আমি একজন ক্যান্সার শল্য চিকিৎসক। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমার রোগীদের নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। কারণ এখন প্রত্যেক মানুষের মনে এমন ভয় ঢুকে গেছে যে তারা আর কোনো হাসপাতালে চট করে আসতে চাইছেন না। এটাই আমাদের কাছে চিন্তার বিষয়। কেননা আমার রোগীরা এখন হয়ত যে স্টেজে রয়েছেন, করোনা যখন একটু নিয়ন্ত্রিত হবে, তখন যদি : তারা আসেন, দেখা যাবে তাঁরা এমন একটা স্টেজে পৌঁছে গেছেন, সেখান থেকে ফেরানো আমাদের কাছে কঠিন।
করোনার কারণে রাজ্যের সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই অন্যরকম জায়গায়। এখন চিকিৎসা ক্ষেত্রের সমস্ত বিষয়টাই করোনাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। রাজ্যে সিংহ ভাগ চিকিৎসককে সরিয়ে নিয়ে করোনার চিকিৎসার কাজে লাগানো হয়েছে। বহু হাসপাতালকে করোনার চিকিৎসাকেন্দ্র হিসাবে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা করাবার জায়গাটাই কমে গেছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে, সাধারণ চিকিৎসা পাবার ক্ষেত্রে একটু হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে আর একটি বিষয়ের কথা বলতেই • হয়, সরকারি বা বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রেই পরিষেবা দেবার ব্যাপারে স্বাভাবিক জায়গার থেকে অনেকটাই কম দিচ্ছে। ফলে রোগীরা যখন দেখছেন, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, তারা আর যাচ্ছেন না। যেমন একদিকে তাদের মনে সংক্রমণের ভয়টা গেড়ে বসেছে, অন্যদিকে সংক্রমিত হবার ভয়টাকেও জয় করতে পারছেন না। একটা কথা মনে রাখতে : হবে, করোনাতে যতজন মারা যাচ্ছেন, তার থেকে অনেক বেশি মারা যান অন্য রোগে। এই অন্য রোগগুলি সেই রোগ যে রোগের নিয়মিত চিকিৎসা না করালেই মৃত্যু সামনে চলে আসবে। এটা নিয়ে সচেতন করাটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। তাই সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রের দিকে মুখ ফেরাচ্ছেন না। আমার যেটা মনে হয়েছে, সরকারি তরফে এই প্রচারটা করা হোক, যে • আপনারা করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে ঘরের ভিতর বসে থেকে নিজের রোগটাকে চিকিৎসা না করান, তাহলে আপনি আপনার দীর্ঘদিনের রোগেই চরম দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তবে এই প্রচার করার আগে অবশ্যই সরকারকে চিকিৎসা পাবার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করতে হবে। আমার মনে হয়, যে সব মারাত্মক রোগ, যেগুলির ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসা পাওয়া দরকার, সেইসব রোগীকে চিহ্নিত করে, তাদের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন। আর একটা বিষয়, এখন হাসপাতালগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করে এগোতে হবে। কোভিড ও নন-কোভিড। কোভিড হাসপাতালে পুরোপুরি করোনার চিকিৎসা হোক। আর যেগুলি নন-কোভিড সেখানে : অন্য সব রোগের চিকিৎসা করাবার সুযোগ পাক সাধারণ রোগীরা। মেডিক্যাল : কলেজগুলির উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কলকাতা মেডিক্যালকে যেমন পুরোপুরি কোভিড করা হয়েছে, তেমসন এন আর এস বা আরজিকরকে রাখা হোক নন-কোভিড হিসাবে।
ডাঃ গৌতম মুখোপাধ্যায়