দক্ষিণ ২৪ পরগণার (South 24 Parganas) বারুইপুর (Baruipur) থানার অন্তর্গত মল্লিকপুরের পাঁচঘড়া ক্ষিরিশ তলায় কনটেইনমেন্ট জোনে চায়ের দোকানে জমায়েত করেছিলেন এলাকার মানুষজন। পাশাপাশি লকডাউনকে উপেক্ষা করে এলাকার অন্যান্য দোকান বাজেরেও প্রচুর ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার কিছু মানুষ। ঘটনার খবর পেয়ে বারুইপুর থানার পুলিশ কর্মীরা সেখানে যান জমায়েত হঠাতে। পুলিশ এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে জমায়েত বন্ধ করে বাড়ি যেতে বলায় পুলিশের সাথে প্রথমে বচসা বাধে এলাকাবাসীদের। এরপর পুলিশকর্মীদের মারধর করে গাড়ি ভাঙ্গচুরের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় মোট পাঁচজন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর এলাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নামানো হয়। লাঠিও চালান পুলিশ কর্মীরা। এই ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে বারুইপুর থানার পুলিশ।
বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভার অধীন মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের পাঁচঘড়া এলাকায় কয়েকদিন আগেই এক করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল। ওই ৫৫ বছরের আক্রান্ত ব্যাক্তি কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তারপরেই স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশের পক্ষ থেকে ওই এলাকাকে কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়। এলাকা সিল করে দেওয়া হয়। এলাকায় ১০০ শতাংশ লকডাউন করার কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রীতিমত লকডাউন উপেক্ষা করে চায়ের দোকান খুলে আড্ডা বসিয়েছিল জনাকয়েক যুবক। এলাকার আরও বেশ কিছু দোকানপাটও খোলা ছিল। সেখানেও প্রচুর মানুষের জমায়েত ছিল। এই জমায়েত সরিয়ে চায়ের দোকান বন্ধ করতে বলে বারুইপুর থানার টহলরত পুলিশ কর্মীরা। অভিযোগ, এরপরেই পুলিশের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়ে এলাকার লোকজন। পুলিশ বার বার বোঝালেও কোনও কাজ হয় না। এরপর পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। পুলিশের গাড়ি আটকে ব্যাপক ইট বৃষ্টি শুরু হয়। গাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়। এমনকি পুলিশকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। পুলিশের উপর সোডার বোতল, কাঠ নিয়ে আক্রমণ করা হয়। এসআই ধনঞ্জয় মুখোপাধ্যায় সহ ৫ জন সিভিক পুলিশ কর্মী গুরতর আহত হন। তাঁদের কারোর মাথা ফাটে, কারোর পায়ে, হাতে চোট লাগে। পুলিশ অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। খবর যায় বারুইপুর থানায়। আইসি দেবকুমার রায়, এস ডিপিও অভিষেক মজুমদারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। নামানো হয় র্যাফ। এরপর পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দুপুরে বারুইপুর আদালতে তোলা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে পাঁচঘড়া ক্ষিরিসতলার ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় কয়েকদিন ধরেই লকডাউন মানা হচ্ছিল না। রীতিমত দোকান খোলা হচ্ছিল কনটেইনমেন্ট জোনে। পুলিশ প্রশাসন থেকে বারংবার এলাকায় মাইকিং করেও সচেতন করা যায়নি মানুষকে। রাতেও ওই এলাকায় গেলে পুলিশকে কাজে বাধা দেওয়া হয়। এদিন ক্ষিরিশতলায় মোড়ে চায়ের দোকানে জমায়েত বন্ধ করতে বলে পুলিশ। তারপরেই প্রথমে পুলিশের সাথে বচসা হয় ও পুলিশকে ঘিরে ধরে হামলা করা হয়।
এদিকে ঘটনার নিন্দা করে মল্লিকপুর পঞ্চায়েত প্রধান হবিবুর রহমান বৈদ্য বলেন, “এলাকায় পজিটিভ হওয়ার খবর ওরা মানতে চায়নি। ওরা লকডাউন মানতে চায়নি। পুলিশের উপর আঘাত অতি নিন্দনীয়। পুলিশের উপর আঘাত করলে কোনও ছাড় নয়”। পাঁচঘড়া, সরদারপাড়া, দাসপাড়া ও কাজিপাড়া কনটেইনমেন্ট জোন করা হয়েছে। এই ঘটনায় বারুইপুরের এসডিপিও অভিষেক মজুমদার বলেন, “লকডাউন মানা হচ্ছিল না এলাকায়। পুলিশ বারণ করায় পুলিশের উপর হামলা হয়। গাড়ি ভাঙ্গচুর হয়। পুলিশকর্মীরা আহত হয়”।