বিশাল মহাকাশের অতলে লুকিয়ে আছে অনন্ত এক গহ্বর। তার খোঁজ পেতেই কালঘাম ছুটেছে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের। বিজ্ঞান এর নাম দিয়েছে ‘ব্ল্যাক হোল’ বা ‘কৃষ্ণ গহ্বর’। সেই ব্ল্যাক হোলই এই প্রথম ধরা পড়ল টেলিস্কোপের লেন্সে। এত দিন বিজ্ঞানীদের অনুমানেই আঁকা হয়েছিল তার ছবি। এত দিনে প্রথম প্রকাশিক হল তার ছবি।
তথ্য বলছে, পৃথিবী থেকে ৪০ বিলিয়ন কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই গহ্বর আকারে পৃথিবীর চেয়েও ৩০ লক্ষ গুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাখা আটটি টেলিস্কোপ মিলে এই ছবি তুলতে পেরেছে। সূর্যের তুলনায় এর ভর ৬.৫ মিলিয়ন গুন বেশি। বুধবারই ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সেই ছবি প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, ঘন কালো অংশের চার পাশ জুড়ে রয়েছে আগুনের উজ্জ্বল বলয়। যার উজ্জ্বলতা হাজার হাজার নক্ষত্রের সমষ্টিকেও ছাপিয়ে যাবে। ওই নক্ষত্র থেকে নির্গত গ্যাস থেকেই তৈরি হয়েছে ব্ল্যাক হোল, এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্ল্যাক হোলের গবেষণার প্রধান অধ্যাপক হেইনকো ফালকে জানিয়েছেন, ব্ল্যাক হোলের এই ছবি এত দিন বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও শিল্পীদের কল্পনা ও চলচ্চিত্র পরিচালকদের ভাবনার সঙ্গে অনেকটাই মিলে গিয়েছে। ব্রহ্মাণ্ডের দূরতম স্থানে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলার সাফল্য মহাকাশবিজ্ঞানকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকেরা বলছেন, এই ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিজের দিকে আসা সমস্ত আলোক রশ্মিকে শুষে নেয়। আর সেই কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোনও আলোক বিন্দুই ফিরে আসতে পারে না। সেই কারণেই একে চোখে বা লেন্সে দেখা সম্ভব নয় বলেই ধরে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু ব্ল্যাকহোলের যে অস্তিত্ব আছে, তার প্রমাণ কোনও স্থানের তারা নক্ষত্রের গতি এবং দিক দেখে খুঁজে বার করা হয়। মহাকাশবিজ্ঞানীরা ১৬ বছর ধরে আশপাশের তারামণ্ডলীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে প্রমাণ পেয়েছিলেন ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্বের।
তার ১১ বছর পরে, আজ, বুধবার বিশ্বের একাধিক জায়গা থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে ব্ল্যাকহোলের ছবিটি প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা।