করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ (Coronavirus) আটকাতে কলকাতার জুড়ে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (Hydrochloroquine) বিলি করছে কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)। বাড়ি বাড়ি ঘুরে অথবা বাজারে বাজারে পুরসভার কর্মীরা সাধারণ মানুষের হাতে চালান করে দিচ্ছেন ওষুধ। বুঝিয়ে দিচ্ছেন ডোজ। খাচ্ছেন সবাই। খাচ্ছেন আপনিও। মনে মনে খুশি হয়েই, যে যা হোক শেষমেশ সংক্রমণ আটকানোর উপায় তো একটা পাওয়া গেল !! সংক্রমণের ভয়ে আতঙ্কিত বিপর্যস্ত মানুষ ভেবে নিচ্ছেন এই ওষুধ খেলে করোনার আর কোনও সম্ভাবনা নেই।তাঁরাও খুশি, করোনা কাবু করার এমন চটজলদি আর সহজ উপায়ে খুশি কলকাতা পুরসভাও।কিন্তু আদৌ কি এই ওষুধ কোভিড আটকাতে সাহায্য করে?চিকিৎসকদের সাফ জবাব, একেবারেই না। করোনা আটকাতে এই ওষুধ কোনও কাজ তো করেই না উল্টে ক্ষতি করে অনেক বেশি। বেলাগাম ওষুধ হার্ট ফেল করাতে পারে, নষ্ট করে দিতে পারে দৃষ্টি শক্তি।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিতাভ নন্দীর (Dr. Amitabh Nandi) মতে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন যে কোভিড সংক্রমণ ঠেকায় আজ পর্যন্ত তার এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কোনও গবেষণা বা পর্যবেক্ষণ এটা প্রমাণ করতে পারেনি যে করোনা আটকানো যায় এই ওষুধ খেলে। বরং অকারণ এই ওষুধ ক্ষতি করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। করোনা আটকাতে দরকার অ্যান্টি -ভাইরাল। যা কোনওমতেই এই ওষুধ নয়। তাঁর মতে বেশ কিছু রোগে শরীরের প্রদাহ এবং ফোলা কমাতে এই ওষুধ সাহায্য করে। যে কোনো অটো-ইমিউন ডিজিসে রোগীর শরীরে যে জ্বালা -পোড়া বা কষ্ট হয় তা কম করে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। ঠিক এই একই কাজ করে এই ওষুধ করোনার ক্ষেত্রেও। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায়। সেই সঙ্গে হয় প্রদাহ। এই ওষুধ রোগীর সেই কষ্ট কম করে মাত্র।রোগ সারাতে এর কোনও ভূমিকাই এখনও প্রমাণিত নয়।

অমিতাভ নন্দীর অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় এই ওষুধ বিলি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে পুরসভা। এর ফলে মানুষ ভুল ধারণার বশবর্তী হচ্ছেন। ওষুধ কিনে জড়ো করছেন নিজেদের জন্য। যা মারাত্মক ক্ষতিকর। কলকাতা পুরসভার তরফে মেম্বার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং চিফ কো- অর্ডিনেটর হেলথ অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ বিলি হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকরাই যখন নিষেধ করছেন ওষুধ খেতে ? এর কোনও সদুত্তর পুরসভার তরফে পাওয়া যায় নি। শুধু পুরসভাই নয় সমস্ত ক্লিনিক এবং ল্যাবগুলিতে রোগ আটকাতে সেখানকার কর্মীদের এই ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে যা ভয়ানক বলে মনে করছেন অমিতাভ নন্দী। চিকিৎসকদের মতে কার্ডিও-টক্সিক এফেক্ট আছে এই ওষুধে। যাঁদের হার্টের কোনও সমস্যাই নেই তাঁরাও এই ওষুধ খেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। আমেরিকার বেশিরভাগ করোনা রোগী, যাঁদের এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছিল তাঁদের হার্ট বিকল হয়ে যায় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।

তাই নয় এই ওষুধ বিকল করে দিতে পারে কিডনি, মাংসপেশীর সমস্যা তৈরি করতে পারে। নষ্ট করতে পারে দৃষ্টিশক্তি, তার সঙ্গে সাময়িক প্রতিক্রিয়ায় থাকে মাথাব্যথা, বমিভাব, মাথাঘোরা। কাজেই চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললে পুরসভার বিলি করা ওষুধ থেকে আপাতত দূরে থাকাই মঙ্গল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.