করানা ভাইরাস (Carana virus) প্রতিরোধে মুসলিম দেশগুলির নেওয়া নেওয়া কিছু কর্মসূচী এখানে দেওয়া হলো। (1) ২০২০ সালের ৫ ই মার্চ, সৌদি আরব ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবাশরীফকে বন্ধ করে দেয়। এই বছরের হজ্ব যাত্রাও স্থগিত করে দেওয়া হয়। (2) ২৩ শে মার্চ, সৌদি আরব ২১ দিনের দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করে। ৯৯.৯৯ শতাংশ ইসলামিক দেশ জুড়ে মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ হয়।(3) ২রা এপ্রিল সৌদি আরব মক্কা এবং মদিনা শহরে ২৪ ঘন্টার কারফিউ জারি করে। না‚ এসবের বিরুদ্ধে কিন্তু সেদেশের কোনো নাগরিকই প্রতিবাদ করেনি।
রাশিয়ার (Russia) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজাতন্ত্র চেচনিয়া ঘোষণা করেছে যে কেউ যদি করোনভাইরাস কোয়ারেনটাইন লঙ্ঘন করে এবং অন্যকে সংক্রামিত করে তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ১৫ মার্চ বলেন: যদি আপনি আমার মতামত জানতে চান‚ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে তবে তাকে হত্যা কর উচিৎ। সে শুধু নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েনা বরং তার পরিবার, তার ভাই, বোন বা প্রতিবেশীদেরও সংক্রমিত করে। চেচেনরাও কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ বা দাঙ্গা করেনি।
একসময়কার ইসলামী খিলাফত তুরস্ক মক্কা থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়েরেনটাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় ১০,৩৩০ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়। (5) তুর্কিরাও এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ বা দাঙ্গা করেনি।
ইসলামী দেশগুলোতে যখন এইসব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে‚ ঠিক সেই সময়েই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে, যেসব মুসলমানরা কোয়ারেন্টাইন ও সেলফ-আইসোলেশন মানছেনা‚ তাদের সাথে ভারত সরকার এমন আচরণ করছে যেন কোনো ছোটো বাচ্চা দুষ্টুমি করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছে। ভারত জুড়ে তাবলীগী জামায়েত (Tabligh Jamaat) এর মৌলবাদী মুসলমানরা বড় জমায়েত না করার জন্য সরকারি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই করোনভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে বিদেশী মুসলমানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তারা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের দিকে থুথু ছোড়ে, বিছানায় মলত্যাগ করে, বিছানায় মলত্যাগ করে ও মহিলা নার্সদের সামনে যৌনাঙ্গ বের করে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। (6) (7) (8)
এরপর পুলিশও এই বায়ো-জিহাদিদের
সাথে সন্ত্রাসবাদীদের প্রাপ্য আচরণ না করে তাদের প্রতি অনুরোধ জানাতে থাকে। এর থেকে মর্মান্তিক বোধহয় আর কিছুই হয়না। তাদের প্রতি ভারত সরকারের চিরকালীন নমনীয় আচরণ এবারেও একইভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সবথেকে যেটা খারাপ‚ চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মুসলমানদের আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে‚ ইসলামিক স্টেট দ্বারা জনপ্রিয় হওয়া সেই আপত্তিকর ভঙ্গী করতে দেখা গেছে(9)।
নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেসব ডাক্তার‚ নার্স এবং কর্মকর্তারা এইসব রুগীদের চিকিৎসা করেছেন‚ তাদের ধন্যবাদ দেওয়ার পরিবর্তে তাবলিগী জামায়াতের সদস্যরা আক্ষরিক অর্থেই ভারতীয় জাতির দিকে আঙুল তুলেছে।
বাম-উদারপন্থী মিডিয়া যখন তাবলীগ জামায়াতের অপরাধগুলি আর গোপন রাখতে পারেনি, তখন সারা দেশের মুসলমানরা অত্যাচারিত হওয়ার নাটক করতে শুরু করে যে তারা জমায়েতের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা মানবেনা‚ কারণ একমাত্র আল্লাহই নির্ধারণ করে দিতে পারে যে কোনো মুসলমান কখন মারা যাবে। যেখানে মক্কা মদিনার দেশ সৌদি আরবের নাগরিকদের তাদের সরকারের কথা মেনে চলতে কোনো অসুবিধাই হচ্ছেনা‚ সেখানে ভারতীয় মুসলমানরা ক্রমাগত তাদের সরকারের তরফ থেকে জারি করা কোয়ারেনটাইনের নির্দেশ অমান্য করে চলেছে।
ভারতীয় মুসলমানদের মানসিকতা
প্রাক-দেশভাগ যুগের অন্যতম অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবী ছিলেন সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি এবং চেয়ারম্যান ড. ভীমরাও রামজী আম্বেদকর (Dr. Bhimrao Ramji Ambedkar)। বীর সাভারকারের মতো তিনিও ভারতীয় মুসলমানদের মানসিকতা সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তিনি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেন ভারতীয় মুসলমানদের একটি অংশ সবসময় আইন না মানার ধান্দায় থাকে। ” বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে ইসলামের মতাদর্শ বলে যে দেশ মুসলিম শাসকের অধীনে নয়‚ যেখানেই মুসলিম আইন ও স্থানীয় আইনের মধ্যে সংঘাত আছে ‚ সেখানে প্রথমটিকে অবশ্যই পরেরটির উপর বিজয়ী হতে হবে এবং একজন মুসলমানের জন্যে স্থানীয় আইন অমান্য করা ও মুসলিম আইন মেনে চলা ন্যায়সংগত হবে” (10)
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিছু মুসলমান যে ট্রেন জ্বালিয়েছিলো এবং জনসম্পত্তি ধ্বংস করেছিলো‚ তার পেছনে ছিলো অমুসলিম সরকারকে অস্বীকার করার জন্যে তাদের ধর্মীয় অনুমোদন। এই কারণেই তারা পোলিও ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে ছিলো। আদমশুমারীর কর্মকর্তাদের আক্রমণ করার পেছনের কারণও এই একই।
জনসংখ্যার সম্পূর্ণ বিনিময়ের পক্ষে যুক্তি
দিয়ে আম্বেদকর তাঁর বই ‘পাকিস্তান বা পার্টিশন অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছিলেন: “মুসলমানরা হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত কোনো সরকারের কর্তৃত্ব কতক্ষণ পালন করবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য খুব বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মুসলমানদের কাছে একজন হিন্দু মানে একজন কাফের। একজন কাফের কখনোই সম্মানের যোগ্য নয়। সে জন্মগতভাবেই নীচু ও সম্মানহীন। একারণেই যে দেশ কাফের দ্বারা শাসিত হয় একজন মুসলমানের কাছে সেটা হল দার-উল-হার্ব ( ইসলামের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত দেশ) ! মুসলমানরা কোনও হিন্দু সরকারকে মানবে না তা প্রমাণ করার জন্য এর বাইরে আর কোনও প্রমাণের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির যে প্রাথমিক অনুভূতি, যা কোনো ব্যক্তিকে সরকারী কর্তৃত্বের প্রতি অনুগত করে তোলে, তা এখানে নেই। কিন্তু তাও যদি প্রমাণ চাওয়া হয়‚ তবে তারও কোনো অভাব নেই। বরং তা এত পরিমাণে আছে যে কোনটি নেওয়া হবে আর কোনটি বাদ দিতে হবে তা নিয়ে সমস্যা শুরু হয়ে যায়।” (11)
ভারতের মতো জাতি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত আরেকটি মতবাদ হলো যে‚ ইসলাম আঞ্চলিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয় না। এর সম্পর্কগুলো সামাজিক ও ধর্মীয়‚ ফলে বহির্মূখী। আম্বেদকর লিখেছেন “এটাই হলো প্যান-ইসলামবাদের ভিত্তি“। “এই কারণেই ভারতের প্রত্যেক মুসালমান বলে যে সে প্রথমে একজন মুসলমান এবং পরে একজন ভারতীয়। এর থেকেই বোঝা যায় কেন ভারতের উন্নতিতে ভারতীয় মুসলিমদের অবদান এত কম। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর জন্যে নিজেরা অক্লান্ত অবদান রাখে এবং কেন তাদের মনে ভারত দ্বিতীয় স্থানে থাকে।”
আম্বেদকর আরও বলেছেন যে‚ ইসলামের একটি মূল ত্রুটি হলো এর সামাজিক স্বশাসিত ব্যবস্থা এবং স্থানীয় স্বশাসিত ব্যবস্থার সাথে এর মানিয়ে নিতে না পারা। কারণ একজন মুসলমানের আনুগত্য সে যে দেশে বসবাস করছে তার উপর নির্ভর করেনা বরং সে যে বিশ্বাস লালন পালন করছে তার উপর করে।” “যেখানে রুটি জোটে সেটাই আমার দেশ” – একজন মুসলমানের থেকে এই নীতি কল্পনাই করা যায়না। যেখানেই ইসলামের শাসন সেখানেই তার নিজের দেশ। অন্য কথায়, ইসলাম কখনই প্রকৃত মুসলমানকে ভারতকে তার মাতৃভূমি হিসাবে গ্রহণ করতে এবং কোনও হিন্দুকে তার আত্মীয়-স্বজন হিসাবে গণ্য করতে দেযনা। সম্ভবত এই কারণেই মাওলানা মাহমুদ আলী, একজন মহান ভারতীয় কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলমান – ভারতে না হয়ে জেরুজালেমে সমাহিত হওয়া পছন্দ করেছিলেন। ” (12)
বেশিরভাগ ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যা হ’ল যে তারা নিজেদের ভারতীয় জাতীয় রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সম্প্রদায় হিসাবে নয়, বরং একটি জাতির মধ্যে আরেকটি জাতি হিসাবেই দেখেন। এর অর্থ হলো মুসলমানরা অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতায় নয় – স্বাধীনভাবে কাজ করে। ভুক্তভোগী হিসাবে তাদের বোধটি কেবলমাত্র এই কারণে যে তারা হিন্দু সংখ্যাগুরু ভারতে সাধারণ নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকা অসহ্য বলে মনে করে। আম্বেদকর ব্যাখ্যা করেছেন‚ “কিছু ( গোষ্ঠী ) মানুষরা যারা নিজেদের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও নিজেদের জন্য এবং বিরোধীদের জন্যে একটি সাধারণ ভাগ্যকে মেনে নেয়, তারা একটি সম্প্রদায়। কিছু ( গোষ্ঠী ) মানুষরা যারা শুধু অন্যদের থেকে আলাদাই নয়‚ বরং যারা অন্যদের মতো একই ভাগ্যকে নিজের জন্য মেনে নিতে অস্বীকার করে তারা একটি জাতি।(13)
সাধারণ ভাগ্যের এই অগ্রহণযোগ্যতা দিয়েই কেবলমাত্র মুসলমানরা কেন নিজেদের একটি জাতি বলে মনে করে তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। বা মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যেমন বলেছিলেন, ভারতীয় মুসলমানরা হলো “একটি জাতির মধ্যে আরেকটি জাতি”। একটি এমন একটি বিষয়‚ ধারার করা হচ্ছে যা ভারতীয় মুসলমানরা পশ্চিমে রফতানি করেছে – যেখানেও তারা ” জাতির মধ্যে জাতি” তৈরি করছে।(14)
আম্বেদকের মতে, যদি নিজেদের আলাদা একটি জাতি হিসাবেই তাদের মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকে‚ তবে তার রাষ্ট্রকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রভাব থাকতে পারে না”। এই দলিত রাজনীতিবিদ ১৯৪১ এ‚ দেশভাগের ছয় বছর আগে এই নির্ভুল ভবিশ্যৎবাণী।
আপোষহীন মনোভাব
হিন্দুদের প্রতি আনুগত্যের বদলে মুসলমানরা তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতেই বেশি প্রস্তুত বলে মনে হয়। ১৯২৬ সালে একটি বিতর্ক দেখা দিয়েছিলো যে‚ ১৭৬১ সালে ঘটা পাণিপতের তৃতীয় যুদ্ধে আসলে কে জিতেছিলো। মুসলমানদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে এটি তাদের পক্ষে একটি অবিষ্মরণীয় বিজয় ছিল কারণ আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালীর ছিলো ১০০‚০০০ সৈন্য। অপরদিকে মারাঠাদের ছিলো ৪০০‚০০০ থেকে ৬০০‚০০০ সৈন্য। হিন্দুদের পক্ষে দাবি করা হয়েছিল যে এটা ছিলো আসলে তাদের বিজয়‚ কারণ এর ফলে ভারতে মুসলমান আগ্রাসনের স্রোত থেমে গিয়েছিলো।
আসলে পানিপতে আবদালির ১০,০০,০০০ আফগান সেনার বিরুদ্ধে মারাঠা সেনাবাহিনীর ৪৫,০০০ থেকে ৬০‚০০০ এর মধ্যে যুদ্ধরত সৈন্য ছিল। (15) মারাঠারা জয় সম্পর্কে এতটাই নিশ্চিত ছিলো যে তারা ত দুই লক্ষেরও বেশি বেসামরিক (মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ) জনগণকে তাদের সেনাবাহিনীর সাথে যেতে দিয়েছিলো। তারা ছিলো তীর্থযাত্রী‚ তৎকালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত ভারতে নিজেদের নিরাপত্তার আশায় মারাঠাদের সঙ্গ নিয়েছিলো। এই মানবিক কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে ক্ষতিকর কাজের জন্যই মারাঠা সেনাবাহিনী তার স্বাভাবিক গতিশীলতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এটাও সত্যি যে মারাঠারা এক বিশাল সংখ্যক আফগান যোদ্ধার প্রাণনাশ করে। এর ফলে আফগানদের ভারত আক্রমণ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধের পর এক দশকের মধ্যেই মারাঠা সেনাবাহিনী আবার উত্তরে ফিরে আসে, হারিয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলি পুনরুদ্ধার করে এবং যারা পানিপতে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাদের শাস্তি দেয়।
যাইহোক‚ এই ধরনের অন্যায় দাবি করা ভারতের মুসলমান রাজনীতিবিদদের মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ বিষয়। যেমন আকবরউদ্দীন ওয়েসি একবার বলেছিলেন, “পুলিশকে ১৫ মিনিটের জন্য সরিয়ে দেওয়া হোক, আমরা ১০০ কোটি হিন্দুদের শেষ করে দেবো।”(16) একইভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীরও দাবি করেছিলো যে একজন পাকিস্তানী সৈন্য দশ, ছয় এবং তিনজন ভারতীয় সৈন্যের সমান। এই অনুপাতটি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের সাথে ধাপে ধাপে কমে এসেছে।
আম্বেদকর লিখেছেন যে ভারতীয় মুসলমানরা হিন্দুদের হাতে পরাজয় স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল না এবং দাবি করেছিল যে তারা সর্বদা হিন্দুদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত। হিন্দুদের থেকে মুসলমানদের চিরন্তন শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য, নাজিবাবাদ (উত্তর প্রদেশের) মাওলানা আকবর শাহ খান সচেতনভাবেই প্রস্তাব রেখেছিলো‚ হিন্দু ও মুসলমানদের যুদ্ধ করা উচিৎ। পাণিপতের ময়দানে চতুর্থ যুদ্ধ।
সেই অনুসারে মাওলানা নিম্নলিখিত ভাবে পণ্ডিত মদন মোহন মালব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলো‚” মালব্যজী আপনি যদি পানিপতের ফলাফলকে মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন‚ আপনি আপনাকে একটি সহজ এবং অসাধারণ উপায় (এটি পরীক্ষা করার) দেখাব। আপনি আপনার প্রভাব পরিচিতি ব্যবহার করুন‚ কর্তৃপক্ষের বাধা ছাড়াই পানিপথের চতুর্থ যুদ্ধের লড়াইয়ের অনুমতি দেওয়ার জন্য বৃটিশ সরকারকে চাপ দিন। আমি প্রস্তুত…………হিন্দু ও মুসালমানদের বীরত্ব ও যুদ্ধ চেতনার তুলনামূলক পরীক্ষার জন্যে। ভারতে যেহেতু ৭ কোটি মুসলমান আছে‚ আমি নির্দিষ্ট তারিখে পানিপতের ময়দানে ৭ কোটি মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করা ৭০০ মুসলমানকে নিয়ে পৌঁছে যাবো। এবং ভারতে যেহেতু ২২ কোটি হিন্দু আছে‚ আমি আপনাকে ২‚২০০ জন হিন্দুকে নিয়ে যেতে দেবো। আসল কথা হলো বোমা‚ মেশিনগান বা বোমা ব্যবহার করা যাবেনা‚ শুধুমাত্র তলোয়ার‚ বল্লম‚ বর্শা‚ তীর‚ ধনুক এবং ছোরা ব্যবহার করা যাবে। আপনি যদি হিন্দুদের সেনাপতির পদ গ্রহণ করতে না পারেন তবে তা সদাশিব রাও বা বিশ্বাস রাও এর বংশধরদের উত্তরসূরিদের দিতে পারেন‚ যাতে তাদের বংশধররা ১৭৬১ সালে তাদের পূর্বপুরুষদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেতে পারে। তবে যেভাবেই হোক দর্শক হিসাবে আসবেন‚ কারণ এর ফলাফল দেখে আপনাকে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হবে। এবং আমি আশা করি যে তখন দেশে বর্তমান মতবিরোধ ও লড়াইয়ের অবসান হবে……… সবশেষে আমি এটা যোগ করছি‚ যে ৭০০ জনকে আমি আনবো সেখানে কোনো আফগান বা পাঠান থাকবেনা‚ কারণ আপনি তাদের ভয়ানক ভয় পান। তাই আমি শুধুমাত্র ভালো পরিবার থেকে আসা শরিয়তের কট্টর অনুসারী ভারতীয় মুসলমানদের আনবো।” (17)
অসহনীয় বিদ্বেষ
হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উপর ১৯২৮ সালে জারি করা এক ইশতেহারে চিস্তি শ্রেণীর এক ভারতীয় সুফি সাধক খ্বাজা হাসান নিজামী ঘোষণা করেছিলেন: “মুসলমানরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। তারা হিন্দুদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনা। বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে মুসলমানরা ভারত দখল করে এবং ইংরেজরা তাদের কাছ থেকে ভারত ছিনিয়ে নেয়। মুসলমানরা হলো একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি এবং তারাই একাই ভারতের প্রভু হবে। তারা কখনোই তাদের স্বাতন্ত্র ছাড়বেনা। তারা কয়েকশো বছর ধরে ভারতবর্ষে শাসন করেছে এবং তাই দেশের উপর তাদের স্বাভাবিক অধিকার আছে। পৃথিবীতে হিন্দুরা
একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা কখনোই থামেনা।
তারা গান্ধীকে বিশ্বাস করে ও গোরুর পুজো করে। তারা অন্যদের জল গ্রহণ করে দূষিত হয়। তারা স্বশাসনের জন্য যত্নবান হয়না‚ এর জন্যে তাদের কাছে কোনো সময় নেই। তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা নিয়েই থাকতে দাও। অন্যের উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা তাদের কী আছে? মুসালমানরা শাসন করেছিল, এবং মুসালমানরা শাসন করবে।” (18)
এরপর মাওলানা আজাদ সোবহানী, কানপুরের প্যান-ইসলামপন্থী আলেম এবং অল ইন্ডিয়া খেলাফত সম্মেলনের সদস্য,১৯৯৯ সালে সিলেটে তাঁর ভাষণে ভারতীয় মুসলিম আলেমের মানসিকতা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন:” ভারতে ব্রিটিশ তাড়ানোর পক্ষে যদি কোনো সম্ভ্রান্ত নেতা থাকে তবে তা আমি। তবুও আমি চাই যে মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ইংরেজদের সাথে কোনও লড়াই যেন না হয়। আমাদের বড় লড়াইটি হলো ২২ কোটি (২২০ মিলিয়ন) হিন্দু শত্রুর সাথে‚ যারা এখনো এই দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
মাত্র সাড়ে ৪ কোটি (৪৫ মিলিয়ন) ইংরেজ শক্তিশালী হয়ে পুরো পৃথিবী দখল করেছে। আর যদি এই ২২ কোটি হিন্দু সংখ্যায় এগিয়ে থাকার মতো একইভাবে জ্ঞান, বুদ্ধি এবং সম্পদে অগ্রসর হয়ে ওঠে‚ যদি তারা শক্তিশালী হয়ে যায় তবে এই হিন্দুরা মুসলিম ভারত এবং ধীরে ধীরে এমনকি মিশর, তুরস্ক, কাবুল, মক্কা, মদীনা এবং অন্যান্য মুসলিম রাজত্বকে দখল করে নেবে……” (19)
বিশ্বাস করুন বা না করুন, সোবহানীর সবথেকে বড় ভয় ছিলো: “ইংরেজরা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে……খুব শিগগিরই তারা ভারত থেকে চলে যাবে। তাই‚ আমরা যদি এখন থেকে ইসলামের সবথেকে বড় শত্রু, হিন্দুদের বিরুদ্ধে লড়াই না করি এবং তাদের দুর্বল করে না দি‚ তবে তারা যে শুধু ভারতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে তা না, ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এটা নির্ভর করে ৯ কোটি ( ৯০০ মিলিয়ন) ভারতীয় মুসলমান তাদের শক্তিশালী করবে নাকি তাদের (হিন্দুদের) দুর্বল করবে তার উপরে। তাই মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে লড়াই করা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য‚ যাতে হিন্দুরা এখানে প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং ইংরেজদের চলে যাওয়ার সাথে সাথে ভারতে একটি মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ”
তিনি এই বলে শেষ করেন যে‚ “২২ কোটি হিন্দু শত্রুদের হাতে মুসলিম বিশ্ব কখনওই নিরাপদ নয়“।
মুসলিম নেতৃত্বের এইসব ঘৃণ্য বক্তৃতা এবং তার ফলে ধর্মীয় দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতে আম্বেদকর জোরপূর্বক ভারত বিভাজন এবং ভারতীয় মুসলমানদের নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্রে এবং সমস্ত হিন্দুদের পাকিস্তান থেকে ভারতে স্থানান্তরিত করার (সম্পূর্ণ জনবিনিময়) পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি লেখেন‚ “হিন্দু ও মুসলমানরা তাদের নিজেদের পৃথক দুনিয়ায় বসবাস করে ……যেখানেই তারা থাকুকনা কেন‚ তারা আলাদা থাকে‚ প্রতিটি গ্রাম‚ প্রতিটি শহরেই হিন্দু এলাকা এবং মুসলিম এলাকা রয়েছে, যা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের মধ্যে কোনো সাধারণ কার্যক্রম নেই। হয় তারা ব্যবসা করার জন্যে দেখা করে‚ নয়তো খুন করার জন্য। তারা একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্যে দেখা করেনা। যখন ব্যবসার বা হত্যার প্রয়োজন পড়েনা‚ তখন তারা দেখা করা বন্ধ করে দেয়। যখন শান্তি বিরাজ করে তখন হিন্দু এলাকা ও মুসলমান এলাকাকে দুটো ভিন্ন দেশের মতো মনে হয়। যুদ্ধ ঘোষণার সাথে সাথে জনবসতিগুলি সশস্ত্র শিবিরে পরিণত হয়। শান্তির সময়কাল এবং যুদ্ধের সময়কাল সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এর মাঝের সময়ে একটানা উত্তেজনা বিরাজমান থাকে। এমন বাঁধার বিরুদ্ধে গণসংযোগ কি করতে পারে? এমনকি এর অপর দিক থেকেও বাঁধা উঠতে পারেনা। খুব কম করে তা সাংগঠনিক ঐক্য তৈরী করতে পারে।” (20)
উপসংহার
মুসলিম জনসংখ্যা ২৫ শতাংশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে যেমন ১৯৪০-এর দশকে পাকিস্তানের দাবি সবচেয়ে বেশি জোরালো হয়ে উঠেছিলো‚ আবার দ্বিতীয় বারের জন্যে দেশভাগের দাবি তুলে বলা হচ্ছে “ভারতের জনসংখ্যার ২০-২৫% মুসলমান ……… আমি ভারত সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ও ভারতীয় মুসলমানদের জন্যে পাকিস্তানের মতো আলাদা একটি দেশ পাইয়ে দিতে সাহস করি। তারপর আপনি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করতে পারেন। ” সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পার্টির অজয় ভার্মা বলেছিল। (21) এখন দ্বিতীয় দেশভাগের দাবি জানালে তা অনেক বেশী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে‚ কারণ মুসলিম, খ্রিস্টান, বামপন্থী, সেকুলার এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ জোট গঠন করেছে।
সেকুলাররা এতটাই ভীতু যে তারা জেহাদীদের থামানোর পরিবর্তে তাদের তোষন করার পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত থাকে। স্বাধীনতার সংগ্রামের সময় কংগ্রেস যেমন ভারতকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো‚ এখন এই তোষনের ফলও একই হবে। আম্বেদকর যেমন সতর্ক করেছিলেন‚ “দ্বিতীয় যে বিষয়টি কংগ্রেস বুঝতে ভুল করেছে‚ তোষনের নীতি নেওয়ার ফলে মুসলিম আগ্রাসন বৃদ্ধি পেয়েছে‚ আর সবথেকে খারাপ বিষয় যে‚ মুসলমানরা এই তোষনকে হিন্দুদের পরাজয়ের ইঙ্গিত ও প্রতিরোধের ইচ্ছা না থাকা হিসাবে ব্যাখ্যা করে। এই তোষন নীতি হিন্দুদের একই ভীতিজনক পরিস্থিতিতে জড়িত করবে যে পরিস্থিতিতে মিত্রশক্তিকে পড়তে হয়েছিল হিটলারের প্রতি তোষননীতি নেওয়ার কারণে। ” (22)
ভারতের নরম রাষ্ট্রব্যাবস্থা বাববার তার আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলা নাগরিকদের ব্যর্থ করেছে। ১৯৪০ এর জেহাদীরা বেশিরভাগই ছিল দরিদ্র এবং নিরক্ষর; বর্তমানের আধুনিক জেহাদীদের পেছনে সম্পূর্ণভাবে বাম-উদারপন্থী এবং সেকুলারদের সমর্থন করেছে। জাতিরাষ্ট্রকে দুর্বল করে ধ্বংস করতে তারা লজ্জা পায়না‚ যাতে ভারতবর্ষে ইসলামী বিজয়ের চূড়ান্ত স্বপ্নটি সফল হতে পারে।
দেশদ্রোহীদের ট্রেন ও জনসাধারণের সম্পত্তি পোড়ানো থেকে আটকাতে ও তাদের নির্মূল করতে জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে ভারতকে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। বিদেশী ঔপনিবেশিকদের জন্যে আইন অমান্য আন্দোলন ছিলো সম্পূর্ণ সঠিক‚ কিন্তু এই দেশের আদিবাসী হিন্দুদের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া উচিৎ না। যারা ভারতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্টতা পছন্দ করেনা‚ তারা তাদের পূর্বপুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু ভারতে তারা এতটাই সুখে আছে যে‚ তারা এই কাজ কখনোই করবে বলে মনে হয়না। ভারতীয় মুসলমানদের ভাগ্য ভারতের সাথে জড়িত। সম্পদের উপর প্রথম অধিকার সহ তাদের আলাদা জাতি হওয়ার কথা ভুলে যাওয়া উচিৎ।(23) কারণ কেউ যখন ট্রেন জ্বালায়, জনসাধারণের সম্পত্তি নষ্ট করে এবং চিকিৎসকদের প্রাণঘাতী ভাইরাসে সংক্রামিত করার অভিপ্রায় নিয়ে থুথু ফেলে, তখন সে নৈরাজ্যবাদী ছাড়া আর কিছুই না। তবে এটা তাদের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে‚ কারণ হিন্দুরা আর কখনোই এইভাবে সব মুখ বুজে সহ্য করবেনা।
তথ্যসূত্র:
1.The New Arab,https://english.alaraby.co.uk/english/news/2020/3/5/coronavirus-apocalypse-islams-holiest-site-mecca-completely-deserted
2.Al-Monitor,https://www.al-monitor.com/pulse/originals/2020/03/saudi-arabia-announce-coronavirus-curfew.html
3.Moscow Times,https://www.themoscowtimes.com/2020/03/25/people-who-violate-coronavirus-quarantine-should-be-killed-chechen-leader-says-a69741
5.The Times of India,https://timesofindia.indiatimes.com/city/delhi/two-tablighi-men-booked-for-misbehaviour/articleshow/75038693.cms
7.Indian Express,https://indianexpress.com/article/cities/delhi/coronavirus-fir-against-tablighi-jamaat-members-for-urinating/
8.Indian Express,https://indianexpress.com/article/cities/delhi/coronavirus-fir-against-tablighi-jamaat-members-for-urinating/
9.OpIndia,
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part III
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part III
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part V
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part V
- Newsweek,https://www.newsweek.com/muslims-are-creating-nations-within-nations-says-former-head-uk-equalities-446163
- Republic World,https://www.republicworld.com/india-news/politics/akbaruddin-owaisi-booked-for-hate-speech-during-poll-campaign.html
- Republic World,https://www.republicworld.com/india-news/politics/akbaruddin-owaisi-booked-for-hate-speech-during-poll-campaign.html
Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part III
- Times of India, 14-3-1928, “Through Indian Eyes”
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part I; original published in Bengali in Anand Bazar Patrika
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XII, Part V
- OpIndia,https://www.opindia.com/2020/01/congress-leader-ajay-verma-separate-country-muslims-pakistan-bangladesh-partition/
- Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, Chapter XI
- Times of India,https://timesofindia.indiatimes.com/india/Muslims-must-have-first-claim-on-resources-PM/articleshow/754937.cms
চিত্রঋণ- বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (Business standard)
ডিসক্লেইমার – এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত। কতৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনো দায় গ্রহন করবে না।
রাকেশ কৃষ্ণান সিনহা (Rakesh Krishnan Sinha)