১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীন সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে, সামরিক কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুধু প্রত্যক্ষভাবে সাহায্যই করেনি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙ্গালিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করেছিল, চার লক্ষেরও বেশি নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল গোটা দেশ। এক কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের মাটিতে। আর জাতিসঙ্ঘ পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চীন বলেছিল, ‘সব মিথ্যা কথা। কোনো হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও ধ্বংসের ঘটনা ঘটেনি। সব আওয়ামি লিগের অপপ্রচার। আওয়ামি লিগ পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়। আর এতে আওয়ামি লিগকে সাহায্য করেছে ভারত। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের দায় চীন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারত ছাড়া। আর কোনো দেশকে পাশে পায়নি বাংলাদেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী বাঙ্গালিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপরই তাকে গ্রেপ্তার করে রাওয়ালপিন্ডি নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায় এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পক্ষে জনমত গড়তে সারাবিশ্বে দৌড়ঝাপ করে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। অন্যদিকে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি মানুষের খাওয়া-পরা ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হয় ভারতকে। ভারতবাসীকে বাড়তি করের বোঝা টানতে হয় এ কারণে। বিদেশ থেকে যে সাহায্য এসেছিল তা ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল।
| বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের মিত্র বাহিনীর যৌথ আঘাতে পরাজিত হয় পাকিস্তানি বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিংহ অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা। পরাজিত পাকিস্তানি অধিনায়ক লেঃ জেনারেল নিয়াজি (পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাকা) অরোরার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন।
স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর পাকিস্তানি কারাগারে আটক ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিদান নিয়ে যখন সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়ে ওঠে তখনও চীন মৃত্যদণ্ড কার্যকর কবতে পাকিস্তানকে মদত দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকা পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সদস্যভুক্তির প্রশ্নে বার বার ভেটো দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি অংশ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার অব্যবহিত পরই চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে চীনেরও জড়িত থাকার অভিযোগ তখনই প্রচারিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে ভারতে নিয়ে আসেন, থাকার ব্যবস্থা করেন। দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়। শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হয়, পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয় ছেলে-মেয়েদের। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে তারা চীনের ব্যাপক সহায়তা পেতে শুরু করে। সামরিক বাহিনী মূলত চীনা অস্ত্রেই সজ্জিত হয়। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। একুশ বছর পর তার নেতৃত্বেই আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসে।কিন্তু চীন নীতি ও সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদ যে অবস্থান গ্রহণ করেন, শেখ হাসিনা তা অব্যাহত রাখেন।
সম্প্রতি যে খবরটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হলো, বাংলাদেশকে আরও ৫ হাজার ১৬১টি পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা দিয়েছে চীন। এর আগে বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (এপিটিএ) আওতায় বাংলাদেশ ৩ হাজার ৯৫টি পণ্য শুল্কমুক্ত হিসেবে রপ্তানি করতে পারত। ফলে সব মিলিয়ে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য এখন বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত হিসেবে চীনে। রপ্তানি করতে পারবে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য শুল্ক ও কোটামুক্ত হিসেবে রপ্তানির সুবিধা দিল চীন। এ সুবিধা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। চীনের এই সুবিধাদান এমন সময়ে ঘোষিত হলো যখন লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ড দখলে মরিয়া হয়ে। সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে চীন। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপেক্ষা করে নেপালের বাম সরকার চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে ভারতীয় ভূমিকে নিজের। দেশের দাবি করে নতুন মানচিত্র তৈরি করেছে। যা সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ভারত সীমান্তেও। পশ্চিম সীমান্তে কাশ্মীরে পাকিস্তানি হামলা আরও গতি পেয়েছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে আরও কাছে টানার জন্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা আকস্মিকভাবে ঘোষিত হলো, যদিও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছিল বহু আগে। | জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে উত্তপ্ত লাদাখ। সীমান্ত। আর চীনের সিদ্ধান্ত এল ১৯ জুন।। ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সুবিধা পাওয়ায় চীনের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং দুই দেশের বাণিজ্য বৈষম্যও কমবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীন বাংলাদেশের অন্যতম বড়ো বাণিজ্য অংশীদার। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কম। বাণিজ্য ঘাটতি ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ আলোচনা ও দরকষাকষির পর এবার সে সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, চীনে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশে যেটিকে ‘জিরো ট্যারিফ স্কিম’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। জানা গেছে, এ সুবিধা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে দুটি শর্ত মেনে নিতে হয়েছে। এক, বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা)-এর আওতায় বাংলাদেশ ৬৫ শতাংশ পণ্যে যে শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে চীনে, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন সুবিধা কার্যকর হলে আপটা-র সুবিধা অকার্যকর হয়ে যাবে। দুই, আপটা-র আওতায় চীনে কোনো পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা নিতে হলে বাংলাদেশকে স্থানীয়ভাবে ৩৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন বা ‘ভ্যালু অ্যাড করতে হতো, এখন নতুন স্কিমের আওতায় চীনে শূন্য শুল্ক সুবিধা নিতে গেলে আরও ৫ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ৪০ শতাংশ হারে ভ্যালু অ্যাড করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই শর্ত দিয়ে চীন যে শূন্য শুল্ক সুবিধা বা জিরো ট্যারিফ স্কিম দিল, তাতে কতটা লাভবান হবে বাংলাদেশ ?
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের দেওয়া শর্তের উত্তরে আমরা গত বছর এক চিঠিতে বলেছিলাম, নতুন সুবিধা দিলেও আমাদের আপটা সুবিধা যেন বাতিল করা না হয়। তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ৯৭ শতাংশ পণ্যে শূন্য শুল্ক সুবিধা কার্যকর হলে তখন আর আপটা সুবিধার প্রয়োজন হবে না। ফলে প্রথম শর্তটির কোনো কার্যকারিতা আর থাকছে না। দ্বিতীয় শর্তের ক্ষেত্রে জবাব হচ্ছে, ১০ বছর আগে বাংলাদেশের জন্য এ শর্তটি বাণিজ্যে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটালেও এখন আর কোনো বাধা নয়। কারণ এখন দেশের তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিক, ওষুধ-সহ প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যের শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে। বেশিরভাগ পণ্যে গড়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এমনিতেই ভ্যালু অ্যাড হয়। ফলে স্থানীয় মূল্য সংযোজন ৩৫ না ৪০ তা এখন বাংলাদেশের জন্য কোনো শর্তের মধ্যে পড়ে না। সংশ্লিষ্টদের মতে মূল কথা হচ্ছে, বর্তমানে চীনের বাজারে আপটার আওতায় ৮৩টি পণ্যে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর আওতায় ৪ হাজার ৭৮৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ দুটি সুবিধায় চীনের ট্যারিফ লাইনের ৬৫ শতাংশ পণ্যে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যায়। অথচ এর মধ্যে দেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত নেই। এতে চীনের বাজারে প্রচলিত এ বাণিজ্য সুবিধা বাংলাদেশের কোনো কাজে লাগছে না। এখন ঘোষিত ৯৭ শতাংশ শূন্য শুল্ক সুবিধা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হলে সব মিলিয়ে ৮ হাজারের বেশি পণ্যে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে। নতুন সুবিধায় বাংলাদেশর তৈরি পোশাক, চামড়া-সহ ১৭টি পণ্যে শুল্ক সুবিধার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এর উত্তরে চীন বলেছে, তামাক ও ভুট্টা ছাড়া বাকি ১৫টি পণ্যে শুল্ক সুবিধা দিতে তাদের আপত্তি নেই। ফলে প্রাথমিক পণ্য তালিকা বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, তৈরি পোশাক-সহ চীনে রপ্তানিযোগ্য সম্ভাবনাময় সব পণ্যই এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সে কারণে চীনের দেওয়া নতুন শুল্ক সুবিধার প্রস্তাবটি দেশের জন্য লাভজনক বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপরন্তু চীন যে সুবিধা দিতে চাচ্ছে তা কার্যকর হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী বাজার গড়ে উঠবে।
প্রশ্ন উঠছে, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে চীন বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করেছে, পাকিস্তানিদের হাতে অস্ত্র। দিয়ে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালি হত্যা, লক্ষ লক্ষ নারী নির্যাতনে সহায়তা করেছে, বঙ্গবন্ধু নিহত না হওয়া পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি, সে দেশটি পাঁচ দশকের মাথায় এসে হঠাৎ ‘কল্পতরু হয়ে গেল, বিষয়টা কেমন অস্বাভাবিক ঠেকছে না ! এটা ঠিক যে, রাজনীতিতে চির শত্রু বলে কিছু নেই। বিশ্ব পরিস্থিতিতে স্থায়ী মিত্র বলেও কিছু নেই। কিন্তু তবুও বাংলাদেশের মাটি থেকে একাত্তরের রক্তের দাগ যখন এখনো শুকোয়নি। লক্ষ লক্ষ পরিবার যখন স্বজন হারানোর ব্যথা এখনো ভুলতে পারেনি, তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে চীনকে ‘মিত্রের ভূমিকায় দেখে অনেকেই সেটাকে স্বাভাবিক মনে করছেন না। | বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন করোনায় সারা বিশ্বে প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া-সহ গোটা কয়েক দেশ ছাড়া বিশ্বের সব দেশই করোনার উৎপত্তি এবং উৎপত্তির পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একমত। বেরিয়ে পড়েছে থলের বিড়াল। চীন এক ভয়ংকর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে শিগগিরই। চীন থেকে অনেক দেশ বড়ো বড়ো লগ্নি সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তাইওয়ান, হংকং অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। তিব্বত নড়াচড়া করছে। উইঘুরে কী ঘটছে তা আর গোপন থাকছে না। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু করে পূর্ব চীন সাগরে মার্কিন ভীতি প্রবল হচ্ছে চীনের। ভারতে মোদী সরকার কাশ্মীরের ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন। লাদাখে রাস্তাঘাট, বিমান ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অরুণাচলে হুমকি দিয়ে কাজ হচ্ছেনা।‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ যে আশা নিয়ে শি জিনপিং এগিয়েছিলেন, সে আশা পূরণের ক্ষেত্রে দিনদিন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের আধিপত্যবাদী থাবা বাধা পাচ্ছে। বিশ্বে চীনের মোড়লি করার স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে। | সামরিক বাহিনীতে ছিলেন, বর্তমানে অবসর গ্রহণ করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চীন ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছে। ভারতের অবস্থান দৃঢ় হচ্ছে। সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে ভোটাভুটি তার প্রমাণ। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাংবিধানিক পদক্ষেপ শুধু পাকিস্তানকে নয় চীনকেও চিন্তাগ্রস্ত করেছে। চীন লাদাখে দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত অবস্থান মজবুত করলেও গত কয়েক বছরে ভারতের রাস্তাঘাট ও বিমানক্ষেত্র নির্মাণে চীন প্রমাদ গোনে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে প্রযুক্তিগত সুবিধার দিক থেকে ভারত অনেক এগিয়ে রয়েছে। চীন এই অবস্থায় প্রতিবেশীদের দিয়ে ভারতকে ঘেরাও করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তান তো চীনের কবজায় আছে সাত দশক ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে নেপালকে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে সফল হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে কাছে টানতে চাইছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চীনা ডুবোজাহাজ কিনেছে বাংলাদেশে, মহেশখালিতে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে চীনারা। চীন এখন বড়ো ঘাঁটি গাড়তে চায়। পথের কাঁটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। করোনা যেমন চীনকে বিপদে ফেলেছে, আবার সুবিধাও দিয়েছে। বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসক দল পাঠিয়ে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভ্যর্থনা | পেয়েছে। যা ছিল প্রচলিত প্রটোকল বিরোধী। চীন আশ্বাস দিয়েছে, করোনার ভ্যাক্সিন। আবিষ্কারের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে তারা। চীন ব্যবহারের পর দেশের বাইরে প্রথম এই ভ্যাক্সিন পাবে বাংলাদেশ। শুল্কমুক্ত পণ্যের ঘোষণার পরপরই ভ্যাক্সিনের ঘোষণা কল্পতরু বলে কথা!
ঢাকা থেকে বিশেষ প্রতিনিধি