হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক প্রবেশ করছে গ্রামে গ্রামে। হু হু করে ছড়াচ্ছে করোনা (Corona)। তিনি ঘোষনা করেছিলেন, হট স্পট পাঁচটি রাজ্য থেকে এলেই করা হবে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইন। কোথায় কী? যা ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইন ছিল, উপচে পড়ছে। সেখানে না আছে পর্যাপ্ত থাকার জায়গা, না আছে খাবার, না আছে যথেষ্ট শৌচাগার। ক্ষোভ বাড়ছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে; আক্রান্ত হচ্ছেন এই যুদ্ধের প্রধান সৈনিক, দৈনিক ২৫০/- টাকা মাইনের চুক্তিভিত্তিক গ্রামীন সম্পদ কর্মীরা, যাদের অনেককেই এই কাজে, কোনো সরকারি আদেশনামা ছাড়াই কাজ করতে বলা হয়েছে। এদের কিছু হলে তাই ১০ লক্ষ টাকাও বাঁচবে! আক্রান্ত এই কর্মীরা বিডিও, বিএমওএইচের কাছে কাতর আবেদন করছেন, পুলিশ নিদেনপক্ষে সিভিক ভলেন্টিয়ার, এবং স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর জন্য। মিথ্যা আশ্বাস দিতে দিতে ক্লান্ত আধিকারিকরা ফোন তোলা বন্ধ করছেন। তারাও আতঙ্কিত, ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের আঁচ পাচ্ছেন, কিন্তু নিরূপায়।
সোয়াব টেস্টের ১০-১২ দিন পর রিপোর্ট আসছে। আধিকাংশই পজিটিভ। কিন্তু ততদিনে, চূড়ান্ত অব্যবস্থায় বিরক্ত হয়ে, বাঁচার তাগিদে, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে বাড়ি চলে গেছেন অধিকাংশ মানুষ। এলাকায় মেলামেশাও করেছেন বিস্তর। পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর শুরু হচ্ছে ব্যস্ততা। অধিকাংশ করোনা পজিটিভ পরিযায়ী শ্রমিক হাসপাতালে যাচ্ছেন, লালারস সংগ্রহের ১০-১২ দিন পরে, বাড়ি থেকে। মুখ বাঁচাতে, জেলাশাসক জানাচ্ছেন, এরা সবাই নাকি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। গ্রামের সাধারন মানুষ, ভয়ে, আতঙ্কে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলছেন।
সব দেখে শুনে, প্রশাসন কোয়ারেন্টাইন কোয়ারেন্টাইন খেলা বন্ধ করেছেন। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, গুজরাট থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের সরাসরি পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাড়িতে। পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা ঝগড়া করছেন ঐ শ্রমিকদের পরিবারগুলির সাথে। সে ঝামেলা হাতাহাতি হয়ে ঘর ভাঙচুর পর্যন্ত্য গড়াচ্ছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। নির্বিকার। এদের কোয়ারেন্টাইন না হয় হল না, কিন্তু টেস্ট? না, সে গুড়ে বালি। অলিখিত নির্দেশ, দৈনিক ৫০টির বেশী স্যাম্পেল পাঠানো যাবে না। এরমধ্যেই তো জেলায় ফিরে এসেছেন প্রায় হাজার দশেক মানুষ। আরো আসছেন। এইভাবে চললে, এক বছরেও সব স্যাম্পেল পাঠানো যাবে না। জেলা আধিকারিকরা এসব বোঝেন না, তা নয়। কিন্তু এমনভাবেই ম্যানেজ করার আনঅফিসিয়াল নির্দেশ আছে। দক্ষিনবঙ্গের বাড়ি থেকে এইসব আধিকারিকদের কাছে আত্মীয় স্বজনের ফোন এলে বলতে শোনা যাচ্ছে, বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। না এটা রসিকতা নয়। আতঙ্ক।
শাসক দলের ছোট মাঝারি বড় নেতাদের বেশীরভাগই এই সময় এলাকা থেকে একটু হারিয়ে গেছেন! সাধারন মানুষ, আধিকারিক সকলে এই বিষয়ে একমত; কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত টাকা পয়সার কোন ঘোষনা উনি নবান্ন থেকে করলে; এরা সাথে সাথে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে।
সঞ্চয়িতা