রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শুধু বিজেপি নয়, বিপক্ষের কংগ্রেস আর কমিউনিস্টরাও এখন খেপে গেছে। নির্বাচনের সময় অবশ্য শেষোক্তো দুই সংখ্যালঘু ভোট-ভিখারি পার্টি, মমতার ব্যানর্জির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অমিত শাহর গতিরোধ করে পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানানোর ষড়যন্ত্রে অবশ্যই শামিল হবে। এখন জনগণের পালস বুঝতে পেরে গেছে সব পার্টিই। তাই পাবলিক সেন্টিমেন্টে শুড়শুড়ি দিয়ে মমতার বিরুদ্ধে রয়েসয়ে কথা বলছেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, অকারণে ১০০০ কোটির বেশি টাকা ক্লাবগুলিকে দেওয়ার কারণ ২০২১-এর নির্বাচন। কিন্তু ওই টাকায় অনেক বেকারকে রোজগার দেওয়া যেত। সরকারি আমলাদের খরচা থেকে অনেক টাকা বাঁচিয়ে করোনা’কে কাবু করা যেত! ভোটে ভয় দেখানো, রিগিং, ধর্ষণ, লুঠ আর পেশীশক্তির প্রয়োজন আছে। যে! তাই মাস্তান পোষা আর কী!
মুখ্যমন্ত্রী সব ব্যাপারেই নেতিবাচক উক্তি আর প্রত্যাখানের প্রবৃত্তি। মোদী বিরোধিতার মধ্যে দিয়েই কিন্তু তার সর্বনাশের শুরু। কেজরিওয়ালও ঠিক সেই পথেরই দিশারি ছিলেন কিন্তু শাহিনবাগ আর শার্জিল ইমামের গ্রেপ্তারির পর থেকে এখন অনেক সংযত হয়েছেন।ন’বছর পূর্বে নবান্নে পৌঁছেই তিনি শুরু করে দিয়েছিলেন পরবর্তী নির্বাচনের জয়কে নিশ্চিত করা আর ভোটারের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, দিদি ধর্মীয় শুড়শুড়ি দিয়ে নির্বাচন জিততে চান। তাই দুর্গাপূজায় প্রতিটি ক্লাবকে ১০ হাজার টাকা অনুদান এবং হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে মুয়াজ্জিনদের মাসিক ৩৫০০ টাকা বেতন দিয়েছেন। স্কুল শিক্ষক এবং সরকারি কর্মচারীরা মাইনে পাচ্ছেন না। কিন্তু স্বাস্থ্যবাজেট থেকে টাকা সরিয়ে সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য বেআইনি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচার ও প্রসার করা— এইগুলিই তার কাজ। মুখ্যনন্ত্রী ২৩ ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে যে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হয় যাতে, আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মাকে আম আদমি পার্টির বিধায়ক তাহির হুসেনের বাড়ির সামনের ড্রেনে পাওয়া গিয়েছিল, তার জন্য দিদি মোদীকেই দায়ী করেন। মোদীই নাকি ‘করোনা মহামারীর আতঙ্কের গুজব’ ছড়িয়ে এই দাঙ্গা লাগান।
ডেঙ্গু ভাইরাস জ্বরকে নিরাময় করা যায় এডিস মশা নিবারণের মাধ্যমে। করোনা ভাইরাস কাউকেই করুণা দেখায় না। হিন্দুমুসলমান, ধনী-দরিদ্র, ভারতের প্রতিটি রাজ্য এমনকী সারা বিশ্ব আজ করোয় আক্রান্ত। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র উপায় সংক্রমণের পথগুলি অবরোধ করে দেওয়া, যাতে করে একজন থেকে অন্য জনের শরীরে সংক্রমণ পৌঁছতে না পারে। এর কোনো ভ্যাকসিন বা ভাইরাস ধ্বংসের নির্দিষ্ট ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।
আজকের জগতের অপরিহার্য ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দুর্দশাগ্রস্ত হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর কঙ্কালসার জনসাধারণের কাছে সুস্পষ্ট হলো। প্রসিদ্ধ নিউরোসার্জেন ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ ঘোড়ই, চেস্ট স্পেশালিস্ট ডাঃ অরুণাচল দত্তচৌধুরী ও কাটোয়ার সার্জেন ডাঃ স্বপন নায়েকের অপমানের কথা আমরা অনেকেই জানি। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ একজন। ক্যানসার বিশেষজ্ঞকে ধারা ১৫৩-এ আটক করেন। তার অপরাধ ছিল তিনি অপ্রতুল পিপিই, হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সের দৈহিক নির্যাতন, নিরাপত্তার অভাব এবং স্বাস্থ্যবিভাগের ঔদাসীন্যতার কথা তার মোবাইল থেকে ভিডিয়ো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। ধারা ১৫৩ মানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মামলা যাতে ১ বছর সশ্রম কারাবাস ও জরিমানা দিতে হয়। শেষে হাইকোর্টের আদেশে তাকে ছেড়ে দিলেও তাঁকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করানো হয়, তাঁর প্রথম টুইটটি ভুল ছিল আর দ্বিতীয় টুইটে মমতাময়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনার মোকাবিলা করে চলেছেন তার কথা। এটা লিখতে বাধ্য তাকে করানো হয়। প্রচারের পর পুলিশ তার দামি স্মার্টফোনটি বাজেয়াপ্ত করে।
সিপিএমের ৩৪ বছর আর দিদির ৯ বছরে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যপরিকাঠামো রুগ্ন হতে হতে এখন তা কোমায় পৌঁছে গেছে। আজ হাসপাতালে রাজনীতিকরণ, সংখ্যালঘু তোষণ, ব্যক্তিগত লাভ আর স্বজনপোষণ নীতির কারণে রাজ্যবাসীকে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। নীল-সাদা রঙের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলি চোখে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবার নামমাত্র নেই।
মার্চের মধ্যেই আইসিএমআর মানে অখিল ভারতীয় আয়ু বিজ্ঞান সংস্থান কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সরকারি অনুদানে এসএসকেএম ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১০০০টি টেস্টকিট, ট্রপিক্যাল মেডিসিন, মেদিনীপুর ও নর্থবেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে ২০০টি করে টেস্টকিট পাঠিয়েছিল।
২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ‘জনতা কাফুর ডাক দিয়েছিলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবালবৃদ্ধ বণিতা তা পালন করেছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি তাকে বানচাল করার জন্য আলু ও চাল বিতরণের খেলা খেলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের অসুবিধার কথা ভেবে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে গুজরাট, মহারাষ্ট্র বা অন্য প্রদেশে দীর্ঘদিন আটকে থাকা ২ লক্ষ শ্রমিক, তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি ঔদাসীন্য দেখানোয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কড়া চিঠি লিখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
২৩ মার্চ, কেন্দ্রকে দোষারোপ করে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রধান সচিবকে দিয়ে প্রেসবিজ্ঞপ্তি করিয়ে বললেন, কেন্দ্র রাজ্যকে মাত্র ৪০টি টেস্টকিট দিয়েছে। উত্তরে, বেলেঘাটার আইডি হসপিটালের বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ টেস্টকিট থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় ১০ শতাংশের কম ব্যবহৃত হয়েছে রাজ্যের পাঠানো নমুনার অভাবে।
২৪ মার্চ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্যবাসীর জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধনকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী অতি শীঘ্রই পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান। ‘স্বরাজ্য মাগাজিন’ থেকে জানা যায়, ২৩ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র ২৯৭ জনকে পরীক্ষা করা। হয়েছিল। ১টি টেস্টকিটে ৭০-১০০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায় অর্থাৎ ৪০টি টেস্টকিটে কম। করেও ৩০০০ নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারতো কিন্তু তা হয়নি। সুতরাং মিথ্যা দোষারোপ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৩ এপ্রিল তিনি আদেশ দিলেন, ডাক্তাররা ডেথ সার্টিফিকেট নয়, খসড়া মাত্র লিখতে পারবেন। ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন ঠাণ্ডা ঘরে বসা এক্সপার্ট কমিটি। সেই কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন ডাঃ সুকুমার মুখার্জি যাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট কোনো একসময় ১.৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল।
৫ এপ্রিল মুখ্য সচিব আবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানালেন, সরকার করোনা রোগীর পরীক্ষা, সংক্রমণের হিসাব, হাসপাতালে ভর্তি বা মৃতের সংখ্যার ব্যাপারে কোনোরকম প্রতারণা বা কারচুপি করেনি। এ যেন ঠিক ঠাকুরমার, ঠাকুর ঘরে কে রে? আর নাতির তৎক্ষণাৎ সাফাই, ‘আমি তো কলা খাইনি’। জনতা কি চালাকিটা বুঝবে না!
রাতের অন্ধকারে মৃতের দেহ হয়। জ্বালানো নয়তো কবর দেওয়া হচ্ছিল। বিশ্বস্থাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন অনুযায়ী করা হচ্ছিল না, কারণ তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় আঘাতে ঘা দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক হারাতে তিনি রাজি নন।
১১ এপ্রিল রাজ্যের সমস্ত ডাক্তার সম্মিলিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। অনুরোধ করেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী বিষয়ে সঠিক, স্বচ্ছ ও প্রমাণসাধ্য পরিসংখ্যান দিতে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, সমস্ত রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে শীঘ্রই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।
১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের প্রধানসচিব আর পুলিশের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে বলেন, মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাজার, নারকেলডাঙ্গা, তপসিয়া প্রভৃতি মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে লকডাউন মানা হচ্ছে না। এতে করে সমস্ত রাজ্যবাসীকে করোনার করাল গ্রাসে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর, “লকডাউনের মানবিক মুখের কথা চিন্তা করে ওইসব অঞ্চলকে লকডাউনের বাইরে রাখা উচিত।
১৩ এপ্রিল আইসিএমআর -এর বেলেঘাটাস্থিত শাখা- পরীক্ষাগারের এনআইসিইডি-এর বিজ্ঞানীরা আবারও বললেন, কেন্দ্র সরকার আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ টেস্টকিট পাঠিয়েছেন কিন্তু রাজ্য সরকার পরীক্ষার জন্য এখনও নমুনা পাঠাচ্ছে না। শেষমেষ সরকারের অনুদানপুষ্ট একটি পত্রিকাকে পর্যন্ত লিখতে হলো, হতাশাগ্রস্ত মমতার ব্যর্থতার কথা– ‘অনেক হয়েছে আর না!’
২০ এপ্রিল আইএমএ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলেন, তিনি যেন দয়া করে প্রতিদিন স্বাস্থ্য বুলেটিনের মাধ্যমে রোগী, তাদের পরিজন, হাসপাতালের কর্মচারী, সংক্রামিত ডাক্তার ও নার্সদের সম্বন্ধে সরকারি তথ্য প্রকাশ করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই, স্যানিটাইজার ইত্যাদি সরবরাহ, সন্দেহভাজন সমস্ত রোগীর এবং তাদের সংস্পর্শে আসা সকলের কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা অনিবার্য করুন।
২০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধনের প্রেরিত আইএমসিটি অর্থাৎইন্টার মিনিস্ট্রিয়াল সেন্ট্রাল টিমের সঙ্গে কোনো রকমের সহায়তাই করেনি রাজ্য সরকার। রাজ্যের মুখ্য সচিব প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, “ওই দলের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে ছুটি উপভোগ করতে এসেছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে বসে সময় নষ্ট করতে পারি না। পাঠানো চারটি চিঠির উত্তর না দেওয়ার কারণ হিসাবে বলেন, তিনি নাকি ভীষণ ব্যস্ত।
২৪ এপ্রিলের পর মানে আইএমসিটির পরিদর্শনের পর লাভ অবশ্য একটা হয়েছিল। কম করে দেখানো টেস্টকিট, পরীক্ষিত ও করোনায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা হঠাৎ করে লাফ দিয়ে রাতারাতি ৪ থেকে ৬ গুণ বেড়ে যায়। এটা থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, প্রথম থেকেই কেন তিনি কেন্দ্রীয়দলের পরিদর্শনের ঘোর বিরোধিতা করে এসেছিলেন। আসল সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যার মোড়কে সংবাদ পরিবেশন করার কী প্রয়োজন ছিল ? বিরোধীরা বলেন, জামাতি ভাইদের দুষ্কর্মকে ঢাকা দেবার জন্য, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, তার পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা, ঔদাসীন্য আর অযোগ্যতাকে চাপা দেবার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এ কাজ করেছিলেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। চিরদিনের অভ্যাস মতো পুলিশের ভয় দেখিয়ে, খুন করে, ধর্ষণ করে, মিথ্যা মামলা ঠুকে, গাঁজা কেস দিয়ে, মুসলমান আর কামুক মাওবাদীদের দিয়ে কতদিন রাজত্ব টিকে রাখা যাবে?
২৮ এপ্রিল হাওড়ার বেলিয়াস রোডে আর টিকিয়াপাড়া থানাতে জিহাদিরা টাইমস অব ইন্ডিয়া টিভির সাংবাদিক আর পুলিশের ওপর বোমা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলে মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে দেখে নেব’ বলে হুংকার দেন।
১০ মে মহারাষ্ট্রের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কেন্দ্র সংক্রমণের ভয় জেনেও, ৭টি। ট্রেনে পরিবার-সহ অসংখ্য বাঙ্গালি শ্রমিককে পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে সাহায্য করেছেন অথচ তিনি তাদের ঘরে ফেরার কোনো সুব্যবস্থা করতে পারেননি। অমনি মমতা ব্যানার্জি চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীকে গালাগাল দিতে শুরু করলেন এই বলে, রেল স্টেশন থেকে নেমে বাড়ি ফেরার বাসের ব্যবস্থা কেন তিনি। করেননি। কেন মোদী ট্রেন চালানোর সময় মমতার পরামর্শ নেননি।
করোনাকে সংক্রমণ রুখতে করতে মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রের কাছে ৫০,০০০ কোটি টাকার দাবি করছেন। অথচ কেন্দ্রপ্রেরিত ৬ জনের আই এমসিটির সঙ্গে কোনো সহযোগিতাই করলেন না। যখন ১৬ মে ২৬০ কিলোমিটার বেগের ঘূর্ণিঝড় আমফান ৮৪ জনের অকাল মৃত্যু ডেকে আনল, সে সময় প্রধানমন্ত্রী রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবন অঞ্চল পরিদর্শন করে ১০০০ কোটি টাকা তৎক্ষণাৎমঞ্জুর করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ আর আহতকে ৫০ হাজার টাকার সাহায্য দেন।
কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী বলেছেন, করোনা মহামারীর অনেক আগে থেকে রাজ্য সরকার ঋণের ফাঁদে আঁটকে পড়েছে। স্বাস্থ্যবাজেট সংকোচন করে নিজের বিজ্ঞাপন খাতে খরচ করার জন্যই আজকের এই সমস্যা। কেন্দ্রকে দোষারোপ করে কী হবে? ফিসক্যাল রেসপন্সিবিলিটি বাজেট ম্যানেজমেন্টের আইন অনুযায়ী কোনো রাজ্য যদি ৩ শতাংশের বেশি রাজস্ব ঘাটতি দেখায় তবে তাকে আর ঋণ দেওয়া যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সেই সীমাকে তার জন্য বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হোক। বুঝুন ঠেলা এবার! ডিএনদে কলকাতা আর মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ এবং মহেশ ভট্টাচার্য আয়ুর্বেদিক কলেজ ছাড়াও প্রাইভেটে অ্যাপেলো, বেলভিউ ও কেপিসি মেডিক্যাল কলেজকেও করোনা হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। ভারতেপুনারমাইল্যাব, ভুপালের কিলপেস্ট অব ইন্ডিয়া আর গোয়ার মেডসোর্স ওজোন বছরে একশো কোটি টেস্টকিট তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ দেশের প্রধান মন্ত্রী প্রস্তুত, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নন।
ভারতে একশা তিরিশ কোটির বিপুল জনসংখ্যা। সবারই পরীক্ষা তো আর করা যাবে না। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া বা জার্মানির মতো সাফল্য না পেলেও, মোদীর মহতি প্রচেষ্টায় প্রতি ১০ লক্ষে ১৪৯ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ভারত। সারা দেশে আইসিএমআর নির্দেশিত সরকারি ৭২টি আর প্রাইভেট ১৬৬টি কোভিড-১৯ পরীক্ষার কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, ট্রপিক্যাল মেডিসিন, মেদিনীপুর আর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে কোভিড-১৯ পরীক্ষা হচ্ছে। এছাড়া আরও অনেক বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে। মার্চে প্রতিদিন ৩ হাজার পরীক্ষা হতো। সেটা এপ্রিলে ২১ হাজারে পৌঁছায়। অধিক প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশের রোস, সিমেন্স প্রভৃতি কোম্পানি থেকেও টেস্টকিট আনাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ খুশি করতে পারবে না। বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি! দুর্যোধনেরও ছিল ঠিক এইরকম গোয়ার্তুমি আর অহংকার। অন্যায়েন অর্থ সঞ্চয়ন, অহংকারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং চ সংশ্ৰিতা। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে সকল রাজ্যবাসীর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শরণাপন্ন হয়ে কেন্দ্রের অনুদান নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড মেনে রাজ্যকে করোনার কবল থেকে মুক্ত করুন, এই আবেদনই করছি। আর ‘শারদেদেবী সরস্বতীমতিপ্রদে’র কাছে এই প্রার্থনা করছি, যেন বাগদেবী ‘কটুভাষিণীর জিহ্বাগ্রে’বসে একটু মধুর বচন এবং সর্বুদ্ধি দিন।
ডাঃ আর এন দাস