আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দূরদৃষ্টিহীন হিন্দুবিরােধী নেহরুর চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটাই হয়েছিল মস্তবড়াে ভুল! দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাপান ও ইজরায়েলকে এড়িয়ে আরবের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মধ্যে তার ইসলাম প্রীতির প্রতিফলন দেখা যায়। স্বাধীন ভারতে সংবিধানের সৃষ্টিকর্তারাও চেয়েছিলেন, নেহরুর পরিবর্তে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতাে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও দেশভক্ত এক প্রজারঞ্জক প্রধানমন্ত্রীকে। ভারতের সংস্কৃতি ও ইতিহাস। সম্পর্কে অজ্ঞ নেহরু ইউরােপ-আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় মডেলকেই ভারতে আমদানি করতে চেয়েছিলেন। আজ যদি হিন্দু ভারতের এক হিন্দু সংবিধান হতাে, তবে কমিউনিস্ট নেপালের আজ এই দুর্দশা হতাে না। নেপালেশ্বর ত্রিভুবন শাহ ১৯৫১ সালে নেহরুকে নেপালের ভারতবিলয়ের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাহলে চীন, জাপান, কোরিয়া, কম্বােডিয়া ইত্যাদি দেশ স্বেচ্ছায় ভারতে বৌদ্ধ প বানিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ মিলনের তীর্থস্থান নির্মাণ করতাে যেমন ইসলামের মক্কা-মদিনা বা খ্রিস্টানদের জন্য রােমের ভ্যাটিকান। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদও সমাপ্ত হয়ে যেত। আর ভারতের বেদভিত্তিক সমাজবাদে বিশ্বধ্বংসকারী ‘টোটালিটেরিয়ান’মতবাদের সৃষ্টি ও পুষ্টিও হতাে না। | দূরদৃষ্টিহীন নেহরু হিন্দি-চিনি ভাই ভাই করে ১৯৬২ সালের চীনযুদ্ধে পরাজয়ের অসহ্য গ্লানিতে ১৯৬৪ সালে পরলােকগমন করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর রাজত্বকালে শিখ আর তামিল হিন্দুদের সম্মান কিংবা শিক্ষাদানের পরিবর্তে অকালমৃত্যু আর নরসংহার এনে দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ইসলামিক বাংলাদেশের সৃষ্টিতে ভারতের পূর্বদিকের সুরক্ষা বিঘ্নিত হয়েছিল। সিমলা সমঝােতায় ‘৭২ সালে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈনের নিঃশর্ত মুক্তি, অনিষ্পন্ন কাশ্মীর সমস্যা আর অক্ষুণ্ণ ৩৭০ ধারা, তার নির্বুদ্ধিতারই পরিচয় দেয়। হাইকোর্টকে অমান্য করে জরুরি অবস্থা জারি, ১৯৭৫ সালে বিরােধী দলনেতাদের জেলবন্দি করে গণতন্ত্রের সমাধি দিয়েছিলেন তিনিই। | সাম্প্রতিক চীন-ভারত সীমান্তের খণ্ডযুদ্ধের সর্বশেষ সংবাদে জানা যাচ্ছে, কম্যান্ডিং অফিসার কর্নেল সন্তোষবাবু-সহ ভারতের ২০ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। চীনের ১ অফিসার সহ ৪৫ জন সেনাকে। নিকেশ করেছে ভারতীয় জওয়ানরা। আগ্রাসী চীনের সীমান্তবিবাদ, ভারত, জাপান ও রাশিয়া ছাড়া আরও ১৪টি দেশের সঙ্গে আছে। কংগ্রেস রাজত্বে চীন ‘৫০ সালে। তিব্বত গ্রাসের পর, ‘৬২ সালে আকশাই চীন, ‘৬৩ সালে কারাকোরাম, ২০০৮ সালে চাওজি ঘাঁটি, ২০১৩-তে রােকনুলা এবং ২০১৭ সালে ভুটানের ডােকলামকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছিল, কিন্তু ১৮ জুন ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন জুনিপার’-এর কারণে চীনকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়। উত্তরকোরিয়া, পাকিস্তান ও আফ্রিকার দেশগুলি চীনের ঋণ-জালে আবদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদী চীনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও ভয়ানক। ডুবন্ত অর্থনীতি ও স্বৈরাচারী শাসকের তথাকথিত সাম্যবাদে অত্তিষ্ঠ দেশের জনগণ। চিরশত্রু আমেরিকার সঙ্গে অর্থনৈতিক ছায়াযুদ্ধ। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরােপীয় ক্যাপিটালিজমের সঙ্গে চৈনিক কমিউনিজমের চিরস্থায়ী দ্বৈতসমর চলছে।
চীন বা ভারত কেউই পূর্ণযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না। দুই দেশই শক্তি প্রদর্শনের। জন্য সীমান্তে ট্যাঙ্ক বা সৈন্যসংখ্যা বাড়াচ্ছে মাত্র। কারণ একটা যুদ্ধ লাগলে আগামী ৩০ বছরের অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং আর্থিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতাকে স্বীকার করে নিতে হয়। আর্থিক বিকাশের মানদণ্ডে ভারত এখন এশিয়ায় প্রথম এবং সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে । আইএমএফের বিবৃতিতে, করােনা মহামারী চীনের বেকারিত্বের হার ৩.৮ শতাংশ। বাড়িয়েছে। অভূতপূর্ব আর্থিক মন্দায় চীন এখন বিধ্বস্ত। ২০২০ সালের প্রারম্ভেই চীনের জিডিপি ৬.৮ শতাংশে নেমেছে। চীনাদের মধ্যে বিক্ষোভ এখন চরমে উঠে গেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সারা বিশ্বে উহান প্রদেশে চীনা গবেষণাগারের তৈরি কৃত্রিম ভাইরাস করােনার দ্বারা জৈব-আতঙ্ক ছড়ানাের অভিযােগে একঘরে হয়ে পড়েছেন। মে মাসের শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপর আকশাই চীন থেকে নির্গত গালওয়ান নদী, একটি উষ্ণপ্রস্রবণ এবং তিব্বত-ভারতের মধ্যস্থিত ৪৩৫০ মিটার উচুতে ১৩৪ কিলােমিটার দীর্ঘ প্যাঙ্গং তাসাে ঝিল— এই তিনটি স্থানকেই সম্প্রসারণবাদী চীন দখল। করতে চাইছিল। ১০ মে থেকেই চীন সেনা সমাবেশ করেছ। বাধ্য হয়ে ভারতকেও সেখানে সৈন্যসমাবেশ করতে হয়েছে।
২০২০-তে নরেন্দ্র মােদী কিন্তু ১৯৬২ সালে নেহরুর দুর্বলতাকে মেনে নিতে পারেননি। মধ্যস্থতার কারণে জুন মাসের প্রারম্ভেই শেষােক্ত দুই স্থানের দখল-লড়াইয়ের উত্তেজনা কমে গিয়েছিল। কিন্তু ১৫ জুন রাত্রে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ঘাঁটিতে দুই দেশের সেনার মধ্যে গােলাগুলির পরিবর্তে ভয়ানক লাঠি ও মুঠির লড়াই হয়েছিল।
ভারতের পূর্ব লাদাখ, লেহ ও কারগিলের কাছে গালওয়ান ঘাঁটি হচ্ছে গালওয়ান নামের এক সংযােজক নদীর তটভূমি। আকাসাই চীনের পশ্চিমে সিন্ধুনদীর শাখা শ্যোক নদী যা গালওয়ানকে সংযুক্ত করেছে এই অঞ্চলে। লাদাখেরই বাসিন্দা খোঁজকর্তা গােলাম রসুল গাওয়ানের নামে ওই নদীটির নামকরণ করা হয়েছে। বিস্তারবাদী চীন সেটাকেই দখল করতে চেয়েছিল। চীনের প্ররােচনায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট শাসক কে পি শৰ্মা অলিও ২০ মে, ভারতের। উত্তরাখণ্ড-তিব্বত সংলগ্ন লিপুলেক সীমান্তে অহেতুক বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন। এখানেই ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন লাদাখে আটত্রিশ হাজার বর্গকিলােমিটার দখল করে নিয়েছিল। ধর্মেন্দ্র-বলরাজ সাহনীর ১৯৬৪ সালের হিটফিল্ম ‘হকিকত’-এর স্যুটিং এখানেই হয়েছিল। ময়ূরকণ্ঠী লতার স্বরে, ‘জো শহিদ হুয়ে হ্যায় উনকী জরা ইয়াদ করাে কুরবানী আজও সমস্ত দেশবাসীর হৃদয় ছুঁয়ে যায় অদ্ভুত এক বীররসের প্লাবনে। ১৯৬২ সাল থেকেই চীনের আগ্রাসনকে প্রতিরােধ করার জন্য আপত্তি সত্ত্বেও এই দুর্গম অঞ্চলে সেনার সঙ্গে ‘বর্ডার রােড অর্গানাইজেশন দারবুক শেইখ-দৌলত বেগ ওল্ডি বা ডিএসডিবিও সড়ক নির্মাণ শুরু করেও কিন্তু শেষ করতে পারেনি। ২৫০ কিলােমিটার দীর্ঘ শ্যোখ নদীর সমান্তরালে চলা এই সড়কটি সামরিক ও বেসামরিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী মােদীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাই ২০১৯ সালেই অবিশ্বাস্য গতিতে একটি সেতু-সহ এই সড়কটির নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হয়ে যায়। সেজন্যই ভারতের ওপর চীনের এত রাগ। | দুর্গম পার্বত্য উপত্যকায় জনগণের যাতায়াত, খাদ্যসামগ্রী ও রসভর্তি ট্রাক চলাচলের বিশেষ উপযােগী করেই সেতু-সহ সড়কটি নির্মিত হয়েছিল। প্রয়ােজনে টহলদারি পল্টন, ট্যাঙ্ক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রের সরবরাহ যাতে ১৯৬২ সালের মতাে বিঘ্নিত হয়ে না পড়ে তার জন্য সােবাহিনী পূর্বপ্রস্তুতি নিচ্ছিল। যশস্বী কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নীতীন গড়করি যেমন সারাদেশে অসংখ্য সেতু-সহ সড়ক তৈরি করে কীর্তিমান হয়েছেন, তেমনি বিআরও দেশ ও দেশবাসীর সুরক্ষাকেনিশ্চিত করেছে।
১৯৬২ সালের চীনযুদ্ধের পরাজয়ে এবং চীনের আগ্রাসনের কথা বিবেচনা করে, সেনাবাহিনীর দাবি ছিল লেহ ও শেইখ ঘাঁটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে শীঘ্রই স্থায়ী সেনাছাউনি স্থাপন করা হােক, কিন্তু তৎকালীন দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের দোদুল্যমান মনােভাবের জন্য তা বাস্তবায়িত হয়ে ওঠেনি। মৌনী মনমােহন সিংহ ভ্যাটিক্যান দ্বারা পরিচালিত সােনিয়ার সিলমােহরের অপেক্ষায় বসে থেকে শেষ পর্যন্ত সেই কাজটি করার সাহস পর্যন্তও দেখাতে পারেননি। | সিকিমের নাথুলা পাসে ১৯৬৭ সালে ৩০০ চীনা সৈন্যকে মেরে ৮৮ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হয়েছেন। অরুণাচল প্রদেশেও ১৯৭৫ সালে অসম রাইফেলের ২০ জন জওয়ান পিএলএ-র অতর্কিত অ্যামবুশ অ্যাটাকেশহিদ হয়েছেন। এবারে ১৫-১৬ জুন চীনের সৈন্য পূর্ব লাদাখের ভূভাগ জোর করে দখল করতে চেয়ে অনাবশ্যক বিবাদে জড়িয়ে পড়ল। আসলে এশিয়ার মুকুটহীন সম্রাট চীন ভারতকে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার মতােই তার অধীনস্থ করে রাখতে চায়। তার প্রভুত্ব যেন অদ্বিতীয় থাকে। চীনের এই আগ্রাসনকেশক্তিবলে প্রতিরােধ করার ক্ষমতা আমেরিকা ছাড়া এই মুহূর্তে সারাবিশ্বে আর কারুর নেই!
দেশের এই দুরবস্থায় দেশদ্রোহী চীনা দালালদের কথা আমাদের স্মরণ রাখা জরুরি হবে! স্বার্থান্বেষী কীটরা ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে। দেশমাতৃকাকে বিক্রি করতেও পিছপা হবে না! কেউ ‘ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতির’ মােদীকে কটাক্ষ করছে তাে কেউ বীর শহিদদের বিদ্রুপ করছে! সেসব দেশদ্রোহীদের বিরােধিতা করলেও দেশের মঙ্গলই হবে। তারা মােদীকে উস্কাচ্ছে, ২০১৭ সালের উরিতে ১৯ জন শহিদ ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের উদাহরণ দিয়ে। স্পষ্ট মনে আছে, ২০১৭ সালে ভারতীয়সেনা যখন ডােকলাম থেকে চীনা সেনাদের ‘পিছু হটতে’ বাধ্য করছিল, সে সময়েই কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী রাতের অন্ধকারে দিল্লিস্থিত চীনা দূতাবাসে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। কংগ্রেস- কমিউনিস্টরা ওঁত পেতে প্রতীক্ষা করছে, কীভাবে একজন সত্যিকারের দেশভক্তকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে। দিল্লির ক্ষমতা দখল করা যায়!
হ্যা, আমাদেরমতাে সাধারণ নাগরিকরাও দেশ ও দশের স্বার্থে অনেক কিছুই করতে পারি! চীনাসামগ্রীর অবিলম্বে বর্জন করাই হচ্ছে চীনের বিরুদ্ধে আর্থিক যুদ্ধকৌশলের প্রথম সূত্র। ঠিক একশাে বছর আগে স্বদেশি আন্দোলনে ২৯২০-তে বিপ্লবীরা চারণকবি মুকুন্দ দাসের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়েছিল, ‘ভেঙে ফেল রেশমি চুরি’। চীন প্রতিবছর ভারতে ৫০ মিলিয়ন ডলারের চীনাসামগ্রী রপ্তানি করে। আর নগণ্য পরিমাণে আমদানি করে। চীনের রপ্তানি ২০২০-তে ২.১ শতাংশ বেড়ে হয়েছিথল ৫১৫ বিলিয়ন ইউয়ান।। একই সময়ে ভারত থেকে চীনে রপ্তানি ০.২৫ শতাংশ কমেছে। চীনের সঙ্গে ভারতের এই মুহূর্তে বাণিজ্য ঘাটতি ৩.৩ বিলিয়ান ডলারেরও বেশি। তা সত্ত্বেও মােদী বিরােধী কংগ্রেস-কমিউনিস্টরা ও আরবান নকশাল বুদ্ধিজীবীরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এই বলে, “চীন মাত্র ২ শতাংশ রপ্তানি করে ভারতের সঙ্গে। সুতরাং আর্থিক বহিষ্কারে চীনের বিশেষ কোনাে ক্ষতিইহবে না। চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ২০১৯ সালে ছিল ৪২২ বিলিয়ন ডলার যা ভারতের থেকে অনেক গুণ বেশি। ২০১৯ সালে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল ৫৭ বিলিয়ন ডলারের। চালাক চীন সস্তা এবং নিকৃষ্ট চীনাসামগ্রী তৃতীয় দেশ হংকংয়ের মাধ্যমে ভারতে পাঠাচ্ছে। মুনাফা লুঠছে চীন। বদনাম হচ্ছে হংকংয়ের। বােঝা যাচ্ছে না বস্তুটির আসল উৎসস্থলটি কোথায়। সেজন্যই চীন ভারতকে ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারসিপের মধ্যে আনতে এত বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। বামপন্থীরা বলছে, চীন ভারতের তুলনায় বিশালাকার। তাই চীনের সঙ্গে টক্কর মূখতারই পরিচয় হবে। জিডিপির হিসেবে চীনের ১৪ ট্রিলিয়নের পাশে ভারতের ২.৭ ট্রিলিয়ন সত্যিই ৫ গুণ বেশি লাগছে কিন্তু পিপিপি মানে ‘পারচেসিং পাওয়ার প্যারিটির’ নিরিখে ভারতের ৯ ট্রিলিয়নের সঙ্গে চীনের ২২ ট্রিলিয়ন মাত্র ২.৫ গুণ বেশি। আর্থাৎ স্বদেশি দ্রব্যের মূল্য অনেক কম বলেই ভারতীয়দের ক্রয় ক্ষমতাও চীনাদের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিসংখ্যানটিকে মােটেই অগ্রাহ্য করা যায় ।
তাছাড়া বামপন্থীরা বলবে চীনের আর্থিক বহিষ্কারে অসংখ্য দেশীয় ক্রেতা-বিক্রেতার লােকসান হবে এবং দেশে বেকারত্ব বাড়বে। মােবাইল ফোন বা ওষুধ ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের প্রয়ােজনীয় অসংখ্য চীনাসামগ্রীর কেনা-বেচা করা ছােটো ও মধ্যম বর্গীয় ব্যবসায়ীদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। চীনের দালাল বামপন্থী তথাকথিত অর্থনীতিবিদরা অবশ্য ঠিক সময়েই অভিনয়ে নামবেন। বেতনভােগী এই দেশদ্রোহীরা মাঝারি ও ছােটো ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভুল তথ্যের সাহায্যে বিভ্রান্ত করে ভারতেরক অপূরণীয় ক্ষতি ও চীনের অস্বাভাবিক মুনাফা করাবেন।
তাই প্রধানমন্ত্রী মােদী দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন, আত্মনির্ভর স্বাভিমানী ভারত তৈরির জন্য। ভারতে এখন জাপান, কোরিয়া, ফিনল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা হল্যান্ডে নির্মিত প্রতিদিনকার প্রয়ােজনীয় টেকসই জিনিসগুলি সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলি কিনুন। চীনের ঋণদান ও আর্থিক মৃত্যুফঁাদের কথা অনেকেই শুনেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সস্তার চীনা মাদক দ্রব্যের ব্যবহারে মানুষ এমনই নেশাগ্রস্ত হয়ে যায় যে, তখন চীনের উপরই তার জীবনমরণ নির্ভর করে। এই নির্ভরতার মানে পরমুখাপেক্ষিতা যা হচ্ছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে বশ্যতা বা অধীনতা স্বীকার করা। সারাবিশ্বে চীন উহানের প্রাণঘাতী কৃত্রিম করােনামহামারী ছড়ালাে। তারপর চীন মাস্ক, ভ্যাকসিন ও ভেন্টিলেটর চড়া দামে ওই আক্রান্ত দেশগুলিতে রপ্তানি করে মুনাফা লুটতে থাকলাে। আচ্ছা, আমাদের এ কী ধরনের দেশপ্রেম? সস্তায় নিকৃষ্ট মানের চীনাসামগ্রী কিনে চীনের অর্থব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছি কেন!
অন্যদিকে সেই টাকাতেই ব্যবহৃত চীনের প্রযুক্তি ভারতের সুরক্ষার জন্য মারাত্মকভাবে বিপজ্জনক। তাই আমাদের ৫-জির প্রােগ্রাম থেকে হুয়াইকে সম্পূর্ণরূপে বহিষ্কার করতে হবে অনতিবিলম্বে। আমাদের উচিত মােবাইল থেকে প্রথমেই চীনা অ্যাপগুলিকে বিদায় করা। দয়া করে চীনের তৈরি দেবদেবীর মূর্তি ও ধূপবাতির মতাে দৈনন্দিন প্রয়ােজনীয় এমন অসংখ্য জিনিসকে ঘরে ঢােকাবেন না। মনে আছে, সাম্প্রতিক দিল্লি দাঙ্গায় কেজরিওয়ালের প্রিয়পাত্র আপনেতা তাহির হুসেনের বাড়ির ছাদ থেকে হিন্দুদের ওপর ছিটানাের জন্য শান্তিজল আর গঙ্গজল লেখা পাত্রগুলিতে পাওয়া গিয়েছিল প্রাণঘাতী গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড। আজই প্রতিজ্ঞা করুন, চীনকে বাদ দিয়ে অন্য ব্রান্ডের জিনিস কিনব। সম্প্রতি দিল্লিতে ভারতের সাত কোটি ব্যবসায়ীর কনফেডেরশন অব অল ইন্ডিয়ান ট্রেডার্সের সভাপতি প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল বর্জনযােগ্য তিন হাজারের বেশি চৈনিকসামগ্রীর তালিকা প্রস্তুত করেছেন। হিসেবে দেখা গিয়েছে, আগামী ছ’মাসেই চীনের ক্ষতি হবে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এই দুর্দিনে আপনি কি ভারতমাতার সেবায় নিজেকে নিয়ােজিত করতে চান না?
ডাঃ আর এন দাস