ভারতের মধ্যযুগীয় ইতিহাসে মারাঠা জাতির অভ্যুদয়ের প্রধান কারিগর ছিলেন শিবাজি ভোঁসলে (Shivaji Bhonsle)। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্ব, সামরিক দক্ষতা, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও মহারাষ্ট্রের ভৌগোলিক পরিবেশ বিচ্ছিন্ন বহু মারাঠা জাতিসমূহকে একসূত্রে সংশ্লিষ্ট করে তাদের ইতিহাসগতভাবে প্রতিষ্ঠা করার কৃতিত্ব একমাত্র শিবাজির। শিবাজির কর্মকান্ডের প্রধান কেন্দ্র ছিল বর্তমানে মহারাষ্ট্রের পুনে ও তার সন্নিহিত অঞ্চল। ভৌগোলিক দিক থেকে বিচার করলে এই অঞ্চল কৃষিকাজের পক্ষে অত্যন্ত প্রতিকূল এবং দুর্গম গিরিপথসহ সুউচ্চ খাড়া পাহাড় ও ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য সমন্বিত এক প্রতিকূল পার্বত্য এলাকা। এই দুর্গম পার্বত্য এলাকাকে কেন্দ্র করে সমকালীন মুঘল ও বিজাপুর বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে যে মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন তার ভিত্তি এতটাই মজবুত ছিল যে তাকে অবদমিত করা মুঘল শক্তির পক্ষে সম্ভব হয়নি।
ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে শিবাজি ১৬২৭ সালে ১০ই এপ্রিল পুনা জেলার উত্তরে শিবনের নামক পার্বত্য দুর্গে জন্মগ্রহন করেছিলেন। তাঁর মাতা জিজা বাঈ তাঁর প্রত্যাশিত সন্তানের মঙ্গল কামনায় শিবাই দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন ও সেই কারনে এই দেবীর নামানুসারে ভূমিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখেন শিবাজি। শিবাজির পিতা শাহজী ভোঁসলে প্রথমে আহম্মদনগর রাজ্যের মালিক অম্বরের অধীনে, সাময়িককালের জন্য মুঘলদের অধীনে এবং ১৬৩৩ সালে আহম্মদনগর রাজ্যের পতনের পর বিজাপুর রাজ্যের অধীনে সেনাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৬৩০ থেকে ১৬৩৬ সাল পর্যন্ত শাহজীর যাযাবর জীবন ও তুকা বাই মোহিটে নামে আর একজন নারীকে বিবাহ করার ফলে শিবাজী তাঁর পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। ইতমধ্যে ১৬৩৬ সালে মুঘল-বিজাপুর চুক্তির মাধ্যমে শাহজীর পুনা সহ তাঁর অঘিকৃত সকল স্থানের কর্তৃত্ব হস্তচ্যুত হয়েছিল, ফলে শিবনের দুর্গ থেকে শিবাজি বঞ্চিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে শাহজী বিজাপুরের অধীনে কাজ করার সুবাদে বিজাপুরের থেকে জায়গির হিসেবে পুনা জেলার চাকন থেকে ইন্দাপুর ও শিরওয়াল পর্যন্ত অঞ্চল লাভ করেন। যেহেতু মুঘল-বিজাপুর চুক্তি অনুযায়ী শাহজী মহারাষ্ট্র থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন তাই উক্ত জায়গির অঞ্চলের প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য শাহজী তাঁর নাবালক পুত্র শিবাজীর অভিভাবক হিসেবে দাদাজি কোন্ড-দেবকে (মালথানের পূর্বতন কুলকার্নি) নিয়োগ করেছিলেন।
জিজা বাঈ শিবাজিকে নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে জীবন অতিবাহিত করার দরুন তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিকতা গভীরতর হয়েছিল যা তাঁর পুত্রের মধ্যে পরিব্যপ্ত করেছিওলেন। পিতা, ভ্রাতা, ভগিনীদের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বড় হয়ে ওঠার দরুন মা ও পুত্রের মধ্যে স্নেহ গভীরতর হয়েছিল এবং মা-এর প্রতি শিবাজির ভালোবাসা প্রায় আরাধ্য দেবীর উপাসনার পর্যায়ে রুপান্তরিত হয়েছিল। বাল্যকাল থেকে শিবাজীকে নিজ মতাদর্শ অন্য কোনও সাহায্য ছাড়াই গঠন করতে হয়েছিল ও সকল উদ্যোগ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিতে হত কোনও ব্যক্তির অধীনতা ছাড়াই, তাই স্বাধীনভাবে রাজ্য গঠনের মতাদর্শ শিবাজির সাধারন প্রবণতা হয়ে দাঁড়ায়। প্রথাগতভাবে শিবাজি বাল্যকালে দাদাজি কোন্ড-দেবের নিকট প্রশিক্ষন গ্রহন করেছিল ও অল্পকালের মধ্যে মুষ্টিযুদ্ধ, অশ্বারোহন ও অন্যান্য শিক্ষায় রপ্ত করেছিলেন। এছাড়া প্রাচীন ভারতের দুই মহাকাব্য শিবাজির মতাদর্শে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিশেষত দুই মহাকাব্যের কর্ম ও ফলভোগের দৃষ্টান্ত, সামরিক ও রাষ্ট্রনীতির দৃষ্টান্ত এবং রাজনৈতিক শিক্ষা ও নৈতিক বচন শিবাজির মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। যে সামাজিক প্রেক্ষাপট শিবাজি প্রাথমিকভাবে কাজ করেছিলেন তা তাঁর রাজা হওয়ার পথ মসৃন করেছিল। সেইসময় পুণা জেলা আহম্মদনগর-মুঘল সংঘাত ও পরবর্তীকালে বিজাপুর বাহিনীর আক্রমনে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং এক নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজমান ছিল। সবল মারাঠা প্রধানরা দুর্বল মারাঠা প্রধানদের তাদের নিজ গ্রাম থেকে উৎখাত করত ও কৃষকরা প্রায়শই লুন্ঠনের শিকার হত কোনও শক্তিশালী অসামরিক প্রশাসন ও সামাজিক শৃঙ্খলার না থাকার দরুন। কোনও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রিত বিচারব্যবস্থা ও আইনি অধিকারের অনুপস্থিতি ছিল প্রাক-শিবাজির মহারাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। এই প্রেক্ষাপটে প্রথমে দাদাজি-কোন্ডদেব জনমানবশূন্য পুনা অঞ্চলকে পুনরায় জনবসতিপূর্ণ করে তুলতে ব্যবস্থা করেন ও আইন-শৃঙ্খলা পুর্নপ্রবর্তন করেন এবং শিবাজি দৃঢভাবে একজন সৎ বিচারক ও শক্তিশালী ম্যজিস্ট্রেটের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় গ্রামবাসীদের একজন তথ্য-অনুসন্ধানকারী (fact-finding) জুরির (মাহাজার) পরামর্শ গ্রহনের প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরন করে নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় সিদ্ধান্ত প্রদান করা হত। এইভাবে শিবাজি মহারাষ্ট্রব্যাপী এক সামাজিক চাহিদাকে দারুনভাবে পূরণ করেছিলেন, যা প্রাথমিকভাবে তাঁর সফল উত্থানে সাধারন মানুষের জনসমর্থন লাভ করেছিলেন। শিবাজির কর্তৃত্ব তাই প্রথমে সাধারন মানুষের হৃদয় জয়ের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছিল। এইভাবে মহারাষ্ট্রের যৌথ-উদ্দীপনা (corporate spirit) প্রজ্বলিত হয়েছিল এবং দীর্ঘ ও যন্ত্রনাদায়ক মুসলিম শাসনের অধীনে সুপ্ত থাকার পর এক শক্তিশালী ব্যক্তির ন্যয় একটী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেছিল।
দাদাজি-কোন্ডদেব-এর অধীনে পুনা জেলার পশ্চিমাংশে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সমান্তরাল ৯০ মেইল দীর্ঘ ও ১২ থেকে ২৪ মাইল প্রশস্ত ‘মাভল’ অঞ্চলটি শিবাজির দখলে এসেছিল। পরে এখানকার কৃষির উন্নতি ঘটিয়ে এই অঞ্চলের মাভল দেশমুখদের সংগঠিত করা হয়েছিল। এই মাভল অঞ্চল থেকে শিবাজি অনেক সমরাধিনায়ক ও সৈন্য নিয়োগ করেছিলেন। বস্তুত শিবাজির রাজ্যগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ১৬৩৪ সালে আহম্মদনগরের শেষ সুলতানের অভিভাবকত্বের দরুন শাহজি বিজাপুরেরে সাথে সমঝোতার মাধ্যমে (১৬৩৩ সালে) জুনার, শাহগড়, নাসিক, ত্রিম্বক, চাকন, চামারগোন্ডা, কোঙ্কনের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চলগুলি যে লাভ করেছিলে ১৬৩৬ সালে মুঘল্রা বিজাপুরের উপর চাপ সৃষ্টি করে নুতুন চুক্তির মাধ্যমে শাহজিকে উক্ত অঞ্চলগুলি থেকে বিতাড়িত করা হয়। শাহজির উত্তরাধিকারী হিসেবে শিবাজি উক্ত অঞ্চলগুলিকে পুনরুদ্ধার করার শপথ নিয়ে ঝঁপিয়ে পড়েন। যদুনাথ সরকারের মতে, তরবারী যেভাবে কেবলমাত্র উক্ত অন্যায় চুক্তিকে অনুমোদন করেছিল শিবাজি সেই তরবারীর মাধ্যমে উক্ত চুক্তিকে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
১৬৪৭ সালে দাদাজি-কোন্ডদেব-এর মৃত্যুর আগে থেকেই শিবাজি তাঁর রাজ্যগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে শুরু করেছিলেন। ১৬৪৬ সালে তিনি বিজাপুরের থেকে সংঘাত ছাড়াই তোরনা দুর্গ দখল করে নেন। এই দুর্গের পাঁচ মাইল পূর্বে রাজগড় নামে এক নতুন দুর্গের নির্মান করেছিলেন। পরবর্তী দুই বছর বিজাপুরের সুলতানের অসুস্থতার সুযোগে শিবাজি পুনের নিকট চাকন নামে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ দখল করেছিলেন। এছাড়া বারামতি ও ইন্দাপুর দুর্গের আধিকারিকরা শান্তিপূর্ণভাবে শিবাজির কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেন। ১৬৪৮ সালে মহাদজী নীলকন্ঠ রাও-এর উত্তরাধীকারীদের থেকে সুকৌশলে শিবাজি গুরুত্বপূর্ণ পুরন্দর দুর্গ দখল করেন। শিবাজির দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিম দিকে সম্প্রসারনের পথে বিজাপুরের থেকে প্রাপ্ত মোরে পরিবারের অধীন জাভলি রাজ্য বাধা হয়ে দাঁড়ালে শিবাজি এক্ষেত্রেও সুকৌশলে চন্দ্ররাও মোরে ও তার উত্তরাধীকারীদের হত্যা করে ১৬৫৬ সালে জাভলি দুর্গ ও রাইরি অঞ্চল দখল করেন। জাভলির দু’মাইল পশ্চিমে প্রতাপগড় নামে শিবাজি একটি দুর্গ তৈরি করেন যেখানে তাঁর আরাধ্য দেবী ভবানী’র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেহেতু তুলজাপুরের প্রাচীন ভবানী মন্দিরে গমন সহজসাধ্য ছিল না। জাভলি দুর্গ দখলের পর ১৬৫৬’র এপ্রিলে পার্বত্য দুর্গ রায়গড় দখল করেছিলেন যা শিবাজির রাজধানীতে পরিণত হয়েছিল। একই বছর তিনি সুপা দুর্গ দখল করলে পুনে অঞ্চলের পূর্বভাগ সুরক্ষিত হয়। এছাড়া তিনি একই অঞ্চলে রোহিদা এবং পুনের উওর-পশ্চিমে টিকোনা, লোহগড় ও রাজমাছি দুর্গ দখল করে নিজ শক্তিবৃদ্ধি করেছিলেন। ১৬৫৬ সালের নভেম্বরে বিজাপুরের সুলতান মহম্মদ আদিল শাহ মারা গেলে দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুনভাবে উন্মুক্ত হয়, যা থেকে শিবাজি লাভবান হয়েছিলেন।
১৬৫৬ সালে মুঘলদের দাক্ষিণাত্যের ভারপ্রাপ্ত ঔরঙ্গজেবের বিজাপুরের আক্রমনের অংশ হিসেবে কলিয়ানি নামক স্থানের অবরোধের সুযোগে শিবাজি মুঘল সাম্রাজ্যের দক্ষিন-পশ্চিমাংশ আক্রমন করে রাতের অন্ধকারে জুন্নার নগর আক্রমন করে প্রচুর ধন-সম্পত্তি লাভ করেছিলেন। ১৬৫৭’র শেষের দিকে শিবাজি জুন্নার নগরের ফৌজিদার মুহম্মদ ইউসুফকে পরাজিত করে কালিয়ান নগরটি মুঘলদের দখল করে নেন। ইতিমধ্যে বিজাপুরের সুলতান মুঘলদের সাথে সমঝোতা করলে শিবাজি এককভাবে মুঘলদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নিরর্থক মনে করেন, ফলে শিবাজি মুঘলদের সাথে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কে আগ্রহ দেখান। কিন্তু ঔরঙ্গেব শিবাজিকে বিশ্বাস করতেন না এবং দিল্লির মসনদ দখলের জন্য উত্তর ভারত রওনা হওয়ার আগে মির জুমলাকে চিঠিতে কোনওপ্রকার সামরিক অবহেলা সংঘটন থেকে বিরত থকতে বলেন এবং শিবাজিকে ‘এক কুকুরের সন্তান’ বলে উল্লেখ করেন যে সর্বদা সুযোগ গ্রহনের অপেক্ষায় ছিল।
১৬৫৭ সালে শিবাজি কালিয়ান ও ভীওয়ান্ডি সহজেই অবরোধ করেছিলেন এবং কালিয়ান দখলের পর শিবাজি জনৈক আবাজি সোন্দেভকে সেখানে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। এখানে আবাজি একজন সুন্দরী মুসলিম নারীকে বন্দী করে উপহার হিসেবে শিবাজিকে প্রদান করেছিলেন। কিন্তু শিবাজি সেই নারীকে বলেছিলেন, “যদি আমার মাতা জিজা বাঈ তোমার সৌন্দর্য্যের অধিকারী হতেন তাহলে আমাকেও সুদর্শন দেখতে হত”। এইভাবে শিবাজি নিজের মায়ের সাথে ওই নারীকে তুলনা করে ওই নারীর অসন্মানিত হওয়ার ভয় দূর করেছিলেন, তাকে অলংকার ও বস্ত্র প্রদান করেছিলেন এবং ৫০০ অশ্বারোহীর নিরাপত্তাসহ বিজাপুরে প্রেরন করেছিলেন। এই নারী কালিয়ানের পূর্বতন বিজাপুর সুবেদার মুল্লা আহমদ নভায়েৎ-এর পূত্রবধূ ছিলেন। রক্ষনশীল মুসলিম ঐতিহাসিক কাফি খান নারীর প্রতি শিবাজির সন্মান প্রদানে নীতিপরায়নতার প্রশংসা করেন। ১৬৫৯ সালের শেষদিকে শিবাজি সমগ্র পুনা অঞ্চল, উত্তর সাতারা জেলা এবং কোলাবা ও থানে জেলার অর্ধাংশে কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন।
১৬৫৯-এর মধ্যে বিজাপুরে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিবাদের নিষ্পত্তির সাথে সাথে শিবাজির বিরুদ্ধে বিজাপুর ব্যবস্থাস্বরুপ আফজল খানের নেতৃত্বে পশ্চিমঘাট অঞ্চলে ১০০০০ সেনা প্রেরন করেছিল। মহারাষ্ট্রের অভিমুখে যাত্রাকালে আফজল খান হিন্দু পবিত্র তীর্থস্থানগুলিকে বিশেষত মহারাষ্ট্রের সবথেকে গুরুত্বপুর্ন তীর্থক্ষেত্র পান্ধারপুর লুঠ করে অপবিত্র করেছিলেন যা পতোন্মুখ বিজাপুর রাজ্যের মুসলিম সাম্প্রদায়িক রক্ষনশীলতাকে তুলে ধরে। এর ফলে আফজল খান স্থানীয় দেশমুখদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। আফজল খানের সেনা যেখানে উন্মুক্ত প্রান্তরে যুদ্ধে দক্ষ ছিল সেখানে গেরিলা যুদ্ধে পটু শিবাজির সেনাদল জাভলির অরন্যে মোতায়েন থাকার দরুন আফজল খানের সেনাদলকে পার্বত্য গিরিপথের মধ্য দিয়ে চলাচলের সময় সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়েছিল। শিবাজির দুর্গকে আফজল খানের সেনাদল অবরোধ করলেও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে রসদ না পাওয়াইয় অসুবিধার মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে দুর্গে শিবাজির রসদও ফুরিয়ে আসার দরুন উভয়পক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়। ঠিক হয় শিবাজি আফজল কাহ্নের সাথে সাক্ষাৎ করবেন কিন্তু প্রতাপগড় দুর্গের নিচে যা কৌশলগত দিক থেকে শিবাজির অনুকূল ছিল। সাক্ষাৎের সময় শিবাজি ও আফজল খান উভয়েই সশস্ত্র অবস্থায় হাজির হয়েছিলেন। শিবাজির দিক থেকে আফজল খানকে সন্দেহ করার কারন ছিল, কারন এক দশক আগে একই পরিস্থিতিতে আফজল খান এক হিন্দু সেনাধ্যক্ষকে বন্দী করতে এই ধরনের সাময়িক যুদ্ধ-বিরতির অনুষ্ঠান ব্যবহার করেছিলেন। শিবাজি তাঁর বস্ত্রের আড়ালে শৃঙ্খলের আচ্ছাদন, পাগড়ির ভিতরে ধাতব মস্তক আচ্ছাদন এবং এক হাতে ছোট তরবারী ও অন্য হাতে লৌহ থাবা পড়ে এসেছিলেন। এর পরবর্তীতে আফজল কাহ্ন ও শিবাজি পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করেন ও শিবাজি লৌহ থাবা দিয়ে আফজল খানের পেটের নাড়িভুড়ি কেটে বের করে দেন। আফজল খানকে হত্যা করার পর সংকেত প্রদানের সাথে সাথে শিবাজির সেনাবাহিনী বিজাপুর বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের হত্যা করেছিল। আফজল খানকে হত্যার এই কাহিনী মহারাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় কাহিনী হিসেবে প্রচলিত।
মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে শিবাজি শুধুমাত্র দক্ষ যোদ্ধাই ছিলেন না, সামরিক সংগঠনের চিন্তাভাবনার দিক থেকে তিনি মুঘলদের থেকে অন্তত একটি দিকে অগ্রবর্তী ছিলেন, কারন শিবাজি নৌবাহিনীর গুরুত্ব সম্যকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। আফজল খানকে হত্যার পর তিনি কোঙ্কন অঞ্চলে কর্তৃত্ব সুদৃঢ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এইজন্য তিনি ছোট দ্রূত গতিসম্পন্ন নৌ-সমন্বিত নৌ-বাহিনী গঠন করেছিলেন। যদিও এই নৌ-বহর ইউরোপের বৃহদাকার নৌশক্তির মোকাবিলা করতে সক্ষম ছিল না, তবে বাণিজ্যতরী আটক করতে সক্ষম ছিল। শিবাজির এই নৌ-বহর গঠনের উদ্দেশ্য ছিল অনেকগুলি সমুদ্র দুর্গ গঠন যাতে জঞ্জিরার সিদি’দের মোকাবিলা ও প্রতিহত করা যায়। বস্তুত ক্ষুদ্র হলেও শিবাজির নৌশক্তির প্রতি গুরুত্ব আরোপ প্রশংসনীয়।
ঔরঙ্গজেব মুঘল সম্রাট হয়ে তাঁর মামা শায়েস্তা খানকে দাক্ষিণাত্যে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রেরন করেছিলেন; ইতিমধ্যে শিবাজি দক্ষিন কোঙ্কণ আক্রমন করলেও শায়েস্তা খান উত্তর কোঙ্কণ অভিযান করে কল্যান দুর্গ দখল করে নেন ও পুনের সন্নিহিত অঞ্চল বিধ্বস্ত করেছিলেন। ১৬৬৩-র এপ্রিল পর্যন্ত একধরনের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় থাকলেও শিবাজি এক রাত্রে (৫ই এপ্রিল) অতর্কিতে শায়েস্তা খানের শিবির আক্রমন করেন এবং শায়েস্তা কাহ্নের পুত্র ও তার কিছু অনুগামী নিহত হয় ও শায়েস্তা কাহ্ন নিজে আহত হয়েছিলেন। মুঘল শিবিরকে ভীত-সন্ত্রস্থ করতে শিবাজির এই আক্রমন পুরোপুরি সফল ছিল। এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই ১৬৬৪ সালের জানুয়ারিতে শিবাজি মুঘলদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সুরাঠ বিধ্বস্ত করেছিলেন। শিবাজির আগমনের সংবাদে সুরাটের তৎকালীন গর্ভনর ইনায়েৎ খান পালিয়ে গিয়েছিলেন। শিবাজি কয়েকদিনে অভিযান করে ব্যাপক ধন-সম্পত্তি অর্জন করেছিলেন। সুরাটের সবথেকে ধনী ব্যবসায়ী ভারজি ভোরাহ-র প্রাসাদ লুঠ হয়েছিল। বস্তুত সুরাটে উপস্থিত হয়ে শিবাজি ঘোষনা করেছিলেন যে তিনি ব্যক্তিগতভবে কোনও ইংরেজ বা অন্য কোনও ব্যবসায়ীর ক্ষতি করতে আসেননি, তিনি এসেছিলেন মুঘল প্রতিনিধি শায়েস্তা খান কর্তৃক পুনার সন্নিহিত অঞ্চল লুঠ ও এর ফলে তাঁর আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহনে। ১৬৬৪-র ৬ই জানুয়ারি থেকে ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত সুরাটে অভিযান চালানোর পর ১০ই জানুয়ারি শিবাজি সুরাট ত্যাগ করেন। ১৭ই জানুয়ারি যখন মুঘল বাহিনীর সাথে সুরাটের গর্ভনর ইনায়েৎ খান সুরাটে প্রবেশ করেন তখন ক্ষুব্ধ জনতা তাদের ধিক্কার জানায় ও তাদের উওপর ময়লা নিক্ষেপ করে। এতে ইনায়েৎ খানের পুত্র ক্ষুদ্ধ হয়ে এক নিরীহ দরিদ্র হিন্দু ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছিল। শায়েস্তা কাহ্নের উপর আক্রমন ও সুরাট বন্দর অভিযান মুঘল সাম্রাজ্যের মর্যাদায় আঘাত হেনেছিল; বিশেষত সুরাট বন্দর শিবাজির হাতে বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে ঔরঙ্গজেব শিবাজিকে প্রতিরোধ করতে অন্যতম বরিষ্ঠ সেনাধ্যক্ষ জয় সিংহ�ে প্রেরন করেছিলেন।
জয় সিংহ (Joy Singh) ১৬৬৫ সাল ধরে পুনের চারপাশে শিবাজির জায়গিরকে বিধ্বস্ত করেছিলেন এবং একে একে বৃহৎ পুরন্দরসহ শিবাজির অনেকগুলি দুর্গ দখল করে নেন। শিবাজি যখন পুরন্দর দুর্গের নিচে জয় সিংহের শিবিরে প্রবেশ করেন তখন
জয় সিংহের নির্দেশে শিবিরের বাইরে মুঘল বাহিনী নির্বিচারে শিবাজির অনুগামীদের হত্যা করে। হত্যাকান্ড বন্ধ করতে শিবাজি জয় সিংহের প্রদত্ত সকল শর্ত মেনে নেন। মুঘলরা শিবাজির ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ দখল করে শিবাজিকে কেবলমাত্র রাজধানী রায়গড়সহ ১২টি দুর্গের অধিকার প্রদান করে। শিবাজির অধীনে থাকা সকল অঞ্চল মুঘলদের আনুগত্যাধীন করা হয় এবং শিবাজির পুত্র শম্ভুজিকে ৫০০০ মনসব প্রদান করা হয়। ঐতিহাসিক স্টুয়ার্ট গর্ডনের মতে, পুরন্দরের উক্ত সন্ধি মুঘলদের কাছে শিবাজির বশ্যতা স্বীকার ছিল না বরং তা ছিল সম্প্রসারিত সমঝোতার ফল যা মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার বাস্তবতা এবং জয় সিংহের বিজাপুর ও গোলকোন্ডা দখলের সামগ্রিক পরিকল্পনাকে প্রতিফলিত করে। পুরন্দরের সন্ধি অনুযায়ী শিবাজি কিছুকাল মুঘলদের অধীনে সেনাধ্যক্ষ হিসেবে চমকপ্রদ দক্ষতা দেখালেও জয় সিংহ মুঘলদের প্রতি শিবাজির আনুগত্য সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন, বিশেষত ১৬৬৫-র শেষদিকে শিবাজির এক প্রধান সেনাধ্যক্ষ বিজাপুরে যোগদান করলে জয় সিংহ মুঘলদের প্রতি শিবাজির আনুগত্য অটুট রাখতে বদ্ধ পরিকর হয়ে ওঠেন। এমতাবস্থায় জয় সিংহ ঔরঙ্গজেবকে শিবাজির সাথে মুঘল রাজধানী আগ্রায় সাক্ষাৎের পরামর্শ দেন।
জয় সিংহের সাথে দীর্ঘ আলোচনা ও নিরাপত্তা জনিত চরম আশ্বাস লাভের পর শিবাজি ১৬৬৬-র মে’র প্রথমদিকে ২৫০ জনের একটি ক্ষুদ্র সেনাদল নিয়ে আগ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু আগ্রার রাজদরবারে প্রথম থেকেই সংঘটিত ঘটনায় শিবাজি ক্ষুব্ধ হন। শিবাহি রাজদরবারে উপস্থিত হলেও ঔরঙ্গজেব তার সাথে কোনও কথা বলেননি ও শিবাজির উপস্থিতি সম্পর্কে কোনও সম্ভাষন প্রাদান করেননি। নিম্ন-পদমর্যাদাভুক্ত অভিজাতের ন্যায় শিবাজিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ক্রুদ্ধ শিবাজি প্রদত্ত সান্মানিক উত্তরীয় প্রত্যাখান করেন এবং রাজদরবার থেকে বেরিয়ে যান। কারন শিবাজি ছিলেন মারাঠা রাজা যেখানে ঔরঙ্গজেব তাঁকে বিজাপুরের নামমাত্র বিদ্রোহী জমিদার ছাড়া আর কিছুই মনে করতেন না। এদিকে মুঘল রাজদরবারে অভিজাতদের নিজ পক্ষে টানার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন ছিল তা শিবাজির কাছে প্রায় নিঃশেষিত হয়ে পড়েছিল। প্রথমে ঔরঙ্গজেব তাঁকে কাবুলে নিয়োগের নির্দেশ দেন ও কাবুলে গমনকালে শিবাজিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। শিবাজি কাবুলে যেতে অস্বীকার করলে উক্ত নির্দেশ বাতিল হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ টানাপোড়েন ও শর্ত-প্রতিশর্তের পর জুলাই-এর প্রথমদিকে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাঁকে দাক্ষিণাত্যে পলায়নের সুযোগ করে দেয়। শিবাজি অসুস্থতার ভান করে স্থানীইয় ব্রাহ্মনদের মিষ্টি বিতরনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন ও বিতরনযোগ্য সেইসকল বিশাল মিষ্টির ঝুড়ির একটিতে আত্মগোপন করে ত্রিস্তরীয় নজরদারী এড়িয়ে পলায়ন করতে সক্ষম হন। এই পলায়ন এতটাই নিখুঁত ছিল যে পরবর্তীকালে ঔরঙ্গজেব বারংবার অনুসন্ধান করেও এই পলায়নের পন্থা খুঁজে বের করতে পারেননি। শেষপর্যন্ত এই পলায়ন ঔরঙ্গজেবের জীবনভর অনুশোচনার কারন হয়ে দাঁড়ায়, যা ঔরঙ্গজেব নিজের শেষ দলিলে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
আগ্রা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর শিবাজি তিন বছর মুঘলদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করলেও ১৬৬৯-এ মুঘলরা শিবাজির আগ্রায় গমনের ব্যয় দাবি করলে উক্ত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ভঙ্গ হয়। শিবাজি সেই সুযোগে মুঘলদের থেকে সিংহগড়, পুরন্দর, রোহিগ, লোহগড় ও মাহুলি দুর্গ জয় করে নেন। ১৬৭০-র অক্টোবরে শিবাজি পুনরায় সুরাট অভিযান করে বিধ্বস্ত করেন ও ১৬৭১-র পশ্চিম খান্দেশের মুলহের ও সলহের দুর্গ মুঘলদের থেকে জয় করেন। এই দুই দুর্গ লাভ করায় শিবাজি সুরাট বন্দরের বাণিজ্যপথ নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করেন। একঈ সময়ে তিনি নাসিক ও পুনের সন্নিহিত অঞ্চল থেকে মুঘলদের বিতাড়িত করে নিজের হৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেন। ১৬৭২-১৬৭৩ সালে বিজাপুরের সুলতানের মৃত্যুর সুযোগে হুবলি লুঠ করেন ও পানহালা দুর্গ দখল করেন। এইভাবে রাজ্যাভিষেকের আগে শিবাজি তাঁর রাজ্যকে আয়তনে বৃদ্ধি করেন।
মুঘল ও বিজাপুরের থেকে নিজ সামরিক দক্ষতায় বহু অঞ্চল ও দুর্গ জয় করে শিবাজি নিজ রাজ্য গঠন করলেও শিবাজি ও তাঁর মন্ত্রী-পরিষদের কাছে শিবাজির আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেক না হওয়ার অসুবিধাগুলি অনুভূত হতে থাকে। কারন তত্ত্বগতভাবে রাজপদে অধিষ্ঠিত না হওয়ায় একদিকে বিজাপুর ও মুঘলদের কাছে নামমাত্র বিদ্রোহী জমিদার হিসেবে পরিগণিত হতে থাকেন তেমনি বিজিত সকল অঞ্চল ও জনজীবনের উপর তাঁর আইনি বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া শিবাজির নেতৃত্বে ভোঁসলে মারাঠা গোষ্ঠীর উত্থান অন্যান্য সম সামাজিক মর্যাদার মারাঠা গোষ্ঠীকে ঈর্শ্বান্বিত করে; তারা শিবাজির অধীনে না থেকে মুঘল ও বিজাপুরের প্রতি আনুগত্য প্রদানে সচেষ্ট হয়েছিল শিবাজিকে রকজন ভুঁইফোড় বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচনা করে। সুতরাং এইসকল গোষ্ঠীর কাছে শিবাজির পদমর্যাদা সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। সুতরাং একটি আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেক তাঁকে সকলের কাছে রাজা হিসেবে প্রতিপন্ন করতে পারত এবং বিজাপুর ও গোলকোন্ডার শাসকের ন্যায় সমান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পারত। সর্বোপরি বৃহৎ মহারাষ্ট্রীয় মননে শিবাজিকে হিন্দুধর্মের রক্ষক হিসেবে গণ্য করতে শুরু করেছিল এবং স্বাধীন রাজা হিসেবে শিবাজির পদমর্যাদার আনুষ্ঠানিক দাবির দ্বারা রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে হিন্দু জাতির সম্পূর্ন প্রত্যক্ষ করতে আগ্রহী ছিল। যেহেতু হিন্দু শাস্ত্রমতে একজন ক্ষত্রিয় রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হতে পারত, তাই বেনারসের সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত গাগা ভট্ট প্রথমে শিবাজিকে ক্ষত্রিয় জাতির অর্ন্তভুক্ত হিসেবে ঘোষনা করেন এবং ১৬৭৪-র ৬ই জুন রায়গড় দুর্গে দীর্ঘ প্রস্তুতির পর বহু আচারানুষ্ঠানের মাধ্যমে শিবাজির রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন হয়। অভিষেক কার্য সম্পূর্ন হওয়ার পর শিবাজি ‘ছত্রপতি’ উপাধি ধারন করেছিলেন। শিবাজির এই রাজ্যাভিষেকের মাধ্যমে শিবাজি শুধুমাত্র একজন সমকালীন অন্যান্য বৃহৎ রাজ্যের সমমর্যাদার রাজা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হলেন না, তার সাথে মহারাষ্টড়কে কেন্দ্র করে মধ্যযুগে এক হিন্দু রাজ্যের উত্থান হয়েছিল। আর এই উত্থান সম্ভব হয়েছিল বিজাপুর ও মুঘলদের ন্যায় শক্তিকে বারংবার পর্যুদস্ত করে শিবাজির সামরিক ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে। শুধু বিজেতা নন, প্রশাসক হিসেবে তিনি যে দক্ষতার পরিচয় দেন তা পরবর্তী এক শতাধিক কালের বেশি মারাঠা রাজ্যকে সার্বভৌমত্ব ধরে রাখতে সহায়তা করেছিল। শিবাজির কৃতিত্বকে অকুন্ঠ সন্মান জানিয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লিখিত ‘শিবাজি উৎসব’ কাব্যের মাধ্যমে যেখানে কবি মারাঠা বীরকে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়ে বাঙালিদের একসাথে চলার ও শিবাজি উৎসবে সামিল হতে আহ্বান জানিয়েছেনঃ-
“ ……… মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কন্ঠে বলো
‘জয়তু শিবাজি’।
মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক সঙ্গে চলো
মহোৎসবে সাজি। ………..”
শুভজিৎ আওন (Shubhjit Aon)