এ যেন অজ্ঞাতবাসের অর্জুনের কাহিনী! শুধু পার্থক্য একটাই, সেদিন অর্জুন জানতেন তিনি পুরুষ। কিন্তু মহিলার ভেক ধরে অজ্ঞাতবাস কাটাতে হয়েছিল। আর ঘোর কলিতে বীরভূমের সেই মহিলা গত ৩০ বছর ধরে জানতেই না তিনি পুরুষ। বিয়ে করে সুখী দাম্পত্য কাটাছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল তলপেটের ব্যথা। প্রবল ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হতেই রহস্যফাঁস! আর তাতেই চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের।
কী ঘটেছিল?
বীরভূমের এক মহিলা তলপেটের ব্যথা নিয়ে কলকাতার নেতাজি সুভাষ ক্যানসার হাসপাতালে ভরতি হন। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বা অঙ্কোলজিস্টের পরামর্শ নেন তিনি। সেই চিকিৎসা চলাকালীনই বিষয়টি সামনে আসে। ওই বিবাহিত ‘মহিলা’ আদপে পুরুষ, ‘টেস্টিকিউলার’ ক্যান্সারে আক্রান্ত। বিষযটি সামনে আসার পর, তাঁর থেকে দুবছরের ছোট বোনেরও পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, সেও আদপে পুরুষ। একই সিনড্রোম (Syndrome) ধরা পড়েছে তাঁর দুই মাসির ক্ষেত্রেও।
চিকিৎসকরা বলছেন, এটা খুবই বিরল একটি বিষয়। ২২ হাজার জনের মধ্যে একজনের এই লক্ষ্ণণ থাকে। চিকিৎসার পরিভাষায একে Testicular feminisation syndrome বলা হয়। এই অবস্থায় কেউ শারীরিক গঠনের দিক থেকে মহিলা হলেও আদপে সে পুরুষ হয়। এ ক্ষেত্রে সেই মহিলার শরীরে ডিম্বাশয় বা ওভারি (Ovary) এবং ইউটেরাস বা জরায়ু (Uterus) নেই। বদলে অণ্ডকোষ (Genitals) রয়েছে। ফলে ছোট থেকেই ঋতুস্রাব হত না। ফলে তিনি কোনওদিন সন্তানধারণ করতে পারবেন না বলে চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু লুকনো অণ্ডকোষের বিষয়টি অজানাই ছিল। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে হাসপাতালের অঙ্কোলজিস্ট ডা. সৌমেন দত্ত জানান, তলপেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। দেখা যায়, বীরভূমের ওই বাসিন্দার গলার স্বর মহিলাদের মতো। স্তন-যৌনাঙ্গের গঠন মহিলাদের মতোই। এই ধরণের যৌনাঙ্গকে Blind ended vagina বলা হয়। ভিতরে লুকনো রয়েছে দুটি অণ্ডকোষ। এরপরই তাঁর ক্যারিওটাইপিং করা হয়। দেখা যায়, তাঁর ক্রোমোজোমের গঠন পুরুষদের মতো। প্রসঙ্গত, মহিলাদের ক্ষেত্রে যৌন ক্রোমোজোমের গঠন XX আর পুরুষদের ক্ষেত্রে XY। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিন সপ্তাহ অন্তর অন্তর কেমো দেওয়া হবে। অন্যদিকে তাঁর বোনের লুকনো অণ্ডকোষ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।