করোনা অতিমারির আতঙ্কে সারা বিশ্ব কয়েক মাস ধরে ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।মৃত্যুর ভয় বুকে নিয়েই প্রাত্যহিক জীবন যাপন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) থেকে আমাদের প্রতিবেশি পরাণ মণ্ডলও!
কিন্তু যাঁরা দেশ ও দশের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন,তাঁদের কথা আমরা ভাবছি কি!রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অগণিত স্বয়ংসেবক এই দুঃসময়ে মানুষের সেবা করে চলেছেন নীরবে!প্রতি নিয়ত!
সারা ভারতে গ্রীষ্মের দাবদহ শুরু হয়েছে।পুণায় এখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তারও দুই-এক বেশি।সামরুদ্ধি জাঠোর (Samruddhi Jathar) একাকি পথ চলেছেন।ভবানি পেথ (Bhawani Peth) এলকার একটি সরু গলি দিয়ে এগিয়ে চলেছেন।এলাকাটি পুণের একটি করোনা-অধ্যুষিৎ (Hotspots) অঞ্চল।জাঠোর নির্বিকার-নির্ভীক!করোনার ভয়াবহতা জেনেই তিনি অকুতোভয় হৃদয়ে সদর্পে এগিয়ে যাচ্ছেন সমুখপানে!
গলিটা এত সরু যে,মনে হয় দু’পাশের বাসিন্দাদের নিঃশ্বাস যেন পথিকের গায়ে এসে লাগে!মহারাষ্ট্র (Maharashtra) তথা পুণের অন্যতম অতি ঘন বসতিযুক্ত এলাকা এটি।ছোট্ট ছোট্ট কুঁড়ে ঘরগুলি গায়ে গায়ে লাগানো। প্রতিবেশিকে এক মিলিমিটার পরিসর দিতেও অরাজি!গলির দুই পাশ দিয়েই কুঁড়েঘরের অফুরন্ত সারি!মাথার উপরে সূর্যদেব অকৃপণ ভাবে অগ্নিবাণ হেনে চলেছেন!তবুও গায়ে গায়ে লাগানো ঘরগুলোতে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না।মুক্ত বাতাস সেথা স্বপনে করে আনাগোনা!অন্ধকার স্যাঁৎসেতে গলির দুপাশের কুঁড়েগুলো লোহার চাদরের কপাটে বন্ধ!
সকাল এগারোটা সবে।স্বাভাবিক কোলাহল-মুখরতা নেই। পুরো এলাকাটি যেন অতিমাত্রায় নীরব!কী এক অজানা আশঙ্কায় প্রহর গোনা!
সমরুদ্ধি একটি কুঁড়ে ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা দিলেন।হাতের গতিতে পরনের করোনা-প্রতিরোধী পোষাকে খসখসে শব্দ হল।ঘামে হাতের গ্লাভস্ ও মুখের মাস্ক জবজবে।মুখে এঁটে বসেছে।
দরজা খুলে মুখ বাড়ালেন একজন মধ্য চল্লিশের মহিলা।অপ্রসন্ন তাঁর মুখভঙ্গি।
সমরুদ্ধি ভদ্র মহিলাকে নিজের পরিচয় দিলেন।জানালেন,তিনি করোনা টেস্টের জন্য এসেছেন।
জাঠোর করোনাযুদ্ধের একজন অকুতোভয় নারী সেনানি।স্বেচ্ছাসেবী।
পুণাতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) জনকল্যাণ সমিতি “পুনের ফাইটস করোনা” সেবা কার্যক্রম করছে।যাতে করোনা টেস্ট,জন সচেতনতা শিবির ইত্যাদি বাস্তবায়িত হচ্ছে।সমরুদ্ধি সেই কার্যক্রমের দায়িত্ব নিয়েই বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে চলেছেন।চলেছেন আরও অনেক সেবক-সেবিকাগণ।তাঁরা দিনের পর দিন,দরজায় দরজায় ঘুরে কাজ করে চলেছেন।দলগত ভাবে পর্যায়ক্রমে।কিন্তু কর্মসূচি ধারাবাহিক ভাবে চলেছে।করোনা টেস্ট,প্রতিরোধের জন্য তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।হেঁটে হেঁটে তাঁরা ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ছেন।স্বাস্থ্যবিধি মেনে,সতর্কতার সাথে সামান্য পরিমাণ লেবুজলে তাঁরা গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন মাত্র!
করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য করোনা-প্রতিরোধি পোষাক অবশ্যই পরতে হয়।নিজেকে রক্ষা করার এটাই একমাত্র ঢাল!কিন্তু তা পরে দীর্ঘসময় কাজ করা খুবই কষ্টের।
বিরামহীন,একটানা ছয় ঘন্টা ধরে টেস্ট করা।জনগণকে সচেতন করা।রোগীদের মানসিক শক্তি যোগানো।সবই পায়ে হেঁটে।দরজায় দরজায় ঘুরে!সমরুদ্ধি ও তাঁর দলের সদস্যরা তারপর ফিরছেন।ক্লান্ত-অবসন্ন ভাবে ফেরা।তবে বাড়িতে নয়।রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ জনকল্যাণ সমিতির স্বেচ্ছাসেবক শিবিরে ফিরছেন।সামান্য বিশ্রামের জন্য!
সমরুদ্ধি জাঠোর একজন ছাত্রী।বাড়ি বাড়ি ঘুরে করোনা-নির্ণয়ের কাজে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন।বিনা পারিশ্রমিকে।অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।মৃত্যুর ভয় পাশে ঠেলে রেখে!যদিও তিনি প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী নন।নন সরকারি চাকুরিজীবীও।তিনি সাধারণ সমাজের একজন নাগরিক।নিজের সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তির জোরেই এই দুরূহ কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
সমরুদ্ধির সাথে আছেন ২৫০ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ-সহ ৮০০ জন সাধারণ জনগণ,৬০০ জন প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধি।যাঁরা “পুনেকর এগেইনেস্ট করোনা” কর্মসূচিকে রূপায়িত করার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে!
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে,প্রিয়জনকে দূরে রেখে,জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও, করোনা-অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে,সব বিপদকে তুচ্ছ করে এই ভয়ঙ্কর কাজে তাঁরা হাসিমুখে এগিয়ে আসছেন কোন্ মায়াবলে ?
এটা সম্ভব একটি মাত্র কারণেই।তাহল “সেবা-আকাঙ্খা“! সেবাকাজের প্রতি তীব্রতম আসক্তি!
দেশ এক অদৃশ্য,অথচ অতি প্রাণহানিকর শত্রুর সাথে সংগ্রাম করছে।মহারাষ্ট্রও করছে।রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও নিজের সাধ্যের মধ্যে প্রাণপনে সেবা কাজ করছে।
“পুণে মডেল” করোনা চিহ্নিতকরণ ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে একটি সফল পদক্ষেপ রূপে প্রমাণিত।প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক ও স্বয়ংসেবকগণ কন্টেইনমেন্ট এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা-টেস্ট করছেন এবং আক্রান্তকে চিহ্নিত করছেন।
বিস্ময়কর বিষয় হল যে,মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই কন্টেইমেন্ট এলাকার ১৩০০০ পরিবারে করোনা টেস্ট করা সম্ভব হয়েছে।১০০টি অঞ্চলের বাষট্টি হাজারেরও বেশি মানুষকে টেস্ট করা হয়েছে।যার মধ্যে এক হাজার জনের পরবর্তী ধাপের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ জনকল্যাণ সমিতির পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও পুণেতে করোনা টেস্টিংয়ের কাজ করছে।পুণে “মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল”,
“পুণে প্লাটফর্ম ফর কোভিড-১৯ (Covid-19) রেসপন্স“(P.P.C.R.),মহারাষ্ট্র চেম্বার অফ কমার্স,ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড আগ্রিকালচার” (M.C.C.I.A.) করোনা নির্ণয়ের কাজ করছে।
দেশের মধ্যে পুণে অন্যতম করোনা-প্রবন শহর।স্থানীয় প্রশাসনের হিসেবে পুণেতে ৬০টি “কন্টেইনমেন্ট জোন” রয়েছে।যার সবগুলি-ই অতি ঘন বসতিযুক্ত অঞ্চল।হতভাগ্য বাসিন্দারা যেখানে জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম আলো-বাতাস পান না!পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা তো অনেক দূরের বিষয়!এই কারণেই করোনা মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিষয়ের গুরুত্ব গভীর ভাবে অনুধাবন করেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ জনকল্যাণ সমিতি ব্যাপক হারে পুণেতে করোনা-চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে।
এপ্রিলের ২৪ তারিখে RSSJS জন সাধাধণের কাছে আবেদন করে স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য।আবেদনে বলা হয় “পুণে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন” দ্বারা চিহ্নিত কন্টেইনমেন্ট এলাকায় গিয়ে ঘরে ঘরে করোনা টেস্ট করাতে হবে।
আবেদনে প্রচুর সংখ্যক মানুষ সাড়া দেন।২৫০ জনেরও বেশি চিকিৎসক স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন।তাঁরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য।যেমন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনন্তভূষণ রানাডে (Anantbhushan Ranade),শল্যবিদ ডাঃ পরাগ সহস্রবুদ্ধে (Parag Sahasrabudhhe),ডাঃ শৌণক সুলে (Shaunak Sule),ডাঃ মণিষ ডস্টানে (Manish Datane) প্রমুখ চিকিৎসকবৃন্দ।এছাড়া,৬৭৫ জন স্বয়ংসেবক ও সেবিকা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন।স্বয়ংসেবক-সেবিকা ও চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।তাঁদের পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় কাজের ধরণ,বিধিনিষেধ,নিরাপত্তার বিষয় এমন-কি জীবনের ঝুঁকির কথাও।তাঁরা নির্ভীক-হেসে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে এগিয়ে আসে পুরসভা কর্তৃপক্ষ,জনস্বাস্থ্য-সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সঙ্ঘের প্রবীন কার্যকর্তাগণ।যেমন রবি ওয়ানজরভাদকর(Ravi Wanjarvadkar)।তাঁর বিপর্যয় প্রতিরোধের প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
প্রথম পর্বের প্রশিক্ষণের পর,২৭ এপ্রিল থেকে দোরে-দোরে গিয়ে করোনা চিহ্নিতকরণ শুরু হয়।বিনা-প্রশ্নে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন জন সাধারণ ও পুরসভা কর্তৃপক্ষ।সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকে RSSJS ।
পুণে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (P.M.C.) পুলিস,অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসে।P.P.C.R. ও M.C.C.I.A.করোনা-প্রতিরোধি পোষাক ও অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিপর্যয় প্রতিরোধ শাখা হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক জনকল্যাণ সঙ্ঘ (R.S.S.J.S.)।তাঁদের ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী স্বয়ংসেবক নির্বাচন,প্রশিক্ষণ,কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলী পরিচালিত হয়।
দরজায় দরজায় ঘুরে কাজ করা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়।চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রতিরোধি পোষাক,মাস্ক,গ্লাভস পরে ছয়-সাত ঘন্টা পায়ে হাঁটা–মোটেই সহজ নয়!একই সাথে মানুষদের সচেতন করার প্রক্রিয়াও চালাতে হয়।অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।আক্রমণাত্মক মনোভাবও নিতে পারে!তাঁদের কঠোর ভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা-বিধি মেনে চলতে হয়।এবং দিন শেষে তাঁরা নিজ পরিবারে ফিরতে পারেন না।সঙ্ঘের নির্দিষ্ট শিবিরে রাত্রিবাস করতে হয়।
পাঁচ দিন কাজ করার পর,চার দিন তাঁদের সঙ্ঘের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে হয়।পঞ্চম দিনে তাঁদের করোনা টেস্ট করা হয়।ফল যদি "নেগেটিভ" হয়,তাহলে তাঁরা পরিবারে ফিরতে পারেন। R.S.S.-এর স্বয়ংসেবকগণ যেকোনো কাজই নিশঙ্ক-চিত্তে করেন।
করোনা টেস্টিংয়ের কাজ করতে গিয়ে কী কী অভিজ্ঞতা হয়েছে তা জানিয়েছেন কয়েকজন সেবক-সেবিকা।
যেমন ঠাকর(Thakar) পরিবার।শ্রী অভয়,শ্রীমতি রাজশ্রী এবং তাঁদের কন্যা সমরুদ্ধি প্রত্যেকেই করোনা-সেনানি।তাঁরা করোনা টেস্ট করতেন।ঠাকর পরিবারের কর্ত্রী অভয়বাবুর ৮২ বছরের বৃদ্ধা মা তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকের কাজে অনুমোদন দেন।মাকে ১০দিনের জন্য বাড়িতে রেখে যান অন্যের দায়িত্বে।
তাঁরা প্রতিদিন সকালে পুণে পুরসভার অ্যাম্বুলেন্সে বেরিয়ে পড়তেন কন্টেইনমেন্ট এলাকার উদ্দেশ্যে।যাবতীয় সুরক্ষাবিধি মেনে।পায়ে হেঁটে টেস্ট করাতেন।একই সাথে চলত সচেতন করার কর্মসূচিও।
সংক্রামিত এলাকার অনেকগুলি-ই আছে মুসলমান প্রধান।যেমন ভবানি পেথ ও কসবা এলাকা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ।স্বেচ্ছাসেবক-সেবিকারা নিয়ম মেনে প্রতিটি বাড়িতে যান।ধৈর্য নিয়ে সকলের কথা শোনেন।তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন।স্বাস্থ্যবিধির উপদেশ দেন।করোনা টেস্ট করেন।সন্দেহ হলে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
রাজশ্রী জানালেন তাঁর অনুভবের কথা।”পুণের তাপমাত্রায় পিপিই কিট পরে সারাদিন পায়ে হেঁটে কাজ করা খুবই কষ্টদায়ক।তবুও এটাকে সৌভাগ্য বলে মনে করি।কেন না,মানুষের জন্য,সমাজের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।আগামিতেও এভাবে করে যাব।”
আরেক জন স্বেচ্ছাসেবক রুতুজা মহেন্দ্র যাদব (Rutuja Mahendra Yadav)।তিনি আয়ুর্বেদিক মেডিসিনের শেষ বর্ষের ছাত্র।তিনি বলেন,” সব চেয়ে কষ্টকর হল সারাদিন পিপিই পোষাকের মধ্যে থাকা!রৌদ্রে হেঁটে,দরজায় দরজায় গিয়ে জনগণকে টেস্ট করাতে আগ্রহী করা”!
তাঁরা দুজনই বলছেন,এটা একটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল।মানুষের সেবা,মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা ভাগ্যের ব্যাপার!
ডাঃ চেতন উমাপ ( Chetan Umap) মেধাবি।বয়সে যুবক।মেডিসিনে স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষারত।তিনি একটি টেস্টিং দলের পরিচালনা করছেন।তিনি জানালেন,” এটা সকলের জন্যই ভাগ্যের যে মানবতার সেবা করতে পারছি”।
সিদ্ধান্ত্ প্রকাশ শিন্ডে (Siddhant Prakash Shinde) কার্ভেনগরের স্বয়ংসেবক।এ-রকম কার্যক্রমে এবারই তাঁর প্রথম অংশগ্রহণ করা।তিনি জানালেন যে,এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে প্রচুর শিখেছেন।তাঁর কর্মস্থল ছিল পুণের হটস্পট ভবানি পেথ-এ।এলাকাটি মুসলিম প্রধান।সিদ্ধান্ত্ বলছিলেন,”অনেক মুসলিম বাড়িতে এখনো ঝুলছে CAA বিরোধি পোস্টার”!
তিনি জানিয়েছেন,পোস্টারগুলি দেখে প্রথমে তাঁর খুব রাগ হয়েছিল।পরে দয়া ও করুণায় তাঁর মন ভরে ওঠে।পরে অনুভব করেন যে,আগে করোনা প্রতিরোধ করাই কর্তব্য।করোনা টেস্ট করাতে তাঁদের বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।কিন্তু স্বয়ংসেবকদের একাগ্রতা,আত্মবিশ্বাস দেখে অনেক বাসিন্দারাই এগিয়ে আসেন তাঁদের সহযোগিতা করতে।
পুণে শহরের যুবক মেয়র মুরলীধর মহল ( Murlidhar Mohal) ও ডেপুটি মিউনিসিপ্যাল কমিশনার রুবল আগরওয়াল (Rubal Aggarwal) প্রকাশ্যভাবেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন।তাঁরা উভয়ই বলেছেন,সঙ্ঘের উদ্যোগেই পুণেকে রক্ষা করা গিয়েছে।প্রাণহানি কমানো সম্ভব হয়েছে।
সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ ভাইয়াজি যোশি এবছরের রাম নবমীর এক কার্যক্রমে জানান,সারা ভারতে এক লক্ষ স্বয়ংসেবক করোনা-প্রতিরোধে কাজ করছেন।ত্রাণ বন্টন,বরিষ্ঠ নাগরিক,পড়ুয়া ও মায়েদের সেবা করছেন তাঁরা।অন্যান্য সেবাকাজে আরও অগণিত স্বয়ংসেবক রয়েছেন।তাঁরা খাদ্য-পানীয়-ওষুধপথ্যাদি পৌঁছে দিচ্ছেন দুর্গতদের।সঙ্ঘের নানাবিধ কার্যক্রমের মধ্যে এটা একটা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশ চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউনের দিকে এগচ্ছে।করোনাযুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে অবশ্যম্ভাবী।এটা ধরে নিয়েই স্বয়ংসেবকগণও শারীরিক-মানসিক-আর্থিক প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন।সিদ্ধান্ত্ শিন্ডে ঠিকই বলেছেন, “বিপর্যয় কালে সেবাকাজ করাই স্বয়ংসেবকের ধর্ম।”
সুজিত চক্রবর্তী