ক্ষমতা প্রবাহিত স্রোতের দুই বাহু ;ঝাপটে ধরে কবিতার গলা; এগিয়ে চলে ‘গিলগামেশে’র বীজয় কাহিনী ।

ক্লোরোফর্ম আবিস্কার হয়নি ; তাই পাহাড়ে ছিল সড়ক ‘কিউনিফর্মে’ লিখতাম প্রেমপত্র আগুনের কলম দিয়ে পর্বতের কাগজে।

প্রাগ ব্রোঞ্জ যুগে, খ্রিস্ট জন্মের হাজার দেড়-দুই বছর আগের মেসোপটেমিয়াতে অমিত ক্ষমতা একত্র করছেন অসুর-রাজারা তাদের অ্যাসিরিয়া সাম্রাজ্যে। আবার মোষের পিঠে আসীন সেই অ্যাসিরিয়ার অসুরনগরীর অসুরদেবের থান রক্ষা করছে সেদিনের সেই সেমিট-দ্রাবিড় কৌমলোককে।

সেইখানে দেখি, অসুরের আরাধানা পাচ্ছেন সিংহারূঢ়া দেবী ইশতার। সেদিনের মেসোপটেমিয়ার লোকেরা তখনকারই চলতি সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের ডাকত ‘মেলুহা’ বলে। এই ‘মেলুহা’দের রাজ্যপাটের ভিতরেও কোথাও পুজো পেত হিংলাজ, কোথাও আবার শীলমোহরে, মুদ্রায় খচিত হচ্ছে সিংহ-মহিষ ইত্যাদি পশু-অবয়ব, আবার কোথাও শোভা পাচ্ছে চাঁদ-সূর্য-গাছগাছালি ইত্যাদি প্রাকৃত বস্তুচিত্র-সমাহার। ধর্ম , সমাজ, রাষ্ট্র ছিল মাতৃতান্ত্রিক।

প্রসবের সাক্ষী বর্তমান। সন্তানের পরিচয় নির্ধারিত হতো মায়ের নামে ও গোষ্ঠির নামে। মানব সন্তানের জন্মরহস্য তখনও অজ্ঞাত থাকায় শিশুর জন্মের জন্য নারীর কৃতিত্বই একমাত্র বলে মনে করা হতো। আকাশের বজ্র বিদ্যুৎ, ঝড়, নদী, সমুদ্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তি যেমন মানুষকে বিষ্ময়াবিষ্ট করতো ঠিক তেমনি নতুন শিশুর জন্ম বা নারীর প্রজনন ক্ষমতাও মানুষকে অবাক করতো।

পৃথিবীর আদিম মানব সমাজসমূহে তাই উপাস্য ছিল নারী-শক্তি। মায়াদের পুরাণ কাহিনীতে আছে এক নারী নেমে এলো আকাশ থেকে। সেই নারী পৃথিবীতে জন্ম দিল মানব সন্তান এবং সেই সৃষ্টি করলো নানা রকম শস্যবীজ।

সুমেরিয়ান পুরাণে উপাস্য ছিল দেবী ইশতার। যে ছিল মাতৃদেবী।আদিম সুমেরিয়া, ব্যাবিলনিয়া, ফিনিসিয়াতে মাতৃদেবীর পূজা প্রচলিত ছিল। নারীর গর্ভধারণকে মনে করা হতো বিশেষ দৈবী ক্ষমতার প্রকাশ। এই প্রথার অবশেষ কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বের অনেক সমাজেই রয়েছে।

প্রকৃতি পূজা সবচেয়ে প্রাচিন ধর্মাচারন, এখান থেকেই মানুষের গ্রামের জীবন শুরু, এখানেই লিখিত এই তথ্য যে মানুষ তখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ন, একটা রাজ্য গড়ে উঠার সবগুলো নিয়ামক তখনও উপস্থিত নয় ।

এই প্রকৃতিপূজার একটা পর্যায়ে এসেছে বিভিন্ন রূপের বা শক্তির উপাসনা, এই শক্তিপূজার সাথে সাথে কিছু সার্বজনীন দেবীর কথা জানা যায়। ব্যাবিলনের মানুষ বেশ উন্নত ছিলো। সর্বজনপ্রিয় দেবী ইশতার, ফসলের দেবী এবং এইটার সার্বজনীনতা এই কথাই প্রমান করে যে মূলত সভ্যতা কৃষিভিত্তিক ছিলো।

মৃতের কোনো দেবি ছিলো না, সমুদ্রদেব, পবন দেব, বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির রূপক দেবতার কল্পনা ছিলো তবে ইশরাত এবং শামস সব সময় গুরুত্বপূর্ন দেবতা।

ব্যাবিলন নামটি এসেছে সুমেরিয়ান থেকে, (আক্কাদীয় ভাষায়: Bab-Ilu), এর অর্থ হল “ঈশ্বরের দরজা”। হিব্রু বাইবেলে নামটি (Babel) হিসেবে আবির্ভূত হয়, যার ব্যাখ্যা Book of Genesisতে করেছে। সেখানে এর অর্থ “বিভ্রান্তি”।

খ্রীস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে ২৩০০ পর্যন্ত মেসোপটেমিয়ায় উন্নত এক সভ্যতা ছিল। এই অঞ্চলের সুমেরু, আসিরীয়া ও আক্কাদ ছিল ব্যাবিলনের অংশ। এটি মেসোপটেমিয় সভ্যতা নামে বিশ্বজনীন ছিল।

ইশতার ছিলেন মেসোপটেমিয়ার আদি সনাতন ধর্মেরই একজন অন্যতম দেবী ।

একজন দেবী ,সিংহ ও মহিষ, মানুষের সংস্কৃতির ইতিহাসে এই symbol টার বয়স কত জানেন? ৯৫০০ বছর… আজ্ঞে হ্যাঁ, একটাও শূন্য বেশী দেখেন নি… সাড়ে নহাজারই লেখা ওটা… সবচেয়ে পুরনো এমন সিম্বল পাওয়া গেছে চাতালহয়ুক এ …

দুটো সিংহের ওপর বসে থাকা mother goddess……. মন্দিরগুলোয় ষাঁড়ের শিং, ষাঁড়ের খুলি ভর্তি… দেওয়ালে ষাঁড়ের ছবি ও …

cattle domestication এর সামান্য আগে-পরে… মোটামুটি সেই সময় থেকেই ( ৭৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ মোটামুটি ) থেকেই এই সিম্বলটার অস্তিত্ব আছে…এবং যাকে নিওলিথিক রেভল্যুশন বলা হয় সেই থেকেই… আর্য-অনার্য, উচ্চ বর্ণ-নিম্ন বর্ণ, আদিবাসী জনজাতি এইসব ভাগাভাগি আস্তে তখনো বহু সহস্রাব্দ বাকি, এমনকি ইন্দো-ইউরোপীয় material culture এর জন্মলাভ তখনো কয়েক হাজার বছর ভবিষ্যতের গর্ভে..

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সুমেরিয় সমাজ ব্যৱস্থায় ও ধর্ম এ দেবী ইশতার এর ব্যাপক উল্লেখ পাওয়া যায়।

ইশতার এর অন্য এক নাম ইনানা। ইনানার কথা পরিনত হয় ইশতার-এর কথায়। ইশতার সুমেরিয় রাজধানী উরুক নগরে মহা সমারোহে পূজিত হতে থাকেন। পরে ইশতার ব্যাবিলনের অন্যতম দেবী তে উন্নীত হন ।

ব্যাবিলন নগর এবং দেবী ইশতার ছিলেন অভিন্ন। যে কারণে নববর্ষের স্বাগত ভাষনে ব্যাবিলনের রাজা বলতেন:

ইশতার যাচ্ছেন এগিয়ে,
পুড়ছে সুগন্ধী ভেষজ
বাতাসে ছড়িয়েছে সৌরভ।
ব্যাবিলনের ইশতার-এর পাশে
তার ভৃত্যগন বাজায় বাঁশী,
ব্যাবিলনবাসী হাঁটছে আনন্দে।

দেবী ইশতার এর বাবা চন্দ্রদেব; মা আনতুম; ভাই: সূর্যদেব শামাশ ও বোন: পাতালের রানী ইরিশকিগাল। দেবী ইশতার এর বাহন সিংহ, দেবী সিংহের পিঠে চড়ে যুদ্ধ করতেন, হাতে থাকে ধনুক ও তূণ ভর্তি তীর। প্রতীক অস্টকোণ তারকা; গ্রহ: শুক্র এবং সংখ্যা পনেরো। কখন তিনি দশভুজা , কখনো চতুর্ভূজা। কখন তিনি সর্প ও বল্লম বা ত্রিশূল ধারিনী।

প্রাচীন জার্মান কবিতায় প্রাপ্ত ইশতার। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার উর্বরা শক্তি, প্রেম, যুদ্ধ এর দেবী। ধর্মীয় জগতেদেবী ইশতার-এর স্থানএতই গুরুত্বপূর্ন যে-তার ধারণা থেকেই পরবর্তীকালে গ্রিক যৌনতার দেবী আফ্রোদিতি, রোমান সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস, ফ্রিজিয়ার প্রকৃতি দেবী সিবিলিও ফিনিশিয়দের স্বর্গের রানী আসতারতে-এর উদ্ভব হয়েছিল । ব্যাবিলনিয় সাহিত্যে দেবী ইশতারকে ‘জগতের আলো’, ‘ন্যায়বিচারক’, ‘আইনদাতা’,‘দেবীদের দেবী’, ‘বিজয়ের দেবী’, ‘পাপের ক্ষমাকারী’ এবং ‘স্বর্গ ও মর্তের আলো’ প্রভৃতি অভিধায় অবহিত করা হয়েছে।

সুজলা সুফলা পৃথিবী ছিলেন বহুযুগের পূজিতা দেবী। ভারত, মেস্কিকো, জার্মানি ও গ্রীসেও পৃথিবী দেবীর আরাধনা হোতো। পৃথিবী আসলে শস্য ও প্রজনন শক্তির প্রতীক ছিলেন। বেদে পৃথিবীর পাশেই ছিলেন অদিতি। দিতি মানে বন্ধন। অদিতি মানে অবন্ধন, অনন্ত। অদিতি প্রথমে আদিত্যগণের মা, পরে দেবগণের মা হয়ে যান।

ঋক্‌ বেদে অদিতি পৃথিবীও বটে। বেদের পরের যুগে অদিতি দক্ষের মা আবার দক্ষের মেয়েও হয়ে যান। কালিকা পুরাণে আছে যে পৃথিবী দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে জনক রাজার কাছে গিয়েছিলেন। অনেক পুরাণেই মহাশক্তির সাথে পৃথিবী দেবীকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। চণ্ডীতে স্পষ্ট বলা আছে “ মহীস্বরূপেণ যতঃ স্থিতাসি”। বেদে পৃথিবী মধুমতী, মধুব্রতা, মধুদুঘা। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে পৃথিবী “সরঘা”, মানে মধুমক্ষিকা। চণ্ডীতে মহাশক্তি হলেন ভ্রামরী। আবার শাকম্ভরীও বটে। মিল অনেক। এই ভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন অন্নপূর্ণা। দুর্গা পুজোতেও পৃথিবীর অনেক ছোঁয়া আছে। যেমন,

১) বোধনঃ- ষষ্ঠীতে মহাদেবীর বোধনের সময় দেবীর প্রতীক হোলো বিল্বশাখা।
২) নবপত্রিকাঃ- একটি কলাগাছের সাথে কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বিল্ব, ডালিম, মানকচু, অশোক ও ধান একসাথে বেঁধে নবপত্রিকা নামক একটি শস্য-বধূ তৈরী করা হয়। শারদীয়া পূজার অন্তঃকরণ আসলে এই বধূর পূজা। এইভাবেই সুজলা-সুফলা মাতা পৃথিবী মিশে আছেন দুর্গার আরাধনায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পৃথিবীর অনেকগুলি দেবী শস্যের সাথে জড়িত। যেমন—-
ক) আসেট – ইনি প্রাচীন মিশরের দেবী
খ) কেরেস – ইনি প্রাচীন রোমের দেবী
গ) দেমেতের — ইনি গ্রীসের শস্য উর্বরতা ও পৃথিবীর দেবী
ঘ) ইশতার — ইনি মূলে মাতৃদেবী বা মাতা পৃথিবীর, ইনি সিংহবাহনা

উমা নামের নির্দিষ্ট কোনো অর্থ নেই। যে যা খুশি বলেন। সায়নাচার্য তৈত্তিরীয় আরণ্যকের “সোম” শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে উমা মানে ব্রহ্মজ্ঞান- “ গৌরীবাচকো উমাশব্দো ব্রহ্মবিদ্যাং উপলক্ষয়তি”। কেউ বলেন শিবের শ্রী, কেউ বলেন যিনি শিবকে ধ্যান করেন।।।
বেদে পার্বতী মানে পর্বত সম্পর্কিত। শতপথ ব্রাহ্মণে পর্বত-স্বরূপা এবং সাংখ্যায়ন-ব্রাহ্মণে পর্বত-পুত্র অর্থে এখানে পর্বত-পুত্র মানে দক্ষ পার্বতী গৃহীত হয়েছে। চণ্ডীতেও পার্বতী পর্বত কন্যা নন, পর্বতবাসিনী। উমা শব্দের উৎস ব্যাবিলনীয় ‘উম্মু’ বা ‘উম্ম’ শব্দের সঙ্গে আত্মীয়তা দেখা যায় । ‘উম্ম’ শব্দের অর্থ ‘মা’। উমা শব্দের আরও একটি অর্থ পাই। ‘উ’ শব্দের অর্থ শিব এবং ‘মা’ শব্দের অর্থান্তর লক্ষ্মী। ভরতচন্দ্র উমা শব্দের এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন। আসলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে এই পর্বতবাসিনী দেবীর পরিচয় আছে।

ক্রিট দ্বীপে প্রাপ্ত পর্বত দেবী যিনি সিংহদ্বয় নিয়ে অস্ত্র নিয়ে রয়েছেন। Goddess of the World Mountain. Design from a gold signet ring. Knossos, Crete, ca. 1500 B.C. From Sir Arthur Evans, The Palace of Minos, 4 vols. (1921-36).) ছবিটিতে পর্বতের উপরে অস্ত্র হাতে দেবী, দুই পাশে সিংহ। মধ্য প্রাচ্যের পর্বতবাসিনী সিংহবাহিনী ইশতার দেবীর সঙ্গেও উমার মিল আছে ।
ঋক্‌বেদের দেবীসূক্তে বা দশম মণ্ডলের ১২৫ সূক্তে যেখানে অম্ভৃণ তনয়া বাক্‌ যা বলেছেন তাই হোলো দেবীর আদিশ্লোক। এই পার্বতী উমার ধারাই হোলো মহাদেবী পূজার প্রাচীনতম ধারা।

প্রাচীন ব্যাবিলনবাসী মনে করত ইশতারই সেই আদি প্রথম শক্তি । কেবল মানুষ নয়, দেবী ইশতার পশুপাখির জন্যও উর্বরতা বৃদ্ধি করেন।
ব্যাবিলন নগরের উত্তরপুবে- বাৎসরিক ধর্মীয় মিছিল যে পথে যেত- তার পাশে ছিল দেবী ইশতার-এর পীঠস্থানটি। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ব্যাবিলনে ইশতার উপাসনালয়টিতে খনন কার্য চালিয়েছেন। রাজকীয় প্রাসাদের আদলের মতো করে নির্মাণ করা হয়েছিল উপাসনালয়টি। যার ভিতরে রান্নাঘর ছিল, ছিল অভ্যর্থনা কক্ষ ও সুপরিসর প্রাঙ্গন। ছিল শয়নকক্ষ এবং উপাসনালয়ের অন্যান্য কর্মচারীদের ঘর।

একটি শয়নকক্ষে থাকত (নারী) পুরোহিত। উপাসনালয়ের প্রাঙ্গণে ছিল অনেক সাদা ঘুঘু। পরবর্তীকালে উপাসনালয়ে ওপরে তৈরি করা হয়েছিল ঘুঘু পাখির থাকার ঘর।

সে সময় দেবী ইশতার-এর একটি বাণী ব্যাবিলনবাসীর মুখে মুখে ফিরত-

I TURN THE MALE TO THE
FEMALE. I AM SHE WHO
ADORNETH THE MALE FOR
THE FEMALE; I AM SHE WHO
ADORNETH THE FEMALE
FOR THE MALE.

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় অঞ্চলের মানুষদের ধর্মীয় দেবতার নাম ছিল যথাক্রমে ‘আন’ (আকাশ), ‘মাকি’ (পৃথিবী), ‘এনলিল’ (বাতাস) এবং ‘এনকি’ (সমুদ্র)। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাসমতে এরাই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের নিয়ন্ত্রক ছিল। বর্ণিত ৪-দেবতা ছাড়াও আরো অনেক দেবতার পূজা করাই ছিল প্রাচীন সুমার লোকদের প্রধান কাজ। ইরাকের একটি প্রাচীন সভ্যতার নাম ছিল ব্যাবিলন, যার ছিল সূর্যদেবতা ‘বেল’।

আবারও সেই পাথর কিছুটা তামায় সজ্জিত বলে তাম্রপলীয় কাগজের উপর ছেনী গাইতির ছন্দ স্ফুলিঙ্গ প্রেমেরদেবী ইশতার নির্মাণ চলে।

দুর্গেশনন্দিনী

তথ্যঃ 
Theoi Project, Cult Of Zeus cult and statues
Pagans Honor Zeus at Ancient Athens Temple

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.