ছোট মাঠ। মোটামুটি সাত আটশো লোক হলেই ভরে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই মাঠও রয়ে গেল ফাঁকা। কার্যত ধু-ধু মাঠে সভা করেই বেলপাহাড়ি থেকে ফিরতে হল সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাটকে।
ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রমের সমর্থনে জনসভা ডেকেছিল ঝাড়গ্রাম জেলা সিপিএম। বেলপাহাড়ি, শিলদা, জামবনি ও চিচিড়া নিয়ে এই সমাবেশ ডেকেছিল একদা বঙ্গ শাসকরা। কিন্তু সেই সভায় মেরেকেটে লোক সংখ্যা দেড়শো ছাড়াল না।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে জমায়েত দেখে যারপরনাই খুশি ছিলেন বাম নেতৃত্ব। সেই ব্রিগেডে সুপার ডুপার হিট হয়েছিল দেবলীনার বক্তব্য। কিন্তু তাঁর সমর্থনে জনসভায় জমায়েতের হাল দেখে অনেকেই মনে করছেন, জঙ্গল-মহলে সিপিএম এখন একেবারেই ম্রিয়মাণ। মাজা ভেঙে গিয়েছে।
এ দিনের সমাবেশে যে লোক হয়নি তা মেনে নিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মধুজা সেনরায়। তাঁর কথায়, “জমায়েত কম হয়েছে। রোদ একটা কারণ। তবে সেটা বাদ দিলেও যে জমায়েত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি।” তিনি এ-ও বলেন, “২০১০-এর পর এই প্রথম বেলপাহাড়িতে সভা করল দল। একটা সন্ত্রাসের আবহ রয়েছে। সবটা কাটিয়ে মানুষ সে ভাবে এখনো প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না।”
একটা সময় এই বেলপাহাড়ি ছিল অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম আলাদা জেলা করেন। সেই সময় এই সব অঞ্চলে কী দাপট ছিল সিপিএমের! অনেকের মতে, মেদিনীপুর শহরের সিপিএম জেলা পার্টি অফিস থেকে দীপক সরকাররা নির্দেশ না দিলে গাছের পাতা নড়ত না এই সব অঞ্চলে। একেক জন জোনাল সম্পাদক যেন মুখ্যমন্ত্রী! তাঁরাই শেষ কথা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে।
এই বেলপাহাড়ি-সহ ঝাড়গ্রামের একাধিক ব্লকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও প্রার্থী দিতে পারেনি। বরং আদিবাসীদের স্থানীয় সংগঠন এবং বিজেপি মিলে দখল করে নিয়েছে বেশ কিছু পঞ্চায়েত। তৃণমূল এ বার ওই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করেছে। উমা সরেনের বদলে এ বার সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড় করিয়েছেন বীরবাহা সরেনকে। বীরবাহাকে প্রার্থী করায় আদিবাসীরাও দ্বিধাবিভক্ত। আদিবাসী সংগঠন থেকে তাঁর স্বামীকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সিপিএমেরোও এই অবস্থা। যা দেখে পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, বিজেপি এখানে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে পারে।