২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবসের তাৎপর্য না বুঝলে ক্ষমতায় এলেও পশ্চিমবঙ্গের বিলুপ্তি রোধ করা যাবে না

পশ্চিমবঙ্গ অখণ্ড বঙ্গপ্রদেশের পশ্চিম ভাগের একটি মানচিত্র মাত্র নয়, এটি বাঙ্গালি হিন্দুর মুক্তির ভাবনা। হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মীরাও এই বিষয়টি নিয়ে ন্যূনতম অবহিত নন। তাদের দোষ নেই, এই বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দেবার বেশি কেউ নেই। এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিই যে, স্বস্তিকার ৬ জুলাই ২০১৫-র সংখ্যায় এই লেখকের একটি লেখা (শ্যামাপ্রসাদ না মাদ্রাসা— কোন নৌকায় পা দেবেন ঠিক করুন— মোহিত রায়) প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটির বিষয় ছিল ২০১৫-র ২৩ জুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ববি হাকিমকে দিয়ে শ্যামাপ্রসাদ স্মরণ পক্ষে ভাজপার দুই শীর্ষ নেতা হুগলিতে মাদ্রাসা খোলার জন্য। সেখানে পৌঁছে গেলেন ও রাজ্যের বাকি বন্ধ মাদ্রাসা খোলার জন্য দাবি তোলেন। পশ্চিমবঙ্গ দিবস সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তিরা কেবল বিশেষ ভোটের লোভে (যা কোনোদিনই পাওয়া যাবে না) সন্ত্রাসের। আঁতুড়ঘরগুলি খোলার জন্য উদগ্রীব হতেন না। পশ্চিমবঙ্গ বাঙ্গালি হিন্দুর মুক্তির ভাবনা। ১৮৭২-এর প্রথম জনগণনার পর সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো বঙ্গপ্রদেশে মুসলমান জনসংখ্যা হিন্দুর চেয়ে কিছু বেশি। ১৯৩১ পর্যন্ত এ পার্থক্য তেমন বেশি ছিল না। ৫৬শতাংশ মুসলমান, ৪৪ শতাংশ হিন্দু। কিন্তু এই সুযোগেই ব্রিটিশ সরকার আনল ১৯৩৫ সালের সাম্প্রদায়িক চুক্তি বা কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড। বাঙ্গলার আইনসভায় মুসলমান আসন হলো ১৩০টি। হিন্দু আসন, তপশিলি আসন মিলিয়ে মাত্র ৯০। এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ডাঃ নীলরতন সরকার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যশ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা। তাঁদের বিবৃতিতে তারা খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে, সংখ্যায় মুসলমানরা বেশি হলেও শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছুতেই হিন্দুরা অনেক এগিয়ে। সুতরাং বাঙ্গলার ভালোমন্দের সিদ্ধান্ত কেবল জনসংখ্যার মানদণ্ডে হতে পারে না। বাঙ্গলার কংগ্রেস, বিশেষত সুভাষচন্দ্র বসু এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড শোনেনি। সর্বভারতীয় সব দলেরই এই দিল্লি নির্ভরতা বঙ্গপ্রদেশের অনেক ক্ষতি করেছে ও আজও করছে। | সাড়ে পাঁচশো বছরের ইসলামি শাসন বাঙ্গলার কয়েক হাজার বছরের ধর্ম-সংস্কৃতি-ভাষাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। বাঙ্গলায় তাই নেই কোনো প্রাচীন মন্দির, বৌদ্ধ বিহার। বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণে হিন্দু-বৌদ্ধের বাঙ্গলাকে বানানো হয়েছে ইসলাম প্রধান বাঙ্গলা। ব্রিটিশ শাসন এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি দেয়। বাঙ্গালির নবজাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় যাকে বলেছেন, ‘ডিভাইন প্রভিডেন্স বা বিধির আশীর্বাদ। এরপর বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, সরলা দেবী, রবীন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন বাঙ্গালির সভ্যতা সংস্কৃতি। ১৯৩৫-এর কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড মেনে ১৯৩৭-এর নির্বাচন থেকে শুরু হলো আবার মুসলিম লিগের ইসলামি শাসন। স্বাধীনতা ও দেশভাগের আবহাওয়ায় তপ্ত হয়ে উঠল বাঙ্গলায় ইসলামি অত্যাচার। ১৯৪৬ -এর কলকাতার মহাদাঙ্গা ও নোয়াখালির হিন্দু গণহত্যার পর বাঙ্গালি হিন্দু বুঝে গেল আগামীদিনে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গলায় তাদের অবস্থা কী হবে? এগিয়ে এলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সরব হলেন বাঙ্গলার মনীষীরা। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, শিশির মিত্র, নমঃশূদ্র নেতা প্রথমরঞ্জন ঠাকুর বললেন বাঙ্গালি হিন্দুর হোমল্যান্ড চাই। এগিয়ে এলেন বাঙ্গলার কংগ্রেস নেতারাও, ডাঃ বিধান রায়, অতুল্য ঘোষ। বাঙ্গালি হিন্দুর কয়েক হাজার বছরের ধর্ম সংস্কৃতি বাঁচাতে, হিন্দু নারীর সম্মান রক্ষার্থে, বাঙ্গালি হিন্দুর নিজের বাসস্থানের দাবিতে তৈরি হলো পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইনসভা বঙ্গপ্রদেশ ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের প্রশ্নে একমত হলো না। তখন হিন্দু প্রধান অঞ্চল নিয়ে হলো পশ্চিমবঙ্গ আইন সভা এবং মুসলমান প্রধান অঞ্চল নিয়ে হলো পূর্ববঙ্গ আইন সভা। পশ্চিমবঙ্গ আইন সভায় সংখ্যাধিক্যের ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ভারতভুক্তি নিশ্চিত হয়। অখণ্ড বাঙ্গলার সব মুসলমান সদস্য পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেন, কতিপয় তপশিলি সদস্য ছাড়া সব তপশিলি সদস্য-সহ সব হিন্দুসদস্য ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দেন। | এই পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করাই বাঙ্গালি হিন্দুর প্রাথমিক কাজ। যে পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা চালু থাকবে, বাঙ্গালি ছাত্র বিদ্যালয়ে আরবি শিখবে, বিদ্যালয়ের অভাবে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীরা পড়বে মাদ্রাসায়, হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে গড়া মসজিদগুলি রাজ্যের পর্যটন বিভাগের আকর্ষণ হয়ে থাকবে, ১ কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী থাকবে, ইমামরা ভাতা পাবে, কর্ণসুবর্ণ নাম মুছে গিয়ে হবে মুর্শিদাবাদ, সম্রাট শশাঙ্ক বা মহারাজ প্রতাপাদিত্যের কোনো স্মারক থাকবে না— সেটি পশ্চিমবঙ্গ নয়। শ্যামাপ্রসাদেরা এই পশ্চিমবঙ্গ আমাদের উপহার দিয়ে যাননি। আজ খুব দৃঢ় তার সঙ্গে বলতে হবে। বাংলাভাষায় কথা বললেই সে বাঙ্গালি নয়, তাকে পাঁচ হাজার বছরের ভারতীয় সভ্যতার উত্তরাধিকার ও স্বীকার করতে হবে। বাংলাভাষী ও বাঙ্গালি এক নয়। | ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদ্যাপন এই ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার। কেবল ক্ষমতা দখলে কিছু আসে যায় না। উত্তরাখণ্ডে ভাজপা বারবার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু দেবভূমি উত্তরাখণ্ড দিনে দিনে বহিরাগত মুসলমানদের আবাসভূমি হয়ে উঠেছে। এখন তীর্থ শহরগুলিতে শুনবেন আজানের গর্জন।। চুল কাটা, তুলা, মাংসের ব্যবসা পুরোটাই। মুসলমানদের দখলে যা কয়েক দশক আগেও ছিল না। এতদিন পরে গুরগাঁও হয়েছে গুরুগ্রাম, ইলাহাবাদ হয়েছে প্রয়াগরাজ। বছরের পর বছর রাজস্থানে ক্ষমতায় থেকেও আজমিরের আসল নাম অজয়মেরু হলো না। গুজরাটের রাজধানী আসলে কর্ণাবতী আজও আহমেদাবাদ রয়ে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামকরণে নতুন মেট্রো স্টেশনের নাম হবে তিতুমীর। অনেকবার বলে, দেখা করেও হিন্দুত্ববাদী রেলমন্ত্রী সে নাম পালটাননি।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্য রাজ্যের পার্থক্য হলো যে, অন্য রাজ্যে সমস্যা সমাধানে কিছু দেরি হলেও চলবে, পশ্চিমবঙ্গে তা হবে না। এখানে প্রতিটি দিন আমরা পশ্চিম বাংলাদেশ হবার দিকে এগিয়ে চলেছি। গত ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯-এ ইসলামি হিংসা দেখিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তাদের প্রায় দখলেই এসে গেছে। ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদযাপনের গুরুত্ব না বুঝলে কে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করলো তা বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে না।

মোহিত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.