ভারতবর্ষে রাজনৈতিক বিরোধীরা হিন্দু ফোবিয়ায় ভুগছে

পশ্চিমবঙ্গকে সর্বদাই ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির পরিবাহক মানা হতো। কিন্তু কমিউনিস্ট আমল থেকে মমতা যুগ পর্যন্ত সনাতনী ভাবধারার ওপর শুধু আঘাতই এসেছে। ভোটের লোভে অনাবশ্যক তোষণ করতে পাঠ্যপুস্তকের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে কচিকাচাদের কোমলমতি মনে হিন্দু ফোবিয়ার বীজ রোপনের নীরব চেষ্টা অব্যাহত। সেজন্যই প্রাথমিক পুঁথিগুলোতে রামধনুর জায়গায় রংধনু, রামপুর হাটকে সরিয়ে রংধনু হাট, আকাশের জায়গায় আসমান করা হয়েছে। রামনামের সঙ্গে আপামর ভারতবাসীর এক আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তাই হয়তো বার বার ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরানো সংস্কৃতিকে রামবাণে আঘাত করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দৌলতে ‘অতীত ও ঐতিহ্যে’ নামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ে অতি সুপরিকল্পিতভাবে রামকে একটি কাল্পনিক ও নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়েছে। বইটির একটি অংশে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ‘ইংরেজি রোমিং শব্দের অর্থ ঘুরে বেড়ানো। আবার সংস্কৃতেরাম’শব্দের একটা অর্থ হলো ভ্রমণশীল ! তাই ইংরেজি শব্দে রোমিংয়ের সঙ্গে রামের মিল দেখে বোঝা যায়। কোনও এক সময় যাযাবরের মতো ঘুরতে ঘুরতেই বৃহত্তর ভারত ভূখণ্ডে চলে এসেছিল একদল লোক, যারা ভারতের আদিবাসিন্দাদের পরাজিত করে উত্তরভাগে বসবাস শুরু করে। পরে এই যাযাবর গোষ্ঠীর লোকেরা দক্ষিণের দিকেও যুদ্ধ শুরু করে এবং জেতে। রামায়ণ আসলে এই যুদ্ধজেতা মানুষের গল্প এবং যেহেতু রাবণ ও তার সঙ্গীসাথিরা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলো, তাই তাদের খারাপ অসুর বলে বর্ণনা করা হয়েছে রামায়ণে।’লকডাউনে দেশবাসীকে আনন্দের সঙ্গে ঘরবন্দি রাখতে সরকার আশির দশকের জনপ্রিয় রামায়ণমহাভারতের মতো সিরিজগুলো পুনঃপ্রদর্শনের ব্যবস্থা করায়। তাতে স্বভাবতই তথাকথিত সেকুলার ও বামপন্থী ব্রিগেড বিরোধিতা করতে থাকে। প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। রামায়ণ সিরিজ বন্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় ঘুরেও ব্যর্থ হন। এই গ্যাঙেরই এক মিডিয়া হাউজ টাইমস অব ইন্ডিয়া চরম বিরোধিতা করতে গিয়ে তাদের এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানায় দুরদর্শনে রামায়ণ সিরিজ সম্প্রচারিত হওয়ায় চোখের আঘাতের মতো ঘটনা নাকি চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা বাড়িতে তির-ধনুক বানিয়ে একে অপরের দিকে ছুঁড়ছে। দূরদর্শনে প্রচারিত রামায়ণ সিরিজ দর্শকের ভালোবাসায় বিশ্বরেকর্ড গড়ে নিন্দুকদের মুখে সজোরে ঝামা ঘষে দিতে পেরেছে।

ভারতের প্রথম শ্রেণীর মিডিয়া হাউজগুলি অনেক আগে থেকেই কী পরিমাণ হিন্দু ফোবিকে (হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা/হিংসা) আক্রান্ত কয়েকটি উদাহরণে তা স্পষ্ট। ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে বামপন্থী গোষ্ঠীর হিন্দুদের প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে হেয়, যুক্তিহীন, পরিবেশ বিরোধীরূপে উপস্থাপনা করার কোনো। কসরতই বাকি নেই। বামপন্থী মিডিয়াহাউজ ‘The Quint’ রঙের উৎসব হোলিতে প্রচার করে জলের অপচয়, ত্বকের ক্ষতি ইত্যাদি। দীপাবলিতে আলোর উৎসবে বাজি ফাটালে পরিবেশ দূষণ, শিবচতুর্দশীতে শিবলিঙ্গে দুধ। ঢাললে গরিব শিশুরা অনাহারে মরে যায় ইত্যাদি। অথচ, এই নিন্দুকেরাইনীরবতা পালন করে যখন উৎসর্গের নামে হাজার হাজার গবাদি পশুকে নিদারুণ কষ্ট দিয়ে জবাই করা হয় , ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারের বাজি পটকায় তাদের কিছু আসে যায় না। মিডিয়াকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় অথচ আজ কোনো জাতীয়তাবাদী মিডিয়া হাউজ যখন মৌলবাদীদের সাম্প্রদায়িকতার মুখোশ খোলার চেষ্টা করে তৎক্ষণাৎ তারা হিন্দুফোবিয়ার আক্রন্ত হয়ে ভুয়ো FIR এবং সেই সাংবাদিককে সস্ত্রীক প্রহারও সহ্য করতে হয়। ঠিক তেমনি সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীকে পালঘর সন্ন্যাসী হত্যার সংবাদ পরিবেশনায় এবং একটি পুরানো দলের অধ্যক্ষের রাজনৈতিক সমালোচনা করায় একই দুর্দশা পোহাতে হয়। জিমিডিয়ার চিফ নিউজ এডিটর সুধীর চৌধরী DNA অনুষ্ঠানে আরবান নকশাল, কাশ্মীরি জঙ্গিবাদ, কেরলের নিষিদ্ধ কট্টরপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার দেশবিরোধী কার্যকলাপ তথা লাভ জেহাদ প্রকল্প ও সিমির সঙ্গে তাদের যোগসূত্রতা, CAA-এর সত্যতার পাশাপাশি সম্প্রতি জম্মু শহরে হিন্দুদের জমি দখলে অনৈতিক বস্তি গড়ে তুলে জম্মুকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর বানানোর চক্ৰন্তের নকশা উপস্থাপিত করেন। এরপর থেকেই তাকে জেহাদি গোষ্ঠীর একাধিক ভুয়ো FIR এবং বিভিন্ন হুমকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কাশ্মীর ও কেরলের মধ্যে বৈচারিক, কট্টরপন্থী, জেহাদি ও বামপন্থী ভাবধারার স্পষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। তাই সুধীর চৌধুরীর সম্পূর্ণ রিপোর্টটি জম্মুতে ভুমি-জেহাদের বিষয় হলেও FIR টি কেরালার বামপন্থী বিচারধারার সংগঠন All India YouthFederation-এর একসম্পাদক করেছেন। কেরল কিংবা কাশ্মীরে কেউ খোলাখুলি বন্দুক হাতে জেহাদ করছে, কেউ বা কট্টরপন্থী চিন্তাধারায়। এই সমস্ত কট্টরপন্থী এলাকায় তদন্তে তিন ধরনের জেহাদি মডিউলের তথ্য সামনে উঠে এসেছে, যথাক্রমে কসারগোড় মডিউল, কন্নর মডিউল এবং উমর উল-হিন্দ মডিউল। মূলত এরাই লাভ জেহাদ, জঙ্গি কার্যকলাপ এবং রাষ্ট্রবাদী মিডিয়ার টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে। কমিউনিস্ট ও কট্টর মৌলবাদী চিন্তাধারায় কেরল জঙ্গিদের মুক্ত বিচরণ কেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠেছে। কাশ্মীরের জঙ্গিবাদ শুধু পাকিস্তান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও কেরলের জেহাদি নেটওয়ার্ক সিরিয়া, আফগানিসস্তান, শ্রীলঙ্কা, বিভিন্ন আরবদেশ সহ সারা পৃথিবীতে বিস্তারিত। প্রমাণস্বরদপ ২৫ মার্চ আফগানিস্তানের গুরুদ্বারে ২৫ শিখ শ্রদ্ধালু হত্যার আতংক বাদী মহসিন কেরলের করগরের স্থায়ী বাসিন্দা। দেশের সুরক্ষা এজেন্সির সূত্রানুসারে গত কয়েক বছর থেকে কেরলের প্রায় ১০০ থেকে ১২০ জন যুবক জঙ্গিগোষ্ঠী ISIS-এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০১৪ সালে প্রথম আই এই আই এসের সঙ্গে কেরলের জঙ্গি যোগসূত্র জনসম্মুখে উঠে আসে যখন ১৭ জন ভারতীয় সন্ত্রাসবাদীর অধিকাংশই কেরলের বাসিন্দা ছিল। তারপর ২০১৬ সালে ২৬ সদস্যের নারী, শিশু সহ কেরলের একটি টিম আইএসআইএসে ভর্তির উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল। ২০১৮ সালে আবার ইরাক ও সিরিয়ায় কেরলে ১০ জিহাদির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। কেরলকে বর্তমানে সন্ত্রাসের সবচেয়ে হটস্পট এই কারণেও মানা হয় ২০১৬ সাল থেকে Left Democratic Front-এর সরকারের আমলে বিজেপি-আরএসএসের ১২০ জন কার্যকর্তাকে হত্যা করা হয়। এর আগেও কেরলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন United Democratic Front সরকারে ৩৬টি রাজনৈতিক হত্যা হয়েছে। এই দুই ফ্রন্ট পালাক্রমে সরকার চালালেও রাষ্ট্রবাদী রাজনীতি মাথাচাড়া না দেওয়ায় রাজ্য সরকারের পৃষ্টপোষকতায় জঙ্গি সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (PFI)-র রমরমা চলছে। কেরলের এইনগ্ন চিত্র সম্প্রচার করায় রাষ্ট্রবাদী মিডিয়া হাউজগুলি জঙ্গিগোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে এবং ইসলাম খতরে’র নতুন যুক্তি পেশ করছে।

ভারতে ইসলাম বিপদে’ প্রমাণ করার জন্য পাকিস্তানের আইটি সেল অনেক আগে থেকেই ভুয়ো সব আইডি থেকে মিথ্যে তথ্য প্রচার করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আরবদেশ-সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোর চেষ্টায় ছিল। সম্প্রতি আলকায়দা প্রধান আয়মান-আলজাওয়াহিরি এক ভিডিয়ো বার্তায় দেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের জেহাদ ঘোষণার আহবান জানিয়েছে। ভারতে CAA-এর লাগুকরণ, ধারা ৩৭০ এবং ৩৫(এ)র বিলুপ্তকরণ, রাষ্ট্রবাদী মিডিয়ার তাবলিগ জামাতের সমালোচনা নাকি জেহাদ ডাকের মুখ্য উদ্দেশ্য। অথচ CAA-তে কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনো কথা বলা হয়নি; ধারা ৩৭০ এবং ৩৫(এ) একটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী বিধান যার সমাপ্তিতে দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকের ন্যায় সুনিশ্চিত হয়েছে, তাছাড়া ভারতবর্ষের মতো গণতান্ত্রিক দেশে স্বাভাবিকভাবে জাতীয় মিডিয়া তাবলিগের সমালোচনা করতেই পারে। মৌলবাদী গোষ্ঠীর এই সমস্ত অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে Organisation of Islamic Cooperation (OIC) ভারতকে ইসলামফোবিক রাষ্ট্রে চিহ্নিত করেছে। একইভাবে ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা সম্পর্কিত মার্কিন সংস্থা United State Commission on International Religious Freedom (USCIRF) ২০২০ সালের প্রকাশিত তাদের একটি রিপোর্টে ভারতকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় ১৪ দেশীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে সেই পুরাতন ভুয়ে ইস্যুগুলো। ভারতকে ইসলাম ফোবিয়ার অপপ্রচারে কিছু সংখ্যক মুসলমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এবং কমিউনিস্ট অপশক্তি সম্পূর্ণ দায়ী। যারা সামান্য ইস্যুগুলোতে সময়ে সময়ে অসহিষ্ণুতার চিৎকারে মেতে ওঠে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নারিসউদ্দিন শাহ, হামিদ আনসারী, আসাদুদ্দিন ওয়েসি প্রমুখ। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক খোলা চিঠিতে দিল্লির সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান জাফরুল ইসলাম খান লিখেছেন হিন্দুদের ওপর ধ্বংস। নেমে আসবে যদি ভারতীয় মুসলিমরা আরবের বন্ধুদের কাছে অভিযোগ করে। তার এই চিঠিতে বিতর্কিত ধর্মীয় প্রচারক জাকির নায়েককে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জাকির নায়েক চলতি মে মাসে ঘৃণা ও ধর্মীয় ভেদাভেদ ছড়ানোর দায়ে ব্রিটেনের সম্প্রচার মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ কমিটি দ্বারা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন কোটি টাকা জরিমানায় দণ্ডিত হয়েছে।

পক্ষান্তরে, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হাসান রিজভি জাফরুলের কড়া নিন্দা করতে গিয়ে জানান, মুসলমানরা ভারতকে স্বর্গ মনে করে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভারতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বদনাম করার লক্ষ্যেই এইরূপ বিষের মন্তব্য। এই সমস্ত মন্তব্য দেশের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিকরে সম্প্রতিতে ফাটল ধরাচ্ছে। তাই তিনি তৎক্ষণাৎ জাফরুলের গ্রেফতারের দাবি করেছেন। তথাকথিত ‘ইসলাম ফোবিয়া’র কৃত্রিম বাতাবরণ সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশ্য করে কেন্দ্রীয় মুক্তার আব্বাস নাকভি মন্তব্য করেন যে প্রকৃতপক্ষে‘মোদীফোবিয়া’ক্লাব প্রধানমন্ত্রী মোদীর সবকা সাথ সবকা বিকাশে হজম না হওয়ায় দেশ ও বিদেশে অহেতুক ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, মুসলমানরা বিপদে প্রভৃতি দুষ্প্রচারে লেগে রয়েছে। ভারতবর্ষে ধর্মের ভিত্তিতে কখনো ভালোবাসার মাপজোক হয়নি। তাইতো আব্দুল কালাম আজাদ, ইরফান। খানদের প্রয়াণে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কেঁদেছে। গত ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি থেকে অবসর যার নেতৃত্বে রাষ্ট্রসঙ্ঘ মুম্বাই হামলার মূল পাণ্ডা হাফিজ সৈয়দকে Global Terrorist ঘোষণা করা হয়। ৩৭০ রদ ইস্যুতে তিনি পাকিস্তানকে চাপে রেখেছিলেন। তিনি নিজের চেয়ারের অপমর্যাদা কোনোদিন করেননি। সৈয়দ আকবরুদ্দিন, আব্দুল কালাম, ইরফান খানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাফরুল ইসলাম, হামিদ আনসারি, ওবেসি, নাসিরউদ্দিন শাহদের শিক্ষা নেওয়া উচিত, অন্যথায় ভারতকে ইসলামফোবিয়ার অপবাদ দিয়ে কার্যত নিজের জাতি, সম্প্রদায়কেই সন্দেহভাজন এবং অপমানিত করার নামান্তর হবে।

রঞ্জন কুমার দে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.