২০১৪-র ২৬ মে নরেন্দ্র মোদী তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়া তথা তিব্বতের নির্বাসিত রাষ্ট্রপ্রধানকে বিশেষ অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ করে সারা বিশ্বকে আশ্চর্যান্বিত করেছিলেন। সবাই ভেবে ছিলেন এই গুজরাটিটি ব্যবসা ছাড়া আর কী বোঝে!
মোদী যে রাষ্ট্রবাদী হিন্দু, সেটা এখন সারা বিশ্ব জেনে গেছে। তাই ভারতের বাইরে পাকিস্তান ও চীন আর দেশের মধ্যে হিন্দুবিরোধী কংগ্রেস, কমিউনিস্ট ও মহাগঠবন্ধনের নেতা-নেত্রীরা প্রাণপণে চেষ্টা করছে কীভাবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে গদিচ্যুত করা যায়! এটা আর এক মহাভারতের যুদ্ধ। সত্য, দেশপ্রেম ও ধর্ম একদিকে, আর অন্যদিকে সম্মিলিত ‘ব্রেকিং ইন্ডিয়া ফোর্স’ ও অধর্মের মহাসমর। গত পাঁচ বছরে মোদী অসংখ্য জনহিতকারী কাজ করেছেন। উরি আর পুলওয়ামার বদলা নিয়েছেন যা অভূতপূর্ব। ভারতের বায়ুসেনা মায়ানমার ও পাকিস্তানের সীমানা পেরিয়ে জঙ্গি শিবিরগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় পাকিস্তান, চীন এমনকী বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলির কাছেও এই অভিযান ছিল বিস্ময়কর। সুপারসোনিক মিসাইল অগ্নি-৫-র সফল পরীক্ষণ, অন্তরীক্ষে উপগ্রহকে ধ্বংস করার ক্ষমতা, একসঙ্গে ১০০টির বেশি দেশি-বিদেশি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে নিক্ষেপ করার বাহাদুরি ভারতের বাহুবলের নিদর্শন, যা মোদীর দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। এহেন দেশভক্ত মোদীরশত্রুর সংখ্যা মিত্রের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।
জিএসটি এবং বিমুদ্রীকরণের মতো দুর্নীতিরোধক শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়ে মোদী ভারতের আর্থিক সঙ্গতি অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ ভারত ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ ও ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার’ সাহায্যে বিশ্বের দ্বিতীয় স্মার্টফোন ও অটোমোবাইল উৎপাদক দেশের শিরোপা পেয়েছে। এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতিতে পৌঁছাতে পেরেছে শুধুমাত্র মোদীর দৌলতে। এই মোদীকে চীন বা পাকিস্তান বা অন্যান্য দেশ পছন্দ করবে কেন?
ডোকলামে ভারতীয় বাহিনীর শৌর্যে পরাভূত হয়ে চীনের মতো বিশ্বশক্তিকে ভুটান দখল করার বাসনা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে! ১৯৯৮ সালের অটলবিহারীর রাজত্বকালে, তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজই বলেছিলেন, “ভারতের একনম্বর শত্রু হচ্ছে চীন”।
চীনের সদা-বাহার বন্ধু বিশ্ব-সন্ত্রাসবাদের জেহাদি সরবরাহকারী দেশ পাকিস্তানের উপর ভারতীয় বাহিনীর প্রহার প্রকারান্তরে চীনের উপরই সে আঘাত! তা সে সহ্য করবে কেন? তাই ‘মাসুদ আজাহার’কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা থেকে বিরত থেকেছে।
২০১৪ সালে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে তিব্বতের বিতর্কিত রাষ্ট্রপ্রধান লোবসাং সাঙ্গেকে নিমন্ত্রণ করা চীন সহ্য করে কী করে? তাই তো চীনের এত গোঁসা!
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ যা বালুচিস্তান পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা, যেটাতে ভবিষ্যতে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাতে মোদীর না-মঞ্জুরিই যে চীন এবং পাকিস্তানের গোঁসার কারণ!
অরণাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড আর শিলিগুলির ‘চিকেন নেকে’ — চীনের আগ্রাসনের অনেক প্রমাণ আছে। তার থেকে বাঁচার জন্য মোদী অরুণাচল, উত্তরাখণ্ডের ‘চার ধাম’ এবং সিকিমের পেকং-এ দেশের শততম বিমানবন্দর তৈরি করে ভারতের নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে চীনের ক্রোধের কারণ হয়েছেন।
ভারতের সঙ্গে চীনের ‘ট্রেড ডেফিসিট’ ৫০ বিলিয়নেরও বেশি। অর্থাৎ চীন তার বিশাল পণ্য সামগ্রী ভারতের বাজারে বিক্রি করে মুনাফা লুটে কিন্তু চীনাবাজারে ভারতের মাল বিক্রি হয় পরিমাণে অনেক কম। এটা মোদীসরকার বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তাই মোদীর উপর চীনের আক্রোশ।
ভারতের ‘ব্রাহ্মোস মিসাইল’ এক অসাধারণ মারণাস্ত্র। দক্ষিণ চীনসাগর সংলগ্ন সমস্ত দেশ ভারত থেকে ব্রাহ্মোস কিনতে চাইছে চীনের আক্রমণকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে। তাতে ভারতের বিরুদ্ধে চীনের আক্রোশ বাড়বে বইকি!
আমেরিকা, ফ্রান্স ব্রিটেন—নানা বিষয়ে চীনের আগ্রাসী নীতিকে প্রতিহত করার জন্য ভারতের উপর নির্ভর করছে। মোদীর জন্য চীনের এশিয়া মহাদেশে একচ্ছত্র প্রতিপত্তি অনেক কমে গেছে।
এহেন বিরোধী নীতির জন্য মোদীকে ভারতের কমিউনিস্টরা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জেহাদি তত্ত্বের (সন্দীপ নওলকা, রোনা উইলসন, সুধা ভরদ্বাজ) সহায়তায় মোদীকে শেষ করে দিতে চাইছে।
এবার আসি পাকিস্তানের কথায়।
কালাতদের হাত থেকে অবৈধভাবে ১৯৪৭ সালে ছিনিয়ে নেওয়া বালুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা নাকি অবিসংবাদী। তাই শুধু ‘অধিকৃত কাশ্মীর’ নয় গোটা ভারতকে ‘ব্রেকিং ইন্ডিয়া ফোর্সের’ সাহায্যে ১৬টি টুকরোই ভেঙে ফেলে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রতিশোধ নেবে পাকিস্তান!
বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরি নেতাদের ধরপাকড়, পাথরবাজদের দমন, উরি ও পুলওমার প্রতিশোধ নেবার জন্য দায়ী মোদী। সুতরাং তাকে হটাতেই হবে যেন তেন প্রকারে। পাকিস্তানি মিডিয়া ২৪ ঘণ্টা দিল্লির ‘লুটিয়েন’ মিডিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে মোদীর জাতীয়তাবাদী চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করা যায়। তার জন্য কেমব্রিজ এনালিটিকা এবং শ্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বে শিকাগোয় গুপ্তভাবে আইএসআই-এর সাহায্যে পৃথিবীর তাবড় সাংবাদিকদের সহায়তায় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা নিরন্তর কাজ করে চলেছে। বরখা দত্ত, শেখর গুপ্তা, প্রণয় জেমস রয়, সাগরিকা ও দিলীপ সরদেশাইয়ের মতো হিন্দুনামধারী কট্টর হিন্দুবিরোধী ভারত-বিভাজনকারীদের স্লোগান, ‘মোদী হটাও ও অবাধে লুট করো’। বিদেশি আক্রান্তরা সহস্র বছর পরও শোষণ আর শাসন অব্যাহত রেখেছে এইসব দেশদ্রোহীদের সহায়তায়।
পাকিস্তান ৫০ বছরের জন্য ভারতের সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিয়াচিন, গিলগিট ও বালুচিস্তানকে লিজ দিয়েছে চীনকে। তাই পাকিস্তানের জন্মমুহূর্ত থেকে হিন্দুপ্রধান ভারতের সঙ্গে যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোদিন মিটবে বলে আশা করা যায় না। কারণ ইসলাম, জিহাদ, দার-উল-হার্ব এবং কাফেরের তত্ত্বের সঙ্গে যার পরিচয় হয়েছে, তার কাছে মুসলমানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব মানে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে নেওয়া।
এবার আসি আমেরিকার কথায়।
আমেরিকার চাই মোদীকে। কেন? তার উত্তর হচ্ছে চীনের এশিয়ায় একচ্ছত্র অধিকার কায়েম রাখা, আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী। দক্ষিণ চীনসাগরে চীনের আধিপত্য, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া আর জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যের ভাগীদারিতে চীনের দাদাগিরি আমেরিকা সহ্য করবে কেন? তাই ভারতের বন্ধুত্ব রেখে চীনের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছেন ট্রাম্প।
আমেরিকা ইরানের উপর আর্থিক অবরোধের সৃষ্টি করেছে। মোদী কিন্তু ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় মুদ্রায় ইরানের কাঁচা তেল কেনার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আমেরিকা রুষ্ট হলেও মেনে নিয়েছে কারণ মোদী ৪/৫ বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান অ্যাসল্ট রাইফেল, চিনুক, আপাচে, হাউইৎজার আর ড্রোন ইত্যাদি মারণাস্ত্র কিনেছে দেশের প্রতিরক্ষার খাতিরে।
আফগানিস্তানে আমেরিকার বহু সৈন্য রয়েছে ১৯৯০ সাল থেকে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভালো নয় সেই ৯/১১-এর পর থেকেই। তাছাড়া অ্যাবাটাবাদে পাকিস্তানি সেনার ওসামা বিন লাদেনকে নিরাপত্তা দেবার কারণে পেন্টাগনের কুদৃষ্টিতে আছে পাকিস্তান। তাই চীন ও পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা, আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্থাপনা এবং তালিবানি শাসনের অবসানে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই ট্রাম্পের প্রয়োজন মোদীকে।
ট্রাম্পের যেমন কনসার্ভেটিভ, কমিউনিস্ট ও নিউ ইয়র্কের সংবাদ সংস্থাগুলি সঙ্গে বিরোধ ঠিক তেমনি দিল্লিতে কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের পদলেহী ‘লুটিয়েন’ মিডিয়ার দেশদ্রোহীরা মোদী বিরোধী কাজকর্ম সংবিধানের আড়াল থেকে ও বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে।
এবার আসি রাশিয়ার কথায়। রাশিয়া ভারতের অভিন্ন বন্ধু সেই নেহরুর সময় থেকেই। রাশিয়া চীনের বিরুদ্ধে যেতে চায় না, কারণ চীন আমেরিকাকে কাবু রাখতে সক্ষম।
ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ পুতিনের সঙ্গে সখ্য রেখে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারে এস-৪০০ নামক আন্টিমিসাইল ঢাল কিনেছে রাশিয়া থেকে। তাছাড়াও আছে সুখোই, মিগ, চক্র সাবমেরিন, ক্রিমোভ ফ্রিগেট আর কারমোড হেলিকপ্টার। রাশিয়ার কাছ থেকে মোদী তার অদ্বিতীয় কূটনীতির চালে শুধু অস্ত্র কেনায় নয় তার টেকনোলজি ট্রান্সফারের চুক্তিও করতে পেরেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে এখন থেকে ভারতেই এইসব অস্ত্রের কারখানা খোলা হবে যাতে স্বদেশের প্রযুক্তিতে আরও উন্নতমানের অস্ত্র তৈরি হয়। ভারত স্বাবলম্বী হয়ে দেশের বেরোজগারিও দূর করতে পারবে।
মোদীর মতই পুতিনও স্বদেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত জনপ্রিয় রাজনেতা। একই বয়সি দুই নেতার সখ্য সারাবিশ্ব জানে। পুতিনের মতো দুঁদে বিশ্বনেতা মোদীর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন এমন একজন চাণক্যকে যিনি দ্বৈতযুদ্ধে উদ্যত ইরান ও আমেরিকা, ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন, রাশিয়া ও আমেরিকা—সবার সঙ্গেই সুষম সামঞ্জস্যের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক রেখে চলতে পারদর্শী।
এবার আসি ইউরোপীয়ান দেশগুলির সঙ্গে মোদীর সম্পর্কের কথায় !
ব্রিটেনের থেরেসা মের লেবার পার্টির সদস্যরাও ভোটব্যাঙ্ক পলিটিক্সের খেলায় মত্ত হয়েছেন। কে জানে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের মতো, পাকিস্তানি বংশজ স্বরাষ্ট্রসচিব, সাজিদ জাভেদ একদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসবেন কিনা! কেননা বর্তমানে ব্রিটেনের ১৬টি শহরের মেয়র মুসলমান। তারা কি মোদীকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর পদে চাইবে নাকি পাকিস্তান-প্রেমী রাহুলের কংগ্রেসকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জিততে সাহায্য করবে?
ফ্রান্সের পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপ্রধান ফ্রাশোয়া ওল্যাদেঁর সঙ্গে ২০১৫-তেই মোদীর দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়। একটি আন্তর্জাতিক সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির সমঝোতা আর দ্বিতীয়টি ৫৯০০০ কোটির রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি। ফ্রান্স ব্রিটেনের চিরশত্রু। যেখানেই উপনিবেশ ছিল সেখানেই দুই যুযুধানের আবির্ভাব হতো। বর্তমানে রাষ্ট্রপ্রধান এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাথে মোদীর সম্পর্ক মধুর।
তাছাড়া ভারত মহাসাগরে চীনের আধিপত্য এবং বাণিজ্যের উপর একচেটিয়া প্রভুত্ব, সমস্ত পাশ্চাত্য দেশগুলির স্বার্থের পরিপন্থী। তাই এশিয়ায় চীনকে প্রতিহত করতে পারে এমন শক্তি কেবলমাত্র মোদীর মধ্যেই বিদ্যমান। সেজন্য নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ছাড়াও অন্যান্য ছোটোবড়ো দেশ মোদীকেই দ্বিতীয় বারের জন্য নির্বাচিত দেখতে চান। কারণও স্পষ্ট। অনেক চুক্তি এখনও শুরুই হয়নি, সেগুলির পূর্ণায়ণও জরুরি তাদের দেশীয় স্বার্থে। সেটা সম্ভব হবে কেবলমাত্র মোদীর উপস্থিতিতে।
ডা. আর দাস