করােনা সংকটের সময় ভারত শত্রুরও মন জয় করেছে

বিস্ময়কর ভাবে ভারতের প্রায় ৯৩.৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন করােনা মহামারীর মােকাবিলায় নরেন্দ্র মােদীর নেতৃত্বাধীন সরকার সঠিক পথে চলেছে। গত ২৩ এপ্রিল আইএএনএস-সি ভােটার কোভিড-১৯ নামক একটি সমীক্ষায় এই তথ্য জানানাে হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ২৫ মার্চ থেকে ২১ দিনের এবং পরে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৯ দিনের লকডাউনের ঘােষণা করেছে। যা চালু থাকার কথা ছিল ৩ মে পর্যন্ত। আইএএনএস-সি ভােটার্স সার্ভে বলছে, লকডাউনের প্রথমদিকে মােদী। সরকারের কাজে ৭৬.৮ শতাংশ মানুষ আস্থা জ্ঞাপন করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে এই সমর্থন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯৩.৫ শতাংশ। অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে লকডাউন আরও কঠোর করায় ২১ এপ্রিল নাগাদ সেই সমর্থন আরও বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯৩.৫ শতাংশ। সমীক্ষায় আরও জানা যায়, লকডাউন মানার জন্য মানুষের প্রস্তুতি যেমন বেড়েছে তেমনি কমেছে অভিযােগ জানানাের প্রবণতাও। মােট ৫৪.৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা ‘করােনা ভাইরাস থেকে প্রাপ্ত হুমকি অতিরঞ্জিত বলে বিশ্বাস করি এই বক্তব্যের সঙ্গে তারা একেবারেই একমত নন।

শুধু দেশের ভেতরেই নয়, সমস্ত বিশ্ব করােনা মােকাবিলায় নরেন্দ্র মােদীর নেতৃত্বে। ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। করােনা ভাইরাস মােকাবিলায় বিশ্বের সফলতম রাষ্ট্রনায়কের স্বীকৃতিও পেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মার্কেট রিসার্চ কোম্পানি ‘মর্নিং কনসান্ট’-এর রিপাের্ট অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় ভারত অনেক ভালােভাবে করােনা ভাইরাসের মেকাবিলা করছে। মে মাসে প্রধানমন্ত্রী মােদীর অ্যাপ্রুভাল বেটিং বেড়ে হয়েছে ৬৮, যা বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে ছিল ৬২। এক্ষেত্রে বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রনায়কের চেয়ে এগিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তার অ্যাপ্রুভাল বেটিংই সবচেয়ে বেশি। সারাবিশ্বে করােনা ভাইরাসের মােকাবিলায় কী কাজ হচ্ছে, তার ভিত্তিতেই এই বেটিং করা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পের বেটিং ছিল। মাইনাস ১০। সেটা এখন হয়েছে মাইনাস ৩। করােনা ভাইরাস মােকাবিলায় সন্তোষজনক ভূমিকা পালন করতে পারেননি ট্রাম্প। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন

প্রেসিডেন্ট ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। স্কট জন মরিসন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী। জাস্টিন ট্রুডাে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসােনারাে, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল কাকর, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট লােপেজ আবরাডরকে বেটিং দেওয়া হয়েছে। মােদীর পর দ্বিতীয় সেরা বেটিং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের।

২০১৯ সালেও শীর্ষে ছিলেন মােদী ২০২০ সালে কাকতালীয় ভাবে যে নরেন্দ্র মােদী বিশ্বের সেরা নেতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন এমন নয়, ২০১৯ সালেও তিনি একই শিরােপায় ভূষিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ব্রিটিশ হেরাল্ড সংবাদ প্রকাশনা সংস্থাটি তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছিল— “২৫-এরও বেশি ওয়ার্ল্ড আইকন মনােনয়নের তালিকায় ছিলেন এবং বিশেষজ্ঞদের একটি বিচারক প্যানেল চারজন প্রার্থীকে ২০১৯-এ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা’এই মর্যাদাপূর্ণ শিরােনামের জন্য চূড়ান্ত মনােনয়ন দিয়েছিলেন। সংগৃহীত সমস্ত পরিসংখ্যানের ব্যাপক অধ্যয়ন ও গবেষণার ভিত্তিতে বাছাই প্রক্রিয়াটির মূল্যায়ন করা হয়েছিল। পাঠকদের একটি ‘বাধ্যতামূলক ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দেওয়া হয়েছিল তাদের ভােটের বৈধতা দেওয়ার জন্য। ব্রিটিশ হেরাল্ড ওয়েবসাইটটি ক্র্যাশ’ হয়েছিল, কারণ ‘অনেক ভােটার তাদের পছন্দের নেতাদের পক্ষে ভােট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, ওয়েবসাইটটি এক সপ্তাহে প্রায় তিন মিলিয়ন বার হিট হয়েছিল। জরিপে অংশ নেওয়া ৩১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নরেন্দ্র মােদীকে, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে ২৯.৯ শতাংশ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ২১.৯ শতাংশ এবং ১৮.১ শতাংশ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ভােট দিয়েছেন। ব্রিটিশ হেরাল্ড ১৫ জুলাই ২০১৮ প্রকাশিত ম্যগাজিনের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় নরেন্দ্র মােদীকে তুলে ধরেছিলেন। প্রকাশনাটিতে বলা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মােদী ‘একটি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবান এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সম্পন্ন রাজনৈতিক ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন, যার ফলস্বরূপ এসেছে লােকসভা নির্বাচনে। অপ্রতিরােধ্য জয়। ওয়েবসাইটিতে বলা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সরকারি সফরের সময় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মােদী বিশ্বনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। মােদীকে চিঠি লিখে প্রশংসা বিল

গেটসের। ‘করােনা মােকাবিলায় আপনার নেতৃত্ব প্রশংসনীয়’ – মােদীকে চিঠি লিখে প্রশংসা বিল গেটসের। সারা দেশে লকডাউন করে যে ভাবে করােনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে, তাতে ভারতের প্রশংসা করেছে বিশ্বের বহু দেশ। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীকে চিঠি লিখে একইভাবে প্রশংসা করলেন বিল গেটস। আগেভাগে লকডাউন করা, সংস্পর্শে আসা লােকজনকে চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে টেস্টিং ও চিকিৎসা পুরাে ব্যবস্থাপনারই ভূয়সী প্রশংসা হয়েছে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠতার চিঠিতে। ভারতে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল জানুয়ারি মাসে। প্রথম কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে কেরলে। সেই রাজ্যে এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সংক্রমণ। গােয়া, মণিপুর, অসম, সিকিম-সহ বেশ কিছু রাজ্যে নতুন সংক্রমণের খবর নেই। প্রথমদিকের প্রায় চার মাসে সারা দেশে করােনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার। ফলে ইউরােপআমেরিকার বহু দেশের চেয়ে ভারতের। পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে। বলে মনে করছেন বিশ্বের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা মহল। পাশাপাশি গােটা পরিস্থিতি মােকাবিলায় ভারতের প্রশংসাও করছেন। তারা। তাতে সুর মেলালেন বিল গেটসও। প্রধানমন্ত্রী মােদীকে লেখা চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, “আপনার নেতৃত্বে এবং আপনার সরকার যে ভাবে প্রতিরােধের ব্যবস্থা নিয়ে। করােনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, আমরা তার প্রশংসা করি। দেশ জুড়ে লকডাউন, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা, হটস্পট চিহ্নিত করে সেগুলিকে আলাদা করে, আইসােলেশন, কোয়রান্টিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্য পরিকাঠামােকে মজবুত করে ব্যয়বরাদ্দ করা—সব ক্ষেত্রেই খুব ভালাে কাজ করেছেন আপনারা।” করােনার মােকাবিলায় কেন্দ্র সরকার ‘আরােগ্য সেতু’ অ্যাপ চালু করেছে। করােনা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য মিলছে সেই অ্যাপে। তার প্রশংসা করে বিল গেটস লিখেছেন, “আরােগ্য সেতুর মতাে অ্যাপ চালু করে ডিজিটাল অভিনবত্বের সূচনা করেছেন। আমি আনন্দিত যে আপনার ব্যতিক্রমধর্মী ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করেছেন। কোভিড-১৯-এর মােকাবিলায় সূচনা করেছেন আরােগ্য সেতুর মতাে অ্যাপ।” বিশ্বজুড়ে ভারতের মানবিক মুখ।

প্রাথমিক পর্যায়ে করােনা সংক্রমণে বিপন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জার্মানি, বাহরিন, নেপাল, ভুটান, ব্রাজিল, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, সেশলস, মরিশাস ও ডমিনিকান রি পাবলিক -সহ ১৩টি দেশে করােনা ভাইরাস মােকাবিলা করার ওষুধ এইচসিকিউ বা হাইড্রোক্সিক্লোরােকুইন পৌঁছে দিতে ভারত মানবিক দায়িত্ব পালন করে সমস্ত বিশ্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়িয়েছেন।। করােনা সংকটের সময় ভারত শত্রুরও মন জয় করেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকে তাদের আকাশপথে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, করােনা ভাইরাসের আবহে যে ভাবে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া, তার প্রশংসাও করেছে পাকিস্তান।

বিশ্ব জুড়ে করােনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকেই নানা প্রান্তে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। ইতালি, ইরান, চীন-সহ করােনা ভাইরাস সংক্রমিত বেশ কিছু দেশ থেকে ভারতীয়দের উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার মতােও কাজ করছে তারা। এমনকী, ভারতে আটকে থাকা বিদেশি নাগরিক এবং পর্যটকদের বিশেষ বিমানে সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছে দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।

করােনা সংকটের মধ্যে এই উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়ায় বহু দেশের প্রশংসা কুড়িয়েছে ভারতের বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। এবার এই তালিকায় ঢুকে পড়েছে। পাকিস্তানও। শুধু প্রশংসা করাই নয়, তাদের আকাশপথ ব্যবহারেরও অনুমতি দিয়েছে। পাকিস্তান। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে খবর, গত ২ এপ্রিল তাদের একটি বিমান মুম্বই থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টে যাচ্ছিল। পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢােকার পর সে দেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যােগাযােগ করার চেষ্টা করেন পাইলটরা। প্রথমে উত্তর না আসায় ফ্রিকোয়েন্সি বদলে ফের যােগাযােগের চেষ্টা করেন তারা। পাকিস্তান এটিসি থেকে এবার উত্তর আসে— ‘পাকিস্তানের আকাশে স্বাগত আপনাদের। পাক এটিসি থেকে এর পর বলা হয়, এরকম একটা অতিমারীর আবহেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, আপনাদের জন্য আমরা গর্বিত।

এয়ার ইন্ডিয়াকে আকাশপথ ব্যবহার করারও অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে জানানাে হয়, করাচির আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় উড়ান পথের ১৫ মিনিট সময় বেঁচে গিয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যখন ইরানের আকাশপথে ঢােকে, সে দেশের এটিসির সঙ্গে যােগাযােগ করতে পারছিলেন না পাইলটরা। তখন পাকিস্তান এটিসি ইরানের সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের যােগযােগ করিয়ে দেয়। অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে ইরানও সহযােগিতা করে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছে যায় বিমানটি।

সাধন কুমার পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.