জেলের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিশিষ্ট লেখক-কবি-সমাজকর্মী ভারভারা রাও (P. Varavara Rao)। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে প্রবীণ এই কবির মুক্তির দাবি জানানো হল। তাঁর স্ত্রী হেমলতার অভিযোগ, রাষ্ট্র চাইছে তাঁকে জেলের মধ্যেই হত্যা করতে।
‘এলগার পরিষদ’ মামলায় নভি মুম্বইয়ের তালোজা সেন্ট্রাল জেলে ২০১৮ সাল থেকে বন্দি ৮১ বছরের এই লেখক। করোনা সংক্রমণের হাইরিস্ক ক্যাটেগরিতে রয়েছেন তিনি। কিছুদিন আগে জেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাঁকে জে জে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শনিবার তাঁর আইনজীবী ও মেয়ের কাছে ফোন আসে। এরপরই তাঁর অসুস্থতার খবর সামনে আসে। দ্রুত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিষণ রেড্ডি ও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (KCR) কাছে তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করার আবেদন করেছে ভারভারা রাওয়ের পরিবার। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর স্বাস্থ্যের কথা বিচার করে জামিনে মুক্তি দেওয়ার আরজি জানানো হয়েছিল। কিন্তু গত ২৭ জুন সেই আবেদন খারিজ করে দেয় বিশেষ আদালত।
এক বার্তায় ভারভারা রাওয়ের স্ত্রী হেমলতা বলেছেন, ‘আমরা ওঁর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। প্রায় ছ’সপ্তাহ যাবৎ ওঁর শরীর খুব খারাপ। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। দাঁত মাজা, স্নান করা নিজের দৈনন্দিন কাজটুকুও করতে পারছেন না। গত সপ্তাহ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে। তাঁর স্নায়বিক সমস্যাও শুরু হয়েছে। জে জে হাসপাতালে ভরতির পর তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্টেও তা উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দিনদিন। আরও দেরি করলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’ রাওয়ের বোনপো এন ভেনুগোপাল রাও বলেন, ‘রাষ্ট্র ওঁনাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ওঁনার ব্রেন ড্যামেজ হচ্ছে ধীরে ধীরে। আমাদের একমাত্র দাবি হল, ওঁকে চিকিৎসা পরিষেবার মধ্যে রাখা। তা না হলে পরিবারকে ওঁর খেয়াল রাখার অনুমতি দিক সরকার। আমরা দেখভাল করব। ভারতের সংবিধান সকলকে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। ওঁর জীবন সংকটে রয়েছে। দয়া করে ভারভারা রাওকে জেলে মেরে ফেলবেন না।’
গত ১১ জুলাই টেলিফোনে ভারভারা রাওয়ের সঙ্গে কথা হয় পরিবারের। হৃদরোগ, আলসার, উচ্চ রক্তচাপজনিত একাধিক সমস্যা আগেই রয়েছে তাঁর। এর পাশাপাশি সেইদিন তাঁর কথায় বেশ কিছু অসংলগ্নতা খুঁজে পেয়েছে পরিবার। তিনি হ্যালুশিনেশনের শিকার হয়েছেন বলেই ধারণা তাঁর পরিবার। সেদিন টেলিফোনে নিজের বাবা-মা’র শেষকৃত্যের কথা বলেছেন তিনি, যা প্রায় সত্তর বছর ও চল্লিশ বছর আগের ঘটনা।
তালোজা জেলের তরফে জানানো হয়েছে, জেলের ভিতরেই হাসপাতাল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে তাঁকে। ভারভারার আইনজীবী নিহালসিং রাঠোর জেল সুপারিটেনডেন্টকে ইমেল করে মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। এমনকী, ভিডিও কলের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। যাতে তাঁকে পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান। উল্লেখ্য, গত মাসেই বিশেষ আদালতে অভ্যন্তরীণ জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। তা খারিজ হয়ে যায়। এখন বম্বে হাই কোর্টে আবেদনটি পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় লেখক-কবির শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।