উইং কমান্ডার আভিনন্দনকে ভারতকে সঁপে দেওয়ার পাকিস্তানের পদক্ষেপ অনেকের জন্যে একটা স্বস্তির বিষয় ছিল। একপ্রকারের উপলব্ধি করা হয় যে পাকিস্তানের যুদ্ধ আগ্রসরতা থেকে পশ্চাদপসরণ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি ঝড়ের পূর্বের নিস্তব্ধতা?
দুই প্রান্তের সীমায় নিয়ন্ত্রন রেখা উলঙ্ঘন ও গুলি বৃষ্টি, দুই প্রান্তেরই বেসামরিক জান মালের ক্ষতি। কিন্তু প্রতিবেশি দেশ এক পদক্ষেপ এগিয়ে ভারতের ওপর দোষ চাপিয়ে দিল। পাকিস্তানের একটি সংবাদ মাধ্যম এক্সপ্রেস ত্রিবুনাল মার্চ ৩ তারিখে বলছে, পাকিস্তানের উইং কমান্ডার আভিনন্দনকে মুক্ত করার রায় নেওয়ার আগেই আজাদ জাম্মু ও কাশ্মিরে ভারতের সেনা বোমাবর্ষণ করা শুরু করে দেয়। যাতে একজন মোহাম্মাদ সুধিরের মৃত্যু হয় ও আরও তিনজন বালক আহত হয়। দুদিক থেকেই অত্যাধিক বোমাবর্ষণ হয় ও ২ মার্চ পর্যন্ত চলতে থাকে, এতে দুজন সাধারন মানুষের মৃত্যু ঘটে।
পাকিস্তান সংবাদ মাধ্যম ক্রমশ অস্বিকার করতে থাকে যে পাকিস্তানের F-16 এয়ারক্রাফট ধ্বংস হয়েছে। “গত সপ্তাহে ভারতীয় জেট এক জঙ্গল সংলগ্ন বালাকোটের পাহাড়ি এলাকায় গোলাবর্ষণ করে। এর জবাবে, পাকিস্তান এয়ার ফোর্স ভারতের দুটো এয়ার ক্রাফট ধরাশায়ী করেছে, যখন তারা সীমা উলঙ্ঘন করে পাকিস্তানের সীমার ভেতরে প্রবেশ করে” সংবাদটি ডেলি পাকিস্তান নামক ইংলিশ খবরে ছাপা হয়। আরও বলা হয়েছে যে, সীমাপার থেকে অনর্থক গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। এই সম্পাদকীয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরন ইণ্ডিয়ান অবসারভার পোস্ট বলে ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।
পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী ইমরান খানের উইং কমান্ডার আভিনন্দন কে মুক্ত করার রায় এর বিপুল পরিমানে বিরোধিতা হয়ে। পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলির কিছু সদস্য খলাখুলি বিরোধিতা করে, একজন ব্যারিস্টার মোহাম্মেদ শোয়েব রাজাক, হাই কোর্টে একটা পিটিশনও ফাইল করে মুক্তির বিরুদ্ধে, যদিও পরে কোর্ট তা খারিজ করে দেয়। কিছু অবসর প্রাপ্ত ঝানু সেনা আধিকারিরা এর বিরুদ্ধে নিজের কথা রাখেন টেলিভিজনে,যা যথেষ্ট ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে। নামকরা পাকিস্তানের সাংবাদিক, হামিদ মির বলেন,‘১৯৯৯ এ নওয়াজ শেরিফ সরকার ৮ দিনের মধ্যে ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু তার সরকার ৬ মাসের মধ্যেই পড়ে যায়’। এইরুপ কটাক্ষয় তাদের মনোভাব খুব পরিস্কার।
কিন্তু এরই ইতিবাচক দিক হোল, পাকিস্তান সাক্ষী রইলো মুক্তির এই রায় এর বিশাল সংখ্যক মানুষের সমর্থনের। এই সমর্থন মূলত দেখা গেছে মহিলা ও বয়স্ক শিক্ষিত সমাজ ও বর্গের মানুষের কাছ থেকে। একটি সংস্থা ওমেন ইন স্ট্রাগল ফর এমপাওয়ারমেন্ট একটা র্যালিও বার করেছিলো লাহোরে, বর্তমান পরিস্থিতি কে এক সম্পূর্ণ যুদ্ধের পরিস্থতিতে পরিনত করার জন্যে। “যুদ্ধ উপায় না” “ওমেন এগেন্সট ওয়ার” #SafeReturnofAbhinandan #IstandAgainstHatred #ProfilesforPeace ইত্যাদি।
পাকিস্তানের পাবলিক রিলেশন মেশিনারি ISPR জেনেরাল কামার বাজওয়া টুইট করে বলছেন, উনি আমেরিকা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, এবং চিনের সাথে কথা বলেছেন প্রান্তের শান্তি ও সুরক্ষা বিষয় নিয়ে। “পাকিস্তান নিজস্ব প্রতিরক্ষাতে জবাব দেবে ভারতের অগ্রসরতার”। এই টুইট এর মাধ্যমে পাকিস্তানের উদ্বেগ খুব স্পষ্ট বোঝা যায়।
ভারতের তরফ থেকে মিলিটারি অ্যাকশানের বাইরেও প্রত্যুতরে আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মোস্ট ফেভারড নেশন সরিয়ে নেওয়ার ফলে ও দুই দেশের ট্রেডে হেভি ডিউটি দেওয়া হয়েছে। ভারতের ইন্দুস ওয়াটার ট্রিটি নিয়ে পুনঃনির্ণয় নেওয়ার পরিকল্পনাতে পাকিস্তান আগে থেকেই ত্রস্ত।
এর ওপরে আবু ধাবিতে ও-আই-সি’র প্রথমবার ভারতকে নেমন্তন্ন করায়, ক্ষুণ্ণ পাকিস্তান এই সভা বয়কট করে ও তাদের কাশ্মিরের অবস্থান নিয়ে অবিকল থাকতে বলেছে। বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ভাষণের পরের দিনেই তারা কাশ্মীরের বর্বরতার ওপর জোর দিয়েছে ও হারিয়ে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, ভারতও এর পরিপেক্ষিতে জানিয়ে দিয়েছে যে কাশ্মির ভারতের অখন্ড অংশ ও আভ্যন্তরীণ বিষয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোলো ও-আই-সি (অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স) খুব আলতো পুদক্ষেপ নিয়ে এগোতে চাইছে ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যাবসায়িক সম্পর্কে, কারন বাকি সব উন্নত দেশ আজকে ভারতের সাথে জড়িত হয়েছে। কিন্তু তারা পুরপুরি পাকিস্তান কে ব্রাত্য করতে রাজি নয়। ভারত কে আরও ভালভাবে ইসলামিক দেশ গুলোর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক গভির করতে হবে।
পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকার আজ পুরোপুরি পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়েছে, কিছুটা আন্যান্য বন্ধুদের সমর্থনে নিশ্চয়ই। পাকিস্তানের একটা শিক্ষিত বর্গের যথেষ্ট কৃতিত্ত এই ব্যাপারে যারা সন্ত্রাস ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে পথে নেমে বিরোধ করছে এবং সম্পর্ক সুস্থ করার দাবি রাখছে। ভারতের অ-সামরিক প্রত্যুত্তর পাকিস্তানের জনসাধারনের উপলব্ধিতে ভবিষ্যতে যথেষ্ট সহায়ক হবে।
ভারত ভাবতেই পারে যে সীমারেখার বর্তমান অশান্তি পুলওয়ামার আঘাত একটু চাপিয়ে আন্তে সহায়ক হবে, কিন্তু পাকিস্তান একেবারেই সেরকম ভাবছে না। বরং সুযোগের অপেক্ষাতে আছে। এক হতে পারে যে তারা সন্ত্রাসের সাথে পুনর্মিলন করে আঘাত হানবে, বা পুরোপুরি যুদ্ধে নামবে সরকার ও মিলিটারির সন্মান বজায় রাখতে। ভারত কোনভাবেই নিশ্চিন্ত হতে পারে না এই মুহূর্তে, বরং অনেক বেশি সতর্ক ও তৈরি থাকতে হবে। নিশ্চয়ই এটা ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা।