ইন্দোনেশিয়া, বিশ্বের ১৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যাদের জিডিপি বিগত দুই দশক ধরে বছর ৫ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে। এর বিপরীতে ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের আনুমান ২০৩৩ সংখ্যা সালের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। কিন্তু নিজের অর্থনীতিকে উন্নীত করার পদক্ষেপ হিসাবে বিশাল দ্বীপপুঞ্জ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় বিনিয়োগের সুযোগকে উপেক্ষা করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগ সমন্বয় বোর্ড (বি কে পি এম) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়াতে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সেদেশে ভারতের গড় বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি ভারত করেছিল আদানী পোর্টস এর হাত ধরে জাকার্তা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বান্তিন প্রদেশের সিলেগন শহরে নতুন কন্টেইনার বন্দর নির্মাণে।
২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভারত ছিল ২৫তম স্থানে যেখানে সিঙ্গাপুর ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সরবোচ্চ বিনিয়োগ করেছিল আর জাপান ও চীন যথাক্রমে ৪.৯ ও ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল।
ইন্দোনেশিয়ার জোটের ভারত-ইন্দোনেশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফোরাম (আইআইআইএফ) -এর সাম্প্রতিক দ্বিতীয় সংস্করণে কথা বলতে গিয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রদীপ কুমার রায়ত বলেন উভয় দেশই উঠতি বড় অর্থনীতি হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃত হয়েছে এবং একই রকম বাধা ও সুযোগের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা রাস্তাঘাট, শহুরে রেলওয়ে, তেল ও গ্যাস, বিমানবন্দর এবং স্বাস্থ্য শিল্পে আগ্রহী এবং ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানিগুলির সাথে ভারতীয় ব্যবসাগুলি সুবিধাভোগী হতে পারে”।জাকার্তায় নবনির্মিত এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট) নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা মেট্রো প্রকল্প নির্মাণ করার অভিঞ্জতা ও দক্ষতা ভারতীয় কোম্পানিগুলি ভাগ করে নিতে পারে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ব্যাবসা করার সুবিধার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া কোনো সুন্দর গন্তব্য নয়। কারন ২০১৯ এর বিশবব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ১৯০ টি দেশের তালিকায় ঐ দেশটি ৭৩ তম স্থানে আছে ব্যাবসা করার সুবিধার নিরিখে। ইন্দোনেশিয়াতে বাণিজ্যে ইচ্ছুক সংস্থাগুলিকে অপরিচিত নিয়ন্ত্রক প্রতিষঠান এবং সাংস্কৃতিক গতিশীলতার মুখোমুখি হতে হয়।
ইন্দোনেশিয়ার বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠী , অপেক্ষাকৃত অধিক বেকারত্ব এবং কিছু অঞ্চলে চরম দারিদ্র্য রয়েছে। যা আন্তঃ জাতিগত উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয় এবং দেশের স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে।
বিদেশীদের জন্য ইন্দোনেশিয়াতে ব্যবসা শুরু করা একটি জটিল, ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়। একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে এবং নয়টি বিভিন্ন পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, দের সম্পূর্ণ বিদেশী মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে ন্যূনতম ৭৫০,০০০ মার্কিন ডলার মূলধন প্রয়োজন।
এমন কিছু সেক্টর রয়েছে যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বন্ধ বা সীমিত।
বিদেশিদের কাছে বন্ধ থাকা শিল্পগুলির মধ্যে বন , বাস ও ট্যাক্সি পরিবহন এবং ক্ষুদ্র জল পরিবহন পরিষেবা, মুদ্রণ ও সম্প্রচার মাধ্যম, চলচ্চিত্র এবং সিনেমা, বিতরণ ও প্রদর্শনী এবং ছোট আকারের খুচরা বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত।
উলটোদিকে বিদেশী মালিকানাধিন শিল্পগুলির মধ্যে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন ও বিতরণ, শিপিং, পানীয় জল, রেলওয়ে পরিষেবা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত।
ইন্দোনেশিয়ার ২৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার উচ্চবিত্ত ও ক্রমবরধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্নত পণ্য ও পরিষেবার অভ্যন্তরীণ বাজার যে কোনও ব্যবসা স্থাপনের জন্য আকর্ষণীয়। সঠিক কৌশল সহ ধৈর্যশীল এবং অধ্যবসায়ী প্রকৃত ব্যাবস্যায় ইচ্ছুকরা তাদের যোগ্য পুরস্কারের অপেক্ষা করতে পারেন।