সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাস নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে আমরা নিজেদের অনেকক্ষেত্রেই প্রভাবমুক্ত রাখতে অপারগ হয়ে পড়ছি। বাড়িতে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি! কোথাও আসা-যাওয়া নেই। মনে চিন্তা পরিবার-পরিজন যেন সুস্থ নিরাপদ থাকে। আশেপাশের নানান খবর মনকে বিভ্রান্ত করে মাঝে মাঝে। এসবের মধ্যে কিন্তু ভালো দিকও আছে। আমরা অনেকেই আমাদের নিকটজনেদের দীর্ঘসময় ধরে কাছে পেয়েছি। অন্যসময় শত ব্যস্ততার মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে শুরু হয়েছিল, এখন সবাই আমরা পরিবারের সদস্যদের অনেকদিন পরে কাছে পেয়েছি। হ্যাঁ, কাজের মাসি না আসায় আমাদের কায়িক পরিশ্রম বেড়েছে, কিন্তু এরই মধ্যে আমরা রকমারী রান্না করে পরিবারের সদস্যদের সামনে রাখতে পারছি। অনেক উৎসাহী সামাজিক গণমাধ্যম নানান সুস্বাদু খাবার তৈরির পদ্ধতি দিচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, একথা আমরা সবাই স্বীকার করব যে, এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া রান্নাকে আমরা খুবই ভালবাসছি। লকডাউনের মধ্যে প্রত্যহ বাজারে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। সেক্ষেত্রে, রোজকার রান্নার পদগুলি একটু পরিবর্তন করলে স্বাদে একদম অন্যরকম মাত্রা এসে যায়। এমন কিছু পরিবর্তিত রান্নার পদ এবারের অঙ্গনার পাতায়।
আলুসেদ্ধ খুবই সাধারণ পদ। এই আলুসেদ্ধ মাখার সময় এতে সরষের তেল, নুন, কাঁচালঙ্কার সঙ্গে একটু কাসুন্দি দিয়ে মেখে নিলে অপূর্ব লাগবে খেতে। একটু নতুনত্ব। এর সঙ্গে যদি গন্ধরাজ অথবা কাগজি লেবু একটু নিংড়ে নেওয়া যায়, দারুণ হবে। আবার ধরুন, মসুরির ডাল বাটিতে নুন দিয়ে সেদ্ধ করা হলো এমনভাবে যে ডালগুলো নরম হবে, কিন্তু একেবারে গলে যাবে না। খাওয়ার সময় ওই ডালসেদ্ধতে (একটু গাঢ় হবে) ছোটো করে কাটা কাঁচালঙ্কা কুচি, কাঁচা পেঁয়াজকুচি, টমোটো কুচি, ধনেপাতা কুচি এবং কাঁচা সরষের তেল মিশিয়ে একবার খেয়ে দেখুন। সেই পুরানো মুসুরির ডাল একদম নতুন স্বাদে ভাতের থালায় আবির্ভূত হবে।
লাউয়ের ডাল, লাউঘণ্ট আমরা খাই, কিন্তু লাউয়ের খোসা? ঝিরে ঝিরে করে লাউয়ের খোসা কেটে রাখুন। কড়াইতে সামান্য সরষের তেলে কালোজিরে, কাঁচালঙ্কা, রসুনকুচি, ফোড়ন দিয়ে ওই কেটে রাখা খোসাগুলি ছেড়ে দিন। সামান্য নুন এবং হলুদ দিন। ঢেকে দিন। মাঝে মধ্যে একটু নেড়ে দেবেন। পাঁচ মিনিটেই রান্না হয়ে যাবে। তবে, গ্যাস বন্ধ করে ঢাকা দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট রেখে দিলে তৈরি লাউয়ের খোসা ভাজা।
লকডাউন চলছে। অনেক সময় ঘরে একটু একটু দু-চার রকম কঁাচা সবজি জমে যায়। সেগুলি দিয়েও একটি সুন্দর রান্না হয়ে যেতে। পারে। প্রথমে একটা পেঁয়াজ আর একটা করলা বা উচ্ছে সরু লম্বা করে কেটে নিন। কড়াইতে আন্দাজ মতো সরষের তেলে কালোজিরে, কঁচালঙ্কা চিরে ফোড়ন দিন। তার মধ্যে করলা। বা উচ্ছে ও কাটা পেঁয়াজটি দিয়ে দিন। এর দু’মিনিট পরে যা যা সবজি ঘরে একটু একটু আছে— যেমন দু ইঞ্চি কুমড়ো, দু ইঞ্চি বেগুন, দুটো আলু, দুটো পটল ইত্যাদি সরু লম্বা করে কেটে কড়াইতে দিতে হবে। এছাড়া নুন, হলুদ। মাঝে মধ্যে নেড়ে দিতে হবে।নরম হলে এক চামচ চিনি মিশিয়ে দুমিনিট নাড়াচাড়া করে গ্যাস বন্ধ করে পাঁচ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। সুস্বাদু উচ্ছেবটি তৈরি। শুকনো ভাত দিয়ে অথবা সামান্য একটু কাসুন্দি দিয়ে খেয়ে দেখবেন, নতুনত্বের স্বাদ অবশ্যই পাবেন।
শেষ পাতে একটু কাঁচা আমের চাটনি। গ্রাম বা শহরে ঝরে গাছ থেকে পড়া একটি কাঁচা আম সরু লম্বা করে কেটে নিতে হবে। কড়াইতে খুব সামান্য সরষের তেলে কয়েকটি হলুদ সরষে দানা এবং অর্ধেক শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কঁচা আমের টুকরোগুলো কড়াইয়ে দিতে হবে। এক চতুর্থাংশ চা-চামচনুন এবং এক কাপ জল দিয়ে মিনিট তিনেক ফুটিয়ে পৌনে এক কাপ চিনি দিয়ে আবার ফুটিয়ে গ্যাস বন্ধ করে একটু ভাজা মশলার গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে বাটিতে ঢেলে নিন। ঠাণ্ডা হলে শেষপাতে দারুণ হবে।
রান্নার এই পদগুলির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বেশিরভাগ সবার বাড়িতেই থাকে। সবজি, কাঁচা আম সপ্তাহে একদিন বাজার করে আনলে, অনেকসময় ঘরেই থেকে যায়। আমাদের সাধারণ মানুষের রসনায় এই পদগুলি আশা করি ভালো লাগবে।
রান্নাটি বেশি দামি বা সময়সাপেক্ষ নয়। রান্নার পদ্ধতিও খুবই সহজ সরল। ঘরের মহিলারা একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এইসব পুরানো ঘরোয়া পারম্পরিক রান্নাগুলো পুরুজ্জীবিত করার এর থেকে ভালো সুযোগ হতে পারে না। সবরকম বাইরের খাবার যখন বন্ধ, তখন এরকম ঘরোয়া খাবার আমরা আবার ফিরিয়ে আনি।
সুতপা বসাক ভড়