রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) বরাবরই ভারতীয় ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় বিশ্বাসী।সঙ্ঘ বিশ্বাস করে শিব জ্ঞানে জীব সেবাই চিরন্তন ভারতীয়ত্বের মুল সুর। স্বামী বিবেকানন্দের সেবা ভাবনা পাথেয় করে তাই সঙ্ঘের বিবিধ সংগঠন গুলি করোনা পরবর্তী কঠিন সময়ে যেমন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্যসামগ্রী, শিক্ষার সামগ্রী বিতরন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় কম্যুনিটি কিচেন করে নিরন্ন আর অভুক্ত মানুষের মুখে অন্নের যোগান দিয়েছে তেমনি ভয়াবহ আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন এলাকার মানুষজনের মধ্যে নাগাড়ে সেবাকার্য চালিয়ে যাচ্ছে

উল্লেখ্য গতকাল ১১:০৬:২০২০ ; বৃহস্পতিবার, রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শিক্ষক সংগঠন অখিল ভারতীয় রাস্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘের (ABRSM) উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দুটি শাখা *বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সঙ্ঘ(BSSS) এবং বঙ্গীয় নব উন্মেষ প্রাথমিক শিক্ষক সঙ্ঘ( BNUPSS) দ্বিতীয় দিনের সেবাকার্যে ব্রতী হতে, আর্ত পিড়ীত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে পৌছে গিয়েছিল হাসনাবাদের ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি গ্রামে। খুব সকালে বারাসাত থেকে সংগঠনেরজেলার টিম রওনা দিয়ে হাসনাবাদে পৌছায় সকাল ৯ টার পরে। সেখানেই ত্রানের জন্য বিরাট বিরাট বস্তা ভর্তি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অপেক্ষায় ছিল সংগঠনের বসিরহাট মহাকুমা শাখার সদস্য স্বয়ংসেবক শিক্ষক রা।তারপর সেখান থেকে একটি বড় ভুটভুটি করে রওনা দেওয়া হয় বাঁধ ভাঙা জলে প্লাবিত টিয়ামারী গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে।

    মাঝপথে ঝমঝমিয়ে বৃস্টি। ভুটভুটিতে মাথার উপরে কোন ছাওনি না থাকায় বৃস্টিতে ভিজে অথবা ছোট্ট এক টুকরো ত্রিপলের নীচে মাথা গুজে কোন রকমে পৌছানো হয় টিয়ামারী গ্রামে।শিক্ষকদের এই টিমের সাথে গনবেশেই হাজির  ছিলেন হাসনাবাদ নগরের সহ নগর কার্যবাহ রাজু সরকার।তার সাথে ছিল মালপত্র বিতরনের জন্য আরো কয়েকজন নিবেদিত প্রান স্বয়ংসেবক,মানুষের সেবাই যাদের মুল এবং একমাত্র কর্তব্য। 

এই সেবাকার্যে খাদ্যসামগ্রীর সাথেই নিয়ে যাওয়া হয় স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের জন্য খাতা, পেন্সিল,পেন,ইরেজার,পেন্সিল কাটার এবং পর্যাপ্ত পরিমানে চকোলেট।

চকোলেটের প্রসঙ্গ আসতেই সংঠনের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ইউনিটের জেলা সভাপতি স্নেহাশিস বর্মন একটা মজার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।তিনি জানান তারা যে গাড়িতে করে বিরাটি থেকে এসেছেন সেই গাড়ির ড্রাইভারের সাথে আগের দিন সকালে গাড়ির ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি হলেও রাতেই অবাক করে দিয়ে ফোন করেন সেই ড্রাইভার। তার একটাই কাতর আবেদন তিনিও ত্রান দিতে চান।তিনিও এই সেবাকার্যে টাকা দিয়েই সামিল হতে চান। শেষ অব্দি তাকে অনুরোধ করে নিরস্ত্র করা গেলেও তিনি জানিয়ে দেন বাচ্চাদের জন্য তিনি চকোলেট নিয়ে যাবেন। এবং সেই ড্রাইভার ওই দুর্গত অঞ্চলের বাচ্চাদের জন্য প্রায় ৮০০ টাকার চকোলেট কিনে নিয়ে যান। সকলের মধ্যেই এই সেবাভাব,আর্ত পিড়ীত মানুষের জন্য কিছু একটা করার মনোভাব এটাই আসলে চিরন্তন ভারতীয় পরম্পরা

টিয়ামারী তে সেবাকার্য শেষ করে এর পরে একে একে খলসেখালি, পানসেঘাটা,মহিষপুকুর হয়ে দুর্গাপুর গ্রামে এসে সেদিনের মত শেষ হয় এই সেবাকার্য। দুর্গাপুর গ্রামে যেখানে এসে ভুটভুটি ভেড়ে,সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, বৃস্টি মাথায় করে, জল কাঁদা মাড়িয়ে মাল পত্র,খাদ্যসামগ্রী নিয়ে একটু উচু স্থানে হাজির হয়। চারিদিকে নুতন করে আবার ভরা কোটালের জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নুতন নুতন এলাকা। এলাকার মানুষজনের সাথে কথা বলে জানা গেল অসহায়, নিরন্ন মানুষগুলোর কাছে কোন রকম সরকারী সাহায্য পৌছাচ্ছে না।তাই শিক্ষক সংঠনের আনা চিড়ে, মুড়ি,বিস্কুট,চিনি,গুড়, সাবানের প্যাকেট পেয়ে তাই গ্রামবাসী যার পর নাই খুশী হন।স্কুলে পড়া ছোট ছোট বাচ্চারা খাতা,পেন, পেন্সিল পেয়ে মেতে ওঠে আনন্দে।

দুর্গাপুর গ্রামে সেবাকার্য সম্পন্ন করে রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শিক্ষক দের এই টিম হাসনাবাদ বোট ঘাটে ফিরে আসে তখন বেলা গড়িয়ে বিকেল।সারাদিনের ক্লান্তি আর পথকস্টের মাঝেও আম্ফান ঝড়ের কবলে পড়া সব হারানো মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে পারার একরাশ তৃপ্তি নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন শিক্ষক সংগঠন অখিল ভারতীয় রাস্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘের শিক্ষকেরা।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বিশ্বাস করে

সর্বে ভবন্তু সুখীন,সর্বে সন্তু নিরাময়,সর্বে ভদ্রানী পশ্যন্তু,মা কশ্চিদ দু:খভাগভবেৎ

সবাই যেন সুখী হয়,সবার যেন আরোগ্য লাভ হয়,সবার যেন নিরাময় হয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.