১) প্রথমে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখার একটি অংশ –
“মহাভারত পুরাণমধ্যে পরিগণিত নহে। ইহাকে ইতিহাস কহে। ইহাতে পাণ্ডবদিগের বৃত্তান্ত সবিস্তর বর্ণিত হইয়াছে।”
(“ঋজুপাঠ ॥ তৃতীয় ভাগ: বিজ্ঞাপন”; বিভিন্ন গ্রন্থের ‘বিজ্ঞাপন’ – বিদ্যাসাগর রচনাবলী, ১ম খণ্ড, তুলি-কলম প্রকাশনা )
২) আবার “মহাভারত (উপক্রমণিকাভাগ)” রচনায়, “জয়” শাস্ত্রের ব্যাখ্যায়, এ তিনি লিখেছেন-
“রামায়ণ মহাভারতাদি ইতিহাস ও অষ্টাদশ পুরাণ ইত্যাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করিলে সংসার জয় হয়, অর্থাৎ জীব জন্মমৃত্যুপরম্পরারূপ সংসারশৃঙ্খলা হইতে মুক্ত হয়, এই নিমিত্ত তত্তৎ শাস্ত্রের নাম জয়।”
(“মহাভারত” – বিদ্যাসাগর রচনাবলী, ১ম খণ্ড, তুলি-কলম প্রকাশনা )
দেখা যাচ্ছে এখানেও রামায়ণ মহাভারতের পরে “ইতিহাস” শব্দটি যোগ করা হয়েছে।
৩) দীনেশচন্দ্র সেনের ‘রামায়ণী কথা’ র ভূমিকাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন –
“এমন অবস্থায় রামায়ণ-মহাভারতকে কেবলমাত্র মহাকাব্য বলিলে চলিবে না, তাহা ইতিহাসও বটে। ঘটনাবলীর ইতিহাস নহে; কারণ সেরূপ ইতিহাস সময়বিশেষকে অবলম্বন করিয়া থাকে, রামায়ণ-মহাভারত ভারতবর্ষের চিরকালের ইতিহাস। অন্য ইতিহাস কালে কালে কতই পরিবর্তিত হইল, কিন্তু এ ইতিহাসের পরিবর্তন নাই। ভারতবর্ষের যাহা সাধনা, যাহা আরাধনা, যাহা সংকল্প, তাহারই ইতিহাস এই দুই বিপুল কাব্যহর্ম্যের মধ্যে চিরকালের সিংহাসনে বিরাজমান।”
(“রামায়ণ”, প্রাচীন সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী)
৪) “আধুনিক পাশ্চাত্য সংজ্ঞা-অনুসারে মহাভারত ইতিহাস না হইতে পারে, কিন্তু ইহা যথার্থই আর্যদের ইতিহাস। ইহা কোনো ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্ব- রচিত স্বাভাবিক ইতিবৃত্তান্ত।”
(“ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারা”, ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী)
৫) “য়ুরোপের ইতিহাসের সাথে আমাদের ইতিহাসের ঐক্য হইতেই পারে না এ কথা আমরা বারংবার ভুলিয়া যাই । যে ঐক্যসূত্রে ভারতবর্ষের অতীত ভবিষ্যৎ বিধৃত তাহাকে যথার্থভাবে অনুসরণ করিতে গেলে আমাদের শাস্ত্র, পুরাণ, কাব্য, সামাজিক অনুষ্ঠান প্রভৃতির মধ্যে প্রবেশ করিতে হয়; রাজবংশাবলীর জন্য বৃথা আক্ষেপ করিয়া বেড়াইলে বিশেষ লাভ নাই । য়ুরোপীয় ইতিহাসের আদর্শে ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনা করিতে হইবে এ কথা আমাদিগকে একেবারেই ভুলিয়া যাইতে হইবে ।”
( “ধম্মপদং”, প্রাচীন সাহত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী)
৬) “মহাভারত অতি বৃহৎ গ্রন্থ। সংস্কৃত ভাষায় এতাদৃশ বিস্তীর্ণ গ্রন্থ আর দেখিতে পাওয়া যায় না। ইহা ইতিহাস বলিয়াই প্রসিদ্ধ…
… ইহার মধ্যে রাজনীতি, ধর্ম্মনীতি, লোকযাত্রাবিধান, বাণিজ্য-কৃষিকার্য ও শিল্পশাস্ত্রাদি সংক্রান্ত যে সকল কথা বর্ণিত আছে, কোন আদিম-কালবর্ত্তী অসভ্যাবস্থ লোকের চিন্তাপথে তৎসমুদায় উদিত হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব হইতে পারেনা। অতএব যে সময় ভারতবর্ষে বিলক্ষণ রূপে সভ্যতার প্রচার ও জ্ঞানের বিস্তার হইয়াছিল, মহাভারত যে তৎকালে রচিত গ্রন্থ, সে বিষয়ে কোন সংশয় জন্মিতে পারে না।…”
(ভূমিকা – মহাভারত, শ্রীকালিপ্রসন্ন সিংহ)