করোনার আবহে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাক্ষেত্রে গভীর সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের হাসপাতাল সাধারণ শ্রমিক, কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য নিবেদিত৷ আর এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে একটি মেডিক্যাল কলেজ। এই হাসপাতালের শুরু থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা সমেত কলকাতা ও সারা রাজ্যের অসুস্থদের সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করে আসছে। ফলে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে রোগীর চাপ খুব বেশি।
ইএসআই হাসপাতাল মূলত সেইসব মানুষদের সেবা বা চিকিৎসা দেয়, যারা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেননা। আমরা এখানে একেবারে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিনাব্যায়ে বিমাকৃত শ্রমিকদের দিই। এইসব মানুষদের মধ্যে এমন অনেক রোগী আছেন যারা নিয়মিত চিকিৎসার সুযোগ না পেলে জীবন হানির ঘটনাও ঘটতে পারে। করোনা সংক্রমণ যখন শুরু হলো সেই সময় আমাদের কাছে করোনার চিকিৎসা করবার জন্য অনুরোধ ও নির্দেশ আসে এবং বলা হয় হাসপাতালটি করোনার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। জেলা প্রশাসন আমাদের প্রস্তুত থাকতেও বলে। আমরা তখন থেকেই সাধারণ চিকিৎসার বিষয়টাকে • হাসপাতালে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিই। একসময়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আর হাসপাতালে রোগী ভর্তিও বন্ধ করে দিতে হয়। ফলে আমাদের কাছে যারা নিয়মিত চিকিৎসার সুযোগ নিতেন বা সেই সব মুমূষু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই থমকে গেছে। ফলস্বরূপ যা হলো তাতে একজন চিকিৎসক হিসাবে মানবিক যন্ত্রণার শিকার হলাম।
এই ধরনের মহামারী এলে, সরকারের আপতকালীন একটা ব্যবস্থা হিসাবে কয়েকটি হাসপাতালকে নির্দিষ্ট করে প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র করোনার চিকিৎসাকেন্দ্র হিসাবে রাখা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায়, করোনা সুনামির ধাক্কাটা সহ্য করতে গিয়ে আর পারছে না কেউ। যার ফলে রাজ্য জুড়ে সাধারণ চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংকট গভীর হয়েছে। আর একটা বিষয়, হাসপাতালের চিকিৎসকদের মনে যেমন করোনা সংক্রমণের ভয় পরোক্ষে কাজ করছে তেমনি সাধারণ রোগীদের মনেও হাসপাতালের প্রতি একই কারণে ভয়। ফলে পরে যখন সব চালু হবে, তখন একটি করোনা হাসপাতালে রোগী কতটা আসবেন, সেটাও ভাববার বিষয়। আমার যেটা মনে হয়, করোনাকে নিয়ে এখনো ভাববার সময় আছে। রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতাল, চিকিৎসক, চিকিৎসা সহায়ক কর্মীদের করোনার কাজে না লাগিয়ে, সামান্তরালভাবে এলাকায় এলাকায় সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস এই মুহূর্তে প্রয়োজন আছে। নইলে করোনায় মৃত্যুহার যা রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মৃত্যু হবে করোনার বাইরে থাকা রোগীদের।
ডাঃ প্রাঞ্জল রায়