাদি সংরক্ষণ করেনি। তিনি পুলিশকে সময়মতো ঘটনা সম্পর্কে অবহিত না করার জন্য বোলপুর থানার তৎকালীন আইসিকে দুটি হাসপাতালের দুই মেডিকেল সুপারিনটেন্ডেন্টকে কারণ- দর্শানোর চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তৎকালীন পুলিশ সুপার এন সুধীরকুমারকেও সাহু কটূক্তি করেছিলেন।