চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন : ভারতবর্ষের শিয়রে সমন

কোনও মানুষের শান্তিশৃঙ্খলা যেমন অনেকাংশে নির্ভর করে তার প্রতিবেশীর আচরণের ওপর। সেরকমই কোনও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা অনেকাংশে নির্ভর করে তার প্রতিবেশী দেশের আচরণের ওপর। প্রতিবেশী দেশ যদি আগ্রাসী মানসিকতার হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশকে খুব । দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতে হয়, বর্তমানে ভারতের ঠিক সেই অবস্থা হয়েছে, ভারতের বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ চিন তার আগ্রাসী মনােভাবের দ্বারা

ভারতকে ক্রমাগত বিপদে ফেলে চলেছে। চিন ভারতের ওপর এই। আগ্রাসন নানাবিধ পদ্ধতিতে চালাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হল অর্থনৈতিক আগ্রাসন। আর এই অর্থনৈতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে সস্তা। পণ্যের জোয়ারে ভারতের বাজারকে ভাসিয়ে দিয়ে। গত অর্থবর্ষে চীনের – সঙ্গে আমাদের মােট বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৭০.৮ বিলিয়ন ডলার বা। পাঁচ লক্ষ তেইশ হাজার নশ কুড়ি কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬১৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা হল চীন থেকে। ভারতে হওয়া আমদানি এবং মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলার বা ৬৬ হাজার ৬০০। কোটি টাকা হল ভারত থেকে চীনে হওয়া রপ্তানি। অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি। হল ৫২.৯ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। চীনের থেকে ভারতের আমদানীর মধ্যে পেট্রোলিয়াম নেই, তবু এই। বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির কারণ চীনে নির্মিত সস্তা পণ্যের ভারতীয় বাজারে। ব্যাপক বিক্রি হওয়া। সাধারণ ভারতীয় ক্রেতা সস্তার মােহে পড়ে। ভারতীয় পণ্যের বদলে চিনা পণ্য কিনে ফেলেন। কোনও ব্যক্তি যখন। সস্তার মােহে পড়ে চিনা জিনিস কেনেন তখন তিনি দেশের ক্ষতি তাে। করেনই নিজেরও উপকার করেন না। চিনা জিনিষ সস্তার হলেও স্বল্পায়ু, অর্থাৎ কম দিন চলে, তাই কিছুদিন পরই সেই জিনিসটি আবার নতুন করে কিনতে হয় ফলে ক্রেতার খরচ বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক । কোনও ব্যক্তি স্বদেশী কামারের তৈরী ছুরি ২০ টাকা দিয়ে না কিনে চিনা । ছুরি কিনলাে মাত্র ১০ টাকায়, ছুরিটি দেখতেও খুব সুন্দর ও চকচকে। কিন্তু ছুরিটি কিছুদিন পরেই অকেজো হয়ে গেল এবং ব্যবহার ও নিক্ষেপ। [(Use and throw) পদ্ধতির হওয়ায় সেটিতে পুনরায় ধার-ও দেওয়া। গেল না। ক্রেতাকে পুনরায় আরেকটি ছুরি কিনতে হল, সেটি খারাপ। হওয়ার পর পুনরায় আরেকটি। এভাবে তিনটি ছুরি কিনতে গিয়ে ক্রেতার। ৩০ টাকা খরচ হল, এর বদলে ক্রেতা ২০ টাকা দিয়ে স্বদেশী কামারের। কাছ থেকে ছুরি কিনলে তার এককালীন খরচ বেশি হলেও সামগ্রিক। খরচ কম হত, কারণ ধার কমে গেলে ছুরিটি ফেলে দিতে হত না। নামমাত্র মূল্যে ধার দিয়ে নিলেই হত। আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক, কোনও একজন ব্যক্তি স্বদেশী মাটির প্রদীপ বা স্বদেশে তৈরি ভারতীয়। টুনি বান্ধ না কিনে কালীপূজোর সময় নিজের বাড়িকে আলােকিত করার। জন্য চিনা লেড-বান্ধ কিনলেন, হয়তাে তার এককালীন খরচ কম। পড়লাে কিন্তু দেখা গেল দু’একবছর পর সেই আলােগুলি খারাপ হয়ে। গেল, তখন তাকে আবার নতুন করে আলাে কিনতে হবে, অর্থাৎ আবার। খরচ হবে, তার বদলে স্বদেশী মাটির প্রদীপ বা স্বদেশে তৈরি ভারতীয় টুনি বাল্ব কিনলে তা দীর্ঘদিন চলতাে অর্থাৎ তার এককালীন খরচ বেশি। হলেও সামগ্রিক খরচ কম হত, অতএব একথা বলা যেতে পারে যে, যে। উদ্দেশ্যে ক্রেতারা চিনা জিনিস কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন ক্রেতাদের সেই উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে না।

সেই উদ্দেশ্য তাে সাধিত হল না কিন্তু ক্রেতারা নিজেদের অজান্তে আরও বড় এক বিপদের সম্মুখীন হলেন। চিনা জিনিসগুলি অধিকাংশই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী হয়, ক্রেতা চিনা জিনিস ব্যবহারকালে নিজের অজান্তেই স্বাস্থ্যহানির শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ সামান্য কিছু অর্থনৈতিক লাভের জন্য চিনা জিনিস কিনে সেই লাভ তাে । পাচ্ছেনই না বরং কঠিন অসুখের এবং তজ্জনিত বিপুল খরচের সম্মুখীন হচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা তাে প্রতারিত হলেনই, যেহেতু প্রত্যেক ক্রেতাই মহান। ভারতীয় নাগরিক, তাই ক্রেতারা অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত ভাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হলে সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষেরই অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদগত ক্ষতি হল। এছাড়াও চিনা পণ্য জাতীয় অর্থনীতির আর । কি কি ক্ষতি করলাে দেখা যাক।

প্রথমত:, প্রত্যক্ষ চিনা পণ্যের বিক্রি বাড়ার সঙ্গে ভারতীয় পণ্যসমূহের বিক্রি হ্রাস পাচ্ছে অর্থাৎ ভারতীয় পণ্য বাজার হারাচ্ছে। ফলে ভারতীয় শিল্প চাহিদার অভাবে ভুগছে। চাহিদা হ্রাসের ফলে। শিল্পগুলিতে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, ফলস্বরূপ কুটিরশিল্পগুলি বন্ধ হয়ে। যাচ্ছে এবং বৃহৎশিল্পগুলি শ্রমিক ছাঁটাই-এর পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থাৎ কুটিরশিল্পের শিল্পী এবং বৃহৎ শিল্পের শ্রমিক উভয়ই বেকারত্বের । শিকার হচ্ছে, অর্থাৎ তাদের উপার্জন এবং ক্রয়ক্ষমতা দুইই হ্রাস পাচ্ছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে অর্থনীতির অন্য দুই ক্ষেত্র কৃষি ও । পরিষেবা চাহিদা হ্রাসের মুখে পড়ে, ফলস্বরূপ তাদেরও উৎপাদন হ্রাস । করতে হয় ও কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ ধরতে হয়। ফলে পুনরায় চাহিদা হ্রাস। ও অর্থনীতির সবকটি ক্ষেত্রেই পুনরায় উৎপাদন হ্রাস ঘটে। অর্থাৎ ভারতীয় অর্থনীতি বেকারত্ব-ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস-চাহিদা হ্রাস-উৎপাদন। হ্রাস-পুনরায় বেকারত্ব—এইরূপ পতনের এক চক্রে প্রবেশ করে। এখন । দেখা যাক, বেকারত্বের শিকার হওয়া এবং ফলস্বরূপ উপার্জন থেকে। বঞ্চিত হওয়া শ্রমিকদের মােট সংখ্যা কত এবং চিনা পণ্যের অনুপ্রবেশের । ফলে ভারতীয় অর্থনীতি বছরে ঠিক কত টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

গত আর্থিক বছরে চীন থেকে ভারতে হওয়া আমদানি হল ১৮২১৮। বিলিয়ন ডলার বা ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এই আমদানি। কাচামাল হিসেবে হয় না, পুরােটাই হয় নির্মিত বস্তু হিসেবে, অর্থাৎ এই। বিপুল পরিমাণ নির্মিত বস্তু ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়ায় ভারতীয়। শিল্পসামগ্রী এই পরিমাণ বাজার হারালাে বা ভারতীয় শিল্পক্ষেত্রের বছরে। ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকার চাহিদা হ্রাস হল, অর্থাৎ ভারতীয় শিল্পী ও শ্রমিকদের ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা উপার্জন হ্রাস। হল। শিল্পক্ষেত্রে হওয়া এই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রভাব কিন্তু শুধু। শিল্পক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকলাে না, এর পরােক্ষ প্রভাব পড়ছে কৃষিক্ষেত্রে। শিল্পী ও শ্রমিকরা উপার্জনহীন হওয়ায় তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তারা কৃষিপণ্য কম কিনতে পারছে অর্থাৎ কৃষিপণ্যের চাহিদাও হ্রাস। পাচ্ছে, অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রেও উৎপাদন হ্রাস ও ফলস্বরূপ কৃষকদের। উপার্জন হাস ঘটছে। চীনা পণ্যের ভারতীয় বাজার দখলের কারণে। ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রের এই পরােক্ষ ক্ষতি হওয়া ছাড়াও কিছু প্রত্যক্ষ । “ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছে ভারতীয় কৃষিক্ষেত্র, কারণ চীনে তৈরী নকল। চাল, নকল ডিমের মত অনেক জিনিস ভারতীয় বাজারে ছেয়ে গেছে। বাইরে থেকে দেখে জিনিসগুলিকে ক্রেতারা আসলের থেকে আলাদা। করতে পারেন না এবং শরীরের পক্ষে চরম ক্ষতিকর এইসব জিনিস কিনে । ফেলেন, ফলে ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রও বাজার হারায়। নকল চাল ও নকল। ডিমের মত সামগ্রী বাজারে প্রবেশ করে চোরাপথে অর্থাৎ অনথিভুক্ত। অবস্থায়, তাই এইসব সামগ্রী বাজারে কত পরিমাণে বিক্রি হল এবং তার। ফলে ভারতীয় কৃষিক্ষেত্র প্রত্যক্ষভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হল তার সঠিক। পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হয় না, কিন্তু পরােক্ষভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। দেখা যাক্, এ কথা পূর্বেই উল্লেখিত। হয়েছে যে ভারতীয় শিল্পক্ষেত্রের উপার্জন হ্রাস ঘটেছে মােট ৪ লক্ষ ৫৭। হাজার ৩২০ কোটি টাকা, বর্তমান ভারতীয় অর্থনীতিতে যে কোনও মানুষের সার্বিক ভােগব্যয়ের গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষিপণ্য বা কৃষিজাত পণ্য কেনার জন্য ব্যয় হয়, অর্থাৎ চীনা পণ্যের জন্য শিল্পক্ষেত্রের যে ৪। লক্ষ ৫৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা উপার্জন হ্রাস ঘটছে তার পরােক্ষ। ফলস্বরূপ বছরে ১৮২৯২৮ লক্ষ কোটি টাকার (৪.৫৭৩২০ X ৪০/। ১০০) কৃষিপণ্যের বিক্রয়-হাস ঘটছে অর্থাৎ কৃষক সমাজের বছরে। ১.৮২৯২৮ লক্ষ কোটি টাকার উপার্জন হ্রাস ঘটছে, এই উপার্জন হ্রাসের। ফলে আবার পরােক্ষভাবে শিল্পক্ষেত্রের বিক্রয় তথা চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে, । কারণ যে কোনও মানুষের সার্বিক ভােগব্যয়ের গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ। যেমন কৃষিপণ্য বা কৃষিজাত পণ্য কেনার জন্য ব্যয় হয় সেইরকমই যে। কোনও মানুষের সার্বিক ভােগব্যয়ের এক বড় অংশ শিল্পজাত পণ্য। কেনার জন্য ব্যয় হয়, ভারতীয় অর্থনীতিতে এর পরিমাণ গড়ে প্রায় ৩৫। শতাংশ। অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রে ১.৮২৯২৮ লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন। হাসের ফলে পরােক্ষভাবে শিল্পক্ষেত্রের বিক্রি বা চাহিদা হ্রাস পেল। ০.৬৪০২৪৮ লক্ষ কোটি টাকা (১,৮২৯২৮ X ৩৫/১০০) অর্থাৎ শিল্পক্ষেত্রের শ্রমিক ও শিল্পীদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন-হ্রাস। ঘটলাে, এই উপার্জন হাসের পর্বে পূর্বোল্লিখিত পদ্ধতিতে বেকারত্ব ও কর্মহীনতার সৃষ্টি হয়, কিন্তু এখানেই শেষ নয়, শিল্পক্ষেত্রের এই। উপার্জন-হাস পুনরায় কৃষিক্ষেত্রের উপার্জন হ্রাসের কারণ হয় এবং । কৃষিক্ষেত্রের সেই উপার্জন হাস পুনরায় শিল্পক্ষেত্রের উপার্জন হ্রাসের। কারণ হয়, এভাবেই পরােক্ষভাবে শিল্প-কৃষি উভয় ক্ষেত্রেরই ক্রমান্বয়ে। উপার্জন-হাস ঘটতে থাকে। প্রত্যক্ষ ভাবে ঘটা উপার্জন-হ্রাস এবং । পরােক্ষভাবে ঘটা প্রাথমিক উপার্জন-হ্রাস পরিমাপযােগ্য হলেও। পরােক্ষভাবে ঘটা পরবর্তী উপার্জন হ্রাস পরিমাপযােগ্য নয়, অর্থনীতিতে। এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতি দেখা যায়, এবং এই পুনঃ পরােক্ষ ক্ষতির প্রভাব। শুধুমাত্র বর্তমান সময়ে আবদ্ধ থাকে না বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এই। ক্ষতির ভার বহন করতে হয়। শিল্পক্ষেত্র ও কৃষিক্ষেত্র মিলিয়ে প্রত্যক্ষ এবং । পরােক্ষ প্রাথমিক ক্ষতির মােট পরিমাণ হল (৪.৫৭৩২০ +১.৮২৯২৮। + ০.৬৪০২৪৮) ৭.০৪২৭২৮ লক্ষ কোটি টাকা, প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষ।

প্রাথমিক ক্ষতির কিন্তু এখানেই শেষ নয়, শিল্পক্ষেত্র ও কৃষিক্ষেত্র। উপার্জন-হ্রাসের শিকার হলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে অর্থনীতির তৃতীয় ক্ষেত্র পরিষেবা ক্ষেত্রের ওপর, যে কোনও মানুষের সার্বিক ভােগব্যয়ের। এক বড় অংশ পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য ব্যয় হয়, ভারতীয় অর্থনীতিতে এর। পরিমাণ গড়ে সার্বিক ব্যয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ ভারতীয় শিল্পক্ষেত্র। ও কৃষিক্ষেত্র যখন ৭০৪২৭২৮ লক্ষ কোটি টাকার উপার্জন-হ্রাসের। শিকার হচ্ছে তখন ভারতীয় পরিষেবা ক্ষেত্রও (৭.০৪২৭২৮ X ১/। ১০০) ১.০৫৬৪০৯২ লক্ষ কোটি টাকার চাহিদা হ্রাসের অর্থাৎ । সমপরিমাণ অর্থের উপার্জন-হ্রাসের সম্মুখীন হয়। পরিষেবা ক্ষেত্র এই। পরিমাণ উপার্জন-হ্রাসের শিকার হলে তার প্রাথমিক পরােক্ষ প্রভাব। পড়ে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রের ওপর। পরিষেবাক্ষেত্রে ১.০৫৬৪০৯২ লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন হ্রাসের ফলে পরােক্ষভাবে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রের। বিক্রি বা চাহিদা হ্রাস পেল ০.৭৯২৩০৬৯ লক্ষ কোটি টাকা। {১.০৫৬৪০৯২ X (৩৫+৪০)/১০০}। কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রের এই। উপার্জন হ্রাস আবার পরােক্ষভাবে পরিষেবাক্ষেত্রের উপার্জন হ্রাস এবং । তার ফলে পুনরায় কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রের উপার্জন হ্রাস, উপার্জন হ্রাসের পূর্বোল্লিখিত চক্রের দর্শন এক্ষেত্রেও দেখা যায়।

শুধুমাত্র পরিমাপযােগ্য প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ক্ষতি নিয়েই আলােচনায়। প্রবৃত্ত হওয়া যাক। চিনা পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় অর্থনীতির। প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ক্ষতি হচ্ছে (৪. ৫৭৩২০+১.৮২৯২৮। +০. ৬৪০২৪৮+ ১.০৫৬৪০৯২ + ০ ৭৯২৩০৬৯) ৮. ৮৯১৪৪ ৪১ লক্ষ কোটি টাকা, সীমাহীন পুনঃপরােক্ষ ক্ষতি তাে পরিমাপের অতীত। কিন্তু সংখ্যাতত্বর নিয়মানুসারে চলতি বছরে হওয়া পুনঃপরােক্ষ ক্ষতির। পরিমাণ ধরা হয় প্রত্যক্ষ ও প্রাথমিক পরােক্ষ ক্ষতির ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ। চীনা পণ্যের অনুপ্রবেশের জন্য এক বছরে হওয়া পুনঃপরােক্ষ ক্ষতির। পরিমাণ ৪ • ৪৪৫৭২২০৫ (৮. ৮৯১৪৪৪ ১ X ৫০/১০০) লক্ষ কোটি।

টাকা। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ, পরােক্ষ ও পুনঃপরােক্ষ মিলিয়ে মােট ক্ষতির। পরিমাণ ১৩.৩৩৭১৬৬১৫ (৪ • ৪৪৫৭২২০৫+৮৮৯১৪৪৪১) লক্ষ। কোটি টাকা বা ১৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এই অর্থ। আমাদের এক বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটের সমান। আমাদের দেশে। শিক্ষাখাতে বার্ষিক খরচ হয় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। চিনা পণ্যর জন্য। ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতি পরিমাণের দিক দিয়ে এর তেত্রিশ গুণ। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে বার্ষিক খরচ হয় ছত্রিশ হাজার কোটি টাকা। চিনা পণ্যর জন্য ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতি, পরিমাণের দিক দিয়ে এর । সাইত্রিশ গুণ। আমাদের দেশে সামরিক খাতে বার্ষিক খরচ হয় প্রায়। দু’লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। চিনা পণ্যর জন্য ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতি, পরিমাণের দিক দিয়ে এর সাড়ে পাঁচ গুণ। অর্থাৎ শুধুমাত্র সস্তার । মােহে পড়ে চিনা জিনিস কিনে আমরা প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থ চীনের। হাতে তুলে দিচ্ছি তা দিয়ে তেত্রিশ বছর ধরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার। সামগ্রিক ব্যয় বহন করা যেত, সাইত্রিশ বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্য খাতে । হওয়া যাবতীয় ব্যয় বহন করা যেত এবং সামরিক খাতে ব্যয়বরাদ্দ সাড়ে । পাঁচ গুণ বাড়ানাে যেত যার ফলে সামরিক বলে সাড়ে পাঁচ গুণ বলে । বলীয়ান হয়ে আমরা সামরিক দিক দিয়ে গােটা বিশ্বে অপরাজেয় হয়ে । উঠতে পারতাম, এছাড়াও কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা । যাবে যে এই ১৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকায় এগারাে কোটি লােকের কর্মসংস্থান হত এবং তাদের প্রত্যেকের মাসে ১০০০০ টাকা। করে বছরে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা উপার্জন হতে পারতাে কিন্তু এসব। কিছু হচ্ছে না শুধুমাত্র আমরা সস্তার মােহে পড়ে চিনা দ্রব্য কিনছি বলে।

এছাড়াও চিনা পণ্যের অনুপ্রবেশের ফলে ভারতীয় অর্থনীতি আরও। কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রথমত:, চিনা দ্রব্যগুলি ব্যবহার ও নিক্ষেপ। (Use and Throw) পদ্ধতির হওয়ায় পুরনাে জিনিস সারাইয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কর্মচ্যুত হয়, মূলতঃ অসংগঠিত ক্ষেত্রে হওয়ায় এই কর্মচ্যুতির সাংখ্যিক হিসাব সম্ভব নয়, কিন্তু বড় সংখ্যক নিম্নবিত্ত। ভারতবাসী যে এর ফলে বেকারত্বের জ্বালায় দগ্ধ হয় তা অনস্বীকার্য।

দ্বিতীয়ত:. বংশপরম্পরায় চলে আসা বহু হস্তশিল্প যেগুলি শুধু। ভারতের গেীরব-ই নয় বরং বহির্ভারতে ভারতের পরিচয়জ্ঞাপক। (যেমন—বেনারসী শাড়ি, কাষ্ঠশিল্প, বাঁশের কাজ, টেরাকোটার কাজ প্রভৃতি) সেই হস্তশিল্পগুলির হুবহু নকল চিনা পণ্যে ভারতীয় বাজার ছেয়ে। গেছে, ফলে সেই হস্তশিল্পগুলি বাজার হারাচ্ছে এবং হতাশ হয়ে শিল্পীরা। কাজ ছেড়ে দিচ্ছে, ফলস্বরূপ ভারতের গৌরব হিসেবে পরিচিত সেই। হস্তশিল্পগুলি চিরতরে লােপ পেতে চলেছে। এককালে ব্রিটিশ অত্যাচারে। যেমন ঢাকাই মসলিন বন্ধ হয়ে গেছিল, হয়তাে একালে চৈনিক। অত্যাচারে আরও অনেক হস্তশিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

ক্ষতি ভবিষ্যতেরও :

চিনা পণ্যের জোয়ারে ভারতের বাজারকে ভাসিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। চিন ভারতীয় অর্থনীতির কি কি ক্ষতি করছে তা তাে বােঝা গেল, কিন্তু। ক্ষতির এখানেই শেষ নয়, দেশের অর্থনীতির ভয়ংকরতম অবস্থা দেখা। যাবে ভবিষ্যতে। বিশ্লেষণে দেখা যাক, চিনা পণ্যগুলি তুলনামূলকভাবে। সস্তা হয় কারণ চিনা পণ্যগুলি উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে। ভারতের বাজারে পাঠানাে হয়, অর্থাৎ চিনা পণ্যগুলি ভারতে পাঠানাে হয় সাময়িকভাবে ক্ষতি স্বীকার করে। সাময়িকভাবে এই ক্ষতি স্বীকারের। পেছনে থাকে এক দীর্ঘমেয়াদী দুরভিসন্ধি, চীনের সস্তা পণ্যের সঙ্গে। প্রতিযােগিতায় পরাস্ত হয়ে ভারতীয় কারখানাসমূহ বন্ধ হয়ে যাবে। কুটীর । শিল্পের শিল্পীরাও অভ্যাসের অভাবে ধীরে ধীরে তাদের দক্ষতা হারাবে। ভারতবর্ষ তখন বন্ধ শিল্পের এক শ্মশানভূমিতে পরিণত হবে। ভারতীয়। ক্রেতারা তখন সম্পূর্ণরূপে চীনের পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আর সেই সময়ে ভারতীয় বাজারের ওপর সেই একচেটিয়া আধিপত্যের সুযােগ নেবে চীন। তখন তারা যে দাম ধার্য করবে ভারতীয় ক্রেতাদের সেই দামেই কিনতে হবে চীনের সামগ্রী। অর্থনীতির পরিভাষায় এই অপকৌশলকে বলা হয় ডাম্পিং । এই ডাম্পিং -এর চুড়ান্ত অপপ্রয়ােগ যদি অবিলম্বে রােধ করা না যায় তাহলে দেশের যে দুরবস্থা হবে, অনাগত সেই। ভয়ংকর ভবিষ্যত যেন কল্পনাকেও হার মানায়।

ক্ষতি পশ্চিমবঙ্গেরও : গােটা দেশের কি ক্ষতি হবে তা তাে বােঝা গেল। রাষ্ট্রের এক অঙ্গরাজ্য। হিসেবে পশ্চিমবঙ্গও এই ক্ষতির শিকার হবে। কিন্তু বিশেষ। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি হবে বেশি, বিশ্লেষণে। দেখা যাক। বিশেষ আর্থ-রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমবঙ্গের বৃহৎশিল্পগুলি। আগেই বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে গেছে, এখন পশ্চিমবঙ্গের যুবসমাজের। উপার্জনের সবেধন নীলমণি ক্ষুদ্র শিল্পগুলি, চিনা সস্তা পণ্যের আগ্রাসনে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে মূলত: ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেক্টনিক্যাল দ্রব্যের উৎপাদনকারী এই ক্ষুদ্র শিল্পগুলিই, পশ্চিমবঙ্গের যুবককুলের। সামনে তাই বেকারত্বের হাতছানি বড় প্রকট। এছাড়াও চীনের সস্তা লেড আলাে বিপদে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের মৃৎ-শিল্পীকুলকে, চীনের সফট টয়। বিপদে ফেলেছে এখানকার খেলনা নির্মাণকারী কুটিরশিল্পীদের। পশ্চিমবঙ্গের কুটিরশিল্পীরাও তাই আজ বড় বিপদাপন্ন।

পশ্চিমবঙ্গের বৃহৎশিল্পের মধ্যে টিম টিম করে টিকে থাকা একমাত্র। শিল্প পাটশিল্পও আজ বিপদের মুখে। চীনের তৈরী বিভিন্ন সস্তা বিকল্প,। পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের নাভিশ্বাস তুলছে। দেশের মধ্যে সর্বাধিক। জনঘনত্ব বিশিষ্ট রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ শুধুমাত্র কৃষির ওপর নির্ভরশীল হতে। পারবে না এবং পশ্চিমবঙ্গ খনিজ সম্পদেও নন। অর্থাৎ একথা অনস্বীকার্য যে চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনে গােটা দেশের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ আর তাই পশ্চিমবঙ্গের লােকেদেরই সর্বাপেক্ষা বেশি প্রতিরােধ গড়ে তােলা উচিত।

পরিবেশের ক্ষতি

চিনা দ্রব্য ব্যবহারের ফলে অর্থনীতির চরম ক্ষতি তাে হয়ই কিন্তু এই ক্ষতি শুধুমাত্র অর্থনীতির সীমানায় আবদ্ধ নেই। পরিবেশও চরম ক্ষতির। সম্মুখীন হচ্ছে, কারণ, এসব চিনা পণ্য সাধারণতঃ ক্ষতিকর কিছু । রাসায়নিকের দ্বারা নির্মিত হয় যা দামে সস্তা হলেও পরিবেশের ও। ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। শুধুমাত্র ব্যবহারকালে নয়, বরং। ব্যবহারের পরে ফেলে দেবার পরও এই বস্তুগুলি বিশ্লিষ্ট হয়ে পরিবেশে মিশে যায় না, বরং দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশে পড়ে থেকে পরিবেশকে। বিষাক্ত করে। ফলে দেশের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হয়, এবং এর ফলে। একদিকে যেমন দেশের কৃষি-উৎপাদন হ্রাস পায় অন্যদিকে সাধারণ। নাগরিকের ও সরকারের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।

স্বাস্থ্যের ক্ষতি

ক্ষতিকর রাসায়নিকের দ্বারা নির্মিত পরিবেশশত্রু চিনা পণ্যগুলি মানুষের শরীরের পক্ষেও একই রকম ক্ষতিকর। চিনা পণ্য ব্যবহারকারী। ব্যক্তিবর্গ কঠিন অসুখের শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর। প্রভাব পড়ছে অসীম। শুধুমাত্র চিকিৎসাব্যয়ের অর্থনৈতিক ক্ষতির। মাপকাঠিতে এই ক্ষতি পরিমাপযােগ্য নয়। স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব। সৃষ্টিকারী চিনা পণ্য চিরস্থায়ী ক্ষতি করছে দেশের মানবসম্পদে। ভারতের প্রতি চীনের ঐতিহাসিক শত্রুতা : ভারতের সঙ্গে এই সর্বাত্মক শত্রুতা চীন শুধু ভারতের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে করছে তাই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও চীন ভারতের প্রতি একই। রকম বৈরী ভাবাপন্ন। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের। জন্য ভারতকে মনােনীত করেছিল নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য সব। কটি দেশ কিন্তু চীন ভেটো প্রয়ােগ করে ভারতকে সেই মর্যাদা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে। পুলওয়ামা এবং ভারতের আরাে নানা জায়গায়। সন্ত্রাসবাদী হামলায় মূল অভিযুক্ত মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘােষণা করার ক্ষেত্রেও ভেটো প্রয়ােগ করে বাধা। দিয়েছে চীন। কূটনীতি জগতের নির্মম পরিহাস হল এই যে চীন নিরাপত্তা। পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়েছে এবং তজ্জনিত কারণে ভেটো প্রয়ােগের অধিকারী হয়েছে ভারতেরই দয়ায়। দুঃখবহ হলেও সেই ইতিহাসকে একটু স্মরণ করা যাক। দ্বিতীয়। বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ১৯৪৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ স্থাপিত হয়, বিশ্বযুদ্ধজয়ী চার। দেশ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফ্রান্স। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিদের চার সদস্য দেশ হিসেবে ভেটো প্রয়ােগের। অধিকার লাভ করে। ১৯৫৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ ঠিক করে বিশ্বের বৃহত্তম । মহাদেশ এশিয়ার একটি দেশকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করা । হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জাপান তখন এশিয়ার প্রথম সারির দেশ। হিসেবে গণ্য হত না। এশিয়ার বৃহৎ দুই দেশ ভারত এবং চীনের মধ্যে যে । কোনও একটি দেশকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার । কথা পরিষদে গৃহীত হয়। কম্যুনিষ্ট চীনকে সমর্থন করে কম্যুনিষ্ট সােভিয়েত ইউনিয়ন আর গণতান্ত্রিক দেশ ভারতকে সমর্থন করে। গণতান্ত্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। সংখ্যাধিক্যে জয়ী ভারত। তখন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ লাভ করার। যােগ্যতা অর্জন করেছিল কিন্তু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু। সেই স্থায়ী সদস্যপদ গ্রহণ না করে চীনকে সেই পদ ছেড়ে দেন। চীন সেই। উপকারের প্রতিদান দিচ্ছে আজ ভারতের বিরুদ্ধেই ভেটো প্রয়ােগ করে।

এই অভিনব চৈনিক কৃতঘ্নতারই আরেক নিদর্শন দেখা যাচ্ছে চিনা। পণ্যের ক্ষেত্রে। ভারতের দয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী। সদস্যপদ লাভ করে চীন যেমন ভারতের বিরুদ্ধেই ভেটো প্রয়ােগ। করেছিল সেরকমই ভারতে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তারা। ভারতের সঙ্গেই শতা করছে।

ক্ষতির অপর দিক, সীমান্তের ওপারে :

চিনা পণ্যের ব্যবহার যে শুধুমাত্র উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ভারতীয়। অর্থনীতির এবং মানবসম্পদের ক্ষতিসাধন করছে তা নয়, চিন যে সাড়ে। চার লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি লাভ করছে সেই অর্থ তারা কিভাবে ব্যয়। করছে দেখা যাক, চিন এই অর্থের দ্বারা নিজের এবং পাকিস্তানের। সেনাবাহিনীকে উন্নত করছে, তাদের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ক্রয় করছে। এবং সেই অত্যাধুনিক অস্ত্রের বলে বলীয়ান চিনা এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ভারতের সীমান্তে হামলা করছে এবং আমাদের দেশের বীর। জওয়ানদের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।

ভারতের সীমান্তে চীনের হামলা অবশ্য আজ নতুন নয়, অতীতেও এর। নজির রয়েছে এবং সেই উদাহরণ খুব সুখকর নয়, ১৯৫০ সালেই ভারত। ও চীনের একমাত্র মধ্যবর্তী রাষ্ট (বাফার স্টেট) তিব্বতকে আক্রমণ করে। চিন। স্বাধীনতার পর ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’ নীতিতে বুদ হয়ে থাকা। আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান নেহেরু কান দেননি চিনা ড্রাগনের আক্রমণে বিপন্ন। তিব্বতের আর্তচিৎকারে, চীনের আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করেননি। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র তিব্বতকে। ফল ফলতে দেরি হয়নি, তিব্বতকে হজম। করার পর চীনের সঙ্গে ভারতের সরাসরি সীমানা স্থাপিত হয়েছিল। আগ্রাসনকারীর স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী চিন সেই সীমানাকে লঘন । করে ঝাপিয়ে পড়েছিল ভারতের ওপর ১৯৬২ সালে, তৎকালীন নিষ্ক্রিয়। ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছিল সেই আক্রমণকে ঠেকাতে। চিন দখল। করেছিল ভারতের ৬২০০০ বর্গ কিলােমিটার পরিমাণ ভূখণ্ড, হিমালয়ের। বরফাবৃত প্রান্তরে অবস্থিত সেই বিপুল পরিমাণ ভূখণ্ডের গুরুত্ব অনুধাবন। করতে ভুল করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু, ঊষর সেই প্রান্তর। সম্পর্কে বলেছিলেন, “Not a blade of grass grows there” (সেখানে। তাে একটা ঘাসও গজায় না, অর্থাৎ কৃষিকাজ হয় না)। কিন্তু সে ঊষর। প্রান্তরের গুরুত্ব ছিল অন্য জায়গায়, সমভূমিপ্রধান ভারত এবং।

মরুভূমিপ্রধান চীনের মধ্যে প্রাকৃতিক প্রাচীর নির্মাণকারী হিমালয় নিজের ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণেই বিশাল সামরিক গুরুত্বের অধিকারী। হিমালয় কজায় থাকায় এখন সেই সামরিক সুবিধা ষােলআনা উশুল। করছে চীন, হিমালয়ের ওপরে অপেক্ষাকৃত উচুস্থানে প্রচুর পরিমাণ। সমরােপকরণ মজুত এবং সমরােপযােগী পরিকাঠামাে নির্মাণ করেছে। চীন। প্রতি বছরে শতাধিক বার তারা ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে। হিমালয়ের উচ্চস্থান চীনের হাতে ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিম্নভূমিতে। অবস্থানরত ভারত সেই অনুপ্রবেশসমূহ ঠেকাতে প্রতি বছর খরচ করে । কয়েক হাজার কোটি টাকা। ঘাস না গজানাে সেই কয়েক হাজার। বর্গকিলােমিটার উষর এলাকা ভারতের হাতে থাকলে সেই বাৎসরিক। অর্থব্যয় ভারতের না হয়ে চীনের হত।

শুধুমাত্র সামরিক গুরুত্বই নয়, এই উষর জায়গাটির অর্থনৈতিক। গুরুত্বও যথেষ্ট, বর্তমানে সারা বিশ্বে পানীয় জলের ব্যবসা প্রায় কুড়ি। হাজার কোটি ডলারের (টাকার মূল্যে প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা)। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই পরিমাণ আগামীদিনে আরও বাড়বে। তীব্র গতিতে, বর্তমান অর্থনৈতিক বিশ্ব যদি খনিজ তেলের হয় তাহলে। আগামী অর্থনৈতিক বিশ্ব হবে পানীয় জলের, পানীয় জলের দ্বিতীয়। বৃহত্তম ভাণ্ডার (পানীয় জলের বৃহত্তম ভাণ্ডার কুমেরু কোনও একটি। দেশের অধিকৃত নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের সরাসরি আওতায়) হিমালয় নিজের হাতে থাকায় সেই অনাগত আগামীতে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে কি বিপুল সুবিধা পাবে এবং হিমালয় হস্তচ্যুত হওয়ায় আগামীর ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে কি বিপুল সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে তা চিন্তার বাইরে। এখানেই। শেষ নয়, নদীমাতৃক ভারতবর্ষের প্রধান তিনটি নদনদীর অন্যতম। ব্রহ্মপুত্রের উৎস সেই সময় থেকে চীনের দখলে, ইতিমধ্যেই সেই উৎসের পরবর্তী অংশে তারা বাঁধ নির্মাণ করেছে, যে কোনও মুহূর্তে তারা। ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আসাম সহ। সমস্ত উত্তর-পূর্ব ভারত সংকটাপন্ন হবে।

আগ্রাসী চীন কিন্তু এতেই সন্তুষ্ট নয়, হিমালয়ের বাকি অংশ এবং । অরুণাচল প্রদেশ সহ সমস্ত উত্তর-পূর্ব ভারত তারা ছলে-বলে-কৌশলে। দখল করতে চায়। হিমালয়ের বুকে অবস্থিত ঐতিহাসিক ভারতবন্ধু। নেপাল আজ চীনের কৌশলে এবং পূর্বতন ভারত সরকারের। উদাসীনতায় বর্তমানে কমুনিষ্ট প্রভাবিত হয়ে চীনের করালগ্রাসে, হিমালয়ে অবস্থিত আরেক ভারত বন্ধু ভুটান চীনের কৌশলের কাছে। নিতিস্বীকার না করায় সেখানে বলপ্রয়ােগের আশ্রয় নিয়েছে তারা।

পরিস্থিতি আজও সেই একই, পঞ্চাশের দশকে আক্রান্ত হয়েছিল। বন্ধুরাষ্ট তিব্বত, ২০১৭-য় আক্রান্ত হয়েছে বন্ধুরাষ্ট্র ভুটান, এবারকার মত। ভারত সরকারের সতর্কবাণীতে কান দিয়ে চীন পশ্চাদপসরণ করেছে, তা। বলে কর্তব্যকর্ম বিস্মৃত হলে হবে না, সেদিনের মত আজও যদি কর্তব্যকর্ম। বিস্মৃত হয়ে আমরা বন্ধুরাষ্ট্র ভুটানকে রক্ষা না করি, তাহলে আগ্রাসী চীনের ব্যাদিত মুখগহর আমাদেরও ছেড়ে কথা বলবে না। চিন-ভুটান। বিবাদের স্থান ডােকলাম থেকে ভারতের সীমান্ত মাত্র আধঘন্টার পথ,। ডােকলাম নির্বিবাদে হজম করার পর সেই সামান্য পথ অতিক্রম করে। আমাদের উত্তরবঙ্গ সংলগ্ন সীমানায় তারা আক্রমণ করবে এবং । উত্তরবঙ্গকে বিপন্ন করার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে অবশিষ্ট। ভারতের যােগাযােগের একমাত্র পথটিকেও (দিনাজপুর- জলপাইগুড়ি। দার্জিলিং নিয়ে গঠিত ‘মুরগীকণ্ঠ’ বা ‘Chicken’s Neck’) আনবে নিজের । অধিকারে, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের যােগাযোেগ বিনষ্ট হবার ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সােনার খনিসদৃশ অরুণাচল প্রদেশ আসবে তাদের অধিকারে।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, অরুণাচল প্রদেশ সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতকেও। নেহরুর ভাষা অনুযায়ী বলা যায় “Not a blade of grass grows there”, এখানকার ভূপ্রকৃতি পাহাড়ী ঢালবিশিষ্ট হওয়ায় কৃষিতে এই অঞ্চল খুব। পিছিয়ে। কৃষিতে উত্তর-পূর্ব ভারত খুবই পিছিয়ে, কিন্তু উত্তর-পূর্ব।

ভারতের গুরুত্ব অন্য জায়গায়, হিমালয়ের ঠিক প্রান্তদেশে অবস্থিত এই। অঞ্চলটি হিমালয়ের বরফ গলা জলে সমৃদ্ধ থাকে সারাবছর, পাহাড়ী। ঢাল বরাবর সেই জল প্রচণ্ড গতিতে নিম্নমুখী হয়, ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অরুণাচল প্রদেশ সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত সােনার । খনিসদৃশ। বিশেষজ্ঞদের মতে শুধুমাত্র অরুণাচল প্রদেশেই বছরে এক। লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত। মিলিয়ে পরিমাণ আরও বেশী হতে পারে। আজ ক্রমক্ষয়িষ্ণু খনিজ। তেলের ভাণ্ডারের ওপর এবং ক্রমক্ষয়িষ্ণু খনিজ কয়লাজাত। তাপবিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গােটা বিশ্বের শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্র। যখন বিকল্প শক্তির সন্ধানরত তখন এই বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুৎ। ভারতীয় অর্থনীতির এক চিরস্থায়ী সম্পদে পরিণত হতে পারে। কিন্তু। চীনের সেনাবাহিনীর আগ্রাসী নীতির কারণে সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত। হচ্ছে না।

ক্ষতি উত্তর-পশ্চিমেও :

চৈনিক আগ্রাসন শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে আবদ্ধ। থাকবে তা নয়, তারা আক্রমণ করবে কাশ্মীর সীমান্তে আর এখানে। তাদের দোসর হবে তাদেরই প্রদেয় অস্ত্র ও অর্থে বলীয়ান পাকিস্তান।

কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তান ও চীনের লালসাজর্জর দৃষ্টিনিক্ষেপ। আজকের কথা নয়, স্বাধীনতার পর থেকেই মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের। স্থলপথে যােগাযােগের একমাত্র মাধ্যম কাশ্মীরকে ভারতের কাছ থেকে। ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে পাকিস্তান এবং সেই কাজ তারা। করছে চীন প্রদত্ত অর্থবলে এবং অস্ত্রবলে।

কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তান ও চীনের এত আকর্ষণ থাকার বেশ কিছু। কারণ আছে। প্রথমত:, কাশ্মীরের প্রকৃতি যেন ঈশ্বরের কাছ থেকে বিশেষ। আশীর্বাদপ্রাপ্ত, তুলনারহিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অধিকারী কাশ্মীর যেন।

আক্ষরিক অর্থেই ভূস্বর্গ। স্মরণাতীত কাল থেকেই পর্যটকদের। বিশেষভাবে আকর্ষণ করে এসেছে কাশ্মীর। কাশ্মীরের প্রতি পর্যটকদের এই আকর্ষণকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পে কাশ্মীরকে অনেক উন্নত করে। তােলা যেত এবং প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেত। সেই। বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কত দেখা যাক, ১৯৬০ সালে সুইজারল্যান্ডের। পর্যটন খাতে আয় ছিল মাত্র ৯৫.২ লক্ষ ডলার বা ৪ কোটি ৫৩ লক্ষ। টাকা, ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের পর্যটন খাতে আয় ছিল ৭০৯১৮ কোটি ডলার বা ৪৪২০৩১৮ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। ১৯৬০ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় ছিল ৩৭ কোটি ডলার বা ১৭৬ কোটি ১২। লক্ষ টাকা, ২০১৪ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় ছিল মাত্র ২৫০০ কোটি ডলার বা ১৫৫৮২৫ কোটি টাকা। উপরােক্ত পরিসংখ্যান থেকে। দেখা গেল ১৯৬০ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় সুইজারল্যান্ডের। পর্যটন খাতে আয়ের ৩৯ গুণ ছিল কিন্তু ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের। পর্যটন খাতে আয় কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয়ের ২৫ গুণ। ১৯৬০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এই ৫৪ বছরে সুইজারল্যান্ডের আয়বৃদ্ধি হয়েছে। ৭৪৫০০ গুণ, একই সময়কালে কাশ্মীরের আয়বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭০ গুণ। এই সময়কালে কাশ্মীরের আয়বৃদ্ধি যদি সুইজারল্যান্ডের আয়বৃদ্ধির। সমহারে হত তাহলে ২০১৪ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় হত। ২৭৫৬২৭০ কোটি ডলার বা ১৭১৭৯৮১১০ কোটি টাকা যা গাে

টা ভারতের মােট জিডিপি-র ৮ গুণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর ও সুইজারল্যান্ডের আয়বৃদ্ধির এই বিপরীতমুখী অবস্থানের একটাই কারণ, সুইজারল্যান্ড পর্যটন শিল্পে যত উন্নতি করতে পেরেছে কাশ্মীর তা করতে পারেনি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কাশ্মীরের তুলনায় অনেক। পিছিয়ে থাকা সুইজারল্যান্ড পর্যটন শিল্পে এত বেশী উন্নতি করলাে অথচ কাশ্মীর গহন তিমিরে তলিয়ে গেল এর একটাই কারণ কাশ্মীরে। উগ্রপন্থার জন্য পর্যটকদের স্বাভাবিক ভীতি। এই ভীতি সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান চীনের সাহায্যে, তাদের লক্ষ্য একটাই, উগ্রপন্থার ক্রমবর্ধমান।

চাপে অতিষ্ঠ হয়ে ভারত যদি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয়। তাহলে পর্যটন শিল্পে কাশ্মীরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান ও। চীন নিজেদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করবে। চীন এবং চীন প্রদত্ত। অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্যে বলীয়ান পাকিস্তান না থাকলে শুধু কাশ্মীরের। পর্যটন শিল্পের সাহায্যেই ভারত আজ বছরে উপরােক্ত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারতাে যা ভারতের অর্থনীতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে। যেতে পারতাে এবং পর্যটন শিল্পে প্রচুর লােকের কর্মসংস্থানও হতে পারতাে।

ক্ষতির আরেক দিক :

চিন তার অর্থবলে এবং অস্ত্র বলে শুধুমাত্র নিজেদের এবং পাকিস্তানের। সেনাবাহিনীর দ্বারাই যে ভারতের ক্ষতি করছে তা নয় সেই অর্থবল এবং। অস্ত্রবল ভারতের অভ্যন্তরেও নিয়মিত প্রযুক্ত হচ্ছে ভারতের ক্ষতি। সাধনের জন্য।

মূলত: কৃষিপ্রধান ভারত খনিজ সম্পদেও সমৃদ্ধ, ভারতের প্রায় আশীটি এমন জেলা আছে যে জেলাগুলি বিভিন্ন খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। জেলাগুলি মূলতঃ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের কিছু অংশে অবস্থিত। এই খনিজ পদার্থের সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হলে ভারত শিল্পে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত হত। কিন্তু। ভারত শিল্পে স্বয়ম্ভর হলে চীনের বাজার নষ্ট হবে, চীন তার উৎপাদিত। পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে পারবে না, তাই চীন ভারতের শিল্পক্ষেত্রের। এই বিপুল সম্ভাবনাকে নষ্ট করার জন্য এই জেলাগুলিতে মাওবাদী নামক। উগ্রপন্থীদের অর্থ এবং অস্ত্রদ্বারা সাহায্য করছে। চীনপ্রদত্ত অর্থবলে এবং অস্ত্রবলে বলীয়ান মাওবাদীরা এই সমস্ত এলাকায় এমন অশান্তির। পরিবেশ তৈরী করেছে যে এখানে ন্যূনতম পরিকাঠামাে তৈরী করতে। ব্যর্থ হয়েছে দেশের শাসনব্যবস্থা, ফলে ভারতের শিল্পে উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

ভারতের শিল্পোন্নয়নের সমস্ত সম্ভাবনাকে চীন অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চায়, তার লক্ষ্য সে ভারতকে তার উৎপাদিত পণ্যের বাজার এবং কাচামাল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে রেখে দিতে চায়, ঠিক ঔপনিবেশিক আমলের ব্রিটিশের মতাে। বস্তুতঃ পলাশীর যুদ্ধের আগের মানদণ্ডধারী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিকের সঙ্গে আজকের চীনের কার্যপদ্ধতির অদ্ভুত সাদৃশ্য।

উদাহরণ :

সমস্ত সমস্যাটাকে একটা কল্পবাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে একবার। মানসপটে অঙ্কিত করে নেওয়া যাক।

রামবাবু বাজারে গেলেন, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ভারতীয় পণ্য। না কিনে চিনা পণ্য কিনলেন, বিক্রির অভাবে কুম্ভকার শ্যামবাবু বেকার হলেন, বিক্রির অভাবে ভারতীয় শিল্প বন্ধ হল, শিল্পের শ্রমিক যদুবাবু। বেকার হলেন, চিনা পণ্য ক্রয়ে ব্যয়িত রামবাবুর পকেটের টাকা চীনে চলে গেল, তারই একটা অংশ মাওবাদীরা অর্থসাহায্য হিসেবে পেল, তারা খনিজ সম্পদের উত্তোলন বন্ধ রাখলাে, রামবাবুর পকেটের টাকার। আরেকটি অংশের সাহায্যে চিনা অনুপ্রবেশকারীরা উত্তর-পূর্ব ভারতে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার কাজে ব্যাঘাত ঘটালাে। * ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, ভারতীয় শিল্প বলতে দেশে কিছু অবশিষ্ট নেই, বাজারে শুধু চিনা পণ্য, দাম অবশ্য আগের মত সস্তা নয়, আকাশছোঁয়া। রামবাবু বাধ্য হয়ে তাই কেনেন, ওনার সময়ও ভালাে। যাচ্ছে না, ওনার ছেলে উচ্চশিক্ষিত, ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু খনিজ পদার্থ ও বিদ্যুৎশক্তির অভাবে দেশে বৃহৎশিল্প কিছু নেই, ফলে ওনার ছেলে। ভালাে কোনও চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীতে নাম । লিখিয়েছে, বর্ডার-এ পােস্টিং, অবশ্য একা নয়, শ্যামবাবু আর যদুবাবুর । ছেলেও বেকারত্বের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীতে। নাম লিখিয়েছে, ওরাও রামবাবুর ছেলের সঙ্গে একই ব্যাটেলিয়নে আছে।

বাজার থেকে বিরস বদনে ফিরে রামবাবু দেখলেন সেনাবাহিনীর থেকে একটা চিঠি এসেছে, ছেলের খবর আছে বুঝতে পেরে আনন্দিত। মনে রামবাবু চিঠি খুলে পড়লেন আর চিৎকার করে মাথায় হাত দিয়ে। বসে পড়লেন। চিনা পণ্য ক্রয়ে ব্যয়িত রামবাবুর পকেটের টাকার। আরেকটি অংশের সাহায্যে চিনা সেনাবাহিনী যে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। কিনেছে তার গুলিতে রামবাবু, শ্যামবাবু আর যদুবাবুর ছেলে মারা গেছে।

রামবাবু নিজের পকেটের টাকায় নিজেরই সর্বনাশ করলেন।

সমাধান :

সমস্যা বহুমুখী, সমাধান কোথায়? সমাধানও বহুমুখী। আমাদের বীর । সেনানীরা সীমান্তে সংগ্রাম করবেন, কিন্তু অসামরিক জনসাধারণেরও দায়িত্ব আছে।

জনসাধারণের দায়িত্ব :

ভারতবিরােধী সব কাজই চীন করছে এবং করবে আমাদের দেশে বিক্রিত চিনা পণ্যের মূল্যবাবদ প্রাপ্ত অর্থ থেকেই। তাই জনসাধারণ যদি চীনের পণ্য না কেনেন অর্থাৎ চীনের পণ্য বয়কট। করেন তাহলে চীন অর্থাভাবে ভারতবিরােধী কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।

মনে হতে পারে এতবড় এক আন্তর্জাতিক শক্তি চীন, তারা আমাদের দেশের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। শুধুমাত্র বয়কটকে অস্ত্র করে আমরা সাধারণ মানুষ কি পারবাে এত বড় এক শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে ?

প্রমাণ ইতিহাসে :

করা যে যায় তার প্রমাণ পাওয়া যাবে ইতিহাসের দিকে একটু তাকালেই, মহাকালের সরণী ধরে পেছিয়ে যেতে হবে ১১৩টি বছর, ১৯০৫ সাল, ব্রিটিশ সরকার ঘােষণা করলাে বঙ্গভঙ্গ-র, বললাে, বঙ্গভঙ্গ।

একটি “SETTLED FACT” (স্থিরীকৃত সিদ্ধান্ত)। ভেবে দেখা যাক সেই। সময়কার কথা, সেই ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তখন সূর্য অস্ত যায়। না। চেঙ্গিস খান, আলেকজান্ডার, তৈমুর লং এবং জুলিয়াস সিজারের । সাম্রাজ্যকে যােগ করলে যে আয়তন হবে তার চেয়েও বড় আয়তন। তখনকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আর ভারত সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন। একটি দেশ মাত্র, সৈন্যবলে অর্থবলে অস্ত্রবলে ব্রিটিশ শক্তি তখন অজেয়। ভারতবাসী তখন অর্থাভাবে দরিদ্র, অস্ত্র রাখার অনুমতিহীন। সেই । শক্তিশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি “SETTLED FACT” (স্থিরীকৃত। সিদ্ধান্ত) বঙ্গভঙ্গকে তৎকালীন দরিদ্র ভারতবাসী “UNSETTLED”। করে দিয়েছিল শুধুমাত্র ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করার মাধ্যমে। শুধুমাত্র। ভারতীয়রা ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করতে শুরু করতেই টনক নড়েছিল ব্রিটিশ। সরকারের, বাধ্য হয়েছিল তারা পশ্চাদপসরণ করতে, বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহৃত। হয়েছিল। সেদিন দরিদ্র পরাধীন অস্ত্রহীন ভারতবাসী যা করতে পেরেছিল। আজ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের ষষ্ঠ এবং সামরিক শক্তির দিক দিয়ে। বিশ্বের চতুর্থ শক্তিধর দেশের নাগরিক ভারতবাসী কি তা করতে পারবাে? অবশ্যই পারবাে যদি সেদিনের মত আজও আমরা মায়ের দেওয়া মােটা কাপড় মাথায় তুলে নিতে পারি।

অন্যান্য প্রশ্ন :

অর্থনীতির একটি ভিন্ন প্রশ্ন এখানে অনেক সময়ই উঠে আসছে,। আমবা চিনা পণ্য বয়কট করলে চীনও যদি আমাদের পণ্য বয়কট করে। সেক্ষেত্রেও তাে আমাদের দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষতি। হবে? এপ্রসঙ্গে একটা কথা বলা যাক, আমাদের দেশ থেকে চীনে নির্মিত। দ্রব্য অর্থাৎ তৈরি করা জিনিস রপ্তানি হয় না শুধুমাত্র কাঁচামাল রপ্তানি। হয়। নিজেদের শিল্পোৎপাদন বজায় রাখার জন্যই তারা কাঁচামালের। আমদানি বন্ধ করতে পারবে না।

কারও কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, চিনা জিনিস ব্যবহার করা। যদি দেশের পক্ষে এতই ক্ষতিকর তাহলে সরকার চিনা জিনিস ব্যবহার। আইন করে বন্ধ করে দিচ্ছে না কেন? বর্তমানে বিশ্বায়নের পৃথিবীতে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে কোনও দেশই কিন্তু একটি বিশেষ দেশের সব। পণ্য বিক্রি আইনতঃ নিষিদ্ধ করতে পারে না। ভারত চীনের সামগ্রী বিক্রি। নিষিদ্ধ না করতে পারলেও কোনও বস্তু কেনা বা না কেনা তাে সম্পূর্ণ। ক্রেতার হাতে। চিনা পণ্যে ভারতীয় বাজার ছেয়ে গেলেও চিনা পণ্য। কিনবাে কি কিনব না সেই সিদ্ধান্ত তাে সম্পূর্ণরূপে ক্রেতার নিজের। ক্রেতারা যদি চিনা পণ্য না কেনেন, তাহলে বিশ্বায়ন সংক্রান্ত। আইনসমূহও চীনের পণ্যকে ভারতের বাজার দখল করার সুযােগ দিতে। পারবে না। তবে ভারতের বাজার দখলে চীন যে ডাম্পিং -নীতির সাহায্য। নিচ্ছে তাও বিশ্বায়নের আইন বিরােধী এবং ডাম্পিং প্রতিরােধে ভারত। সরকার চীনের বেশ কিছু পণ্যের ওপর ডাম্পিং -বিরােধী শুল্ক বা অ্যান্টি। ডাম্পিং ডিউটি বসিয়েছে, অর্থাৎ এ কথা বলা যায় যে সরকারের কাজ। সরকার করেছে, এবার জনসাধারণকে জনসাধারণের কাজ করতে হবে, । চিনা পণ্যকে সর্বাত্মক ভাবে বয়কট করতে হবে, এখানে আরও একটি। কথা স্মর্তব্য, জনসাধারণ জাগ্রত থাকলে সরকারও সচেতন থাকবে এবং । চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে কখনও দুর্বলতা দেখাবে না।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার হাতে আণবিক বােমায়। বিধ্বস্ত হওয়ার পর জাপান বাধ্য হয়ে আমেরিকার অধীনতা স্বীকার করে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করে। তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং শিল্পের দিক দিয়ে সবচেয়ে উন্নত দেশ আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্র তার উৎপাদিত পণ্যের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছিল জাপানের। বাজার। বােমাবিধ্বস্ত, শিল্পহীন তৎকালীন জাপান সরকার আইনগত। বাধ্যতার কারণে তার কোনও প্রতিবাদ করেনি, কিন্তু জাপানের। দেশপ্রেমিক নাগরিকেরা মার্কিন পণ্যকে সম্পূর্ণ বয়কট করেছিল, মার্কিন পণ্য জাপানের বাজারে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার আপেল, যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আপেল, তা জাপানের বাজারে পড়ে পড়ে পচেছিল, মার্কিন আপেল বিক্রেতারা প্রথমে সস্তা দরে পরে সম্পূর্ণ। বিনামূল্যে সেই আপেল বিলি করতে শুরু করেছিল, আপেলপ্রিয় জাপানীরা সেদিকে ফিরেও তাকায়নি, তারা বিনামূল্যের ক্যালিফোর্নিয়ার। আপেল না খেয়ে নিজেদের দেশের তুলনামূলক নিম্নমানের আপেল। কিনে খেয়েছে, যাতে নিজেদের দেশের আপেল উৎপাদনকারীদের বিক্রি। বজায় থাকে এবং তাদের উপার্জন বন্ধ না হয়। দেশের প্রতি এই নিঃস্বার্থ ভালােবাসা এবং কর্তব্যবােধ ছিল বলেই জাপান আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ। অর্থনীতি-সম্পন্ন দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আমরাও যদি তাদের মত দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারি তবেই ‘‘ভারত আবার। জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে”। আরও একটি বিষয় এখন বাংলা সংবাদপত্রগুলিতে বহুল আলােচিত, সেটা হল চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংঘাতে গেলে যদি ভারত বিপন্ন হয়। চীন অত্যন্ত শক্তিশালী তারা যদি তাদের মিত্র দেশগুলিকে নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে একটি অর্থনৈতিক প্রাচীর নির্মাণ করে? তারা যদি আন্তর্জাতিক। ক্ষেত্রে ভারতকে একঘরে করে ফেলে? এমনতর নানান দুশ্চিন্তায়। আকীর্ণ ভারতীয় বুদ্ধিজীবীকুল আর তাদের এই চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই। প্রভাবিত ও ভীত করেছে সাধারণ মানুষকে, এ প্রসঙ্গে একটা কথাই বলা যায়, ১৯৯৮ খ্রীষ্টাব্দে ভারত যখন পােখরানে পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বােমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তখন আমেরিকা ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে। বয়কট করেছিল, নিজের মিত্র দেশগুলিকে নিয়ে ভারতের ওপর। অর্থনৈতিক অবরােধ জারি করেছিল, তাতে কিন্তু ভারতবর্ষের। অর্থনীতিতে কোনও প্রভাব পড়েনি, বরং মার্কিন অর্থনীতিই বিপন্ন। হয়েছিল ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকার হারিয়ে, অবশেষে তারা বাধ্য হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে জারি করা অর্থনৈতিক অবরােধ তুলে নিতে।

সেদিনের আমেরিকার মতাে আজকের চীনও ভারতের বিরুদ্ধে। অর্থনৈতিক অবরােধ জারি করলে নিজেরাই অপদস্থ হবে, ভারতের ওপর। কোনও প্রভাব পড়বে না, কারণ খাদ্য ও অর্থনীতির অন্যান্য প্রাথমিক । বিষয়গুলিতে ভারত স্বয়ম্ভর, তাই ভারতীয়দের নির্ভীক হয়ে চীনের। পণ্যকে বয়কট করা উচিত।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীন মিত্র পরিবৃত দেশ নয়, চীনের। আগ্রাসী আচরণের জন্য জাপান সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান। দেশগুলি চীনকে শত্রু জ্ঞান করে, এমনকি সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম। পর্যন্ত চীনের দাদাগিরিতে বিরক্ত এবং তার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন, চীনের। পশ্চিমপ্রান্তের দেশ মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে চীনের ঐতিহাসিক শক্রতা। বর্তমানেও বজায় আছে, চীনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের এবং ভারতের। উত্তর-পূর্ব প্রান্তের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ব্রহ্মদেশ, অত্যাচারী সমরনায়কদের। পদচ্যুতি এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে ভারতবন্ধু, চীনের । প্রকৃত বন্ধু শুধুমাত্র উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তান, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে। মদত দেওয়া এবং নিজের দেশের নাগরিকদের ওপরেই অত্যাচারের। কারণে যে দুটি দেশ সারা বিশ্বে ঘৃণিত, এছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কার মত। অর্থনীতিতে পশ্চাদপদ কিছু রাষ্ট্র চীনের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর। করে বলে চীনের অনুগত, কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে তাদের কোনও জোর নেই, অতএব এ কথা বলাই যায় যে বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনের। কোনও ক্ষমতা নেই ভারতের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরােধ গড়ে তােলার।

এ প্রসঙ্গে একটা কথা অবশ্য স্মর্তব্য, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের আহ্বানে। গত বছর দীপাবলীর সময় থেকে দেশবাসী চিনা পণ্যের বয়কট শুরু। করেছে, সর্বাত্মক বয়কট এখনও হয়নি কিন্তু এর মধ্যেই চীনের টনক। নড়েছে, তারা ভারতে চিনা পণ্য বয়কটের বিরুদ্ধে তাদের দেশের পত্র-পত্রিকায় বিষােদ্গার করছে, কিন্তু সেই বিষােদ্গার আন্তর্জাতিক মঞ্চে অক্ষমের বাহ্বাস্ফোট হিসেবেই পরিগণিত হয়েছে, এখন দেশবাসী। যদি চিনা পণ্যের সর্বাত্মক বয়কট করে, তাহলে তা সত্যিই চীনের। অর্থনৈতিক শিরঃপীড়ার কারণ হবে, চীন তখন অর্থের অভাবে বাধ্য হবে। ভারতের বিরুদ্ধে সমস্ত রকম আগ্রাসন চালানাে থেকে বিরত থাকতে।

ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ সংগ্রামের পর আমাদের ভারতবর্ষ স্বাধীন। হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মহান আত্মত্যাগের দ্বারা। আজ দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিপন্ন, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উত্তরসূরী হিসেবে। সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের, তারা অনেক। আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন, চিনা পণ্য বয়কট। করার মাধ্যমে আমরা কি পারবাে না সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে।

অম্লানকুসুম ঘোষ

লেখক স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের প্রান্ত সংযােজক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.