তুরস্কর (Turkey) ভয়ে থরহরি কম্পমান সারা ইওরোপ. ইওরোপের ভবিষ্যত ধর্মীয় জনবিন্যাস (ডেমোগ্রাফি)ও সভ্যতার রূপরেখা কি হবে তার চাবিকাঠি এখন তুরস্কর হাতে. ইওরোপিয় ইউনীয়নে তুরস্ককে নেওয়া হবে কিনা এবং নেওয়া হলে কতটা গণতন্ত্র কতটা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রয়োজন ইওরোপিয়ান ইউনিয়নের আসন পাওয়ার জন্য ইত্যাদি নিয়ে তুরস্ককে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে বেশ অনেকদিন. পাশা উল্টে গেছে সম্প্রতি. এখন তুরস্ক চালকের আসনে. এখন প্রশ্ন তুরস্ক ইওরোপিয় ইউনিয়নে ঠাই পাবে কি না তা নয়, বরং ইওরোপটাই তুরস্ক হয়ে যাবে কিনা.
তুরস্কের হাতে তুরুপের তাস ‘ডেমোগ্রাফিক ভাইরাস’ বা তথাকথিত ‘সিরিয়ান রিফিউজি’.
ইসলামিক রাজতন্ত্র সিরিয়া, সেখানে মুসলমানদের বিভিন্ন গোষ্ঠির লড়াই. পিছনে রাশিয়া আমেরিকা মদত অনেকের. কিন্তু লড়াইটা মূলত: মুসলমানদের নিজস্ব. মুসলমানদের অন্তর্কলহর জন্য বিস্থাপিত মানুষদের হাতিয়ার করে নিল তুরস্ক. তুরস্ক জানে শুক্রবারের নামাজের পরে মুসলমানরা খ্রিস্টানদের এবং বেহায়া ইওরোপিয় সভ্যতাকে যতই গালি দিক না কেন তাদের বসবাসের স্বপ্নের দেশ সৌদি আরব বা কোন মুসলিম দেশ নয়. তাদের স্বপ্নের দেশ ইওরোপ আমেরিকা.তাই ‘সিরিয়ান রিফিউজি’র নামে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সমস্ত মুসলমান যুবকদের মনে ইওরোপ গমণের স্বপ্নকে ঢুকিয়ে দিল তুরস্ক. এরা হয়ে গেল তুরস্কের তুরুপের দাস.
গত পাঁচ বছর ধরে এই তুরুপের তাস দের হাতে নিয়ে ইওরোপকে ধমকে যাচ্ছে তুরস্ক. শুধু ভয় দেখানো নয়, গত দশ বছরে দশ লক্ষর বেশি মুসলমান জেহাদী যুবক কে পাঠিয়েছে ইওরোপে. নিজ সীমান্ত রক্ষা করতে অপারগ, আত্মসন্মানহীন ইওরোপ বাধ্য হয়েছে এই অনুপ্রবেশ মেনে নিতে. নপুংশক ইওরোপ অনুপ্রবেশ রুখতে চেয়েছে তোষণ নীতির মাধ্যমে. ঘুষ. কারি করি টাকা ঘুষ দিয়ে চলেছে তুরস্কককে. জেহাদী অনুপ্রবেশকারীদের অত্যাচারে ব্যতিব্যস্থ ইওরোপের মানুষ. শ্বেতকায় মহিলারা অহরহ তাদের শিকার.
তোষণ নীতি কোনো সময়ে, কোনো দেশে সফল হয় নি. তাই ঘুষের পয়সা তুরস্ক কে দমানো তো দুরের কথা বরং আরো উত্সাহিত করছে একদা সেকুলার ও গণতান্ত্রিক তুরস্ককে আরো ধর্মান্ধ ইসলামিক রাষ্ট্রতে পরিণত করতে. সেই পথে আগুয়ান তুরস্ক সম্প্রতি একদা বিশ্ববিখ্যাত গির্জা হায়া সোফিয়াকে পুনর্বার মসজিদে পরিবর্তিত করেছে.
হায়া সোফিয়া কোন সাধারণ গির্জা নয়. একটু ইতিহাসে ঢোকা যাক.
তুরস্কর বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে অবস্থিত হায়া সোফিয়া আদতে একটি বৃহত গির্জা. ইস্তাম্বুল শহরটির আগের নাম কনস্ত্যান্তিনিপল. রোমান সম্রাট কন্সতান্তিন 324 সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই শহর. ইওরোপ ও এশিয়ার সঙ্গমস্থল বসফরাস প্রণালীর কুলে ‘পূর্বের রোম’ নামে প্রসিদ্ধ এই শহর গড়ে তোলা হয় রোম শহরের আদলে. রোমের সম্রাট জাস্টিনিয়ান প্রথম এর রাজত্বকালে ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে এখানে নির্মাণ করা হয় বিশ্ব বিখ্যাত গির্জা হায়া সোফিয়া. তখন থেকে বহুদিন পর্যন্ত্য এটি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ প্রার্থনা স্থান এবং একটি সর্বপ্রথম পূর্ণঝুলন্ত গম্বুজ যা বাইজেন্টাইন স্থাপত্যের[৪] প্রতীক হিসাবে বিবেচিত.
২৯ই মে, ১৪৫৩ অটোমান বাদশা মেহমুদ-২ বাইজান্টাইন সম্রাট কনস্তানতাইন -১১ কে পরাজিত করে প্রবেশ করেন কনস্ত্যান্তিনিপলে. শহর দখলের পর মেহমুদের সৈন্যরা হায়া সোফিয়াতে আটকে থাকা নিরীহ নরনারীদের ওপর যে অত্যাচার চালায় তা অবর্নীয়। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী যুদ্ধজয়ের পরে সেনাদের অধিকার থাকত সম্পত্তি লুঠতরাজের, নারীদের ভোগ্যপণ্য করা এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা করা. সেই নিয়ম অনুসারে হায়া সোফিয়ার গির্জায় আশ্রয় নেওয়া খ্রীষ্ঠান ধর্ম যাজকদের ও সমর্থ লোকেদের মেরে ফেলা হয়. আটকে পড়া সমস্ত মেয়েদের যৌনদাসী হিসাবে ধরে নিয়ে যায় মেহমুদের সৈন্যরা. কিশোর এবং বালকদের ও স্লেভ হিসাবে বিক্রি করা হয় ধর্মান্তকরনের পর, ওই একই দিনে যীশু এবং মেরীর মূর্তি ভাঙা হয় হায়া সোফিয়াতে।
বাদশা মেহমুদ এবং তার পরবর্তীরা এই গির্জাকে মসজিদের রূপ দেওয়ার জন্য এর চার দিকে চারটি মিনার বানায়, ভিতরের বাইবেলের গল্পের অনুসরণে আঁকা দেওয়াল-চিত্র গুলিকে ধ্বংস বা বিকৃত করা হয়. তৈরী করা হয় নামাজ পড়ার জন্য মেহরাব.
আজ ও ২৯ মে, তুর্কীতে বিজয় উৎসবের দিন। যেদিন খ্রীষ্টানদের হত্যা করে মুসলমানরা শহরের দখল নেয়।
অটোমান সাম্রাজ্য বা অটোমান খিলাফতের অবসান ঘটে 1924 সনে, মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে. কামাল আতাতুর্ক হিজাব/বোরখা নিষিদ্ধ করেন, লিখিত তুর্কি ভাষায় আরবিক অক্ষর ব্যবহার বন্ধ করে রোমান অক্ষর চালু করেন (ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানরা উর্দু, পাঞ্জাবি ও সিন্ধি ভাষায় আরবিক অক্ষর ব্যবহার করেন ভারতের নিজস্ব দেবনাগরী নয় এবং বর্তমানে হিজাব ও বোরখার প্রেমে মাতোয়ারা). এখানে উল্লেখযোগ্য হল ভারতে এম কে গান্ধী মৌলবাদী মুসলমানদের সাথে হাত মিলিয়ে অটোমান খিলাফতের সপক্ষে আন্দোলন করেন. তোষণ রাজনীতির সূচনা হয়েছিল গান্ধীর হাত ধরে.
প্রগতিশীল কামাল আতার্তুক ১৯৩৫ সালে হায়া সোফিয়া মসজিদকে মিউজিয়ামে পরিবর্তন করলেন। যুদ্ধে জিতে একটা গীর্জার পুরোহিতদের হত্যা করে, সেখানে আশ্রিত নারীদের যৌনদাসী করে, বালকদের দাস হিসাবে বিক্রি করে, সেটাকে মসজিদ বানানো উনি সমর্থন করতে পারেন নি।
1985 সালে হায়া সোফিয়া উনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে স্থান পায়। সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা আসেন হায়া সোফিয়া মিউজিয়াম দেখার জন্য.
গত তিন দশক ধরে পৃথিবী জুড়ে ইসলামী মৌলবাদের ঢেউ উঠেছে তাতে আক্রান্ত তুরস্কও. প্রায় কুড়ি বছর ধরে তুরস্কর শাসনভার একটি ইসলামিক দলের ওপর ন্যাস্ত. সেই দলের একচ্ছত্র নেতা এরদোগান. তিনি ফিরিয়ে এনেছেন হিজাব, বোরখা. তার দল ও ইসলামিক জনতা বহুদিন ধরেই হায়া সোফিয়াকে মসজিদ বানানোর দাবি জানিয়ে আসছে. অপেক্ষা করছিল একটি সুযোগের. গত 10 জুলাই, 2020 তুরস্কর একটি প্রশাসনিক আদালত 1935 সালে কামাল আতাতুর্কের হায়া সোফিয়া মসজিদকে মিউজিয়ামে পরিবর্তন করা কে বেআইনি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসিপ তায়েপ এরদোগান ডিক্রি জারি করে হায়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিবর্তিত করেন.
এই ডিক্রির আগে ২০১৬ সাল থেকেই সেখানে নামাজ পড়া শুরু হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত নামাজ পড়া হত। ২০২০ ১০ই জুলাই এর শেষ ডিক্রী অনুযায়ী এটা এখন পুরো মসজিদ।
নতজানু ইওরোপের রাজনৈতিক নেতাদের মতন মেরুদন্ডহীন খ্রিস্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলি. এই ইসলামী জবরদখলের বিরুদ্ধে নীরব খ্রিস্টিয়ান চার্চ. স্বয়ং পোপ, যিনি ক্লাইমেট চেঞ্জ, বর্ণ বৈষম্য, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সোচ্চার, একটি মিনমিনে দুঃখ প্রকাশ করে দায় সেরেছেন. ইসলামী থাপ্পরে তারা আর বিচলিত বোধ করেন না.
22 জুলাই, 2020. ক্যালিফোর্নিয়া
মানস রায় (Manas Roy)