পূর্বঅংশ

~~~চতুর্থ~~~ 
।।নবকলেবর ও লৌকিক- অলৌকিক দেবী বঙ্গেশ্বরী।।

হরিদ্রাভ চাঁদোয়াতলে বিরাজিতা গ্রাম দেবী বঙ্গেশ্বরীর বিগ্রহটি ৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। পরিকর দেবদেবীর মূর্তি উচ্চতা আড়াই ফুট । সকলেই সালংকরা।

দেবী বঙ্গেশ্বরীর মাথায় মুকুট , কপালে সোনার টিপ ,টিকলি, কানের দুল, নাকে টানা নথ বাম, গলায় হার, হাতে রুপার চাঁদ মালা। বাম হাতে শাঁখা, পলা, কড়। ২০০২ সালে দেবীর নূপুর , পূজার বাসন পত্র চুরি হয়ে গিয়েছিল ।

দেবীর পরনে সবুজ পাড়, লাল শাড়ি। দেবী বাহন হীনা।পরিকর দেব দেবীদের মধ্যে মুষিক বাহন ,গদাধারী গণেশের পরনে হলুদ ধুতি, গলায় হার। প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর দণ্ডায়মান মা লক্ষ্মীর মাথায় মুকুট ,কপালে টিকলি, টায়রা কানে দুল, গলায় হার ।পরনে লাল শাড়ি ।হাতে পদ্মফুল। শ্বেতশুভ্র সরস্বতীর পড়নে আকাশী রঙের শাড়ি , হাতে বীণা, । তিনিও সালাঙ্করা । কার্তিকের মাথায় পাগড়ী , কাঁধে উত্তরীয়, পরনে আকাশী রঙের ধুতি। পায়ে নাগরা জুতো । বাম হাতে ধনুক ,ডান হাতে তীর।

পিছনে চালচিত্রে লক্ষীনারায়ন ও দশাবতার চিত্র অঙ্কিত আছে। বাঁধানো বেদীর সম্মুখে দুটি জলপূর্ণ ঘটের উপর সশীষ ডাব। হাজরা পুকুরের জলে ঘট ভরা হয়। অতীতে পিতলের ঘট ব্যবহৃত করা হলেও বর্তমানে পোড়া মাটির ঘট ব্যবহার করা হয় । ঘট দুটির পাশে একটি হাঁড়িতে দেবীর স্নানের জল রাখা থাকে।

ভক্তরা এই হাজরা পুকুরে স্নান সেরে ঠাকুর তলায় দন্ডী কাটেন। ঠাকুরের মন্দির খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা অবধি।

নিত্যপূজার নিমিত্ত এক কিলো চাল, কুচনো ফল, গ্রাম্য মিঠাই সহযোগে নৈবেদ্য প্রস্তুত করে নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যা সাতটায় আরতি সহ শীতল পূজা হয়। অন্যান্য সময় দর্শনার্থীগন এলে #বঙ্গেশ্বরী_ভান্ডার এ স পরিতোষ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন। তিনি মন্দিরের চাবি খুলে প্রতিমা দর্শনের সুযোগ করে দেন।

মূল মন্দিরের কিছুটা পশ্চিম দিকে রক্ষাকালীর মন্দির। ১৪০২ বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠা। চৈত্র মাসের দ্বিতীয় শনিবার রক্ষাকালীর পুজো হয় ।

অতিসম্প্রতি ১৪১৭ বঙ্গাব্দ ১৮ ই চৈত্র বঙ্গেশ্বরীর নবকলেবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেবায়েত মিত্র পরিবারের উদ্যোগে ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় । আঁটপুর নিবাসী সূত্রধর সম্প্রদায়ের শিল্পী নবকলেবর নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ মূল্য পড়েছে ৭০০০ টাকা। উপরে বর্ণিত বিগ্রহটির অঙ্গহানি হলে সেটি ১৪১৭ বঙ্গাব্দ ১৩ ই ফাগুন হাজরা পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় ।

শিল্পী প্রায় এক মাস ধরে বঙ্গেশ্বরীর আটচালায় বসে নবকলেবর নির্মাণ করেন। গঙ্গামাটিতে নির্মিত পুরাতন বিগ্রহটি বিসর্জন দেওয়ার কিছু কাল পরে সেটিকে পুকুর থেকে তুলে এনে পুরাতন কাঠামো ও মেড়ের উপর নতুন করে মাটি লাগিয়ে নবকলেবর নির্মাণ করা হয় চিরাচরিত ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রেখে।

শারদীয় দূর্গাপূজায় বঙ্গেশ্বরী মহোৎসবে পশু বলি হয়। বোমনগরে ঢাকিরা ঢাক বাজান। ঢাকটি দান করেছেন বীণাপানি পরামানিকের ছোট ছেলে। বলিকার্য করেন জঙ্গিপাড়া নিবাসী তারাপদ ও সমর কর্মকার। মহাষ্টমীযে লুচি ভোগের পর মহানবমীতে বলিদান। ছাচিকুমড়ো বলিদান হয়।প্রতিবেশী রায়পুর, আঁটপুর, বিষ্ণুপুর ও কাঁটামনি থেকে ভক্ত সমাগম হয়। মন্দির ও নাটমন্দিরের মধ্যস্থলে সুনির্দিষ্ট করা একটি আয়তকার ক্ষেত্রে হাঁড়ি কাঠ পোঁতা হয়।

বঙ্গেশ্বরীতলায় ছায়াপ্রদানকারী একটি বৃহৎ বৃক্ষ আছে। এই গাছটির পরিচয় সম্পর্কে গ্রাম বাসী সন্দিহান। তারা বলেন না জানিগাছ কথিত আছে ।কথিত আছে মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় এই বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল । কারো ধারণা আরো প্রাচীন এই গাছ । এই বৃক্ষ মূলে দেবীকে নামিয়ে রেখে বাহকরা বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এই তথ্যটি যদিও লোককথা নির্ভর । শতাধিক বছরের প্রাচীন এই গাছে কোন ফল হয় না ।কেবল নাকছাবির মত ছোট ছোট ফুল হয় । দেবীর অপার মহিমার নিমিত্ত এই গাছের ডাল কাটার কেউ কাটে না ।আশেপাশে আরো দু-চারটি চেনা গাছ আছে – বট ,অশ্বত্থ , কলকে গাছ।

দুর্গেশনন্দিনী


(ক্রমশ)

(পরবর্তি অংশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.